শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১১

তুমি বেঈমান, মীর জাফর: রনিকে প্রধানমন্ত্রী





সম্প্রতি এক টিভি টকশোতে সরকার দলীয় এমপি গোলাম মাওলা রনি যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে ভীষণ ক্ষেপেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তাকে তিরস্কার করে বলেন, ‘তুমি বেঈমান। বিজেপির আন্দালিব রহমানের সাথে তুমি ব্যবসা করো। যে কাজ বিরোধীদল করবে তা তুমি কেন করছো?’
তিনি আরও বলেন, ‘তার শ্বশুর গোষ্ঠী বিএনপি করে। ও নিজও চিন্তা করছে এরপরে তাদের সাথে যোগ দেবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে শ্বশুররা তাকে শেল্টার দেবে। এ তো মীরজাফর।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘ওকে রাস্তা থেকে ধরে এনে এমপি বানিয়েছি। ওর মনে রাখা উচিত যে কোনও দলের নমিনেশন পেয়ে সে এমপি হয়নি। অবশ্য কোনও কথা দলের বিরুদ্ধে গেলে ওর কী যায় আসে?বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে দলীয় সংসদ সদস্যদের সভায় তিনি রনিকে এসব কথা বলেন।
সভায় অংশগ্রহণ করা একাধিক সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
সভার এক পর্যায়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ তার বক্তব্যে যোগাযোগমন্ত্রীকে নিয়ে দলীয় এমপি গোলাম মাওলা রনির সাম্প্রতিক একটি টিভি টকশোতে রাখা বক্তব্য তুলে ধরেন।তোফায়েল বলেন, রনি টকশোতে যান, ভালো বলেন। কিন্তু রনি বললেন, প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গিয়ে লেকের পাড়ে বসে বাঁশি বাজিয়েছেন। যিনি তাকে বাঁশি নিয়ে দিয়েছিলেন তিনি তাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। কিন্তু একথা যদি সত্যও হয় তিনি তা টকশোতে বলবেন কেন?
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রনি কোথায়? এখানে আছে?
রনি এসে সামনে দাঁড়ালে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, তুমি কার কাছে একথা শুনেছ? উত্তরে রনি বলেন, আমি এক সাংবাদিকের কাছে শুনেছি।
এরপর শেখ হাসিনা তাকে বলেন, তুমি একজন সাংবাদিকের কাছে শুনেই বলে ফেললা? তুমি তো আমার কাছে জানতে পারতে।এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে তিরস্কার করে বলেন, ‘তুমি বেঈমান। বিজেপির আন্দালিব রহমানের সাথে তুমি ব্যবসা করো। যে কাজ বিরোধীদল করবে তা তুমি কেন করছো?’
এদিকে, সভায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য দলীয় সাংসদদের তীব্র সমালোচনার শিকার হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আফসারুল আমিন।
সংসদ সদস্যরা বলেন, কোনও ব্যক্তির ওপর নির্ভর করা যাবে না। যারা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, সরকার ও দলের স্বার্থে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
সভা সূত্র জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিক, গ্রামে ডাক্তার না থাকা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।
একই সঙ্গে সভায় অংশগ্রহণকারী সদস্যরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ না পাওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন।
সবার বক্তব্য দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলের মূল লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী এবং দশ ট্রাক অস্ত্র আমদানিকারকদের রক্ষায় তারা যুদ্ধ শুরু করেছে। রোডমার্চের মাধ্যমেই বিরোধী দল তাদের এই লক্ষ্য স্পষ্ট করেছে। এর মাধ্যমে বিএনপি আবারও প্রমাণ করল যে, তারা রাজাকারের দল।
বিরোধী দলের অপপ্রচার সম্পর্কে এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কর্মকাণ্ড তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সারাদেশে জনগণের সামনে উপস্থাপনের জন্য তিনি দলীয় এমপিদের পরামর্শ দেন।এছাড়া দল ও সরকারের বৃহত্তর স্বার্থে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিন সকাল ১১টার কয়েক মিনিট পর শুরু হওয়া এই বৈঠক চলে বেলা ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী প্রায় পৌণে এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী অঙ্গীকার ছিল, আমরা কী কী বাস্তবায়ন করেছি, কোন প্রকল্পের কী অগ্রগতি তা জনগণকে জানাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে না। তারা গঠনমূলক ভূমিকা রেখে সরকারকে সহযোগিতা করলে আমরা আরও বেশি কাজ করতে পারতাম। গণতন্ত্র আরও অগ্রসর হতে পারতো। তারপরেও এর মধ্য দিয়েই আমাদের এগুতে হবে। সব কাজ হয়তো আমরা শেষ করতে পারবো না। তারপরও যতটুকু করতে পারবো সেজন্য নিজেদের ঐক্য দরকার।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে ফ্লোর নেন দলীয় এমপি আতিউর রহমান আতিক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে আমাদের দলীয় লোকজনের চাকরি হচ্ছে না। অন্যান্য প্রকল্পেও দলীয় লোকদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে না।
তাকে সমর্থন করে আরও কয়েক এমপি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের চাকরিগুলো রাজনৈতিক। এখানে আওয়ামী লীগের লোকজনের চাকরি না হলে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা চাকরি পাবে।
এই অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক কথা বলতে চাইলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই তিরস্কার করেন দলীয় এমপি ইসরাফিল আলম।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, রোডমার্চে খালেদা জিয়া যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে দেশবাসী শুনেছে। সরকার দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে লুটপাট হয়েছে ইত্যাদি অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তার এসব বক্তব্যের জবাব এবারের সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরতে হবে। সেজন্য সংসদে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সরকারি দলের এই বক্তব্য যেন মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো যায়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে তালিকা চাওয়া হলো। আমরা তালিকা দিলাম। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও বলেছেন যে সাড়ে চার হাজার লোকের চাকরি হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী চাকরি না দিয়ে প্রমাণ করলেন উপদেষ্টার বক্তব্য অসত্য।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এরকম বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে আমরাও এলাকার লোকজন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে হেয় হচ্ছি।
বৈঠকে কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে নেতা-কর্মীরা পাচ্ছেন না। তিনি মন্ত্রণালয়েও যান না।
তারা বলেন, স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে সংসদ সদস্যরা সবচেয়ে জড়িত। অথচ এ কাজে মন্ত্রীকে পাওয়া যায় না।

শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১১

আল্লাহ, মুহম্মদ সা এবং আল-কোরআন বিষয়ক কিছু আলোচনার জবাবে

আমরা না দেখেই বিশ্বাস করি তিনি আছেন। আমার এই বিশ্বাস আরো দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে যখন আমরা সৃষ্টিকর্তার নিদর্শন দেখি। তার নিদর্শনের মাঝে তার বক্তব্যের/ অস্তিত্বের প্রমাণ পাই নানা ভাবে।
এটা মোটামুটি সব বিশ্বাসী/আস্তিকদের ক্ষেত্রেই কমন, আমি নিজে যখন আস্তিক ছিলাম- আমার ক্ষেত্রেও এটা ঘটেছে। মুসলমান বাপ-মা’র কারণে জন্মের পরেই মুসলমান হয়ে তারপরে- এমন যুক্তি- নিদর্শন খুজেছি- খুজে পেয়েছি। ক্লাস থ্রি/ফোরের ক্লাসের ধর্মের বই এ পরিষ্কার যুক্তি ছিল- “আল্লাহ যে আছেন এটার নিদর্শন আমাদের চারপাশে অসংখ্য আছে”। সবকিছু এত নিয়মমাফিক চলে- এ থেকেই প্রমাণ হয় যে, একজন নিশ্চয়ই আছেন যিনি সবকিছু সুচারু ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন- আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা যে একজনই কারণ একাধিক হলে তো তাদের মধ্যে মতবিরোধ হতো- বিশ্বজগৎ সুচারুরূপে চলতে পারতো না…… ইত্যাদি। আমি নিশ্চিত- অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। আগে বিশ্বাস করে নেয়া- তারপরে যুক্তি খোজা- নিদর্শন খুজে পাওয়া…..।
যাহোক- এটা নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই, যে বিষয়টি নিয়ে বলতে চাই- আপনি যেসব নিদর্শন বা যুক্তি দেখে আপনার বিশ্বাসকে পাকাপোক্ত করেছেন- সেগুলো নিয়ে আমার যথেষ্ট কথা আছে। সেগুলোকে যদি, আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়- তবে আমার আগের বিশ্বাসের ভিত্তিটি কি একটু দুর্বল হতে পারে না????
“কখনো দেখি , ১৪০০ বছর আগে আদর্শ, নীতি বা ন্যায় পরায়নতা ভিত্তিক যে সমাজ গঠন করেছিলেন অস্বাভাবিক সামাজিক পংকিলতার মধ্য থেকে যা বিশ্ব ইতিহাসের যে কোন সময়ে যে কোন স্থানে বিরল।
মনে পড়ে ওমর (আঃ) আর তার ভৃত্য একটা উঠে বিশাল মরুভুমির ৫০% -৫০% পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। কখন মনে পড়ে হযরত ওমর (আঃ) এর দুর্ভিক্ষ কালিন বক্তব্য “আজ যদি ফোরাতের তীরে একটা কুকুর যদি না খেয়ে মারা যায়, তবে তার জন্য আমি দ্বায়ী।” মানব ইতিহাসে এর তুলনা কোথায়?”
১৪০০ বছর আগে মুহম্মদ সা আরব সমাজে যে অবদান রেখেছেন- তা আমি স্বীকার করি- এবং একজন মানুষ হিসাবে তার প্রতি আমার প্রচণ্ড শ্রদ্ধাও আছে। কিন্তু যুগে যুগে আরো অসংখ্য মানুষকেই তো আমরা পাই। তাদেরো প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু যখন বলা হয় ১৪০০ বছর আগে আরবভূমিতে মুহম্মদ সা এর এই ভূমিকা বিশ্ব ইতিহাসে যেকোন স্থানে বিরল- তখন বুঝতে পারি – এমন দাবিদারের বিশ্ব ইতিহাস সম্পর্কে জানা-বুঝা নিতান্তই কম। বুঝতে পারি এ হলো চোখ বন্ধ করে ভক্তিতে গদগদ হওয়া, এ এমনই ভক্তি যে- একজন রক্তমানুষের মানুষকে ঐশ্বরিক পর্যায়ে কল্পনা করে নেয়া, সেই মানুষটি যে একটি নির্দিষ্ট সময়কালে- একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট সমাজ ব্যবস্থায় এসেছিলেন- তা ভুলে তার সমস্ত ক্রিয়া-কর্মকেই সমস্ত যুগের জন্য সমস্ত অঞ্চলের জন্যই সমস্ত সমাজব্যবস্থার জন্যই চুড়ান্ত বলে ঘোষণা দেয়া। তখন বিনীতভাবে প্রশ্ন না করে পারি না যে, এই মানুষটি বিদায় হজ্জে দাসদের প্রতি সুব্যবহার করার আহবান জানাতে পারলেন কিন্তু কৃতদাস প্রথা উচ্ছেদের ডাক দিলেন না কেন? পুরুষের জন্য চার বিবাহের বিধান কেন রাখলেন? হিল্লা বিয়ে প্রথা কেন রাখলেন? দাসীদের সাথে বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্ক কেন জায়েজ রাখলেন?….. ইত্যাদি।
বিশ্ব ইতিহাসের কথা টেনে যখন এই মানুষটিকে মহামানব হিসাবে দেখানো হয়, সরাসরি আল্লাহর বন্ধু বা রাসুল হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়- তখন বিনীত ভাবে প্রশ্ন করি- ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরে কেন তার একের পর এক নারীর প্রতি ঝুঁকতে হয়? কেন একের পর এক যুদ্ধ/জেহাদে লিপ্ত হতে হয়? কেন বিধর্মীদের প্রতি ঘৃণা ছড়াতে হয়? কেন অন্য ধর্মাবলম্বী প্যাগানদের ধর্মী উপাসকদের মূর্তিগুলো ধ্বংস করে দিতে হয়?…. ইত্যাদি।
এসবের জন্য একজন মানুষ মুহম্মদ সা এর প্রতি কোন অশ্রদ্ধা নেই- কারণ আমি জানি একজন মানুষের যুগগত, সমাজ ব্যবস্থাগত সীমাবদ্ধতা কি হতে পারে। কিন্তু অবশ্যই একজন রাসুলুল্লাহ মুহম্মদ সা এর প্রতি আমার হাজারো প্রশ্ন আছে। তাই কেউ যদি- যুগের কথা বলে নবীজী হিসাবে তার নারী লিপ্সাকে অনুমোদন দিতে চান- সোলায়মান…….. সহ বহুত রাজা বাদশার আরো চরম নারী লিপ্সার সাথে তুলনা দেখিয়ে রাসুল মুহম্মদ সা এর চরিত্রকে অনুকরণীয় দেখাতে চান- তাদের আমি বিনীতভাবে যীশু-গৌতম বুদ্ধ- সক্রেটিস থেকে শুরু করে মুহম্মদ সা এর আরো অনেক আগের অসংখ্য মানুষের তুলনা আনি, এনে জানাই এ ব্যাপারে অনুকরণ- অনুসরণ করতে চাইলে তাদেরই তো করা উচিৎ।
ওমরেরও অনেক কাহিনী, অনেক গল্প আমাদের এখনো উদ্দিপ্ত করে- ইতিহাসে এমন অসংখ্য চরিত্রই আমাদের মাঝে এমন করেই বেচে থাকেন যুগ যুগ ধরে। কিন্তু সেই সব রক্ত মাংসের মানুষের অনবদ্য গল্পগুলোকে কেন্দ্র করে যখন অন্য সব যোগসূত্র বের করে, মানুষের মহিমার চেয়ে কিচ্ছাকাহিনী/গালগল্পের মাহাত্ম্য প্রচারের চেষ্টা হয়- তখন বিনীতভাবে প্রশ্ন করি- ইসলামের চার খলীফার কয় খলীফা খুন হয়েছেন? কাদের হাতে খুন হয়েছেন? কি কারণে খুন হয়েছেন?
মুহম্মদ সা এর শবদেহ দাফনে কেনই বা দেরী হলো? ওনার কাছের মানুষেরা কি নিসন্দেহ ছিলেন না- যে তিনি আল্লাহর রাসুল? নিসন্দেহ কি ছিলেন না যে- আল্লাহর রাসুলের শবদেহ অবহেলায় ফেলে রেখে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হতে পারেন?
“যখন দেখি, আল-কুরআনের বাণী গুলো এত বেশি অলংকৃত, শব্দের যে অপরুপ বিন্যাস যার তুলনীয় কাব্যগ্রন্থ আজও সম্ভব হয় নি, (অবশ্য এটা আপনাকে ভালভাবে বুঝতে হলে আপনাকে আরবি সাহিত্য বা আরবি ভাষা অনেক ভাল জানতে হবে বা আপ্নকে সাহিত্য বিশারদ হতে হবে; আমরা আপাতত যারা সাহিত্য বিশারদ আছেন তাদের কথায় বিশ্বাস করে নিচ্ছি)।”
আল-কুরআনের বাণীগুলো এত বেশী অলংকৃত, শব্দের যে অপরূপ বিন্যাস- তা একজন বিশ্বাসী মাত্রই আরবী ভাষা না জেনে- না বুঝেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। আর এমন অন্ধভক্তিজনিত অবস্থান থেকেই এরকম ঘোষণা: “কোরআনের সমতুল্য কাব্যগ্রন্থ আজও সম্ভব হয়নি”!!!!!!!!
সুতরাং- খুব সহজেই এক বাক্যে জবাব দেয়া যায়: এমন ঘোষণাকারীর কাব্য সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই।
সেই সাথে এরকম বিশ্বাসীদের অবগতির জন্য জানিয়ে দেই: বিশ্ব সাহিত্যে আল-কোরআনের অবস্থান বলতে গেলে শূণ্যের কোঠায়। ইতিহাস গ্রন্থ- দর্শন গ্রন্থ হিসাবে এই গ্রন্থের যথেষ্ট ভূমিকা অবশ্যই আছে- একটা পুরো যুগকে বুঝতে গেলে- কোরআন-হাদীসের শরণাপন্ন অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে কোরআন না থাকলেও চলবে। এমনকি আমাদের এই অঞ্চলের মহাভারত-রামায়নকেও মহাকাব্য আখ্যা দেয়া যায়, প্রাচীণ সাহিত্যের কোঠায় আমরা চর্যাচর্যবিনশ্চয় বা চর্যাপদকে বুকে পিঠে ধরে রাখি- বিশ্বসাহিত্যকে হোমারের দুই প্রাচীণ মহাকাব্য অনেক ধনী করে- সেগুলোর তুলনায় আল-কোরআন নিতান্তই শিশু। সাহিত্য বিশারদদের কথা আপনি এনেছেন- কিন্তু দুনিয়ার সাহিত্য বিশারদরাই কিন্তু প্রাচীণ কোন গ্রন্থের মধ্যে কোনটির সাহিত্যমান কেমন- কোনটিকে মহাকাব্য বলা যাবে- কোনটিকে বলা যাবে না- তা নির্ধারণ করেছেন।
এবারে সরাসরি আল-কোরআনের কাব্যগুন কেমন তা একটু বিচার করি। কাব্যের বিভিন্ন অঙ্গগুলো হচ্ছে: রূপক-উপমা- ছন্দ ইত্যাদি। একটা ভাবকে রূপক-উপমা দিয়ে তুলে ধরতে পারাটা কাব্যের বিশেষত্ব- এটা কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আছে, এটা স্বীকার করছি। কিন্তু এর পরিমাণ খুব কম ও এগুলো আমার মতে ততখানি বুদ্ধিদীপ্ত নয়- মানে অনেকটা ফ্লাট টাইপের। উপরন্তু আমাদের এখানকার প্রাচীণ গাঁথা-কবিতায় সাধারণ মানুষ যেসমস্ত উপমা-রূপক দিয়ে মানুষের মনের ভাবকে প্রকাশ করে গিয়েছে- অনেক আগে থেকেই দেহবাদী গানগুলোতে যে উপমার ছড়াছড়ি- তা থেকেই বুঝা যায়- এগুলো মানুষের দ্বারাই খুব সম্ভব।
আর, ছন্দের কথা বললে- কোরআনকে অনেক পেছনে রাখতে হবে। রামায়ন-মহাভারতের শ্লোক- আমাদের চর্যাপদের পদগুলোর ছন্দ অনেক সুললিত, পরিমিত। কোরআনের বেশীরভাগ কবিতা তথা সুরাই আসলে ছন্দ মেইনটেইন করেনি। তবে কিছু কিছু সুরা- অনেক সুরার মাঝের বিভিন্ন ধারাবাহিক আয়াতে আমরা ছন্দের খেলা দেখতে পাই। কিন্তু সাথে এটাও বলতে হবে যে- যেকোন প্রাচীণ ছন্দের মত এগুলো একঘেয়ে অনুপ্রাসের সমাহার।
যেমন:
আলাম তারা কাইফা ফায়ালা রাব্বুকা বি আসহাবিল ফিল
আলাম ইয়াজয়াল কাইদাহুম ফি তাদলিল
ওয়া আরসালা আলাইহিম তয়রান আবাবিল
তারমিহিম বিহিজারাতিম মিন সিজ্জিল
ফাজায়ালাহু কা’য়াসফিমমাকুল…..
এটা ১০৫ নং সুরা ফিল। সব বাক্যের শেষেই আছে ইল (যদিও পঞ্চম বাক্যে আছে উল)। তেমনি সুরা ফাতেহায় সব বাক্যের শেষে আছে- ইন/ইম। সুরা নাসে সব বাক্যের শেষে পাওয়া যাবে নাস….. ইত্যাদি।
এধরণের ছন্দ প্রাচীণ কবিতাগুলোতে পাওয়া যায়। সে সময়ে আসলে ছন্দগুলো তৈরি হতো মুখে মুখে- প্রচারিত হতো মুখে মুখে, ফলে এরকম অন্তমিল রেখে তৈরি করাটা ছিল সহজ, এরকম অন্তমিল দেয়া ছন্দ মনে রাখাটাও ছিল সহজ। দেখুন চেষ্টা করলে আপনি এরকম ছন্দ তৈরি করতে পারবেন- যেমন:
আলো আমার আলো
আমি আছি ভালো
যতই তুমি কালো
প্রেমের সুধা ঢালো
….. বা
কলকল
ছলছল
ঢলঢল
ঝলমল
হলহল
কোলাহল……. ইত্যাদি।
চেষ্টা করে দেখুন, আমার মত কেউ পারলে আপনিও পারবেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছড়াগুলো পড়ে দেখতে পারেন- তাহলে বুঝবেন এরকম ছন্দ মানুষ কি দারুন তৈরি করতে পারে।
আর প্রাচীণকালের দোহাই পাড়লে বলবো- চর্যাপদ, রামায়ন-মহাভারত এসবের দিকে চোখ রাখুন। চর্যাপদের ছন্দগুলো- রামায়ন মহাভারতের শ্লোকগুলোও এরকম অন্তমিল ছন্দ দিয়ে তৈরি। এবং পড়লেই বুঝতে পারবেন ওগুলোর চেয়ে কত নিম্নমানের ছন্দ আল-কোরআনে। নিম্নমানের বলছি এই কারণে যে, কোরআনেরটা অনেক বেশী একঘেয়ে, এবং কোরআনে এইরকম মিল দেখাতে গিয়ে একই শব্দ, একই বাক্য বারবার ব্যবহার করা হয়েছে।
আর, আপনার ঐ বাক্যটিতে তো মনে হলো- বর্তমানের কাব্যগুলোকেও চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে!!!! বর্তমানের কাব্যগুলোর দিকে তাকানো আসলে ঠিক হবে না, তাহলে কোরআনকে আরো ন্যাংটো হতে হবে। আজকে ছন্দের যত বৈচিত্র, যত শক্তি তা ঐ আমলের কোন গ্রন্থের কাছ থেকে আশা করি না- তুলনাটাও ঠিক নয়; তবে আপনারা যদি সেই রকম চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসেন তবে বিনীতভাবে জানাতেই হয় যে- বিশ্ব সাহিত্যে আল-কোরআনকে কেউ কোনদিন মহাকাব্য/কাব্য বলেনি বলেই আমি জানি।

কাব্যগুণকে সময় এবং প্রেক্ষিতে আলোচনা করাই ভালো। এবং কাব্যগুণে রবীন্দ্রনাথ আর কোরআনের তুলনা চলে না-এও ঠিক। কিন্তু কাব্যগুণ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। মুহাম্মদ ভেবেছেন-এও অনেক-তিনি যে দৃশ্যকল্প তৈরি করেছেন-তা কম কিসে-আমার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হয় কিছু কিছু অংশ।

আমিও মনে করি- কাব্যগুণ তথা যেকোন সাহিত্য বিচার সময় ও প্রেক্ষিতেই করা উচিৎ।
আমি চর্যাপদ- রামায়ন-মহাভারত-ওডিসি-ইলিয়ড প্রভৃতিতে অবশ্যই আজকের যুগের ছন্দের বৈচিত্র্য ও শক্তি খুঁজতে যাই না- এটাই স্বাভাবিক যে- ঐ আমলের কাব্যে পয়ার-চতুর্দ্দশপদী বা অমিত্রাক্ষর পাবো না। কিন্তু সমস্যা হয় যে- যখন কেউ কোন এক আমলের এক কাব্যকে সমস্ত যুগের জন্য সেরার রায় দিয়ে দেয় তখন। সে জায়গা থেকেই উপরের আলোচনাটি টানা- রবীন্দ্রনাথ, … প্রমুখের নাম আনা। আরেকটি উদ্দেশ্য আছে- সেটা হলো দেখানো যে- মানুষের পক্ষেই কি অসাধারণ সব সৃষ্টি সম্ভব।
উপরন্তু আমার কাছে কোরআনের কাব্যমান সে আমলের এবং তারও আগের আমলের কাব্যের সাথে তুলনাতেও খুব নিম্নমানের মনে হয়। কেননা- বাস্তবে কোরআন তো কোন কাব্যগ্রন্থ নয়- মুহম্মদ সা এর কোন উদ্দেশ্যও ছিল না- কোরআনের মাধ্যমে কাব্যচর্চা করার। তারপরেও একদল ধর্মান্ধ লোক এর কিছু কবিতার উদাহরণ টেনে একে সমস্ত যুগের সেরা কাব্য বলে দাবি করে- এতে আসলে কোরআনকেই তারা তামাশার বস্তু হিসাবে উপস্থাপন করেন। এবং এটা মনে করি জন্যই আমি- চর্যাপদ-রামায়ন-মহাভারত প্রভৃতি যেগুলো আসলেই কাব্য এবং অসংখ্য কবির কাব্য প্রচেষ্টারই ফল- সেগুলোর সাথে কোরআনের তুলনাটাও আমার কাছে সঠিক মনে হয় না (এ যেন মেঘনাদবধ কাব্যের কাব্যময়তার সাথে বিষাদ সিন্ধুর কাব্যময়তার তুলনামূলক আলোচনা!!)। তারপরেও সেরকম তুলনামূলক আলোচনা টানা- কারণ, বিশেষ সেই দাবি।
আপনি দৃশ্যকল্প সৃষ্টির কথা বলেছেন। হুম, সেটা আমিও স্বীকার করি, এবং কোরআন যতই পড়ি- ততই মুহম্মদ সা এর প্রতিভায় বিস্মিত হয়ে যাই। তার কল্পনাশক্তি খুবই অসাধারণ। মেরাজের কাহিনীটিও ধরুন। বা বেহেশত-দোযখের ডিটেইলিং গুলো দেখুন। সে সময়ের বিধর্মী- স্বধর্মী সকলের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব তিনি যেভাবে দিয়েছেন- খুব উচ্চমাপের কল্পনাশক্তির লোক না হলে তা সম্ভব নয়। একবার সাহাবীরা জিজ্ঞেস করছেন- সন্ধা নামলে সূর্য কোথায় যায়? সাথে সাথে জবাব- সূর্য গিয়ে আল্লাহর আরশের নীচে অবস্থান করে- ঠিক সুবেসাদিকের সময় সূর্য আবার চলে আসে… ইত্যাদি। এই যে- জবাবটি দিলেন, এখানেও কিন্তু দারুন কল্পনাশক্তির মিশেল আছে। এরকম- অসংখ্য বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন- কোরআনে ও হাদীসে পাওয়া যায়- এবং এত অসাধারণ ভঙ্গীতে, সবই অনবদ্য। ধরেন, আল্লাহর যে ৯৯ টি নাম, মানুষেরই বিভিন্ন ভালো গুন সব আল্লাহর নাম হিসাবে দিয়েছেন- কিন্তু এমন খুটে খুটে মানুষের ৯৯ টি গুন বের করাও কিন্তু কম না।
এটা ঠিক যে- ইসলাম হিসাবে মুহম্মদ সা যা প্রচার করেছেন তার বড় অংশই তার নিজের আবিষ্কার নয়। সেখানকার বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা অলরেডিই এগুলোর বড় অংশ বিশ্বাস করতো ও মানতো, নানা মিথ আগে থেকেই আরব অঞ্চলে প্রচলিত ছিল- কিন্তু সেগুলোকে নিজের মত রিমেক করা, সংকলন করাও আমার মনে হয় অসাধারণ ধীশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। এবং মাঝে মধ্যেই কোরআনে নানারকম দৃশ্যকল্প তৈরী হয়েছে। কিন্তু এসবকেই কি কাব্য বলা যায়? একটা রূপকথা গল্পে- ঠাকুরমার ঝুলি টাইপের বই এও চমৎকার সব দৃশ্যকল্প পাবেন- সেটাতে কি শুধু এটুকুই বলতে পারি না যে- এসবের রচয়িতার কল্পনাশক্তি খুব প্রখর ছিল (উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী পশুপাখির মুখে ভাষা দিয়ে গল্পগুলো পড়লে তো আমি এখনো মুগ্ধ হই- বা ঈশপের গল্প গুলোও লেখকের কল্নাশক্তির বহিপ্রকাশ ঘটায়)- কিন্তু কাব্য বা কবিতা হতে গেলে তো আরো কিছু লাগে!!
বাকারা- নিসা…… এসব সুরাকে কিকরে আপনি কবিতা বলবেন? কোনদিক থেকে এগুলোর কাব্যগুণ খুঁজে পাবেন?
আবার নাস-ফাতেহা-ফিল এরকম কিছু কবিতার ব্যাপারেও আগেই বলেছি- এগুলোর ছন্দ সেই প্রাচীণ আমলের কবিতাগুলোর সাথে তুলনা করেও নিম্নমানের মনে হয়েছে। কেননা- এগুলো একটু বেশী মাত্রায় একঘেয়ে- যেমন দেখুন:
রহিমের কলম আছে,
জব্বারের মলম আছে,
আবুলের বই আছে,
মিহিরের মই আছে,
কাদিরের কলস আছে,
নাদের খুব অলস আছে…..
সবগুলোর শেষে আছে….. এমনটি চললে- সেটি কি খুব ভালো লাগে? সুরা নাসে সব বাক্যের শেষেই নাস। অধিকাংশ কবিতার বেলাতেই ফর্মটা এই একই রকম। অথচ অন্তমিল রেখেই যদি কবিতার ছন্দ এমন হয়-
রহিমের কলম আছে,
জব্বারের মলম কাছে,
আবুলের আছে বই,
মিহিরের মই,
কাদিরের কলস,
নাদের খুব অলস…..
অন্তমিল থাকলেও কিন্তু ততোটা একঘেয়ে নয়। চর্যাপদ- রামায়ন-মহাভারতের ছন্দগুলো তাই আমার কাছে বেশী ভালো লাগে।
“বা যখন দেখি কুরআন ১৪০০ বছরের মাঝে বিন্দুমাত্র চেঞ্জ হয়নি যেখানে বাইবেল বা অন্যান্য ধর্মগুলি শত শত বার চেঞ্জ হয়েছে*। রাজা বা পাদ্রিরা নিজেদের মনের মত পরিবর্তন করেছেন। এর মধ্যে আমরা আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পাই। …..
…… অন্যান্য অনেক ধর্ম প্রকৃতপক্ষে ঈস্বরের কাছ থেকে আসলেও তা সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তন/ বিকৃত হয়ে গেছে এবং সময়ের পরিবর্তনের জন্য ধর্ম গ্রন্থ গুলির লেটেস্ট বা ফাইনাল ভারসন প্রয়োজন। এটাই যে ফাইনাল ভারসন এর প্রমাণ হচ্ছে, দেড় হাজার বছরেও এটার বিন্দুমাত্র অবিকৃতি। (আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নিজেই কুরআনের সংরক্ষন করবেন বলেছেন বা অবশ্যই তা অবিকৃত আছে।)”
কোরআন অবিকৃত হয়নি মানে কি বুঝাতে চেয়েছেন? এবং তার দ্বারা কি প্রমাণ হয়?
আজকে মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের পরে- লাখ লাখ কোটি কোটি বই আপনি যুগ যুগ অবিকৃত পাবেন। শেক্সপীয়রের নাটক, সনেটগুলো সব একই ফর্মে আপনি পাবেন- সামান্য দাড়ি-কমারও কমবেশ পাবেন না। চর্যাপদের পদগুলোও তো আপনি ঠিক আগের ফর্মেই পাচ্ছেন। এখনতো আমরা দুই/ আড়াই হাজার বছর আগের শিলালিপিও পাই- সেগুলোও তো অবিকৃত। এতে কি প্রমানিত হয়?
হুম, একটা সময়ে মুখে মুখে যখন জ্ঞান, সাহিত্য… প্রভৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বা যুগ থেকে যুগে বিচরণ করতো – তখন সেগুলোর ক্ষেত্রে বিকৃতির সম্ভাবনা থেকেই যেত। এবং আমরা জানি আল-কোরআন পুরোটা এক সাথে লিপিবদ্ধ অবস্থায় মুহম্মদ সা মানুষের সামনে হাজির করেননি। প্রাথমিক অবস্থায় এটা খণ্ড খণ্ড ভাবে মুখে মুখে প্রচারিত ও বিচ্ছিন্নভাবে লিখিত অবস্থায় ছিল। ফলে- এটার বিশুদ্ধতা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছিল, এবং সেকারণেই সে ব্যাপারে সকলকে নিশ্চিন্ত করার দায় কোরআনের ছিল। সেকারণেই আমরা কোরআনে আল্লাহকে বলতে দেখি- তিনিই এর সংরক্ষণকারী!!!
নিশ্চিৎভাবেই মেঘনাদবদকাব্য বা কিং লীয়র বা ওয়ার এণ্ড পীস এর ক্ষেত্রে এরকম অবিকৃতির ঘোষণা দেয়ার কোন প্রয়োজনই কেউ বোধ করেননি।
এবারে আসি- অন্যান্য প্রাচীণ গ্রন্থ সমূহের সাথে তুলনার বিষয়টিতে। অন্য ধর্মগ্রন্থসমূহ বিকৃত হয়েছে, কোরআন হয়নি!! এ কথাটির ফাঁক একটু দেখলেই বুঝা যাবে।
যেসমস্ত গ্রন্থ সমূহ লেখকের (আপনাদের ভাষায় যার উপর নাজিল হয়েছে তার) জীবদ্দশাতেই প্রামান্যরুপে উপস্থিত হয়েছে- সেগুলো নিয়ে বিকৃতির অভিযোগ আনাটা কি সম্ভব? এটা আনা হয়, লেখকের বা নাযেল হওয়া ব্যক্তির মৃত্যুর পরে সংকলিত হওয়ার ক্ষেত্রে। যেমন ধরেন- সক্রেটিস কোন কিছু লিখে যাননি। লিখেছেন, তার দুই শিষ্য। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে- শিষ্য দুজন যা লিখেছেন- তার হুবাহু কি সক্রটিসের চিন্তা-দর্শনকে রিপ্রেজেন্ট করে? কিন্তু এটাও ঠিক যে- প্লেটো যখন প্রামান্যরূপে বা লিখিতরূপে প্লেটোর সংলাপ বা সক্রেটিসের জবানবন্দী লিখলেন- সেটা কিন্তু অবিকৃত হিসাবেই এবং অবশ্যই প্লেটোর লেখা হিসাবেই আমরা পাই।
একইভাবে, যেশাস ও মুহম্মদ সা দুজনের কেউই নিজে বাইবেল-কোরআনের এরকম প্রামান্য রূপে হাজির করতে পারেন নি। পরবর্তীতে তাদের অনুসারীরা এগুলো সংকলিত করেন। এখন প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক যে, এখানে যা আছে তা আসলে ওনাদের প্রচারিত ধর্মমতকে হুবাহু ধারণ করে কি না? যেশাসের মৃত্যুর বেশ পরে যেহেতু এগুলো সংকলনের উদ্যোগ নেয়া হয়- সেহেতু বিচ্যুতির সম্ভাবনা একটু বেশি- সে তুলনায় কোরআনে একটু কম। কিন্তু একবার সংকলিত বা প্রামান্য রূপে পাওয়া গেলে- সেটা ঠিক ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে অবিকৃতরূপেই রাখা সম্ভব। আমরা তো এই উপমহাদেশেরই খৃস্টপপুর্ব আমলের বেশ কিছু গ্রন্থের সন্ধান পেয়েছি- এবং যেহেতু সেটা ঐ আমলের লিপিবদ্ধ- এবং সহজেই দাবি করা যায়- সেগুলো লেখক যেমন লিখেছেন- তেমনই আছে।
এরপরে আসে, একটি ধর্মগ্রন্থ প্রামান্য অবস্থায় পাবার পরেও সেটার ব্যাখ্যা নিয়ে নানামত। মূলত এটাকে কেন্দ্র করেই বাইবেলের পরবর্তি সংষ্করণ বের হয়েছে। পরবর্তীগুলোকে যেকেউ বিকৃত বলতে পারে- কিন্তু পুরানটাকে তো সেই অর্থে বিকৃত বলা যাবে কি? আর- এমন তো কোরআনের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। কোরআন সংকলনের সময়ই সাহাবীদের মধ্যে মতভেদের কথা বিভিন্ন হাদীসেই আছে। আলী রা এর আপত্তির কথা আমরা জানি। বিভিন্ন ভাষারীতি নিয়ে ঝামেলার কথাও আমরা জানি। ওসমান কর্তৃক কোরআনের অন্য সব কপি ধ্বংস করার কথা আমরা জানি। হাফস ও ওয়ালস এর কোরআনের ভিন্নতার কথা আমরা জানি। শিয়াদের আলাদা কোরআনের কথা আমরা জানি। সর্বশেষ রাশাদ খলীফার সংশোধিত কোরআনের কথাও আমরা জানি। এসমস্তই নির্দেশ করে যে- কোরআনও বিভিন্ন সময়ে বিকৃত হয়েছে এবং এক গ্রুপের কাছে আরেক গ্রুপের কোরআন অবশ্যই বিকৃত কোরআন।
সুতরাং কোরআন অবিকৃত হলেই যে সেটা আল্লাহর লেখা এমনটা যেমন বলা যাবে না তেমনি- কোরআনও বিভিন্ন সময়ে বিকৃত হয়েছে, কোরআনকে বিকৃত করা হয়েছে এটা যখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে- তখন কি আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ তৈরী হওয়া উচিৎ নয়?
“বা যখন দেখি কূরআনে এক টা আয়াত নেই যা প্রতিষ্টিত বিজ্ঞান দ্বারা ভুল প্রমাণ করা যায়। তার বিপরিতে অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থ গুলিতে অসংখ্য ভুল তথ্য, বা অসামনজন্য তথ্যে ভরপুর।
বা যখন দেখি কুরআনে বিজ্ঞানে অধুনা প্রমানিত অনেক বিষয় নির্ভুল ভাবে বর্নণা দেয়া হয়েছে।”
কোরআনের একটা আয়াত নেই যা প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান দ্বারা ভুল প্রমান করা যায়- এটা যে বলে তার সম্পর্কে দুটো কথা অনায়াসেই বলা যায়: এক- হয় তিনি কোরআনের সব আয়াত পড়েননি, পড়ে বুঝেননি, নয় দুই- তিনি বিজ্ঞান সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ।
প্রাচীণ গ্রন্থসমূহের, তা সে ধর্মগ্রন্থই হোক- আর জ্ঞান-দর্শনের গ্রন্থই হোক, সেগুলোর মধ্যে অসংখ্য অসামঞ্জস্যতা আজকের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান যেমন খুজে পায়- একইভাবে কোরআনের আয়াতে আয়াতে বিজ্ঞান বিরোধী অসত্য অসামঞ্জস্য উদ্ভট কথাবার্তা পাওয়া যায়। আবার সেই সমস্ত প্রাচীণ গ্রন্থ সমূহে অনেক কিছুই পাবেন যেগুলো এখনও বিজ্ঞান গ্রহণ করে (এর দ্বারা এতটুকুই প্রমানিত হয় যে- ঐ বিষয়গুলোতে সে সময়েই মানুষ সঠিক জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছিল!!)- তেমনি হয়তো কোরআনেরও কিছি কিছু বিষয় আজকের দিনের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান দ্বারা সঠিক বলা যাবে। কিন্তু তারমানে এই নয় যে- কোরআনের সমস্ত কিছুই আজকের বিজ্ঞান অনুমোদন করে!!! আদমের গল্প- ফেরেশতা-জ্বিন এর গালগল্প, যাদুবিদ্যা-তুকতাকের গল্প, নবীদের অলৌকিক ক্ষমতার গল্প…. এগুলো সবই আজকের বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে নেহায়েত গালগল্পই। আসমান-যমিন নিয়ে যেসব কথাবার্তা আছে, প্রাণীর-মানুষের সৃষ্টি, মানুষের জন্ম-ভ্রূণের বিকাশ এসব নিয়ে কথাবার্তা আজকের বিজ্ঞানের চোখে ভ্রান্ত। এমন অনেক কিছুই আছে। আপনি নিজে আরেকটু পড়াশুনা করুন, চোখ কান খোলা রাখুন- মনের জানালা খুলে দিন- নিজেও বুঝতে পারবেন।
আর, অধুনা প্রমানিত অনেক বিষয় কোরআনে নির্ভুলভাবে বর্ণনা দেয়া আছে- এমন দাবী আসলে একরকমের মিথ্যাচারের ফসল। বর্তমানের বিজ্ঞানের যুগে – সব ধর্মই নিজেদের একটু জাতে তোলার জন্য এ কাজটি করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমার একটি পোস্ট ছিল- তাই নতুন করে কিছু বলছি না- সেটিই আবার পড়ার আহবান জানাই।
“যখন মনে হয় যে, মহানবী (সাঃ), যিনি ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যক্তি, তিনি কিভাবে মনগড়া ভাবে ২৩ বছর ধরে অসামঞ্জস্যহীন গ্রন্থ রচনা করলেন যা একইসাথে ১) মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক, ২) যা তথ্যের অসামঞ্জস্যতা নেই, ৩) যাতে প্রদত্ত কোন তথ্যের বৈজ্ঞানিক ভুল নেই, ৪) অধুনা বিজ্ঞান প্রমান করছে/ খুজে বের করছে এমন তথ্য ও দেয়া আছে, ৬) যা অস্বাধারণ কাব্যে ভরপুর ৫) যা দেড় হাজার বছরেও চেঞ্জ হয়নি। ৬) এটিই একমাত্র গ্রন্থ যা অধিকাংশ মানুষ পুরোপুরি মুখস্ত রাখতে পারে, ৭) এটিই একমাত্র গ্রন্থ যা বিশ্বের হাজার হাজার লোক মুখস্ত রেখেছে। ফলে কুরআনের সমস্ত কপি পুড়িয়ে ফেললেও কুরআনকে ধংশ করা সম্ভব না।”
০) মুহম্মদ সা আদৌ নিরক্ষর ছিলেন কি না- তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ আছে। তার প্রতি প্রথম ওহী- পড়ো। প্রাথমিক জীবনে তিনি সফল বনিক ছিলেন- সেগুলোর হিসাবাদি তাঁকেই করতে হতো। তিনি বিভিন্ন শাসকদের উদ্দেশ্যে লিখিত পত্র পড়ে সংশোধন করে দিয়েছেন এরকম হাদীসও মিলে। যাহোক তারপরে ধরে নিচ্ছি যে- তিনি নিরক্ষর ছিলেন। কিন্তু লেখতে – পড়তে না জানা মানেই কি বুদ্ধিহীন? বা মুহম্মদ সা নিরক্ষর মানে কি কেউ বলবেন যে তিনি অসাধারণ ধীশক্তির অধিকারী ছিলেন না?
প্রাচীণ আমলের অসংখ্য গুনী মানুষের কথা আমরা জানি যারা ক-অক্ষর গোমাংস ছিলেন, শুধু মাথার মধ্যেই মুখে মুখেই তারা তাদের অনবদ্য সব সৃষ্টি করে গেছেন। ফলে- মুহম্মদ সা লেখতে পড়তে না জানলেই যে- তার নেতৃত্ব ক্ষমতা, দারুন অনুসন্ধিৎসু মন, গভীরে চিন্তা করার ক্ষমতা, দূর দৃষ্টি থাকবে না- এমনটি কেউ নিশ্চিৎভাবে বলতে পারবে না। আর এসমস্ত গুনের অধিকারী হলে, এবং সাথে আরো কিছু চৌকশ মানুষ থাকলে কোরআনের মত গ্রন্থটি রচনা করা অসম্ভব মনে হয় না।
আরেকটি বিষয় এখানে বলতে হবে- আজকের কোরআনটি আমরা পাই- ওসমানের হাত ধরে- তারও আগে আবু বকরের আমলে কোরআন সংকলন কমিটি প্রথম উদ্যোগটি নেয়। এই কমিটিতে যারা ছিলেন- তাদের মধ্যেও চৌকশ সাহাবী, কবি প্রতিভার সাহাবিরা ছিলেন। ফলে- আজকের কোরআনকে আমরা যে ফর্মে দেখি- সেটি একা মুহম্মদ সা এর অবদান এমনটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যে কারণে আলী রা কে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে দেখা যায়।
১) মানব জাতির পথ প্রদর্শক- একথাটি ভুল। আজকের দুনিয়ার অমুসলিম অংশ কোরআনকে ছাড়াই ভালো চলতে পারছে, ফলে তাদের জন্য এটা কোনমতেই পথ প্রদর্শক নয়; উপরন্তু মুসলিম বিশ্বও আজ যতই তাদের বিশ্বাসে আল্লাহকে রাসুলকে- কোরআনকে উচ্চে স্থান দেক না কেন- কোরআনের সবকিছুই তারা নিজেরাও পালন করে না বা পালন করা সম্ভব না জন্যেই পালন করে না।
নিজে পুরো কোরআন অর্থসহ এবং শানে নুযুল সহ নিজে একটু খুটিয়ে পড়লেই বুঝতে পারবেন কোরআন টা পুরো মানব জাতির পথ প্রদর্শক নয়। দেখতে পারবেন এখানে কিভাবে নবীজীর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে একেকটা আয়াত/সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। এমনকি তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে যখন মনোমালিন্য তৈরী হয়েছিল- সেটাকে সামাল দিতে গিয়েও আয়াত নাযেল হয়েছে- বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাহাবীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে নবীজীর কাছে আসলে আয়াত নাযেল হয়েছে, বিধর্মীরা প্রশ্ন করতে আসলে আয়াত নাযেল হয়েছে- সাহাবীদের উদ্দীপ্ত করার জন্য আয়াত নাযেল হয়েছে… এসবের মধ্যে সহজেই বুঝতে পারবেন একটা বড় অংশই একদম স্পেসিফিক কিছু ঘটনা, কিছু মানুষকে নিয়ে সুরা আছে- সেগুলো কোনভাবেই সমগ্র মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক বলতে পারবেন না। একজন ব্যক্তির নামে (বিধর্মী) পর্যন্ত একটা সুরা আছে- এবং সেখানে এমন ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে- দেখলে বুঝতে পারবেন – এটা মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক কিনা!!!!!
২) অনেক তথ্যেরই অসামঞ্জস্যতা আছে। আগের কমেন্টে কিছু বলেছি। এছাড়া বিভিন্ন অসামঞ্জস্যের জন্যই মুসলিমদের মধ্যে এত ভাগ- এতগুলো মাযহাবের সৃষ্টি।
৩) বৈজ্ঞানিক তথ্যের হাজারো ভুল আছে- তা আগেই বলেছি, আমার উপরের দেয়া পোস্টের লিংক দ্রষ্টব্য।
৪) অধুনা বিজ্ঞান বের করেছে এমন অসংখ্য কিছু কোরআনে নেই- এবং এমন অসংখ্য কিছু কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক। আর, কোরআনেই এমন জিনিস পত্র আছে- এরকম দাবি নির্ভেজাল মিথ্যাচার ও ধাপ্পাবাজি সেটাও আগে বলেছি।
৫) দেড় হাজার বছরে চেঞ্জ হয়েছে- সেটা তো বলেইছি। আর- আরো এমন অনেক গ্রন্থ পাবেন যা আরো অধিক সময় ধরে অবিকৃত অবস্থায় আছে।
৬) এটার কাব্যগুন নিয়েও উপরে বলেছি। যতখানি আছে- সেটার ব্যাপারে মুহম্মদ সা এর কিছু কবি সাহাবীর নাম শোনা যায়। ধরলাম- সেগুলো সাহাবীদের কাজ নয়, তারপরেও এ সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যে- মুহম্মদ সা এর কাব্য প্রতিভাও ছিল। কিন্তু সেটাকে যদি আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে মানতেই হয় তবে আজকের যুগে এসে বলতেই হবে- আল্লাহর কাব্য প্রতিভা ইয়েটস- ইলিয়ট- জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপীয়র, মধুসুদন প্রমুখের তুলনায় অতি নিম্নমানের।
৭) এটা ঠিক যে- কোরআন মুখস্থকারীর সংখ্যা অনেক। এককালে হয়তো অন্য অনেক গ্রন্থই মানুষ মুখস্থ করে রাখতো- কিন্তু বর্তমানে এই অপ্রয়োজনীয় কাজটি কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তিই করে রাখে। ভগবৎগীতা, এমনকি বাইবেল মুখস্থ করা লোকও দুনিয়ায় আছে। সেই গ্রন্থগুলো আরো প্রাচীণ- এতে কিছু প্রমাণ হয় না। আর এটাও ঠিক যে- কোন গ্রন্থের সমস্ত কপি পুড়িয়ে ফেলা হলে- তার মুখস্থকারী একজনও জীবিত থাকলে সে গ্রন্থকে পুনরিজ্জীবিত করা যাবে। সেটা কোরআন কেন- যেকোন গ্রন্থের জন্য সত্য।
তবে- আমাকে যদি বলা হয়- দুনিয়ার সমস্ত কিছু ধ্বংস করা হবে- শুধু একটা বই রক্ষা করা যাবে- এমন শর্তের মুখে আমি কোরআন নয়- একটা সায়েন্স এনস্লাইকোপিডিয়া নিতাম। সেরকম সুযোগ না পাওয়া গেলে- আমি বিজ্ঞানের লেটেস্ট সমস্ত সূত্রগুলো লিপিবদ্ধ করে একটা বই বানিয়ে সেটি রক্ষা করতাম। কেননা একমাত্র সেটা হাতে নিয়েই মানুষ সবচেয়ে অল্প সময়ে সভ্যতাকে আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবে। কোরআনকে নিয়ে যেটা কখনো সম্ভব নয়।

বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১১

Inqilqb 25th Aniversery

শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১১

এম এল এম ব্যবসার নামে প্রতারণা!

সম্প্রতি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এম এল এম) বা ডিরেক্ট সেলস ব্যাবসা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে আমাদের দেশে। আর এদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দেশের লক্ষ্ লক্ষ মানুষ। অত্যন্ত লোভনীয়, অকল্পনীয়, অফার আর অল্পদিনে কোটি পতি হবার স্বপ্ন নিয়ে ঝুঁকছে দেশের হাজার হাজার বেকার যুবক। শুধু বেকার যুবকই নয়, অনেক শিক্ষিত কর্ম জীবী লোকজন ও ছুটছে এই ব্যবসার দিকে। আলাদীন এর যাদুর প্রদীপ এর মত রাতা রাতি কোটিপতি হতে কে না চায়! কিন্তু আমাদের দেশের এম এল এম ব্যাবসা যেই ভাবে এগুচ্ছে তাতে করে এর ভয়াবহতা আমরা ইতি মধ্যেই টের পেয়েছি। সামনে ও পাবো হয়তোবা । আমেরিকার কনসেপ্ট মাথায় নিয়ে শ্রীলঙ্কার এক ভদ্র লোক আই লিঙ্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে দিয়ে এই দেশে এম এল এম ব্যবসার সাথে যুক্ত হন। সেই প্রতিষ্ঠানে রফিকুল নামে আর একজন কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি ডেস্টিনি ২০০০ লিঃ এর কর্ণধার। ডেস্টিনি কারো সাথে প্রতারণা করেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে সম্প্রতি ব্যাঙের ছাতার মত আগানে-বাগানে অযাচিত ভাবে যেই সব এম এল এম কোম্পানি গড়ে উঠেছে, তাদের নিয়ে অভিযোগের কোন শেষ নেই। এম এল এম কনসেপ্ট সম্পর্কে আমাদের ধারনা খুব ই কম। তাই প্রতারণার স্বীকার হচ্ছি আমরা ইতি মধ্যেই সর্ব শান্ত হয়ে গেছে কয়েক লাখ মানুষ। uni pay 2 you bd এর খপ্পরে পড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন অনেক সদস্য ও এজেন্ট। আইন এর মারপ্যাঁচে পড়ে অনেকে তাদের টাকা রিফান্ড পাননি। সম্প্রতি এর ভয়াবহতা এত প্রকট হয়ে গেছে যে ঢাকার শহরের হাতির পুল ও মোতালেব প্লাযায় প্রায় ৩০ টির মত ভুয়া এম এল এম কোম্পানি ব্যাবসা করছে।প্রতিটা জেলা শহরে এখন ৫ থেকে ১০ টির মত সাব অফিস! প্রসাশন একেবারে নির্বিকার! অর্থ মন্ত্রনালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেমন যেন নিস্ক্রিয়! এইসব হায় হায় কোম্পানির মধ্যে একটি কোম্পানির কথা আমি জানি। এটির নাম “ আর্থ ডিস্টিবিউশন” এই কোম্পানির মালিক একুশে টিভির এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন সমাজের অনেক বড় ও প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি তার সাথে পার্টনার হিসাবে আছেন। উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা , এমন কি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা ও নাকি জড়িত এই ব্যবসার সাথে। তাহলে বিষয়টি তো মারাত্মক! এম এল ব্যাবসা পৃথিবীর বহু দেশে আছে। এটি বৈধ। তবে বাংলাদেশে এ কি ভয়ঙ্কর অবস্থা! একটু আলোচনা করি।
আর্থ ডিস্টিবিউশন এর এজেন্ট শিপ নিতে হলে প্রথম ২৫০০০০ টাকা সদস্য হিসাবে, এবং ৭৫০০০০ টাকা দিতে হবে ডিলার শিপ বাবদ। ঠিক আছে দিলাম। তার পর। এক ভয়া বহ সিস্টেম! মাত্র ৬ মাসেই কোটি পতি। কিন্তু কিভাবে? আমরা জানি এম এল এম এর একটি দুষ্ট চক্র আছে। প্রথমে এক হাত। তার পর ২। ২ থেকে ৪। ৪ থেকে ৮। এইভাবে যত হাত বাড়বে তত বিল গেটস হবার হাতছানি! এই প্রতিষ্ঠান যে কোন অঙ্কের অর্থ মাত্র ৬ থেকে ১০ মাসে দিগুণ বানিয়ে দেবে! এম এল এম কোম্পানি যদি ১০ মাসে ২ গুন মুনাফা দেয়, তবে আমাদের দেশের ব্যাংক কি আঙ্গুল চুষবে? তারা কেন পারেনা ১০ মাসে ২ গুন দিতে? কেন তারা ডাবল বেনিফিট ৭ বছর পরে দেয়? কারন ১০ মাসে পৃথিবীর কোন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ২ গুন লাভ দিতে পারেনা। এক মাত্র হায় হায় কোম্পানি ছাড়া! এই প্রতিষ্ঠান অয়াল মেট, আর সাপের বিষ এর ব্যাবসা করবে বলে সদস্যদের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করে। অত্যন্ত সহজ, সরল, গ্রামের পুরুষ, মহিলারা আগ্রহী হয়ে ওঠে। ইস যদি ১০ মাসে ২ গুন পাওয়া যায়। শুধু ২ গুন নয়, এর পরে ও আছে কমিশন। যত সদস্য বাগিয়ে আনতে পারবে, ততো কমিশন!
শুধু গ্রামের সহজ, সরল প্রান মানুষ গুলী কি প্রতারিত হচ্ছে? শহরের অনেক চতুর লোক ও ধরা খাচ্ছে। আমারই এক বন্ধু মান্না একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির পদস্থ কর্মকর্তা, সেও ধরা খেয়েছে! ব্যাচারা হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স, তারপরে এম বি এ। হিসাব বিজ্ঞানে পড়েও হিসাব মেলাতে পারেনি কেমন করে ১০ মাসে ২৮০০০০ টাকা ২ গুন হয়ে ২৮০০০০*২= ৫৬০০০০ টাকা হয়। এই হচ্ছে অবস্থা। কিছুদিন পূর্বে অর্থ মন্ত্রী বলেছিলেন,
এই সব হায় হায় কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এবং এম এল এম ব্যবসার একটি সঠিক নীতিমালা প্রনয়ন করা হবে।
এমএলএম নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অতিরিক্ত বাণিজ্যসচিব এম মর্তুজা রেজা চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), আরজেএসসি, ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং এমএলএম কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে।
এমএলএম কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসব বৈঠকে বলেছেন, যেসব পণ্যের বাস্তব অবস্থান নেই, সেগুলোও এমএলএম পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। অনেকে দেশে বসে বিদেশে বাড়ির ব্যবসা করছেন বা কাল্পনিক সেবায় অর্থ বিনিয়োগ করছেন। এমনকি বাংলাদেশে কোনো কার্যালয়ও নেই তাঁদের। অথচ কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন সাহেব সকলকে সতর্ক করে বলেছেন এই সব চক্রে যেন কেউ পা না দেয়।
সবার উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই। হায় হায় এইসব কোম্পানি থেকে সাবধান! কোন বিনিয়োগ করার পূর্বে অবশ্যই আগে দেখে নিন, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর অনুমতি আছে কিনা? ফাইনান্স মন্ত্রনালয় এর কি স্মারক রয়েছে?আর আবার ও বলি কোন অর্থ ১০ মাসে ২ গুন সম্ভব নয়। কাজেই সাবধান!

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১১

মন্তব্য প্রতিবেদন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার আজ বোঝা!




প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের নিমিত্তে গঠিত বিশেষ কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কমিটির সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাই শেখ সেলিম এমপিকে টেলিভিশনে বলতে শুনলাম, আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, সেই অবৈধ বোঝা আমরা ঘাড়ে নেব কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে ১৭ বছর আগের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হয়। ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং সংসদের তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টি সম্মিলিতভাবে দুই বছরব্যাপী সফল, সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ সেলিম বর্ণিত অবৈধ বোঝাটি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন আওয়ামী লীগ নেত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারারুদ্ধ জামায়াত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরী (তখন এনডিপি প্রধান) ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে (তখন জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারক) পাশে বসিয়ে সর্বপ্রথম ‘অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সংবাদ সম্মেলনেই আজকের সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, দল নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই সময় ক্ষমতাসীন দল বিএনপি’র অবস্থান ছিল উল্টো মেরুতে। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নন’ বক্তব্য দিয়ে আওয়ামীপন্থী সংবাদ মাধ্যম, বুদ্ধিজীবী এবং কলামিস্টদের দ্বারা দারুণভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলন চলাকালীন আমি বর্তমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপে কর্মরত ছিলাম। তখনকার একদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলি। যতদূর জানি, সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে সালমান এফ রহমানের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে এবং বর্তমান বিএনপি’র স্ট্যান্ডিং কমিটির এই প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আমারও ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রপাত বেক্সিমকো থেকেই। সেই থেকে সব বিষয়ে একমত পোষণ না করলেও আমাদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। ১৯৯৫ সালে সরকার বিরোধী উত্তাল আন্দোলনের সময় আমার সামনেই একদিন সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরী বেক্সিমকোর টেলিফোনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে পরিচালিত যৌথ আন্দোলনের কৌশল নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা করেছিলেন। আলোচনাকালে সালাহ্উদ্দিন ভাইকে তার স্বভাবসুলভ স্টাইলে রঙ্গ-রসিকতাও করতে শুনেছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের সময় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিষয়টি সম্ভবত আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর তখন জানা ছিল না! আজ যখন দেখি, সেই শেখ হাসিনার নির্দেশেই সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরী তারই পুলিশ এবং গোয়েন্দা বাহিনী দ্বারা রিমান্ডে নির্মমভাবে নির্যাতিত অপমানিত হচ্ছেন, তখন সেসব দিনের কথা বড় মনে পড়ে যায়। নীতিহীন রাজনীতিবিদদের হাতে অত্যাচারিত ও প্রতারিত হওয়াই বোধহয় এদেশের দরিদ্র, অসহায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিধিলিপি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির স্ববিরোধিতার দিকে খানিক দৃষ্টিপাত করা যাক। দলটির স্তাবকশ্রেণী দাবি করে থাকে যে, আওয়ামী লীগ নাকি সর্বদাই গণতন্ত্রের সপক্ষ শক্তি এবং বিএনপি’র জন্মকালে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টতার কারণে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা অস্পৃশ্য। দলবাজ আদালতের ধরা-ছোঁয়ার বাইরের নির্মোহ ইতিহাস কিন্তু এ বিষয়ে ভিন্ন সাক্ষ্য দিচ্ছে। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানকে আওয়ামী লীগ কেবল স্বাগতই জানায়নি, ১৯৮৬ সালে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে স্বৈরশাসক এরশাদের অবৈধ শাসনের বৈধতা প্রদানের পথও তারাই প্রশস্ত করেছিল। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার আদর্শিক অবস্থানের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী রূপে নন্দিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে জেনারেল নাসিমের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনের অভিন্ন রাজনৈতিক কালো হাতটির পরিচয়ও দেশবাসীর জানা। এক এগারোর জাতিসংঘ নির্দেশিত ক্যুদেতার বিরুদ্ধে আমরা হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র যখন বন্দুকের নলের মুখে দাঁড়িয়েও সাহস করে প্রতিবাদ করে যাচ্ছিলাম, সেই সময় আজকের প্রধানমন্ত্রী তাদের সব অবৈধ কর্মকে আগাম বৈধতা দানের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুতরাং, এরশাদ আমল থেকে শুরু করে মইন-ফখরুদ্দিন জুটি পর্যন্ত তাবত্ স্বৈরাচারী সরকারের সব গণবিরোধী অপকর্মের দায়-দায়িত্ব মহাজোট নেত্রী আজ অস্বীকার করতে পারেন না। বর্তমান ক্ষমতাসীন মোর্চার প্রধান দলটির ধারাবাহিক স্ববিরোধিতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতেও জনগণ এখন দেখতে পাচ্ছে। যে অবৈধ বোঝা শেখ সেলিম কৌশলগত কারণে আর বহন করতে চাচ্ছেন না, অসহায় জনগণের কাঁধে সেটি এতদিন ধরে চাপিয়ে রাখার অপরাধে বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড়ান, তারা হাত জোড় করে অন্তত ক্ষমা তো চাইতে পারেন। নাকি এটুকু দাবি করলেও আমরা ফ্যাসিবাদের নিগ্রহের শিকার হব?
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যে বিভক্ত রায় দিয়েছেন, স্ববিরোধিতার মাপকাঠিতে সেটিও গিনেস বুকে অনায়াসে স্থান করে নিতে পারে। মাননীয় লর্ডশিপরা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসপেকটিভভাবে অবৈধ, তবে আগামী দুই মেয়াদ অর্থাত্ অন্তত আরও দশ বছর জনস্বার্থে এই পদ্ধতি চলতে পারে। ইংরেজি শব্দ ‘প্রসপেকটিভ’-এর অর্থ সাধারণ জ্ঞানে যা বুঝি তা হলো, এখন থেকে। আর বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ইংরেজি-বাংলা অভিধানে শব্দটির অর্থ লেখা আছে, ‘ভাবীসাপেক্ষ’। যে আইন এখন থেকেই অবৈধ কিংবা ভাবীসাপেক্ষ, সেটি আবার দশ বছর চলে কি করে, তার জবাব দেয়ার মতো মেধা আমার নেই। জাতিকে জ্ঞানদান করার জন্য ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তিত্ব’ বিশেষণে ভূষিত বিচারপতি খায়রুল হকের কাছে দৌড়ানো যেত, কিন্তু তার আর্থিক অনৈতিকতা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি আল্লাহ্র দোহাই দিয়ে তাকে একা থাকতে দেয়ার আকুতি জানিয়েছেন। রায় নিয়ে আরও কথা আছে। রেট্রোসপেকটিভভাবে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানের মূল নীতি থেকে কলমের এক খোঁচায় ‘আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ সরিয়ে ফেলা হলেও ত্রয়োদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রে ‘প্রসপেকটিভ’ আমদানি করা হলো কেন? উত্তর সম্ভবত, তাহলে তো ১৯৯১ পরবর্তী সব সরকারই অবৈধ হয়ে যায়। তাতেও অবশ্য বিচারপতি খায়রুল হকের কোনো অসুবিধা ছিল না, যদি কোনোক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচিত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৯৯৬ সাল এবং বর্তমান সরকারকে বৈধ দেখানো যেত। আদালতের ভাষায় ত্ধঃরড় বলে একটা শব্দ আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতিদের কে কোন ত্ধঃরড়’র ভিত্তিতে কি রায় লিখেছেন, সেটি আমজনতার জানার কোনো উপায় নেই। তবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থে পরিচালিত ঔঁফরপরধষ ধপঃরারংস-এর নামে আমাদের রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে গত আড়াই বছরে যেভাবে আঘাতের পর আঘাত হেনে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে, তার জন্য অবশ্যই একদিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বর্ণিত শতাব্দীর সেরা বিচারকটিকে জবাবদিহি করতে হবে। ‘প্লিজ, লিভ মি এলোন’ বলে সর্বদা পার পাওয়া যাবে না।
রবীন্দ্র সঙ্গীতের পরম ভক্ত এই হাদিস বিশারদ বিচারপতি আমাদের সংবিধানকে নির্দয়ভাবে ছিঁড়ে-খুঁড়ে রেখে গেছেন। পঞ্চম, সপ্তম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী তার হাত দিয়েই বিলুপ্ত হয়েছে। এই তিন সংশোধনীর রায়ের ধারাবাহিকতায় অষ্টম এবং একাদশ সংশোধনীর অবস্থাও নড়বড়ে। অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এসেছে এবং সংবিধানে একাদশ সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছিল যাতে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে প্রধান বিচারপতির পুরনো পদে ফিরে যেতে পারেন। বাংলাদেশের যে ক’জন সম্মানিত নাগরিককে নানা কারণে আমি দূর থেকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি, তাদের মধ্যে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অন্যতম। ১৯৯০ সালের টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করতে অসম্মত ছিলেন, এটাও সত্যি। তারপরও শুধু দেশের একজন নাগরিকের কোনো ইচ্ছাপূরণে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি মেনে নেয়া কঠিন। পঞ্চম, সপ্তম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর এখন কোনো নাগরিক অষ্টম এবং একাদশ সংশোধনী বাতিলের জন্য যদি আদালতের শরণাপন্ন হন, তাহলে আমার ধারণা দুটো সংশোধনীকেই রক্ষা করা কঠিন হবে। রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এবং বিতর্কিত বিষয়াবলীতে আদালতকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জড়িয়ে বিচারপতি খায়রুল হক আদালতের মর্যাদা শেষ করার পাশাপাশি দেশকেও স্থায়ী বিভাজনের দিকে নিয়ে গেছেন। এই দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার বিবেচনায় কোনো ব্যক্তি এতবড় রাষ্ট্রদ্রোহ সংঘটিত করার পর কেবল আল্লাহ্র দোহাই দিয়ে গা বাঁচাতে পারেন না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাংলাদেশের মতো এক হতদরিদ্র দেশের সম্পদের বিপুল ক্ষতি সাধন করা হয়েছিল। তদুপরি শত শত অমূল্য প্রাণ ঝরেছিল সেদিন। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে আজ যারা বিজয়ীর বেশে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঝেড়ে ফেলার সদর্প ঘোষণা দিচ্ছেন, তাদের ১৯৯৪ সালে ফিরে তাকানোর অনুরোধ করি। সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের আস্কারায় দেশকে পুনর্বার সংঘাতের দিকে নিয়ে সম্পদ ও প্রাণহানির দায় থেকে আপনারা মুক্ত থাকতে পারবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে একবার ইতিহাসে নাম লিখিয়ে, আবার ১৭ বছর বাদে সময়-সুযোগমত আদালতকে দিয়ে সেই পদ্ধতিকে বাতিল করানোকেও যুগান্তকারী বলে ইতিহাসে দ্বিতীয়বার নাম লেখাতে চাইবেন—এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। গত মাসের ৩০ তারিখে সংবিধান সংশোধন কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সভাশেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে এর পরিণতির সব দায়ভার কিন্তু তাদেরই নেত্রী শেখ হাসিনার কাঁধেই চাপিয়ে দিয়েছেন। এর আগে এই কমিটির সঙ্গেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধন বিষয়ে বিশদ সুপারিশমালা দিয়ে এসেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে, সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির পক্ষেই তার অভিমত জানিয়েছিলেন। আজ হঠাত্ করে তার ইউ টার্ন এবং পারিষদদের সাধু, সাধু রব অনেক প্রশ্নের জন্ম তো দিয়েছেই, তার সঙ্গে দেশকেও গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার যেসব বাছাই করা নাগরিকের সঙ্গে সংবিধান সংশোধন কমিটি বৈঠক করেছে, তাদের মধ্যেও অন্তত শতকরা নব্বইভাগ এই পদ্ধতি অব্যাহত রাখারই সুপারিশ করেছেন। এরপর কমিটির দায়িত্ব ছিল সবার মতামত সন্নিবিষ্ট করে চূড়ান্ত সুপারিশমালা সংসদের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা। দেশের বিশিষ্ট সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকেও সংবিধান সংশোধন কমিটির চেয়ারম্যান এবং কো-চেয়ারম্যান যথাক্রমে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমন কথাই বলেছিলেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন, এমন কোনো ইঙ্গিত আজ পর্যন্ত কমিটির কোনো সদস্যের কাছ থেকেই পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে সর্বমহলের সঙ্গে আলোচনার নামে এই কালক্ষেপণ এবং তামাশার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এই সর্বনাশা পথ থেকে বিরত হওয়ার এখনও সময় আছে। সংবিধান সংশোধন কমিটির সব দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে টেনে নেয়ার ঝুঁকির বিষয়টি নিয়েও আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর একবার ভেবে দেখবেন।

বুধবার, ১ জুন, ২০১১

আসুন গীতা পাঠ করি-3




সমগ্র শাস্ত্রের নির্যাস বেদান্ত উপনিষদে। বেদান্ত উপনিষদের নির্য্যাস শ্রী শ্রী গীতায়।
গীতায় আছে: 9/14
সততং কীর্ত্তয়ন্তো মাং, যতন্তশ্চ দৃঢ়ব্রতাঃ
নমস্যন্তশ্চ মাং ভক্তা, নিত্যযুক্তা উপাসতে।।
অথর্াৎ দৃঢ়নিষ্ঠ ও যত্নশীল ভক্তেরা সর্বদা আমার কীর্তন গুণগান করে, ভক্তির সঙ্গে নমস্কার করে, সদা সমাহিত হয়ে আমারই উপাসনা করে।

তো ভগবানকে নিয়ে মানুষের তো প্রশ্নের শেষ নেই, অনুমানের শেষ নেই। মানুষের, পন্ডিতদের বিভিন্ন জল্পনা -কল্পনার জবাব দিচ্ছেন ভগবান এই বলে:

ন ত্বেবাহং জাতুং নাসং , ন ত্বং নেমে জনধিপাঃ
ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃপরম।।

অর্থাৎ ভগবান বললেন, বিজ্ঞরা জানেন যে, আদিকালে আমি ছিলাম না, এমন নয়; তুমিও কখনও ছিলে না, তা নয়; বা এই নৃপতিরাও ছিলেন না, তাও সত্যি নয়। ভবিষ্যতে যে আমরা আবার থাকবো না, তা ভুল। অর্থাৎ আমরা আগেও ছিলাম, এখন বর্তমানেও আছি আর পরে ভবিষ্যতেও থাকবো।
এই কথার কি মানে হতে পারে। হতে পারে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত একাকার। সব মিলিয়ে থাকা। আমরা যদি সময়কে একটি বহুতলা বিলিডং কল্পনা করি। আর মনে করি তার মধ্যে বর্তমানে লিফটি যে তলায় (ধরা যাক 8 তলা) দাঁড়িয়ে আছে তা বর্তমান। তাহলে 7 তলা থেকে নীচের সবগুলো তলা হচ্ছে অতীত। আর 9 তলা থেকে উপরের সবগুলো তলা হচ্ছে ভবিষ্যত। এখন যে লিফটে 8 তলায় আছে তার ধারণা শুধু আটতলাটিই আছে। অন্য তলাগুলির কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু বিলিডংটির বাইরে থেকে যে দেখছে সে সবকটি তলাকেই দেখতে পাচ্ছে। অর্থাৎ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে দেখতে পাচ্ছে। সময় সব সময়ই বর্তমান। অথবা স্টিফেন হকিংসের সূত্রে বলা যায় সময় বলে কিছুই নেই।

মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১১

ফটোশপ শিখুন বাংলায়

গ্রাফিক্স ডিজাইনিংটা আমরা শুরু করি ফটোশপ দিয়ে। অনলাইনে ফটোশপের অসংখ্য টিউটোরিয়াল আছে। কিন্তু এসবের বেশীরভাগ ইংরেজীতে হওয়ায় যারা অপেক্ষাকৃত ইংরেজীতে দুর্বল তারা সহজে আয়ত্বে আনতে পারেনা। কিন্তু সেই সমস্যাটা দূর হচ্ছে। এখন আপনি চাইলে বাংলায় ও এই সফটওয়্যারের টিউটোরিয়াল পেতে পারেন।সবার সুবিধার্থে কাজটি করছে আইটেকবাংলা । যাদের মোটেই ধারণা নেই তারাও শুরু করতে পারেন। নিচের বিষয়গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। এখানে নিয়মিত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন টপিক। এছাড়া নিবন্ধিত হয়ে আপনার মতামত জানাতে এবং সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
ফটোশপ শেখার আগে জানুন
গ্রাফিক্সের মোস্ট ওয়ান্টেড টিপস (রঙের ভাষা)

বেসিকস
ফটোশপ বেসিকস: ইন্টারফেস পরিচিতি
ফটোসপ বেসিকস- টুলবক্স পরিচিতি (পর্ব-১)
ফটোসপ বেসিকস- টুলবক্স পরিচিতি (পর্ব-২)
ফটোসপ বেসিকস- টুলবক্স পরিচিতি (পর্ব-৩)
ফটোশপ বেসিকস: নতুন ফাইল খোলা এবং খামখাই ইচ্ছেমত আঁকুন
ফটোশপ বেসিক: নতুন ডকুমেন্ট খোলা
ফটোশপ বেসিকস: ফাইল খোলা এবং নাড়াচাড়া
ফটোসপ বেসিকস: ছবি ক্রপ (কাটাকাটি) করা
ফটোশপ বেসিকস: ছবির পরত (লেয়ার) এবং বিভিন্ন ফরম্যাট
ফটোশপ বেসিকস ৫: লেখা যোগ করা ও লেয়ার ইফেক্ট
photoshop (Width and Height) এবং ইমেজকে কমপ্রেস করা
ফটোশপে তৈরী করতে পারবেন পশু-পাখি বা ফুল আরো অনেক ‍িক
ফটোসপে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড চেইঞ্জ করার কিছু সহজ উপায়


ব্রাশ
ফটোসপেই তৈরি করুন ফটোসপের ব্রাশ!!
ফটোসপের ব্রাশ যেভাবে ইনষ্টল করবেন
ফটোসপের দারুন একটা ব্রাশ!!
ফটোসপের ফাটাফাটি ১০ টি ব্রাশ ডাউনলোড করুন (পর্ব-২)
ফটোসপের ব্রাশ-Dried Blood Splatters (ডাউনলোড)

ইফেক্টস
ফটোসপে গ্লোয়িং ইফেক্ট!!
টেক্সট ইফেক্ট(Cloth Effect)
টেক্সট ইফেক্ট-০২
টেক্সট ইফেক্ট-০৩
টেক্সট ইফেক্ট-০৪(স্মোক ইফেক্ট)
টেক্সট ইফেক্ট-০৫
ফটোশপে সহজ একটা টেক্সট ইফেক্ট
ফটোশপ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন টেক্সক্ট লাইট ইফেক্ট তৈরী
ফটোশপ দিয়ে টেক্সট ইফেক্ট-১০
ফটোসপে ইফেক্ট দিন মাত্র ৩ ধাপে
ফটোসপে ইফেক্ট দিন মাত্র ৫ ধাপে
এক ছবির ইফেক্ট দিন অন্য ছবিতে
25 ESSENTIAL Photoshop MOves

স্টাইল
ফটোশপ styles
ফটোসপে ষ্টাইল ও গ্রিডেন্ট এর ব্যবহারবিধি+ডাউনলোড


ফিল্টারস
ফটোশপে ছবির ইফেক্ট দেওয়া
Cloud Filter(নীল আকাশ তৈরী)
Polar Coordinates-pointillze Filter এর ব্যবহার


প্রজেক্টস
ফটোসপে ছবি কালার করার সহজ উপায়
স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা(ফটো এডিটিং)
মুখের উপর টেক্চার ইমপোর্ট
ফটোশপে তৈরী করুন ফটো গ্যালারী
পাহাড়ের ভিতর সুর্যাস্ত তৈরি
গ্রহ উপগ্রহ এর ছবি ফটোশপ দিয়ে তৈরি
গ্রহ উপগ্রহের ছবি ফটোসপে তৈরি করুন (পর্ব-২)
গ্রহ উপগ্রহের ছবি ফটোসপে তৈরি করুন (পর্ব-৩)
আইকন তৈরী-০২
আইকন-০৪
ফটোসপে ওয়ালপেপার তৈরি পর্ব-০৪
ফটোসপে ওয়ালপেপার তৈরি-০৫
ফটোশপ দিয়ে ভিসতার ওয়ালপেপার তৈরি-০২
ফটোসপে ভিসতার ওয়ালপেপার তৈরি করুন পর্ব-৪
ফটোসপে ওয়েভ ওয়ালপেপার তৈরি
নিজেই তৈরী করুন নতুন বছরের ই-কার্ড
নতুন বছরে বন্ধু-বান্ধবদের জন্য তৈরী করুন গ্রিটিং কার্ড


ইমেজ রেডি
ভালবাসা জীবন্ত করে তুলুন
গ্লিটার টেক্সট অ্যানিমেশন

অন্যান্য
ছবির ফোল্ডার
ফটোশপ শর্টকার্ট
ফটোশপের জন্য ডিজাইন ফন্ট
প্রফেশনাল কাজের জন্য প্রফেশনাল ফন্ট
ফটোশপ ডিজাইনিং এর জন্য 9480 ফন্ট
ফ্রিতে একটা ফটোশপ! Photofiltre (free)

ফটোশপ শেখার আগে জানুন
রং আল্লাহতায়ালার এক অপার সৃষ্টি। এই মহাবিশ্বের যেদিকেই তাকান না কেন, চারদিকে দেখবেন শুধু রঙের খেলা। চন্দ্র-সূর্য, আকাশ-মাটি, গ্রহ-নক্ষত্র, ফুল-ফল, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত যেদিকেই তাকান রঙের অকল্পনীয় শৈল্পিক ব্যবহার বারবার আপনার চোখে ধরা দিতে থাকবে। রঙের জগত হচ্ছে এক অবাক করা মায়াবী জগত। গ্রাফিক্স ডিজাইনারের যতগুলো অপর নাম আছে তার একটি হলো কালার স্পেশালিস্ট। অর্থাৎ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের আরেক নাম রং বিশেষজ্ঞ। রঙের মাত্রাজ্ঞান, তার যত মহিমা-বৈশিষ্ট্য, এর প্রয়োগ কলাকৌশল, রঙের ভাষা, রঙের ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে যিনি যত বেশি জানেন অর্থাৎ যিনি যত বেশি অভিজ্ঞ, তিনি তত বড় ডিজাইনার।
প্রতিটি মৌলিক রঙেরই এক একটি বৈশিষ্ট্য আছে। রং ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নিজেদের অজান্তেই আমাদের রুচি, অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি, সরলতা ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকি। তাই যেকোনো ডিজাইনেই রঙের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। রঙের ভাষা কি? কেমন? কিভাবে প্রকাশ করা হয়? আসুন এ ব্যপার গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক...
রঙের বিভিন্ন রকম পরিচিতি আছে, লাল রং আপনাকে থেমে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আর সবুজ রং আপনাকে এগিয়ে যেতে বলে। ঠিক তেমনি হলুদ রং আপনাকে অপেক্ষা করার আবেদন জানায়। কালো রং শোক প্রকাশ করে আবার সাদা রং সরলতার প্রতীক। একটি রং যখন আরেকটি রঙের সাথে মিলিত হয় তখন একটি অপরটির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। ছবিতে দেখুন একই রং অন্যান্য রঙের সংস্পর্শে এসে কিরকম প্রভাবিত হয়েছে...
রঙের যথাযথ ব্যবহার আপনার পণ্যের বিক্রি বাড়িয়ে দেবে বহুগুন, ঠিক তেমনি ভুল রঙের ব্যবহার আপনার পণ্যকে নিমিষেই ফ্লপ করিয়ে দিতে পারে। আপনি রঙের মানানসই প্রয়োগ দেখতে বিশ্বের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোতে ঢুঁ মারতে পারেন। সেখানে দেখতে পাবেন কিভাবে রঙের সামঞ্জস্য করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক রঙের ব্যবহার দেখা যায়, কারন একটি ডিজাইনে একই রঙের বিভিন্ন মাত্রা ব্যবহার করে দেখা গেছে যে খুব সহজেই ফাটিয়ে দেয়া যায়।
জমকালো রং মানেই উৎকৃষ্ট ডিজাইন নয়। বরং এর বিপরীত টাই উৎকৃষ্ট ডিজাইন। হ্যাঁ, অনেক সময় দেখা গেছে যে ডিজাইনের প্রয়োজনেই (যেমন রঙের ডিব্বা কোম্পানির বিজ্ঞাপন, রঙে রঙে রাঙিয়ে দিলাম টাইপের বিজ্ঞাপন) জমকালো রং ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে রং সম্বন্ধে, রঙের ব্যবহার সম্বন্ধে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা না থাকলে ডিজাইনের শ্রেষ্ঠত্ব বিনষ্ট হতে বাধ্য।
ব্যাকগ্রাউন্ডে এক কালার রং ব্যবহার করার যুগ এখন প্রায় অতীত। দুই রং বা তিন রঙের গ্রেডিয়েন্ট (একটি রং হালকা হতে হতে এক সময় মিশে যায় এবং ঠিক একই ভাবে আরো এক বা একাধিক রং হালকা থেকে গাঢ়তর হয়ে ফুটে ওঠে) ব্যবহারের মাধ্যমে আকর্ষনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা সম্ভব। তবে হ্যা, ব্যাকগ্রাউন্ডে যদি এক রঙের প্রয়োগ ঘটান তাহলে, যে রং টি ব্যবহার করছেন ঐ একই রঙের বিভিন্ন মাত্রাসহ ব্যবহার আপনার ডিজাইন কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে বহুগুন। রঙের মাত্রা সম্পর্কে এবার একটু আলোচনা করা যাক...
সাদা, কালো এবং ধূসর রং দিয়ে আমি ব্যাপারটা সহজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
এখানে পিউর হোয়াইট এবং পিউর ব্ল্যাক এর মধ্যে যতগুলো রং দেখছেন সবগুলো হচ্ছে ধূসর বা গ্রে কালারের বিভিন্ন মাত্রা। আবার পিউর হোয়াইট থেকে ৪০% গ্রে পর্যন্ত যতগুলো রং বিদ্যমান সেগুলোকে আপনি সাদা রঙের বিভিন্ন মাত্রাও বলতে পারেন। কালো রঙের মাত্রাও তেমনি ৬০% গ্রে থেকে পিউর ব্ল্যাক পর্যন্ত। আর ৫০% গ্রে কালারটিকে পিউর গ্রে কালারও বলতে পারেন। এভাবে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ সব রকম রঙেরই বিভিন্ন মাত্রা আছে।
হ্যাঁ, রঙের ক্ষমতা সম্পর্কে আরো কিছু বলা যাক...
রং আপনার চোখে ও অন্তরে প্রশান্তি এনে দিতে পারে, আবার আপনার চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিতেও রঙের জুড়ি নেই। রং আপনার মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারে। আপনার মনে উত্তেজনার ঝড় বইয়ে দিতে রঙের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিছু কিছু রং আছে একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারেনা। মানে এদের সহাবস্হান ততটা সুখকর নয়।
অনেক হয়েছে, এবার প্রচলিত কয়েকটি রং সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে এই লেখার ইতি টানা যাক।
নীলঃ নীল একটি ঠান্ডা রং। সাধারনত শান্তি, স্নিগ্ধতা, আবেগ-অনুভূতি, সম্প্রীতি, কোমলতা ইত্যাদি বুঝাতে নীল রং ব্যবহার করা হয়। খুব সিম্পল টাইপের ডিজাইনে নীল রঙের ব্যবহার বেশি হলেও অ্যাবস্ট্রাক্ট টাইপের ডিজাইনে স্পিড আনতে নীল রঙের জুড়ি নেই। নীলের সাথে সাদা, কালো বা গ্রে ভালো মানায়। ঠিক তেমনি গোধূলির মত কমলা বা গোলাপী রং নীলের সাথে ব্যবহার করলে ফলাফল তেমন একটা ভালো হয়না।
লালঃ লাল একটি চোখ ধাঁধানো তীব্র রং। সাধারনত ডিজাইনে বিষয়বস্তুর তীব্রতা বোঝাতে এর ব্যবহার দেখা যায়। স্পিড, এডভেঞ্চার, ভায়োলেন্স, এক্সাইটিং ইত্যাদি ভাব প্রকাশার্থে লাল রং আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে। তবে ডিজাইনে লালের ব্যবহার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। আর সেই সাথে লাল-সবুজ, লাল-হলুদ, লাল-বেগুনি ইত্যাদি ডিজাইনে ব্যবহার করা অনুচিত। কারন এদের সহাবস্হান ভালো ফলাফল দেয়না।
বেগুনিঃ আধ্যাত্মিকতা, আভিজাত্য বিশেষ করে রাজকীয় ডিজাইনে বেগুনির ব্যবহার ভালো ফল দেয়। ধর্মীয় ডিজাইনে এর ব্যবহার বেশি। ব্যাকগ্রাউন্ড কালার হিসেবেও বেগুনি দারুন কাজ করে।
সবুজঃ প্রানচাঞ্চল্য, সজীবতা, নিসর্গ, আন্তরিকতা ইত্যাদি বুঝাতে সবুজ রং ব্যবহার করা হয়। সবুজের সাথে বাংলাদেশের প্রকৃতির যথেষ্ট সখ্যতা আছে। সবুজের সাথে একমাত্র লালের ব্যবহারেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
হলুদঃ হলুদ রং সাধারনত প্রফুল্লতা, সাহস ইত্যাদি বুঝাতে ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেক্সটকে হাইলাইট করতে ডার্ক ব্যাকগ্রাউন্ডে হলুদ রঙের টেক্সট ব্যবহার করা হয়।
গোলাপিঃ গোলাপি রং রমণীয়, কমনীয় আর রূপ লাবণ্যের প্রতীক। ডিজাইনে সৌন্দর্য বাড়াতে কিংবা আনকমন একটা ভাব আনতে এর ব্যবহার দেখা যায়। তবে এর বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবহার আপনার ডিজাইনকে নষ্ট করে দেবে।
কমলাঃ ন্যাচারাল ডিজাইন ছাড়া কমলার ব্যবহার তেমন একটা দেখা যায় না। অথচ হালকা পরিমানে কমলার ব্যবহার আপনার ডিজাইনকে আনকমন ও গুডলুকিং করে তোলে।
ধূসরঃ সাদাকালো ডিজাইনের ক্ষেত্রে গ্রে কালারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অবশ্য গ্রে নিজেই সাদাকালো রঙের মধ্যে পড়ে। রঙিন ফটোগ্রাফ থেকে সমস্ত রং শুষে নেওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই সাদাকালো ইফেক্ট দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে সাদাকালো ইফেক্ট তেমন মানানসই হয়নি। এমতাবস্হায় গ্রে কালার ব্যবহারের মাধ্যমে সাদাকালো ইফেক্টকে আকর্ষনীয় করে তোলা যায়।
সাদাঃ এটি একটি নিরীহ টাইপের রং। সাধারনত সরলতা, শক্তি আর তারুন্যের প্রতীক এই সাদা রং। আপনার ডিজাইনে ঝকঝকে, তকতকে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাব আনতে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
কালোঃ এটি সর্বাধিক রঙের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত একটি রং। কালো রং সাধারনত শোক প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এর ভেতর রহস্যময়তা ও খান্দানি ভাব আছে। কালোর সাথে যেকোনো রং মানায়। আপনার ডিজাইনে গাম্ভীর্য টাইপের ভাব প্রকাশেও এটি অনন্য। ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্ষেত্রে এক কালার কালো ব্যবহার না করে কালোর বিভিন্ন মাত্রাসহ ব্যবহার কিংবা কালোর সাথে অন্য কোনো রঙের গ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করলে অত্যন্ত ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিঃ দ্রঃ এত বড় টিউটোরিয়াল কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এখানে অসংখ্য ভুল থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে দয়া করে এই অধমকে গালাগালি না করে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন। লিখতে লিখতে তো জান কয়লা হয়ে গেছে। কিবোর্ডের কী ও দুয়েকটা নষ্ট হয়ে গেছে (মনে হয়)।
আমার ফ্যান পেজ

সোমবার, ৩০ মে, ২০১১

শহীদ জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি




শহীদ জিয়ার শাহাদাত দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে গিয়ে যে কথাটি সর্বাগ্রে মনে আসে তা হচ্ছে, একজন সফল ও স্মরণ্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অল্প সময়েই তাঁর প্রতিষ্ঠা। নতুন স্বাধীনতা পাওয়া দরিদ্র ও অনগ্রসর একটি দেশ, যা ছিল রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দোদুল্যমান—তাতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোতে স্থাপন করে, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তি সুদৃঢ় করে উন্নয়নের রাজপথে চলমান করিয়ে দেওয়ার বিরল কৃতিত্বের বিতর্কাতীত অধিকারী শহীদ জিয়াউর রহমান। ভাবলে অবাক হতে হয়, রাজনীতিতে সেই সময় অনভিজ্ঞ এক তরুণ কর্মকর্তা কী অদম্য সাহস, অপরাজেয় মনোবল এবং অসীম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতির দিকনির্দেশনা স্থির করে দেন। ঘোষণা-উত্তর স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে সফল সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সম্মুখসমরে অংশ নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আনতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। আবার সফল মুক্তিসংগ্রাম-উত্তরকালে মধ্য-সত্তরের চরম অস্থির এক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে কান্ডারি হয়ে জাতিকে বিপর্যয়ের মুখ থেকে রক্ষা করেন এবং সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়নের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে জাতির অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করেন।
জিয়ার নেতৃত্বের প্রথম দিকেই ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি সঞ্জীব রেড্ডি রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার কৃতিত্ব ও সম্ভাবনা সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে গিয়ে এক ঐতিহাসিক সত্য তুলে ধরেন, ‘Your position is already assured in the annals and the history of your country as a brave freedom fighter who was the first to declare the independence of Bangladesh.’ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর জুনের প্রথম সপ্তাহে লন্ডনে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট আয়োজিত এক শোকসভায় তদানীন্তন কমনওয়েলথ মহাসচিব স্যার শ্রীধাত রামফাল যথার্থ উক্তি করেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশে শুধু যে একদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা নয়, এই উন্নয়নকামী দেশকে সার্বিক উন্নয়নের রাজপথে পরিচালিত করেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে সার্কের মাধ্যমে ঐক্যবন্ধনে গ্রথিত করা তাঁর এক স্বপ্ন। তাঁর অকালমৃত্যুতে তাঁর দেশ এক নিপুণ সংগঠক ও সফল রাষ্ট্রনায়ককে শুধু হারাল না, দক্ষিণ এশিয়া হারাল এক দূরদর্শী ও স্বাপ্নিক, উন্নয়নশীল জগৎ হারাল এক মহান নেতা, কমনওয়েলথ হারাল সৌভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী আস্থা সৃষ্টিকারী এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বকে।’
জিয়ার স্মৃতিতর্পণ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা মনে পড়ছে। আমি তখন জেদ্দার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অপারেশনসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট। ব্যাংকের পঞ্চাশোর্ধ্ব সদস্যদেশের মধ্যে একটি দেশ আফ্রিকার মালি। কর্তব্য নিবন্ধনে গিয়েছিলাম রাজধানী বামাকো। অনুসঙ্গী ছিলেন ব্যাংকের দু-তিনজন কর্মকর্তা। মনে পড়ছে যাঁর মধ্যে ছিলেন তরুণ অর্থনীতি-বিশ্লেষক আবদুল্লাহ গুল, বর্তমানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, যিনি গত বছর রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা এসেছিলেন। মালির সরকারি নেতাদের সঙ্গে ব্যাংকের সহায়তা পাওয়া কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা-অন্তে দেশের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট কোনারে বললেন, ‘জেনে খুশি হলাম, আপনি বাংলাদেশের। ওই দেশের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। উন্নয়নকামী দেশগুলোর অগ্রগতির জন্য তিনি এক উল্লেখযোগ্য নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর তিরোধানে এলডিসি দেশগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তারা হারিয়েছে এক অন্যতম যোগ্য নেতা।’
অবাক বিস্ময়ে শুনছিলাম এক প্রয়াত প্রেসিডেন্টের প্রতি আরেক দেশের এক ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের শোকাপ্লুত শ্রদ্ধা নিবেদন। বহু বছর ব্যবধানে এক বহু দূর দেশে। প্রেসিডেন্ট কোনারে আরও বললেন, ‘তাঁর স্মৃতিতে রাজধানীর একটি প্রধান সড়কের নামকরণ করেছি আমরা। ইচ্ছে করলে আপনি গিয়ে দেখে আসতে পারেন।’ তাঁরই নির্দেশনায় প্রটোকলের কর্মকর্তা সমভিব্যাহারে গিয়ে দেখলাম, শহরের প্রশস্ততম রাজপথ কিং ফাহদ সরণির অব্যবহিত পরেই এভিনিউ জিয়াউর রহমান। দুদিকে বৃক্ষশ্রেণীর মধ্যে প্রসারিত দীর্ঘ প্রশস্ত রাজপথ। মনে পড়ল, তুরস্কে দেখেছিলাম জিয়ার স্মরণে আরেকটি সরণি। জান্নাতবাসী জিয়া ওই সেদিন ওই সুদূরে ভ্রমণকারী এক বাঙালির হূদয় গর্বে ভরে দিয়েছিলেন। গিনির প্রেসিডেন্ট সি কো তুরে, ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত, ভুটানের রাজা ওয়াংচুক—আরও বহু এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের কাছে শুনেছি বহু বছরের ব্যবধানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া সম্পর্কে শোক ও শ্রদ্ধামিশ্রিত প্রশস্তি। রাষ্ট্রাচারের প্রয়োজনতাড়িত গতানুগতিক উক্তি নয়, অন্তরের অন্তস্তল থেকে উৎসারিত আবেগঘন শ্রদ্ধা নিবেদন। সবার মনে, দেশে ও বিদেশে ক্ষমতাধরদের মধ্যে ও সাধারণ্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া যে এক পরম সম্মানের আসন চিরকালের জন্য দখল করে আছেন, তা কিসের জন্য? কিসের জোরে? এর মধ্যে তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, নেই রাষ্ট্রাচারের অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ, নেই দ্বিপক্ষীয় প্রশস্তি বিনিময়ের রীতিনীতি। এর কারণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিগৃহীত, বঞ্চিত ও দুর্বল দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবন্ধন সৃষ্টি করে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়। ‘সার্ক’-এর সৃষ্টি, আল আকসা কমিটির আলোচনা, এলডিসি দেশগুলোর স্বার্থরক্ষা—এসব বিষয়ে তাঁর নেতৃস্থানীয় বলিষ্ঠ অগ্রণী ভূমিকা পালন। আরও রয়েছে দেশের মধ্যে জাতির বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধান, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি, জাতীয়তাবাদের ভিত্তি রচনা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, দুরাচারমুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, সর্বোপরি ব্যক্তিগত জীবনে প্রশ্নাতীতভাবে উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করে সব ধরনের দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ—এসব ক্ষেত্রে শহীদ জিয়ার অবিস্মরণীয় ভূমিকা ও নেতৃত্ব, তাঁর অনমনীয় মনোবল, সৎ, সাধু ও নিঃস্বার্থ আচার-ব্যবহার, তাঁর সুদূরপ্রসারী চিন্তা-পরিকল্পনা, তাঁর অতুলনীয় আপসহীন দেশপ্রেম, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এক বিভ্রান্ত, হতাশাগ্রস্ত জাতিকে যেন তিনি একটি জীয়নকাঠির মায়াবি ছোঁয়ায় আত্মবিশ্বাসী, প্রাণবন্ত ও সক্রিয় করে তুলেছিলেন।
বর্তমানে দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, রাজনৈতিক স্বার্থজনিত কারণে ক্ষমতায় আরোহণের প্রক্রিয়া নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে তাঁর চরিত্র হরণের অসাধু কিন্তু নিষ্ফল প্রচেষ্টা হচ্ছে। অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস ৭ নভেম্বরের বর্ণনা দিয়েছেন (বাংলাদেশ: এ লিগ্যাসি অব ব্লাড, অনুবাদ পৃ. ১২২) এভাবে, ‘উল্লসিত কিছু সৈনিক আর বেসামরিক লোক নিয়ে কতগুলো ট্যাংক ঢাকা শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় চলাচল করতে দেখা যায়। এবার এই ট্যাংক দেখে লোকজন ভয়ে পালিয়ে না গিয়ে ট্যাংকের সৈনিকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাস্তায় নেমে আসে এবং উল্লাসে ফেটে পড়ে। চার দিন ধরে তারা মনে করেছিল যে, খালেদ মোশাররফকে দিয়ে ভারত তাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা খর্ব করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এতক্ষণে তাদের দুঃস্বপ্ন কেটে গেল। সর্বত্রই জোয়ান আর সাধারণ মানুষ খুশিতে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি শুরু করে। রাস্তায় নেমে তারা রাতভর স্লোগান দিতে থাকে—বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ, জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ ইত্যাদি। অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের গণজাগরণের মতো জনগণ আবার জেগে উঠেছে। এটা ছিল সত্যিই এক স্মরণীয় রাত।’
এই অভ্যুত্থানকারী সৈনিক-জনতাই বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করে। এর আগে স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাকের জারি করা আইনের ধারাবাহিকতায় খালেদ মোশাররফ প্রশাসনে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিচারপতি সায়েম দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর। সেনাপ্রধান জিয়া তখন খালেদের হাতে বন্দী। ১৯৭৭ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ও সিএমএলের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি সায়েম। এ ঘটনাগুলোতে পরিষ্কারই দেখা যাচ্ছে জিয়া ‘ক্যু’ করে ক্ষমতায় আসেননি। তিনি দেশে সামরিক শাসন জারি করেননি। স্পষ্টতই প্রতীয়মান হচ্ছে, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন এবং সামরিক আইন কোনোটিরই প্রবর্তক জিয়া ছিলেন না, ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। জিয়া পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিরই প্রবর্তন করেন।
জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তাঁর নীতিনির্দেশক কথাগুলো (যা তাঁর তথ্য উপদেষ্টা দাউদ খান মজলিশের মাধ্যমে ১৯৮১ সালে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়) স্মরণ করি, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন শত শত বর্ষ ধরে এ দেশের আপামর জনগণের অন্তরে চিরজাগরূক রয়েছে। যুগ যুগান্তরের দেশপ্রেমিকদের হূদয়ের মর্মমূলে নিহিত তাদের সর্ব উৎসাহ, উদ্যোগ ও প্রেরণার উৎস এই দর্শন। এতে নিহিত রয়েছে বাস্তব আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচী, যা দেশের ঐক্যবদ্ধ জনগণকে সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপযোগী বাস্তবমুখী ও সময়োচিত শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করবে, জাতিকে সুনিশ্চিতভাবে অগ্রগতির ও সমৃদ্ধির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে এবং বিশ্বজাতির দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদা ও গুরুত্বের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।
‘...আমাদের মূল লক্ষ্য তথা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিমূলে রয়েছে যে শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। শোষণমুক্ত সমাজ বলতে মূলত বোঝায় ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও পরিবার পরিকল্পনার মৌলিক চাহিদা পূরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।...একথা স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি শোষণমুক্ত সমাজ, যা হবে অত্যন্ত বাস্তব প্রগতিশীল একটি সমাজ, যাতে থাকবে সমতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার।’
আজকের এই অনিশ্চয়তার দিনে জাতির জন্য আশা উদ্দীপক অনুপ্রেরণার বাণী আর কী হতে পারে?
ইনাম আহমদ চৌধুরী: বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

রবিবার, ২৯ মে, ২০১১

Shabnur A Bangladeshi Actress


বাংলা ছবির জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূরের বাড়ি নোয়াখালী! যারা এ কথা বিশ্বাস করছেন না তাদের জন্য বলার শুধু এটুকুই- পি এ কাজলের ‘পিরীতের দোকানদারী’ ছবিটি বেরুনোর পর হলে গিয়ে দেখুন- চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। কারণ গড়গড় করে নোয়াখালীর মানুষের মতো করে কথা বলবেন এই জনপ্রিয় নায়িকা!
ছবির প্রয়োজনে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে শাবনূর গ্লিটজকে বলেন, “নোয়াখালীর মানুষের মুখের ভাষাটা অনেক মজার। আর এটা বাকী অঞ্চলের চেয়ে আলাদা তো বটেই। ফলে এই ভাষায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রথমে একটু সমস্যা হলেও পরে খুব মজা পেয়েছি।”
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলার জন্য তাকে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হয়েছে। আর শুটিং ইউনিটের বেশিরভাগ মানুষ নোয়াখালীর হওয়ায় তার বেশ উপকার হয়েছে ভাষাটি আয়ত্ব করার ক্ষেত্রে।
‘পিরিতির দোকানদারী’ ছবিতে শাবনূরের নায়ক নবাগত আমান খান।
ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন- রাজ্জাক, বিন্দু, ইমন, দিঘী সহ অনেকে।
ছবিটি প্রযোজনা করছেন নিশা তাসনিম শেখ। পরিবেশনায় রয়েছে ‘ঋদ্ধি টকিজ’।
এর আগে বরিশাল এবং ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় তাকে কথা বলতে দেখা গেছে ছবির পর্দায় শাবনূরকে।

বলিউড তারকায় মুখর কান চলচ্চিত্র উৎসব


১১ই মে থেকে শুরু হয়ে বিশ্বের নন্দিত তারকাদের পদচারণায় ইতিমধ্যে মুখর হয়ে উঠেছে ৬৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবস্থল।
উৎসবে হলিউড তারকাদের বাইরে এবার বলিউড তারকাদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। ১১ থেকে ২২শে মে পর্যন্ত এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বলিউড তারকা কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে উৎসবে যোগ দিয়েছেন বলিউড পেরিয়ে হলিউডেও অবস্থান করে নেয়া ঐশ্বর্য রাই বচ্চন এবং মল্লিকা সারাওয়াত।
১১ই মে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেড কার্পেটে হাঁটার মধ্যে দিয়ে এই উৎসবে যোগ দেন সর্বপ্রথম ঐশ্বর্য রাই। গত আসরেও এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন সাবেক এ বিশ্ব সুন্দরী। হলিউডের আদলে একটি গাউন পড়ে এবারের উৎসবে যোগ দিয়ে মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবার নজরই কেড়েছেন ঐশ্বর্য।
মিডিয়ার কাছে তিনি এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবটি এক কথায় ‘অসাধারণ’ বলে উল্লেখ করেন। ঐশ্বর্য’র মতোই হলিউডের তিনটি ছবিতে কাজ করা মল্লিকা টানা তৃতীয়বারের মতো এবারও যোগ দেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে।

হামিদ মীর : সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক




হামিদ মীর। শুধু একটা নাম নয়, অকুতোভয় সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক। তিনি সাংবাদিক, সংবাদ উপস্থাপক, সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশেস্নষক। জন্ম পাকিসত্মানের লাহোরে ১৯৬৬ সালের ২৩ জুলাই। বড় হয়েছেন সাহিত্যিক পরিম-লে। পড়াশুনাও করেছেন সাংবাদিকতা নিয়েই। ১৯৮৯ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ (mass communication) বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
সাংবাদিক হওয়াটা যেন নিয়তি ছিল হামিদ মীরের জন্য। কলামিস্ট বাবা অধ্যাপক ওয়ারিস মিরের আকস্মিক মৃত্যু তাকে টেনে নিয়ে আসে সাংবাদিকতার জগতে। মাত্র ২১ বছর বয়সে (১৯৮৭ সালে) যোগ দেন দৈনিক জং পত্রিকায়। সাথে ছিল বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অকুতোভয় সাহস। তৎকালীন সেনা শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের কড়া সমালোচক ছিলেন ওয়ারিস মীর। ধারণা করা হয় তার কণ্ঠ সত্মব্ধ করতে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হয় তাকে। বাবার মতোই দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে হামিদ মীরকেও সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। শাসকরা সমালোচনাকে ভয় পান। এই সত্য প্রমাণ করে সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফ তো বটেই, বেনজির ভুট্টোর গণতান্ত্রিক শাসনামলেও সত্য প্রকাশের দায়ে চাকরি গেছে তার।
১৯৯৪ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে নজরে আসেন তিনি। প্রকাশ করেন ডুবো জাহাজ কেলেঙ্কারির গোপন তথ্য। ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো’র স্বামী বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সরকারের রোষানলে পড়ে সংবাদটি প্রকাশের পরপরই চারকি হারান মীর। উঠে আসেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সেইসাথে তার সাহসিকতা প্রথম পরিচয় পায় পাকিসত্মানের মানুষ।
মীর ১৯৯৬ সালে যোগ দেন দৈনিক পাকিসত্মানের সম্পাদক হিসেবে। এর মধ্য দিয়ে পাকিসত্মানের কোনো উর্দু ভাষার দৈনিক সবচেয়ে কম বয়সী সম্পাদক হয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। কিন্তু তার অদম্য সাহসের পুরস্কার হিসেবে আবারও চাকরি হারালেন তিনি। অপরাধ, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুর্নীতি সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ।
একই বছর ১৯৯৭ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে প্রকাশ করেন দৈনিক আউসাফ। চলতে থাকে তার কলম। সেইসাথে চলে তার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। খবর প্রকাশের ÿুধায় মৃত্যু ভয়কে পরোয়া না করে চষে বেড়ান আফগানিসত্মানের পূর্বাঞ্চল। আবিস্কার করেন ২০০১ সালের ডিসেম্বরে তোরাবোরা পাহাড় থেকে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের পলানোর তথ্য। বিন লাদের যে গুহায় পালিয়ে ছিলেন তাও ঘুরে দেখেছেন এই সাহসী সাংবাদিক।
এরপর ২০০২ সালে যোগ দেন পাকিসত্মানের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক চ্যানেল জিও টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় সম্পাদক হিসেবে। শুরম্ন করেন রাজনৈতিক টক শো ক্যাপিটাল টক। তুমুল জনপ্রিয় হয় অনুষ্ঠানটি। পাকিসত্মানের রাজনীতিকরা তো বটেই তার অনুষ্ঠানে এসেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইস, সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি বেস্নয়ার, ভারতের বিজেপি নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানিসহ আরো অনেকে।
মীর শুধু যে দেশের ভেতরেই হয়রানির শিকার হয়েছেন তা নয়, বিদেশের মাটিতে হয়েছেন নাজেহাল। ২০০৬ সালে ইসরাইল-লেবানন যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হিজবুলস্নাহ’র হাতে গ্রেফতার হন তিনি। হিজবুলস্নাহ’র সন্দেহ ছিল-ইসরাইলের চর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় পরে তাকে ছেড়ে দেয় হিজবুলস্নাহ। পরের বছর দেশের মাটিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরীর বরখাসেত্মর প্রতিবাদে আইনজীবীদের বিÿÿাভ সরাসরি সম্প্রচার করে মুশাররফ সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। নিষিদ্ধ হন চার মাসের জন্য। প্রতিবাদের রাসত্মায় নামেন তিনি। পরিণত হন আমত্মর্জাতিক ব্যক্তিত্বে। তাকে নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিখ্যাত সব পশ্চিমা গণমাধ্যম। ২০০৮ সালে পাকিসত্মান পিপলস পার্টিও কয়েক দিনের জন্য নিষিদ্ধ করে তাকে। মুম্বাই হামলার পর শামিত্ম ও বস্ত্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতরা মূখপাত্রে পরিণত হন তিনি।
কাজ, পুরস্কার ও স্বীকৃতি
· সেরা কলাম লেখক হিসেবে ১৯৯৬, ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে অর্জন করেন অল পাকিসত্মান নিউজ পেপারস সোসাইটি পুরস্কার।
· নারী স্বাধীনতা নিয়ে লেখার জন্য মহিলা মন্ত্রণালয় থেকে পান ফাতিমা জিন্নাহ স্বর্ণ পদক।
· ১৯৯৭ সালে তিনি দৈনিক পাকিসত্মানের জন্য ও ১৯৯৮ সালে দৈনিক আওসাফের জন্য ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
· ২০০১ সালে দৈনিক ডনের পক্ষ থেকে তিনি উসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করন। এটি ছিল ৯/১১ এর পর ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে কোনো সাংবাদিকের প্রথম সাক্ষাৎকার।
· বিবিসি ও সিএনএন এই সাক্ষাৎকারটিকে আমত্মর্জাতিক বিস্ফোরণ হিসেবে আখ্যা দেয়। মাসিক হেরাল্ড ২০০১ এর ডিসেম্বরের বিশেষ সংখ্যায় এ সাক্ষাৎকারটিকে বছরের সেরা বিস্ফোরণ হিসেবে চিহ্নিত করে।
২০০৫ সালের অক্টোবরে কাশ্মিরের ভূমিকম্পের ওপর সংবাদ সংগ্রহের জন্য মার্কিন সংবাদপত্র ‘ক্রিশ্চান সাইন্স মনিটর’ হামিদ মীরকে পাকিসত্মানি জনগণের নায়ক রূপে ঘোষণা করে।
২৬শে মার্চ ২০১০ সালে সার্কের আজীবন সম্মাননার জন্য মনোনীত হন হামিদ মীর।
সমালোচনা
তালেবানদের সমর্থক বলে মীরের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ তুলেছে অনেকে। আবার তালেবানরা সিআইয়ের এজেন্ট বলে সন্দেহ করে তাকে। তিনি পশ্চিমাদের এজেন্ডা প্রচার করেন করেন বলেও মনে করেন অনেক বিশেস্নষক। অনেকে আবার উল্টো কথাও বলেন। মার্কিন চালকবিহীন বিমান হামলা নিয়ে সদা সোচ্চার মীরকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটু বেশিই কঠোর বলে মনে করেন তারা। আবার মীরকে ভারতের চর বলেও মনে করেন কেউ কেউ ।
সরকারের সাথে বিরোধ
তার সাংবাদিকতার জীবনের প্রায় পুরো সময়টাই নানা বিষয় নিয়ে পাকিসত্মান সরকারের সাথে বিরোধে জড়িয়েছেন মীর।
· ২০০৫ সালের অক্টোবরে পাকিসত্মান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভূমিকম্পের খবর সংগ্রহ করতে যান তিনি। কাশ্মিরে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি আছে বলে দাবি করেন তিনি। তাকে নিষিদ্ধ করার হুমকি দেয় মুশাররফ সরকার।
· একই বছর তালেবানদের সাথে সেনাবাহিনীর তথাকথিত শামিত্ম চুক্তির বিরোধিতা করে স্বৈরশাসকের ক্রোধানলে পড়েন মীর।

· পরের বছর ২০০৬ সালে মার্কিন চালকবিহীন বিমান হামলার পর উপজাতি অধ্যুষিত বাজুর এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। প্রমাণ করেন, মার্কিন ÿÿপনাস্ত্র শুধু শিশু ও নারীদেরকেই হত্যা করে, আল-কায়েদা যোদ্ধাদের নয়।

· ২০০৭ সাল- তালেবানদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে তার প্রতি অভিযোগ তোলে মুশাররফ সরকার ।





পাকিসত্মানের উত্তরাঞ্চলীয় সম্পাদক হিসেবে ২০০২ সালে যোগ দিয়েছিলেন জিও টিলিভিশনে। মাত্র ৮ বছরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন চ্যানেলটির নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি এখন ব্যসত্ম বই লেখার কাজে।

যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য কম: বাণিজ্যমন্ত্রী



দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য আবারো আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করে বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল অব. ফারুক খান বলেছেন, পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম অনেক কম। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
রোববার সন্ধায় কাফরুল থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আগামী বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। বিশেষ করে আগামী রমজানে যেন দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে সে চেষ্টাই করা হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথেও কথা হয়েছে। এবারের বাজেট এমন ভাবে করা হবে যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে।’’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নারীনীতির পক্ষে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিরোধীদলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করে বাংলাদেশের মানুষের মাথা ভুলন্ঠিত করেছে। যখনই বিএনপি বিরোধী দলে যায় তার (খালেদা জিয়া) ও তার নেতাদের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশে মানুষের মাথা ভূলুণ্ঠিত হয়। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ হয় দুর্নীতির দেশ, জঙ্গীবাদের দেশ।’’
কাফরুল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল মোস্তফার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সহ সভাপতি মুকুল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, স্থানীয় এম পি কামাল আহমেদ মজুমদার, নগর নেতা আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আব্দুল হক সবুজ ও শহীদুল ইসলাম মিলন।
কীভাবে দেশের ক্ষতি করতে হয় তার নমুনা খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুব উল-আলম-হানিফ বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া কী কর্মসূচি নিয়ে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন তা জনগণ জানতে চায়।’’
আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমে তলানিতে পড়েছে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদের এমন দাবির জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপিই রাজনৈতিকভাবে দেওলিয়া হয়ে গেছে। আমাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।’’
এসময় তিনি সরকারের জনপ্রিয়তা যাঁচাই করার জন্য বিএনপিকে তাদের জনপ্রিয় একটি আসন ছেড়ে দিয়ে উপ নির্বাচনে আসার প্রস্তাব দেন।
হানিফ বলেন, ‘‘দেশে কোনো সাংবিধানিক সংকট নেই যে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।’’
বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘‘বিএনপি এতদিন বলেছেন বিদেশে তাদের কোনো প্রভূ নেই, তাহলে আজ বিদেশে খালেদা জিয়া কোন প্রভূদের কাছে গিয়েছেন?
খালেদা জিয়াকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে দেশের জনগণের কথা বলার আহবান জানান নাছিম।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘‘বিএনপি নেত্রী ষড়যন্ত্র করতে বিদেশ সফর করেছেন। তার জন্য তাকে আবার সংবর্ধনাও দেবে বিএনপি। বিএনপির লজ্জা হওয়া দরকার।’’
বিএনপির সংসদে না যাওয়াকে কটাক্ষ করে মায়া বলেন, ‘‘সংসদে যাবেন কীভাবে আপনার (খালেদা জিয়া) পাশে ফালু, সাকা, ওবায়দুর রহমান নেই।’’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করে লাভ হবে না।’’

বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১১

'খালেদার সঙ্গে আলোচনায় গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে উদ্বেগ বৃটিশ মন্ত্রীর'

খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনায় গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাজ্যের এক মন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শমসের মোবিন চৌধুরী।

শমসের জানান, খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য সফরের ষষ্ঠ দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে হাউস অব কমন্সে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালান ডানকানের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তাকে যুক্তরাজ্যের উদ্বেগের কথা জানান মন্ত্রী।

"ডানকান খালেদাকে বলেন, সা¤প্রতিক সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় ক্ষুদ্র ঋণ গ্রীহতাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে কি না তাও পর্যবেক্ষণ করবে যুক্তরাজ্য।"

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে এক সভায় খালেদা জিয়া বলেন, নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সরকারের আচরণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনামহানি ঘটছে।

নিয়োগে অনুমোদন না নেওয়ার কারণ দেখিয়ে ইউনূসকে দুই মাস আগে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে হেরে যান তিনি। এরপর কয়েকদিন আগেই তিনি পদত্যাগ করেন।

শমসের মোবিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সাক্ষাতে গ্রামীণ ব্যাংক, শেয়ারবাজার ও যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সাহায্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

"বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সাহায্য অব্যাহত থাকবে বলে এসময় জানান ডানকান।"

ডানকানের উদ্ধৃতি দিয়ে মোবিন জানান, যুক্তরাজ্য বড় কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্য দেবে না। শিক্ষা ও ক্ষুদ্র প্রকল্পে সাহায্য অব্যাহত রাখবে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে।

অভ্যর্থনা সভায় খালেদা

হাউস অব কমন্সে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্র"পের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার এক অভ্যর্থনা সভায় যোগ দেন খালেদা জিয়া। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন লর্ড আহমদ।

সভায় হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কীথ ভাজ, রুশনারা আলী, নিকি মর্গান, লর্ড শেখসহ পার্লামেন্টারি গ্র"পের চেয়ারম্যান অ্যান মেইন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় খালেদা বলেন, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র ব্যাহত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করেন খালেদা। তিনি বলেন, "মইন উ আহমদ বাংলাদেশকে ২০ বছর পিছিয়ে দিয়েছেন।"

তার শামনামলে নারী শিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনের কথা উল্লেক করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

অভ্যর্থনা সভায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে শফিক রেহমান, ডা. ওসমান ফারুক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সাবিহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার মমতার শপথ




পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

বেলা ১টা ১ মিনিটে রাজভবনে প্রথমে মমতা এবং পরে তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়াবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। এ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ভারতীয় কংগ্রেস থেকে সাতজন মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারেন বলেও জানা গেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর বেবী মওদুদ কলকাতা থেকে জানান, শপথ অনুষ্ঠান সামনে রেখে রাজভবন সংলগ্ন শহীদ মিনারে বসানো হয়েছে চারটি জায়ান্ট স্ক্রিন। এসব স্ক্রিনে তৃণমূল নেত্রীর শপথ নেওয়ার দৃশ্য সরাসরি দেখতে পাবে কলকাতাবাসী। অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখানো হবে বিভিন্ন টেলিভিশনেও।

বৃহস্পতিবার কালিঘাটের বাসায় গিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বেবী মওদুদ। তিনি জানান, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকসহ প্রায় পাঁচ হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তিকে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের নেতারা জানিয়েছেন, শপথ অনুষ্ঠান হবে বাংলায়। আর বিধান সভার নব নির্বাচিত সদস্যরা শপথ অনুষ্ঠানে যাবেন পুরোপুরি বাঙালি পোশাকে- ধুতি পাঞ্জাবি ও শাড়ি পড়ে।

তবে কংগ্রেস মুখপাত্র জনার্দন ত্রিবেদী জানিয়েছেন, দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী খুব সম্ভবত শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছেন না। তবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি এবং কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ।

পশ্চিমবঙ্গের বিধাসভা নির্বাচনে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২২৪টিই জিতে নেয় মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। আর এর মধ্য দিয়ে ভারতের এ রাজ্যে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

১৩ মে এই নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে পদত্যাগপত্র জমা দেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বামফ্রন্ট নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য। বুদ্ধদেব নিজেও নির্বাচনে পরাজিত হন।

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মমতা বন্দোপাধ্যায় আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে উঠছেন না। শুক্রবার শপথ অনুষ্ঠান শেষে রাজভবন থেকে সরাসরি রাইটার্সে নিজের কার্যালয়ে যাবেন তিনি। অফিস করবেন কালিঘাটে নিজের বাড়ি থেকেই।

বৃহস্পতিবার সারাদিন বৃষ্টির মধ্যেও বহু মানুষ ফুল আর উপহার নিয়ে কালিঘাটে যান 'দিদির' সঙ্গে দেখা করতে। সবার সঙ্গেই আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন সদ্য নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ; অভিনন্দনের জবাবে ধন্যবাদ দেন।

একটি সূত্রে জানা গেছে, মমতা বন্দোপাধ্যায় শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। তবে তার এই সফরের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।

এদিকে মামতার মন্ত্রীসভায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি 'ইতিবাচক'ভাবেই দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।

ভারতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার কলকাতায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকেই এ বিষয়টির ফয়সালা হওয়ার কথা।

অবশ্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কংগ্রেস থেকে ৭ জন মমতার মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে পারেন।

মমতা বিধানসভা নির্বাচনে জযী হয়েই বলেছিলেন, জোট হিসেবে নির্বাচন হয়েছে, জোট হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার চলুক।

১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কালিঘাটের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের মাধ্যমে। ১৯৭৬ সালে রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৮৪ সালে যাদবপুর আসন থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর অল ইন্ডিয়া যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মমতা। ১৯৯১, ৯৬, ৯৮, ৯৯, ২০০৪ ও ২০০৯ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৯৭ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পর থেকেই দলটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মমতা। গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের সমস্যা, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর ও রেজওয়ান হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব ছিলেন কলকাতার মানুষের 'দিদি' হিসেবে পরিচিত এই নেত্রী।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন সিপিআই (এম)-এর সূর্যকান্ত মিশ্র। ৩৪ বছর পর এ রাজ্যে বিরোধী দলের আসনে বসবে বামফ্রন্ট।

বুধবার, ৪ মে, ২০১১

Islamist militant leads prayers for Osama in Pakistan




The founder of one of Pakistan’s most violent Islamist militant groups has told Muslims to be heartened by the death of Osama bin Laden, as his ‘martyrdom’ would not go in vain, a spokesman for the group said on Tuesday.The media are often barred from gatherings of Lashkar-e-Taiba, the militant group blamed for the 2008 terror attacks on Mumbai.
But a spokesman for Hafiz Mohammad Saeed said he had told followers at special prayers held for the slain al-Qaeda leader that this ‘great person’ would continue to be a source of strength and encouragement for Muslims around the world.
‘Osama bin Laden was a great person who awakened the Muslim world,’ Saeed’s spokesman Yahya Mujahid quoted him as saying during prayers at the headquarters of the LeT’s charity in the Punjab capital Lahore on Monday.
‘Martyrdoms are not losses, but are a matter of pride for Muslims,’ Saeed said. ‘Osama bin Laden has rendered great sacrifices for Islam and Muslims, and these will always be remembered.’
LeT, one of the largest and best-funded Islamist militant organisations in South Asia, is blamed for the November 2008 assault on Mumbai, which killed 166 people in India’s commercial hub. Its founder, Saeed, now heads an Islamic charity, a group the United Nations says is a front for the militant group.
Western security analysts believe that LeT is linked to al-Qaeda, though LeT officials deny this.
Mujahid said thousands of Saeed’s followers, many of them often in tears, took part in the prayers.
Al-Qaeda leader bin Laden was shot dead by US special forces in an operation targeting a compound near Pakistan’s main military academy in the northwestern garrison town of Abbottabad early on Monday.
Saeed founded LeT in the 1990s but abandoned its leadership after India blamed it and another militant group for an attack on the Indian parliament in December 2001.

‘Osama is alive!’ mock Pakistanis outside bin Laden home
Dozens of Pakistani youths on Tuesday demonstrated outside the upmarket compound where Osama bin Laden was killed, mocking the United States and shouting ‘Osama is alive!’
Unconvinced by news that the al-Qaeda kingpin had been living in their leafy city of Abbottabad, one protester dressed up as the world’s ‘most-wanted’ man, who was killed in a helicopter raid by US commandos.
‘Osama is alive, here comes Osama!’ he exclaimed jokingly, donning a white turban and hiding his face with a cloth,

বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১১

Obama urges repeal of tax breaks for oil firms

Seizing on an unexpected political opportunity, President Obama urged Congress to repeal tax breaks for oil companies and said he was "heartened" that the Republican House speaker had revived the idea.

Although Speaker John A. Boehner (R-Ohio) may have veered a bit from GOP talking points on taxes this week — telling a television interviewer that the government is low on revenue and oil companies ought to pay "their fair share" — an aide said Boehner did not advocate the sweeping repeal of subsidies that the president supported.

But Obama tried to make the most of the speaker's comments, which came in an ABC "World News" interview Monday. The president dashed off a letter to congressional leaders Tuesday reminding them that "high oil and gasoline prices are weighing on the minds and pocketbooks of every American family."

The back-and-forth came amid Republican demands for spending cuts, with some suggesting they might not vote to raise the federal government's debt limit in mid-May unless the administration agrees to significant reductions. If Congress fails to raise that ceiling when the country reaches it, the U.S. would default on its debts within a few months.

Obama has proposed reducing the deficit through a mixture of budget cuts and ending tax breaks for the wealthy, but Republicans are resistant to the idea of tax increases.

In his letter to congressional leaders, Obama said he was encouraged by Boehner's remarks, which seemed to be a concession to Democrats who have long sought to end the subsidies.

"Our political system has for too long avoided and ignored this important step, and I hope we can get together in a bipartisan manner to get this done," the president wrote.

Obama has proposed eliminating subsidies to oil and gas companies, which the administration pegs at $4 billion. Republicans have argued that they are necessary to keep the energy industry competitive and encourage domestic oil exploration.

A Boehner spokesman quickly shot down the possibility that the speaker was moving closer to the president's proposal.

"The speaker wants to increase the supply of American energy and reduce our dependence on foreign oil, and he is only interested in reforms that actually lower energy costs and create American jobs," Boehner spokesman Michael Steel said. "Unfortunately, what the president has suggested so far would simply raise taxes and increase the price at the pump."

In the ABC News interview, Boehner said eliminating some subsidies was something "we certainly ought to take a look at." But he emphasized that he wanted to see how the details of the president's proposal would affect job creation.

"I want to see the facts. I don't want to hear a bunch of political rhetoric," he said. "You know, the No. 1 issue in my district and around the country is, 'Where are the jobs?' And I want to know what impact this is going to have on job creation here in America."

Still, the White House was gleeful about the speaker's remarks and used the opportunity to score points with consumers. The subsidies are unpopular, particularly during periods of rising gas prices.

Oil and gas companies are set to announce their earnings soon, White House Press Secretary Jay Carney said, adding that "they are expected to be quite large."

"While we certainly are glad to see companies making a profit, we do not believe that given the size of those profits — record profits, in some cases — that they need to be subsidized by the American taxpayer," Carney said. "Especially in these times of constrained budgets and especially when we need to use some of those dollars to invest in clean-energy technology, so that we can build the industries of the future, reduce our dependence on foreign oil and create jobs in America."