বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১২

সৌদি কূটনীতিককে গুলি করে হত্যা



ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব খালাফ আল-আলী আল সাফাহ আল ফালাহকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে রাখে। গুরুতর আহত অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ভোররাতে মারা যান তিনি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাত সাড়ে ৩টায় পুলিশ তাকে নিয়ে আসে। ওই সময় কর্তব্যরত চিকিত্সক ওই কর্মকর্তাকে মৃত ঘোষণা করলে পুলিশ লাশ ইউনাইটেড হাসপাতাল মর্গে রেখে চলে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকালে জানতে পারে নিহত ব্যক্তি সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা।
কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে—তা জানা যায়নি। পুলিশও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। ধারণা করা হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে দ্রুত একটি প্রাইভেট কারে করে পালিয়ে গেছে। হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে নিহত কর্মকর্তার বাসভবনের মাত্র একশ’ গজের ভেতরে। এসময় তিনি নৈশভ্রমণ শেষে বাসায় ফিরছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে গেলেও এ বিষয়ে তারা মুখ খুলছেন না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু দুপুরে সচিবালয়ে বলেছেন, ‘আমরা নিহত সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে, তদন্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গতকাল সকালে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারা খালাফ আল-আলীর মৃতদেহ দেখতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে র্যাব, সিআইডি ও বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিয়েছে। আরও আলামত সংরক্ষণের জন্য তারা ঘটনাস্থল কর্ডন করে রেখেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত সোয়া ১টার দিকে গুলশানের ১২০ নম্বর রোডে পর্তুগাল দূতাবাসের দেয়াল ঘেঁষে একটি স্থানে ওই কর্মকর্তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায় পুলিশ। তার বুকের বাম পাশে একটি গুলি বিদ্ধ ছিল। তাকে উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের ডিসি লুত্ফুল কবির জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হলেও তিনি জীবিত ছিলেন। পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার পর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। গুলশান জোনের পুলিশের এডিসি নিজামুল হক মোল্লা জানান, গভীর রাতে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়ার পর প্রথমে তার পরিচয় জানা যায়নি। অজ্ঞাত হিসেবেই খালাফ আল-আলীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। নিহত খালাফ সৌদি দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (হেড অব সৌদি সিটিজেনস অ্যাফেয়ার্স) ছিলেন। তিনি সৌদি নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি দেখতেন।
জানা যায়, ১২০ নম্বর রোডের ২২/এ (বিটিআই) ভবনের চারতলার এ/৪ ফ্ল্যাটে থাকতেন খালাফ আল-আলী। তিনি এখানে প্রায় দু’বছর ধরে আছেন। ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী তাপস রেমা জানান, খালাফ প্রায় সময়ই নৈশভ্রমণে বের হতেন। আবার রাতেই ফিরে আসতেন। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় খালাফ আল-আলী বাসা থেকে হাঁটতে বের হন। মাঝেমধ্যে তিনি বাইসাইকেল নিয়েও বের হতেন। তবে সাইকেলটি নষ্ট থাকায় তিনি পায়ে হেঁটে বের হন। কিন্তু ওই রাতে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। তাপস ভোর ৬টা পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বলে জানান।
পর্তুগাল দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মী জুলফিকার আলী বলেন, রাত সোয়া ১টার দিকে তিনি গুলির শব্দ পান। সামনে এগিয়ে দেখেন প্রায় ৫০ গজ দূরে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। এসময় সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেট কারে ২ ব্যক্তি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা গুলি করে গাড়িতে উঠেছে। প্রাইভেট কারটি ২২/এ বিটিআই ভবনের সামনে দিয়ে চলে যায়। তিনি থানায় খবর দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। গুলশান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নুরে আযম সাংবাদিকদের জানান, নিহত এই কূটনীতিকের বুকের বামদিকে একটি গুলি লেগেছে। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে এখনই কিছু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছেন অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদস্যরা। পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনাস্থলে যাওয়া সিআইডির কর্মকর্তা নুরে আলম জানান, গুলির শব্দ পেয়ে পর্তুগাল দূতাবাসের সিকিউরিটি গার্ড তালেব ও জুলফিকার এগিয়ে আসেন। তখন তারা দু’ব্যক্তিকে একটি প্রাইভেট কারে উঠে দ্রুত চলে যেতে দেখেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। হয়তো অন্য কোথাও মেরে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রাখার সময় ফাঁকা গুলি করে খুনিরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে রাস্তায় কোনো ছিনতাইকারী ওই কর্মকর্তাকে গুলি করেছে। তবে কী কারণে কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে—তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এদিকে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ছুটে যান ইউনাইটেড হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ নিহতের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে চায়নি। এমনকি ভোর রাতে মারা গেলেও বিকাল ৪টার দিকে কড়া পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকালে ময়নাতদন্ত করে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সক জানিয়েছেন, খালাফ আল-আলীর বুকের বাম পাশ থেকে একটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড : পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সৌদি কর্মকর্তা খালাফ আল-আলীর হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে মনে হচ্ছে। কেননা, প্রতিদিন তিনি বাসা থেকে নৈশভ্রমণে বের হতেন—তা হয়তো খুনিদের জানা ছিল। দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকে কিছুই নেয়নি। ছিনতাইয়ের ঘটনা হলে তার কাছ থেকে মালামাল খোয়া যেত। অবশ্য খালাফ আল-আলী ভ্রমণে বের হওয়ার সময় কিছুই সঙ্গে নেননি। এমনকি তার মানিব্যাগ বা মোবাইল ফোনও সঙ্গে ছিল না। মনে হচ্ছে, তিনি বের হয়ে ভ্রমণ শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কেননা, সাড়ে ১১টায় বাসা থেকে বের হলেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন রাত সোয়া ১টার দিকে। হয়তো তিনি ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে তার বাসার অদূরে এবং পর্তুগাল দূতাবাস থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে। ওঁত্ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা বাসার কাছাকাছি আসামাত্র গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু : ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার পরিচয় পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারও জানা ছিল না। তবে পুলিশের ভাষ্যমতে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তা থেকে উদ্ধার করে সোয়া ১টায় হাসপাতালে নিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তারা সাড়ে ৩টায় বুঝে পেয়েছে। প্রায় ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সৌদি কর্মকর্তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল বিনা চিকিত্সায়। তাই অবহেলার কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে। পুলিশ সচেতন হলে এবং দায়িত্বশীল আচরণ করলে আগেই তার উন্নত চিকিত্সা শুরু করা যেত।
কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ : পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিশ্চিত হতে পারেননি কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড। তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আপাতত চারটি বিষয় সামনে রেখে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রথমত, খালাফ আল-আলীকে তার নিজ বাসার ভেতরে কেউ গুলি করে রাস্তায় ফেলে রেখেছে কিনা। দ্বিতীয়ত, দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেছে কিনা। তৃতীয়ত, নৈশভ্রমণ থেকে ফেরার পর সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে গুলি করেছে কিনা এবং এটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে গুলির ঘটনা কিনা। এসব বিষয় মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মামলা তদন্ত শুরু করছে। এ ব্যাপারে গতকাল গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় কূটনৈতিক জোনে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তা ও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। র্যাব ও পুলিশ সকাল থেকেই গুলশানের কূটনৈতিক জোনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট স্থাপন করে যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। গুলশান থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় সৌদি দূতাবাসের এক নিরাপত্তাকর্মী বাদী হয়ে রাতে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সন্দেহভাজন ক’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

মন্তব্য প্রতিবেদন : সাগর-রুনিকে দ্বিতীয়বার খুন

ফ্যাসিবাদী সরকারের চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত তিন বছরে গণমাধ্যমকে তার অন্যতম প্রতিপক্ষরূপে বিবেচনা করেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার হেন অপচেষ্টা নেই, যা ক্ষমতাসীন মহল এই সময়ের মধ্যে গ্রহণ করেনি। বিজ্ঞাপন বন্ধ, টেলিভিশনে কালো তালিকা প্রণয়ন, সরকারি দলের চেলা-চামুণ্ডাদের হুমকি—এসব পন্থা মাত্রাভেদে সব সরকারই বিভিন্ন সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যবহার করেছে। তবে দিনবদলের সরকার যে ভিন্নমত দমনের জন্য অন্য প্রকারের ভয়ঙ্কর চণ্ডনীতি ব্যবহার করবে, সেটা বোঝা গিয়েছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের প্রতিক্রিয়া থেকে। পেশাদার কিংবা ‘চান্স’ নির্বিশেষে পত্রিকার সম্পাদকদের ধরে ধরে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের বর্বর নজির সৃষ্টিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল সভ্যতা-ভব্যতা, রীতি-নীতি, আইন-কানুনের কোনোরকম তোয়াক্কা করেনি।
সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ পেশাদার সম্পাদক এবং নির্ভেজাল ভালোমানুষ দৈনিক সংগ্রামের আবুল আসাদের দুর্বল শরীরের দিকে তাকিয়েও পুলিশের অন্যায় ও আইন বহির্ভূত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করতে ‘স্বাধীন’ আদালতের মধ্যে বিন্দুমাত্র দ্বিধা লক্ষ্য করা যায়নি! প্রথম আলোর প্রভাবশালী সম্পাদক মতিউর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী রীতিমত সংবাদ সম্মেলন ডেকে যখন ইচ্ছা গ্রেফতারের হুমকি দিয়েছেন। মার্কিন দূতাবাসের সরাসরি হস্তক্ষেপে সেই বিশিষ্ট সুশীল(?) সম্পাদক আমার ও আসাদ ভাই-এর ভাগ্য বরণ করা থেকে সে যাত্রা বেঁচে গিয়েছিলেন। শীর্ষ কাগজের সম্পাদক একরামুল হককে রিমান্ডে নিয়ে তার পত্রিকা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমার বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশে এত বেশি আলোচনা হয়েছে যে, সেগুলোর পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। মোট কথা, পত্রিকা সম্পাদক নামক ইনস্টিটিউশনটিকে অমর্যাদা করা বর্তমান সরকারের আমলে ডাল-ভাতে পরিণত হয়েছে। অথচ ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিউটের (আইপিআই) নির্বাহী পরিচালক আলিসন বেথেল ম্যাকেঞ্জি তার বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী অম্লান বদনেই না দাবি করলেন যে, তার আমলে নাকি সরকার কোনো সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করেনি! সেদিন তিনি বলেছেন, যে মামলাগুলো হয়েছে বা হচ্ছে তার সবই সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের দায়েরকৃত মানহানি মামলা। প্রধানমন্ত্রীর আসনে থেকে অসত্য ভাষণ সেই আসনের জন্য যে বিশ্রী রকমের অমর্যাদাকর একথার সঙ্গে আশা করি, সব পাঠক একমত হবেন।
আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা রেকর্ড সংখ্যক ৫৩টি মামলার মধ্যে অন্তত পাঁচটির বাদী সরকার নিজে এবং বাকি মামলাগুলোও সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি দলের নেতারা করেছেন। সরকারি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইসলামী জঙ্গিবাদে মদত দান, জালিয়াতি এবং বেশুমার ব্যক্তির মানহানি। আমাকে হয়তো ‘চান্স সম্পাদক’ বিবেচনা করেই আইপিআই’র নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব মামলাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। কিন্তু প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকে গাড়ি পোড়ানোর অবিশ্বাস্য অভিযোগে মধ্যরাতে বাসা থেকে এলিট বাহিনী র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার এবং পরে রিমান্ডে পাঠানোর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বেমালুম ভুলে যাওয়া বিস্ময়কর। অন্তত আবুল আসাদকে পেশাদার সম্পাদক মেনে না নেয়ার কোনো সুযোগ সম্ভবত মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনার নেই। বয়সে আবুল আসাদের চেয়েও প্রবীণ, মনের দিক দিয়ে অবশ্য চিরসবুজ সাংবাদিক, সম্পাদক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানি মামলার বাদীর নাম আলহাজ্ব লায়ন মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক। ভদ্রলোক আওয়ামী লীগেরই অঙ্গসংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি।
শীর্ষ নিউজ ডট কমের সম্পাদক একরামুল হকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে তার পত্রিকায় একজন মন্ত্রীর দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর। মামলা দায়েরের আগে শীর্ষ কাগজের সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছিল। চাঁদাবাজি মামলার ছুতো ধরেই তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মুখে সাপ্তাহিক পত্রিকা এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। সুতরাং, সম্পাদকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রতিটি মানহানি কিংবা চাঁদাবাজি মামলার পেছনের কলকাঠি যে সরকারই নেড়েছে, এ নিয়ে জনমনে অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী অব্যাহতভাবে অসত্য দাবি করে যেতে পারেন, তবে দেশে-বিদেশে তার এসব কথা কেবল কৌতুকেরই সৃষ্টি করবে। তবে, এটা মানতে হবে যে রিমান্ডে নিয়ে পিটুনি দিলেও সরকার এখনো পর্যন্ত রাজধানীর কোনো পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার মতো চরম পন্থা গ্রহণ করেনি। আমার ক্ষেত্রে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একদল আততায়ী পাঠিয়েও অজানা কারণে নীতিনির্ধারকরা শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন আমার ভাগ্য সহায় হলেও সাগর এবং রুনি খুনিদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এই তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক দম্পতি তাদেরই শয়নকক্ষে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলে এবং শাসকশ্রেণীর মধ্যে সভ্যতার লেশমাত্র থাকলে এই কলঙ্কজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা সরকার না হলেও অন্তত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এতদিনে পদত্যাগ করতেন। পাঠক বলতে পারেন বাংলাদেশের মন্ত্রীদের কাছ থেকে এতটা বিবেকবোধ আশা করা একপ্রকার ইউটোপিয়া। উল্টো এ দেশে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করার অপরাধে প্রধানমন্ত্রী এবং আদালতের কাছ থেকে গণমাধ্যমের কর্মীদের তিরস্কার শুনতে হচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উন্মোচন প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের প্রতিটি মহল প্রথমাবধি রহস্যময় আচরণ করে চলেছে। এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের রথী-মহারথীরা গত প্রায় চার সপ্তাহে কে কী বলেছেন, তার একটা তালিকা জনস্বার্থেই প্রস্তুত করেছি, যাতে ভবিষ্যতে বিপদ বুঝে এরা আগের দেয়া বক্তব্য বেমালুম অস্বীকার করতে না পারেন।
* প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সরকারের পক্ষে কারও বেডরুমে গিয়ে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। সাগর-রুনি তাদের বেডরুমে মারা গেছে। আমরা কি মানুষের বেডরুমে বেডরুমে পুলিশ বসাতে পারব?
* স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন
১. ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাগর ও রুনির হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা হবে।
২. মিডিয়ার চাপেই ৪৮ ঘণ্টার কথা বলেছি, এটি কৌশলও ছিল।
৩. আপনারা অপেক্ষা করুন, যে কোনো মুহূর্তে সুখবর শুনতে পারবেন।
৪. সাংবাদিক দম্পতি হত্যা-মামলা প্রধানমন্ত্রী নিজেই মনিটর করছেন।
৫. তদন্ত এগিয়ে গেছে, তদন্ত কর্মকর্তারা অতি দ্রুত একটি ভালো ফল দেবেন।
৬. সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সুরাহা হবেই।
* সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনকে চাপ দিলে তারা ঘাবড়ে যেতে পারে।
* স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু
আইন-শৃঙ্খলা অবনতিসহ ঢাকায় সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াত-শিবির জড়িত রয়েছে।
* আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার
তদন্ত শেষ করতে না পারলেও প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিগগির আপনাদের এ ব্যাপারে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানাতে পারব।
* ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ
তদন্তের কাজ ডেডলাইন দিয়ে হয় না।
* মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করলে তদন্ত ‘বিপথে’ যেতে পারে, তাড়াহুড়া করলে প্রকৃত অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে জজ মিয়া নাটকের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
* ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলাম
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
* প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ
সমাজে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, বিঘ্ন করতে চায় সামাজিক জীবন তাদের দ্বারাই এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব।
* প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল আলম শাকিল
আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে মেহেরুন রুনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিরোধী দলের সংবাদ কাভার করতেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে খুব স্নেহ করতেন।

সাগর-রুনির ভয়ঙ্কর হত্যার ঘটনাটিকে প্রশাসন প্রথমেই পরকীয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করার কৌশল গ্রহণ করে। জনমনে রুনি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারপন্থী পত্রিকায় সোত্সাহে তার চরিত্র হনন শুরু হয়। নিহত হওয়ার পূর্ব সপ্তাহে সে তার কোন ছেলেবন্ধুকে কতগুলো এসএমএস পাঠিয়েছে, মোবাইলে কতক্ষণ কথা বলেছে এসব কেচ্ছা-কাহিনী প্রকাশ পেতে থাকে সেইসব পত্র-পত্রিকায়। শুনেছি কাকের মাংস নাকি কাক খায় না। সাগর-রুনির ক্ষেত্রে দেখলাম একশ্রেণীর সাংবাদিক তাদের সহকর্মীদের মাংসভক্ষণ করতে যথেষ্ট আনন্দই পায়! রুচি বহির্ভূত এসব আদি রসাত্মক কাহিনী বিশেষ মহল থেকে আমাদের সাংবাদিককে গেলানোর চেষ্টা করা হলেও স্বাধীনতার কথা বলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমার দেশ-কে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা মহান সাংবাদিকতা পেশার সত্যনিষ্ঠতার প্রতি অবিচল থেকে প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদের তদন্ত ভিন্নপথে ঘোরানোর অপচেষ্টা সম্পর্কে পাঠককে আগাম সতর্ক করেছি। রুনি ও সাগরের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দেয়ার পরিবর্তে হত্যার রহস্য উদঘাটনকেই আমার দেশ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেছে। হত্যা রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সর্বতোভাবে সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করে গেছি। বিভিন্ন ব্লগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে অপ্রমাণিত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রকাশিত হলেও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নীতিতে অবিচল থেকে আমরা সেগুলোকেও সযতনে পরিহার করেছি। ব্লগে প্রচারিত ষড়যন্ত্রের গল্পগুলোর সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ দেয়া থাকলে নির্দ্বিধায় আমার দেশ সেগুলো প্রকাশ করত। ভবিষ্যতে কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিক তথ্য-প্রমাণসহ সরকারের ওপর মহলের সেইসব ব্যক্তিদের এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ দিতে পারলে অবশ্যই সেই কাহিনী প্রকাশ করা হবে।
এর মধ্যে সংবাদপত্র মালিকদের মধ্যকার এক ক্ষুদ্র সুশীল(?) গোষ্ঠীর এলিট সংগঠন নোয়াব এক বিবৃতি দিয়ে আমাদের হতবাক করেছে। সেই বিবৃতিতে তারা সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো অনুমাননির্ভর খবর না ছাপতে এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আজব কাণ্ড! পত্রিকার মালিকগোষ্ঠী কাদের উদ্দেশ করে বিবৃতি দিচ্ছেন? তারা স্ব স্ব পত্রিকায় এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সম্পাদকীয় নীতি গ্রহণ করলেই এই সমস্যার উদ্ভব হতো না। তাছাড়া এই বিবৃতির মাধ্যমে মালিকরা স্বীকার করে নিলেন যে, তাদের পত্রিকায় দায়িত্বহীন আচরণ করা হয় এবং সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ব্যতীত অন্যান্য সংবাদ পরিবেশনের বেলায় দায়িত্বশীলতার কোনো প্রয়োজন নেই। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো অনুমাননির্ভর সংবাদ ছাপা থেকে বিরত থাকার আহ্বান সংবলিত বিবৃতি দেয়া সত্ত্বেও গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা সরবরাহকৃত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অপ্রমাণিত সংবাদ নোয়াব-এর অন্তর্ভুক্ত পত্রিকাতেই নিয়মিত ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে। কথায় ও কাজে বিপরীতধর্মী আচরণ কেবল রাজনীতিকদের মধ্যে নয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের জাতীয় চরিত্রে পরিণত হয়েছে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে সর্বশেষ নাটকীয়তা আনয়নে মহামহিম আদালত বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। আদালতপাড়ায় সবিশেষ পরিচিত আওয়ামীপন্থী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোরশেদ বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এক জনসভায় প্রদত্ত একটি বক্তব্য নিয়ে ভর্ত্সনার (Censure) উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের দ্বৈত বেঞ্চে। তার লক্ষ্য শতভাগ অর্জিত হয়েছে। হাইকোর্টের এই মাননীয় বিচারপতি বেগম খালেদা জিয়ার মন্তব্যকে এতই গর্হিত বিবেচনা করেছেন যে, তার সমালোচনা জানানোর উপযুক্ত ভাষা পর্যন্ত খুঁজে পাননি। হত্যারহস্য উন্মোচনে সরকারের যাবতীয় পদক্ষেপেও একই আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, নাগরিকের বেডরুম পাহারা দেয়া বিষয়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরম বিতর্কিত বক্তব্যকেও সঠিক বিবেচনা করেছেন বহুল আলোচিত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। বেগম খালেদা জিয়ার অপরাধ হলো, তিনি লালমনিরহাটের জনসভায় বলেছেন যে সাগর-রুনির কাছে সরকারের দুর্নীতির তথ্য থাকার কারণেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। একজন রাজনীতিবিদ তার বক্তব্যে জনমতের প্রতিফলন ঘটাবেন, এটাই প্রত্যাশিত। বিএনপি চেয়ারপার্সনও তার বক্তৃতায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা বিশ্বাস করে, সেটাই নিজস্ব ভাষায় বিবৃত করেছেন। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চের দৃষ্টিতে অবশ্য সেই বক্তব্য অতীব গর্হিত বিবেচিত হয়েছে।
আদালত থেকে আরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে গণমাধ্যমে জজ মিয়া নাটক জাতীয় বাক্যাবলী আর লেখা যাবে না এবং তথ্যসচিব গণমাধ্যমের ওপর বিশেষ বেঞ্চ কর্তৃক আরোপিত এই সেন্সরশিপ দেখভাল করবেন। সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে দীর্ঘদিন পর ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক নেতারা স্বাভাবিকভাবেই আদালতের নির্দেশে অতিশয় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিষয়টিকে তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর আঘাতরূপেই বিবেচনা করছেন। সাংবাদিক মহলে কট্টর আওয়ামীপন্থী নেতারূপে পরিচিত ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের বক্তব্য এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোথাও গণমাধ্যমের কাজে আদালতের এরকম হস্তক্ষেপের নজির নেই। আদালত কেন, কারও নির্দেশনা মেনে গণমাধ্যম দায়িত্ব পালন করবে না। হাইকোর্টের আদেশ অগ্রহণযোগ্য।’ আওয়ামীপন্থী বিএফইউজের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী মার্চের ১ তারিখে সাংবাদিকদের দিনব্যাপী গণঅনশনে সভাপতির বক্তব্যে বলেছেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। গণমাধ্যমের ওপর বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ সাংবাদিক সমাজ সহ্য করবে না। দু’একজন অবিবেচক বিচারপতির কারণে আদালত ও গণমাধ্যম যেন মুখোমুখি চলে না আসে, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আহ্বান জানাই।’ মনে হচ্ছে আসলেই বাংলাদেশে অনভিপ্রেতভাবে আদালত এবং গণমাধ্যম ক্রমেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সাগর-রুনির হত্যার তদন্তের সংবাদ পরিবেশনা নিয়ে হাইকোর্টের রুল প্রসঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন জনমনে উত্থাপিত হয়েছে। আমরা এতদিন জানতাম বিচারাধীন কোনো বিষয়ে লেখালেখি করা বাঞ্ছনীয় নয়। এখন থেকে কি তদন্তাধীন বিষয় নিয়েও সংবাদপত্রে লেখা বা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো? আইনের দৃষ্টিতে আদালতে বিচারাধীন এবং পুলিশের তদন্তাধীন বিষয় কি এক? তাছাড়া যে দেশের তথ্য আইনে জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে, সে দেশেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ সেন্সরশিপ আরোপের যে কোনো অপচেষ্টাই নিন্দনীয়। অতি উত্সাহী বাদী অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোরশেদ একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে আদালতে টেনে নিয়ে অযথাই আদালতকে বিতর্কিত করলেন। এই আইনজীবীর মতো ব্যক্তিরা যে কখনোই আদালতের বন্ধু নন, সে বিষয়টি মাননীয় বিচারপতিরা যত দ্রুত বুঝবেন, ততই বিচার ব্যবস্থার জন্য মঙ্গল হবে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এতসব ডামাডোলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে নৃশংস ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা পড়ার আশঙ্কাই জনমনে দৃঢ়তর হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজ ২৬ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা করতে সক্ষম হয়নি। আদালত প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হতে পারেন, কিন্তু জনগণ যে একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারছে না এটাই বাস্তবতা। মানুষের মন আদালতের নির্দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যে যায় না এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা স্মরণে রাখলে ভালো করবেন। তরুণ সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনিকে তাদেরই শয়ন কক্ষে ঢুকে হত্যাকারীরা অত্যন্ত নির্মমভাবে যখন হত্যা করছিল, তখন পাশের ঘরে নিহতদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘ ঘুমিয়ে ছিল। সেই অবোধ, ঘুমন্ত শিশু জানতেও পারেনি গভীর নিশীথে তার কত বড় সর্বনাশ ঘটে গেছে। এই মানসিক আঘাত থেকে মেঘ কোনোদিন মুক্তি পাবে কিনা জানি না। ফ্যাসিবাদী মহাজোট সরকারের অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল অংশ সম্মিলিতভাবে মেঘের নিহত পিতা-মাতাকে চরিত্রহননসহ অন্যান্য পন্থায় বড় নির্মমভাবে বার বার খুন করছে। মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করি যেন এই দুর্বিনীত শাসকশ্রেণীর ওপর তাঁর অভিসম্পাত বর্ষিত হয়।
ইমেইল : admahmudrahman@gmail.com

শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১২

বদলে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী!

ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি: জামায়াতে ইসলামী বদলে যাচ্ছে। এই নিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। সংগঠনের মধ্যে এই আলোচনা জেলা-উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি দলের একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন। জানা যায়, জামায়াতে ইসলামীর ওপর সরকারের ‘ক্র্যাকডাউন’ শুরুর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে কমবেশি আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে জামায়াতকে নামের মধ্যে সংশোধনী আনতে হয়। দলটির আগের নাম ছিল ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’। সংশোধন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার বিষয়টি জামায়াতকে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত করে রেখেছিল। এখন মানবতা বিরোধী বিচার শুরু হওয়ায় একটি দলের জন্য আরো জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
দলের একটি সূত্র জানায়, এই জটিলতা শুরু নাকি আরো আগে। দলের মধ্যে যারা একাত্তরের পরে এসেছেন তারা চাইছেন ‘চিহ্নিত’ লোকদের বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়ে দল গঠন করতে। দলের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর প্রস্তাবও অনেকে করেন। তখন ওইসব নেতাদের ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করে দলের মধ্যে কোণঠাসা করা হয়। জানা যায়, এদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। যাদের মধ্যে দু’জন এখন কারাগারে আছেন। জানা যায়, দলের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ‘সংস্কারপন্থী’দের কোণঠাসা করতে নিজেদের মধ্যে গ্রুপ গড়ে তোলেন। আর দলটির বৈশিষ্ট্য হলো আমীর যা চাইবেন তার বাইরে কারো কিছু করার থাকে না। ফলে কথিত সংস্কারপন্থীরা দলে কোণঠাসা হয়ে যান। এ ব্যাপারে নিজামী-মুজাহিদকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে দলের ঢাকা মহানগর কমিটি। এরও আগে ছাত্রশিবিরের একটি গ্রুপ দল ছেড়ে চলে যায়। এদের বেশিরভাগই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদদের ‘নেতিবাচক’ ভূমিকাকে দায়ী করা হয়। এই নিয়েও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা দু’ভাগে ভাগ হয়ে যান। কথিত সংস্কারপন্থী জামায়াত নেতারা বেরিয়ে যাওয়া শিবির নেতাদের সমর্থন করতেন বলে কথা ওঠে। এরপর একের পর এক নেতাদের গ্রেফতারের পর বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে নানা আলোচনা চলতে থাকে। এখন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর অফিস বন্ধ। শিবিরের অফিসও তালাবদ্ধ। নেতারা বলতে গেলে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছেন। এই পরিস্থিতিতে পত্রিকায় প্রকাশিত দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের একটি লেখা নিয়ে সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি নিয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ে কথা চলছে বলে জামায়াতের একটি ‍সূত্র বার্তা২৪ ডটনেটকে নিশ্চিত করেছেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের লেখাটির দৈনিক নয়া দিগন্তে গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। ‘আরব বসন্ত এবং দেশে দেশে ইসলামী আন্দোলন’ নামে প্রকাশিত লেখাটিতে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বোঝাতে চেয়েছেন, এখন বাস্তবতার নিরিখে সব কিছু করতে হবে। চিন্তাকে সুদূরপ্রসারী করতে হবে। তা না হলে টিকে থাকা যাবে না। ব্যারিস্টার রাজ্জাক তার লেখায়, বিভিন্ন দেশে ইসলামী দলগুলো চরম বৈরিতার মধ্যে নিজেদেরকে টিকিয়ে রেখে ক্ষমতায় আসছে তার বর্ননা দেন। তিনি লিখেছেন, “অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তিউনিসিয়ায়। ২১৭ আসনের গণপরিষদে রশিদ ঘানুশির ইসলামপন্থী দল আন্‌নাহদা ৮৯ আসন পেয়ে সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২৯ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সিপিআর (কংগ্রেস ফর দ্য রিপাবলিক), আর ২৬ আসন পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আরিধা। শেষোক্ত দু’টি দলই সেকুলার আদর্শে বিশ্বাসী। এরপর নভেম্বর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মরক্কোতে। ৩৯৫ আসনের পার্লামেন্টে ১০৭ আসন পেয়ে সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মধ্যমপন্থী ইসলামি দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি।”মিসর সম্পর্কে তিনি লিখেছেন,“অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মিসরের নির্বাচনে ইখওয়ানের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) ৫০৮ আসনের পার্লামেন্টে সর্বমোট ২৩৫ আসন পেয়ে সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ১২৩টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সালাফিপন্থী নূর পার্টি। ৩৮টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে উদারপন্থী ওয়াফদ্ পার্টি। নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটলে ইখওয়ানই আগামীতে কোয়ালিশন সরকার গঠন করবে। মোবারকের আমলে ইখওয়ান নিষিদ্ধ দল হলেও পার্লামেন্টে বিভিন্ন নামে এবং নির্দলীয়ভাবে ইখওয়ানের আসনসংখ্যা ছিল ৮০। ডাক্তার, প্রকৌশলী ও আইনজীবীদের সংগঠনের বেশির ভাগই ছিল ইখওয়ানের দখলে। সমাজসেবার কারণে তারা ছিলেন জনগণের খুব কাছাকাছি। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের মতো তাদের কোনো রাজনৈতিক দুর্নামও ছিল না। তারপরও তারা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নামে আলাদা একটি প্লাটফর্ম সৃষ্টি করেছেন। ঘোষণা করেছেন একজন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানকেও মিসরের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মেনে নিতে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।”তুরস্ক প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, “আমার তিনবার তুরস্ক সফরের সুযোগ হয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্রথম সফরের সময় নাজমুদ্দিন আরবাকান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সফরে রেফাহ পার্টির এক যুবক সংসদ সদস্য আমাকে বলেছিলেন, ‘ইসলামের জন্য তুরস্কে কাজ করা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চেয়ে হাজার গুণ কঠিন।’ স্মরণ করা যেতে পারে, একটি কবিতা লেখার কারণে রজব তৈয়ব এরদোগানকে জেলে যেতে হয়েছিল এবং তিনি নির্বাচন করার জন্য অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন। সেই তুরস্ক আজ মুসলিম বিশ্বের অলিখিত নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হওয়ার সম্মান অর্জন করেছে।”এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রাজ্জাক আরো বলেন, “আতাতুর্কের ‘আধুনিক তুরস্কে’ সেকুলারিজমের শিকড়, সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে। এমনকি, সেকুলার ফ্রান্সের চেয়ে সেকুলার তুরস্ক অনেক বেশি সেকুলার। তুরস্কের সেনাবাহিনী নিজেদের সেকুলারিজমের রক্ষাকারী বলে মনে করে। তারা ১৯৬০, ১৯৮০ এবং সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে ক্ষমতা দখল করেছিল। ১৯৯৮ সালে নাজমুদ্দিন আরবাকানকে যখন ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তখন রজব তৈয়ব এরদোগান ছিলেন তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র। ক্ষমতাচ্যুতির পর নীতিগত প্রশ্নে এরদোগানের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত কম বয়স্কদের সাথে বর্ষীয়ান নেতা আরবাকানের মতবিরোধ হয়। আরবাকান সরাসরি ইসলামের কথা বলতেন এবং পাশ্চাত্যের সমালোচনা করতেন। তার এসব বক্তব্যকে সেনাবাহিনী চিত্রিত করে সেকুলারিজমের বিরোধিতা রূপে। এরদোগান ও আবদুল্লাহ গুল ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ নামে নতুন দল গঠন করে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে সেকুলারিজমকে এ বলে সংজ্ঞায়িত করেন যে, সেকুলারিজমের অধীনে ইসলামসহ সব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। তারা গুলেন মুভমেন্ট ও অন্যান্য উদারপন্থীদের সমর্থন লাভ করেন। তা ছাড়া তারা অর্থনৈতিক উন্নতির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেন। ফলে ২০০২ সালের নির্বাচনে নবগঠিত একে পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। পরপর দু’টি নির্বাচনে তারা বিজয়ী হন। একে পার্টির নেতৃত্বে তুরস্ক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দীর্ঘ দিন ধরে তুরস্ককে একটি ছোট্ট গ্রুপ শাসন করে আসছিল। এ কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীতে ছিল সেনাবাহিনীর একটা অংশ, উচ্চতর আদালতের বিচারপতিদের একটি অংশ, সুশীলসমাজ ও সংবাদমাধ্যমের একটি অংশ। তারাই সিদ্ধান্ত নিত কারা ক্ষমতায় থাকবে বা থাকবে না। এরদোগানের আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী এদের চ্যালেঞ্জ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে এরদোগান সংবিধান সংশোধন করেছেন এবং সত্যিকার অর্থে তুরস্কে গণতন্ত্র কায়েম করেছেন। তুরস্কই প্রমাণ করল নেতৃত্বের কাজ হচ্ছে, একটি পথ বন্ধ হলে আরো তিনটি পথ খোলা। দ্বীনের পথে কোনো কাজে সঙ্কীর্ণতা নেই (সূরা হজ-২২:৭৮), যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, আল্লাহ তাদের পথ দেখিয়ে দেন (সূরা আনকাবুত ৬৯:২৯)।”
রাজ্জাক লিখেছেন, “তুরস্কের একে পার্টি এবং মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের পথ ধরে ৬০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কার্যরত ভারতের জামায়াতে ইসলামী গত বছরের এপ্রিল মাসে ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তাদের স্লোগান হচ্ছে- ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা। পাশাপাশি জামায়াত তার আদর্শিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। ১৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি জামায়াতের দায়িত্বশীল হলেও তাতে পাঁচজন অমুসলমান রয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন কেরালা রাজ্যের ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ফাদার আব্রাহাম জোসেফ এবং কর্নাটকের সাবেক মন্ত্রী (অমুসলিম) ললিতা নায়ার। এরা দু’জনই সহসভাপতি। অনুরূপভাবে মালয়েশিয়ার ইসলামি আন্দোলন পিএএস (এক সময় যারা দু’টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিলেন; এখন শুধু একটিতে, কিন্তু ফেডারেল পার্লামেন্টেও তাদের সদস্য রয়েছে) ইসলামি রাষ্ট্রের কথা বাদ দিয়ে শুধু ন্যায়বিচারের কথাই বলছে। তুরস্ক, তিউনিসিয়া, মালয়েশিয়া, মিসর ও ভারতে ইসলামি আন্দোলনের এই কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনের আসল লক্ষ্য হচ্ছে দ্বীনের বাস্তবায়ন (সূরা সফ ৬১:৯)। কৌশলগত সঠিক সিদ্ধান্ত ছাড়া দ্বীনের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা লিখেছেন, “নেতৃত্বদানের জন্য (সূরা আল ফুরকান ২৫:৭৪) দেশে দেশে ইসলামি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে বাস্তবধর্মী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে তুরস্কের একে পার্টি, মিসরের ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি, তিউনিসিয়ার আন্‌নাহাদা পার্টি এবং ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া থেকে অনেক অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। ছোট-বড় ইসলামি দলগুলোকে সব সঙ্কীর্ণতা ও আত্মম্ভরিতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে কোনো দোষ নেই। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-মুসিবত বাড়ানোর জন্য আল্লাহ পবিত্র কুরআন নাজিল করেননি (সূরা তাহা ২০:১)।
সবশেষে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, “আরব বসন্ত গোটা বিশ্বকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে এবং পশ্চিমা পর্যবেক্ষকদের অনেকটা অবাক করে দিয়ে ইসলামপন্থীরাই এর ফসল ঘরে তুলেছেন। সামপ্রতিক কালে আরব বিশ্বের নির্বাচনী ফলাফল এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ বহন করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশের গায়ে এই আরব বসন্তের বাতাস কখন লাগবে?”
ব্যারিস্টার রাজ্জাক মূলত বলতে চেয়েছেন, জামায়াতকে পরিবর্তনে আসতে হবে। এই পরিবর্তন নামে এবং কর্মকৌশলে। অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের এই লেখাটি প্রকাশের পর তৃণমূল পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানা যায়। কিভাবে জামায়াত তার ‘বিতর্কিত’ ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসবে সেই আলোচনা জোরদার হয়েছে বলে দলের একটি সূত্র জানায়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াত মহানগরী এক নেতা বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, বিষয়টি ততো সহজ নয়। কারাগারে আটক নেতাদের বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত দলের সংস্কার কঠিন। তিনি স্বীকার করেন, দলের তরুণদের মধ্যে সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। জামায়াতের আরেকটি সূত্র জানায়, দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের থেকে যারা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন তারা কোনদিকে যাবেন সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এরা খুব হিসাব-নিকাশ করে পা ফেলছেন। কারণ এখানে দুনিয়াবি লাভ-লোকসানের প্রশ্ন জড়িত।

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে ফিরিয়ে দিলেন ড. ইউনূস




ঢাকা, ২ মার্চ: বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ নয়দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলেছেন। তিনি তাকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে ফিরিয়ে দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের ভূয়সী প্রশংসা করলেও সামাজিক ব্যবসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান বলে মন্তব্য করেছেন।ডক্টর ইউনূস মনে করেন, যদি কোনোদিন সামাজিক ব্যবসা নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে যত বয়সিই হোক না কেন, তিনি প্রস্তাব পেলে ওই ব্যাংকটি প্রেসিডেন্ট হতে রাজি থাকবেন। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফররত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টারি ডেলিগেটদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব রাখেন যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিশ্ব ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য যেন ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে। সেই থেকে বিষয়টি নানাভাবে আলোচিত হয়ে আসলেও নোবেলজয়ী ড, ইউনূস এই ব্যাপারে মুখ খোলেননি। আজ শুক্রবার মিডিয়ায় পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। গ্রামীণ সেন্টার থেকে পাঠানো তার এই বিবৃতি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘‘গত ফেব্রুয়ারী ২২, ২০১২ তারিখে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টারী ডেলিগেটদের সঙ্গে আলাপকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ব্যাপারে তাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব করেন। তিনি প্রস্তাব রাখেন যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিশ্ব ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য যেন আমার নাম প্রস্তাব করে। তিনি এ পদে আমার যোগ্যতার ব্যাপারেও ডেলিগেটদের কাছে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর থেকে সংবাদ মাধ্যমে প্রস্তাবটি নিয়ে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এই প্রস্তাবটি আমার জন্য ছিল একটি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত সুসংবাদ। বিশ্বের সুপরিচিত এবং বিপুল প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে আমার নাম প্রস্তাব করার অনুরোধ জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সহৃদয়তার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই সংবাদে আনন্দিত হবার আমার আরেকটি কারণ হলো প্রস্তাবটি ও তার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার যোগ্যতার যে উদার তালিকা দিয়েছেন তার মাধ্যমে পরিষ্কার হলো যে আমার সম্বন্ধে এবং গ্রামীণ ব্যাংক সম্বন্ধে তাঁর যে পূর্ববর্তী ধারণাগুলি ছিল সেগুলির অবসান হয়েছে। এতে আশান্বিত হয়েছি যে এখন থেকে আমার প্রতি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। এর ফলে আমার এবং আমার মত অনেক দেশবাসীর মাথার উপর থেকে দুঃখ ও দুঃশ্চিন্তার একটা বিরাট বোঝা নেমে যাবে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর থেকে অনেকে এই প্রস্তাবের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন; যুক্তরাষ্ট্রের মাননীয় রাষ্ট্রদূত আশ্বাস দিয়েছেন যে আমি আগ্রহী হলে তাঁর দেশ এই প্রস্তাবের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেবে। আমি মাননীয় রাষ্ট্রদূত এবং অন্য সকলের প্রতি আমার উপর তাঁদের আস্থার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমি নিজে অবশ্য কখনো বিশ্বব্যাংকের প্রধান বা ওই রকমের বড় কোন দায়িত্ব নেবার কথা চিন্তা করিনি। দীর্ঘকাল ব্যাপী বিশ্ব ব্যাংকের একজন নিয়মিত সমালোচক হিসেবে আমি তার নীতি ও কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করে এসেছি। এই ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদটি যুক্তরাষ্টের নাগরিকদের জন্য বরাদ্ধ করে রাখার বিষয়টিও আমার সমালোচনার বিষয়বস্তু ছিল। কিন্তু তাই বলে যেকাজে নিজেকে সঁপে দিয়েছি তার বাইরে গিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সর্বোচ্চ দায়িত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারে আমার মনে কোনো আগ্রহ জন্মেনি। এখনও এ রকম কোনো আগ্রহ আমার নাই।
অতীতেও আরেকবার আমি এরকম আলোচনার মধ্যে এসে গিয়েছিলাম। ১৯৯৫ সালে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন আমাকে ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ জানান। নানা বিষয়ের মধ্যে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ব্যাপারে আলাপ করেন ও আমার পরামর্শ চান। তিনি জানতে চান বিশ্ব ব্যাংকের জন্য নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করতে হবে, এপদে আমার কোনো আগ্রহ হবে কিনা। আমি সবিনয়ে তাকে অনুরোধ করেছি আমার কাজের মধ্যে আমাকে নিবিষ্ট থাকার সুযোগ দেবার জন্য। এরপর পত্রপত্রিকায় বিশ্ব ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবার সম্ভাব্য ব্যক্তি হিসেবে আমার নাম প্রকাশিত হবার প্রেক্ষিতে একজন বিরক্ত মার্কিন সাংবাদিক আমার যে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন তার একটা কৌতুকময় বর্ণনা আমার আত্মজীবনী ‘ব্যাংকার টু দি পুওর’ বইটিতে আমি উল্লেখ করেছি। সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হবার পর আমি কী কী পদক্ষেপ নেবো। সংবাদটির প্রতি সাংবাদিক মহোদয়ের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী অনুভব করে আমি বলেছিলাম যে আমার প্রথম পদক্ষেপ হবে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়টি ওয়াশিংটন থেকে সরিয়ে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা। আমার জবাবে সাংবাদিক খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন জিম উলফেনসনকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেন। তিনি জানতেন না আমার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হবার কিছুদিন পরে আমাকে বিশ্ব ব্যাংকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ, অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টর, হবার জন্য অনুরোধ করেন। একই কারণে আমি তার অনুরোধও রাখতে পারিনি।
২০০৫ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আমাকে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল পদে মনোয়ন দানের প্রস্তুতি নেন এবং আমার সম্মতি চান। জাতিসংঘের নিয়ম অনুসারে সেবার পদটি একজন এশিয়াবাসীর প্রাপ্য ছিল। আগে থেকে কয়েকটি ইউরোপীয় এবং এশিয়ান দেশ আমাকে আগ্রহী হবার জন্য উৎসাহিত করছিলেন। আমি তাদেরকে আমার অপরাগতার কথা জানিয়ে যাচ্ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও তার সহৃদয়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার নিজের কাজে নিয়োজিত থাকার ব্যাপারে সুযোগ প্রার্থনা করেছিলাম। তিনি কয়েকবার অনুরোধ করার পরও আমি আমার মন পাল্টাতে পারিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান প্রস্তাবে যাঁরা উৎসাহিত বোধ করছেন তাঁরা হয়তো আমার উপর নারাজ হবেন এই ভেবে যে দেশের জন্য এত বড় সুযোগের প্রতি আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমার দিকটার কথাও তাঁদের বিবেচনার জন্য নিবেদন করছি। সারাজীবন আমি যে কাজ আমার মত করে করতে পারি, এবং আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটাই করে গেছি। সামাজিক ব্যবসাকে সকলের কাছে পরিচিত করা, সেটার সফল বাস্তবায়ন করা, পৃথিবীর তরুণদেরকে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশাবাদী করে তোলা এবং নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে তাদের নেতৃত্ব গ্রহণে আগ্রহী করে তোলার কাজেই আমি নিয়োজিত। একাজে আমি পরিপূর্ণভাবে নিয়োজিত থাকতে চাই। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে ‘বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিশ্বের মৌলিক অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধানে এই ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হবার জন্য যদি কেউ আমাকে অনুরোধ করে তবে সানন্দে সে দায়িত্ব নিতে আমি এগিয়ে আসবো- ততদিনে আমার বয়স যতই হোক।”