বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩

বাংলা সাহিত্যের সংগ্রামী ও শক্তিমান কথাসাহিত্যিক পল্লী কবি জসিমউদদীন,,,,

মোঃ নজরুল ইসলাম
একবার এক সাহিত্য সভা থেকে ফিরছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।পদ্মার উপর নৌকায় বসে, হঠাৎ নৌকা একটু বেসামাল হয়ে উঠল। নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গী গোলাম সাবদার সিদ্দিকি মাঝিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন 'মিয়া একটু সাবধানে নৌকা চালাও এখানে বাংলা সাহিত্যের বড় বড় সব কবিরা আছেন'। বৃদ্ধ মাঝি সেকথা শুনে কার্যত হতবাক হয়ে পড়লেন। তাঁর ধারণা জসীমউদ্দীনের পরে কেউ কবি হতে পারেন না। এমনকি স্বয়ং নির্মলেন্দু গুণের পিতাও পদ্মানদীর মাঝির মত মনে করতেন বাংলা সাহিত্যে কবি বলতে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও জসীমউদ্দীন।তাঁর ছেলে যে কবি পিতা সেকথা বিশ্বাসই করতে চাননি। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের অসম্ভব জনপ্রিয়তার অনেকটা হদিশ মেলে প্রবীন মাঝি কিংবা নির্মলেন্দু গুণের পিতার বিশ্বাসে। কাজী নজরুল ইসলামের যদি হয 'বিদ্রোহী', জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন ', জসীমউদ্দীনের তেমন 'কবর'। খুব ছোট বয়সে প্রেম, বিদ্রোহের কবিতা না লিখে জসীমউদ্দীন লিখেছেন স্বজনহারা বৃদ্ধের করুণগাথা। কবিতা পড়ে পাঠকরা বুঝতে পারেন না এই কবিতা এক তরুণের সৃষ্টি। কুষ্ঠিয়া থেকে ডাক পেলেন এক সাহিত্য সভায়। সেটা তাঁর জীবনের প্রথম কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়া। সংগঠকরা কবিকে চেনেন না, কবি রেলস্টেশনে নেমে দেখলেন কেউ তাঁকে অভ্যর্থনা করতে আসেন নি। তবে বিশ, পঁচিশের মত লোক ছিলেন,তারা কারও জন্য অপেক্ষা করছেন। জসিমউদ্দীন তাদের বলতে উত্তর পেলেন কবি জসীমউদ্দীনের এই গাড়িতে আসার কথা,তারা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। তরুণ কবি নিজের পরিচয় দিলেও তাদের বিশ্বাস হল না। পরে অবশ্য ভুল ভাঙলে বিস্ময়ের পালা। জসীমউদ্দীনের 'কবর' যখন ম্যাট্রিক ক্লাসের পাঠ্য হয় কবি তখনও বি এ পাশ করেন নি। দীনেশচন্দ্র সেন জসীমউদ্দীন কে বলেছিলেন 'তোমার কবিতাটি ম্যাট্রিক ক্লাসের পাঠ্য হয়েছে আমার যতদূর জানা আছে পৃথিবীর কোনও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ছাত্রের লেখা এ পর্যন্ত পাঠ্য হয় নাই '। সবসময় স্বপ্ন দেখতেন কলকাতায় সাহিত্য মহলের স্বীকৃতি। মনে মনে বিশ্বাস করতেন কলকাতায় আসলেই তিনি কবি হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যাবেন। তবে জসীমউদ্দীনের পিতৃদেবের এই বিষয়ে একদমই সায় ছিল না, বরং তিনি মনে করতেন পুত্রের এই কবিতা লেখার নেশায় পড়াশোনা ক্ষতি হচ্ছে।দেশে তখন ইংরেজ বিরোধীতা বাড়ছে,পল্লীকবিও পড়াশোনা ছেড়ে কলকাতায় চলে এলেন। উঠলেন বোনের বাড়িতে। তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় নিজেই অর্থের খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন। শুরু করলেন রাস্তায় নেমে খবরের কাগজ বিক্রি। গরম -গরম খবর হেঁকে বিক্রি করতেন। মানুষ আকৃষ্ট হতেন তাঁর বলার ভঙ্গিমায়।বহু সময় খরচ আর পরিশ্রমের পর সব কপি কাগজ বিক্রি হলে লাভ হত চোদ্দ পয়সা।এর সঙ্গে কবিতা লেখা চলছিল। সত্যি সত্যি জসীমউদ্দীনের কাব্যপ্রেম, সাহিত্য চর্চা,গ্ৰাম্য গান সংগ্ৰহে ব্যস্ত থাকায় পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।বি এ পাস করতে অনেক বছর লেগে যায়।যে বছর নক্সী-কাঁথার মাঠ প্রকাশ হল সেই বছর তিনি স্নাতক হলেন। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে অবনীন্দ্রনাথের কাছে অনেকদিন ধরে যাওয়ার সুযোগ হলেও কবিগুরুর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে একদিন জসীমউদ্দীন গেলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে। নিজের দুটো বই কবিগুরুর হাতে তুলে দিলে তিনি বলেছিলেন তোমার বই আমি পড়ব। পরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, রবীন্দ্রনাথ, জসীমউদ্দীন কে শান্তিনিকেতনে থেকে সেখান থেকে এম এ পরীক্ষা দিতে বললেন। অবশ্য সেই অনুরোধ তিনি রক্ষা করতে না পারলেও পেলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দরাজ প্রশংশা। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন জসীমউদ্দীনের কবিতার ভাব, ভাষা,রস সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে।অতি সহজে যাদের লেখবার শক্তি নেই,এমনতর খাঁটি জিনিস তারা লিখতে পারে না। পরিশেষে হয়ত মনে প্রশ্ন জাগে জসীমউদ্দীন কাদের কবি! সমালোচক, পাঠকরা একটি বিষয়ে হয়ত একমত হবেন অনেকেই গ্ৰাম নিয়ে লিখেছেন কিন্তু জসীমউদ্দীন যে গ্ৰাম নিয়ে লিখেছেন তার স্বাদ অন্যরকম।তার কবিতায় প্রকৃতির থেকে মানুষ বড়। তিনি গ্ৰাম দেখেছেন গ্ৰামের মানুষের চোখ দিয়ে। সেখানেই তাঁর কবিতা ভিন্ন,স্বকীয়, আলাদা রূপ,রসে পরিপূর্ন। তবে নিন্দুক বলতেন কবি নাকি বেশ কৃপণ ছিলেন, তাঁর নিজের বিয়ের দিনে শ্যালিকারা অনেকক্ষণ দরজা আটকে রেখে কিছুতেই একটি পয়সা আদায় করতে পারেন নি। খেতে ভালবাসতেন মুড়ি ভাজা।মুটের মাথায় বই চাপিয়ে একদিন অন্তর বাংলা বাজারে যেতেন তাঁর সৃষ্টি ও কর্মের প্রতি কৃতজ্ঞতা অশেষ,,

সরকারি প্রকল্পে অধিগ্রহণের আগেই জমি কিনে নেন মন্ত্রী ও তাঁর ছেলেমেয়ে

আহমদুল হাসান মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ কারখানার জন্য যে সাড়ে ৩১ একর জমি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানকার ১১ একর ১৪ শতক জমি কেনেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মেয়ে সিনথিয়া মালেক। তিনি এ জমি ভরাট করে ভিটি শ্রেণিতে পরিবর্তন করেন। মাস সাতেক পর ওষুধ কারখানা স্থাপনের প্রকল্প পাস হয়। তার ২০ দিন আগে কেনা মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ দেখিয়ে এসব জমি স্বামী আলতাফ আকমলকে দান করেন সিনথিয়া। এখন সরকার এ জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে সর্বশেষ মূল্যের তিন গুণ বেশি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মেয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকায় যে জমি কিনেছেন, সেটা সরকার অধিগ্রহণ করলে ৪০ কোটি টাকা পাবেন তিনি বা তাঁর স্বামী। প্রস্তাবিত ওই স্থানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিডি সান লিমিটেডের নামে কেনা হয় ৬ একর ৩৯ শতক জমি। মন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের মালিকানাধীন রাহাত রিয়েল এস্টেটের নামে কেনা হয় ৩ একর ১২ শতক জমি। অর্থাৎ সাড়ে ৩১ একর জমির মধ্যে ২০ একর ৬৫ শতাংশ জমি মন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও মেয়ে কিনেছেন। এরপর শ্রেণি পরিবর্তন করে এক লাফে জমির মূল্য (মৌজা দর) পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। তারপর তিনজনই এসব জমি বর্ধিত দরে (মৌজা রেটে) ঘনিষ্ঠজনদের নামে দান বা বিক্রি করেছেন। এর বাইরে মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই শামীম মিয়া কিনেছেন আরও ৫ একর ৫৪ শতক জমি। প্রকল্পের ধারণার শুরু থেকেই এটাকে সম্পদ বিকাশের উপায় হিসেবে দেখেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি প্রকল্প পাসের পর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর পর্যায়ে জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা কমিটির পর্যালোচনায় প্রস্তাবিত জমি নিয়ে এমন কারসাজির বিষয়টি উঠে আসে। এমন পরিস্থিতিতে এই জমিতে প্রকল্প করতে গেলে ভূমি অধিগ্রহণে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে। এর পরিবর্তে পাশের কোনো মৌজায় প্রকল্প করলে সরকারের এই টাকা সাশ্রয় হবে। বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক। এই চিঠি দেওয়ার পরপর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে দেন মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন, যিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি শামীম মিয়ার বড় ভাই। প্রকল্পটি হচ্ছে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) মানিকগঞ্জে কারখানা স্থাপন। ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি পাস হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত। প্রকল্পের জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মেঘশিমুল এলাকায় সাড়ে ৩১ একর জমি প্রস্তাব করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রকল্প কোথায় হবে, সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রকল্প পাসের সময় প্রস্তাব করে থাকে। তাই প্রকল্প পাসের আগেই ওই এলাকার জমি কিনে নিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন এবং তারপর সে জমি অন্যের নামে হস্তান্তর ও মূল্যবৃদ্ধির এই কার্যক্রমকে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কোনো প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলে জমির মালিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে মৌজা দরের তিন গুণ দাম পান। অভিযোগ উঠেছে, অধিগ্রহণ বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে ১০০ কোটি টাকা বের করে নিতে কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তুলে ধরে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত স্থানে জমি অধিগ্রহণ করলে সরকারের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। ভূমি ব্যবস্থাপনা কমিটি মেঘশিমুল মৌজায় প্রস্তাবিত জমির সম্ভাব্যতা যাচাই করার পরই বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি যা বলার চিঠিতে উল্লেখ করেছি। এর বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’ যেভাবে জানাজানি হলো মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সরকারি ওষুধ কারখানা স্থাপনের জন্য মানিকগঞ্জের মেঘশিমুল মৌজায় সাড়ে ৩১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। গত ডিসেম্বরে জমি অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রস্তাবিত জমির শ্রেণি নাল (কৃষি) হলেও সম্প্রতি বালু ভরাট করে ভিটি (বাড়ি) শ্রেণি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে মহাপরিদর্শক নিবন্ধনের একটি স্মারকে এবং মানিকগঞ্জ জেলা নিবন্ধকের একটি স্মারকে ভিটি (বাড়ি) শ্রেণির প্রতি শতাংশ জমির মূল্য ২৫ হাজার থেকে এক লাফে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়। অর্থাৎ ভিটি (বাড়ি) শ্রেণির জমির মূল্য বাড়ানো হয় প্রায় পাঁচ গুণ। তবে আশপাশের কোনো মৌজায় জমির মূল্য বাড়ানো হয়নি। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মেঘশিমুল মৌজায় ভিটি শ্রেণির জমির সরকারি মূল্য বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী আইন মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার (আধা সরকারি সুপারিশপত্র) দেন। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই ওই মৌজার ভিটি শ্রেণির দাম পাঁচ গুণ বেড়ে যায়; যা অস্বাভাবিক। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিটি শ্রেণির মূল্য পাঁচ গুণ বাড়ানোর দুই মাস পর মন্ত্রী ও তাঁর ছেলে যখন সাড়ে ৯ একর জমি উচ্চ মূল্য দেখিয়ে বিক্রি দেখিয়েছেন, ঠিক সেই সময়েই সেখানে নাল শ্রেণির জমি কেনা শুরু করেন মন্ত্রীর মেয়ে সিনথিয়া মালেক। এটা ‘সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়’ বলে মন্ত্রণালয়ে লেখা মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, যেখানে মেঘশিমুল মৌজায় ভিটি (বাড়ি) শ্রেণির জমির মূল্য প্রতি শতাংশ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে পাশাপাশি আরও চারটি মৌজায় একই শ্রেণির জমির দাম ১৬ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ আশপাশের মৌজা থেকে মেঘশিমুল মৌজায় ভিটি (বাড়ি) শ্রেণির জমির দাম ৪ থেকে ৮ গুণ বেশি। সরকারের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পার্শ্ববর্তী কোনো মৌজায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন। মেঘশিমুল মৌজার উত্তরে ঢাকুলিতে অকৃষি (ভিটি/বাড়ি) শ্রেণির জমির মৌজামূল্য ১৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই মৌজার ভিটি শ্রেণির জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে জমি অধিগ্রহণে সরকারের খরচ হবে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। এতে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একইভাবে মেঘশিমুল মৌজার দক্ষিণে কুকুরিয়া, পশ্চিমে ধারিচোরা ও পূর্বে জাগীর মৌজায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে সরকারের ৬১ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, বিপুল পরিমাণ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে অপচয় হবে। চিঠিতে সেটিই জানানো হয়েছে। অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, মেঘশিমুল মৌজা এবং আশপাশের এলাকার জমির সরকারি মূল্য কম হলেও বাস্তবে দাম অনেক বেশি। প্রকল্পটি মেঘশিমুল মৌজায় না করে আশপাশের কোনো মৌজায় করলে সরকারকে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঢাকার বারিধারার বাসায় এই প্রতিবেদকের কথা হয় গত ৫ জুন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, মানিকগঞ্জের বর্তমান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব আছে। জেলা প্রশাসক ইচ্ছে করে ইডিসিএলের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছেন না। ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছেন। জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু না করে হঠাৎ করে চিঠি দিয়ে প্রকল্পটি বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে এরই মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন ২০০ কোটি টাকা বেশি লাগবে। মন্ত্রী-পরিবারের জমি ক্রয় ও হস্তান্তর প্রস্তাবিত স্থানের জমি কেনাবেচার সর্বশেষ নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তাঁর মালিকানাধীন বিডি সান পাওয়ার লিমিটেডের নামে ৬ একর ৩৯ শতক জমি কেনেন। দলিল অনুযায়ী, প্রতি শতক ৫৫ হাজার থেকে ৬৭ হাজার ৬১৯ টাকা দরে কিনেছেন। সেই জমি তিনি প্রতি শতক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দরে ২০২১ সালের মার্চে বিক্রি করেন। জমি বিক্রির আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মেঘশিমুল মৌজার ভিটি শ্রেণির জমির মূল্য পাঁচ গুণ বাড়ানো হয়। এর দুই মাস পর ৪ একর ৭৮ শতক জমি এনডিই স্টিল স্ট্রাকচার্স লিমিটেডের নামে হস্তান্তর করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীর কেনা বাকি ১ একর ৬১ শতক জমি আফছার উদ্দিন সরকারের নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফছার উদ্দিনের বাড়ি মন্ত্রীর গ্রামে। এলাকায় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মন্ত্রীর ছেলের মালিকানাধীন রাহাত রিয়েল এস্টেটের নামে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেনা হয় ৩ একর ১২ শতক জমি। শতক ৬৭ থেকে ৬৮ হাজার টাকায় কেনা সেসব জমি ২০২১ সালের মার্চে এনডিই স্টিল স্ট্রাকচার্স লিমিটেডের কাছে বিক্রি করা হয়। বিক্রয় মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তাঁর মালিকানাধীন বিডি সান পাওয়ার লিমিটেডের নামে ৬ একর ৩৯ শতক জমি কেনেন। দলিল অনুযায়ী, প্রতি শতক ৫৫ হাজার থেকে ৬৭ হাজার ৬১৯ টাকা দরে কিনেছেন। সেই জমি তিনি প্রতি শতক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দরে ২০২১ সালের মার্চে বিক্রি করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও তাঁর ছেলের প্রতিষ্ঠান জমি কিনেছে অনেক আগে। তখন সেখানে সরকারি প্রকল্প করার কোনো বিষয় ছিল না। এসব জমি তাঁরা বিক্রি করে দিয়েছেন। এই মৌজায় (মেঘশিমুল) নিচু জমি ও ভরাট জমির মূল্যের মধ্যে অসামঞ্জস্য ছিল। সে জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে তিনি সেটি সমন্বয় করতে চিঠি দেন। তারা সেটি সমন্বয় করে দাম বাড়ায়। প্রস্তাবিত স্থানে তাঁর মেয়ের নামে কোনো জমি নেই। তবে মেয়ের স্বামীর নামে জমি আছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিটি শ্রেণির মূল্য পাঁচ গুণ বাড়ানোর দুই মাস পর মন্ত্রী ও তাঁর ছেলে যখন সাড়ে ৯ একর জমি উচ্চ মূল্য দেখিয়ে বিক্রি দেখিয়েছেন, ঠিক সেই সময়েই সেখানে নাল শ্রেণির জমি কেনা শুরু করেন মন্ত্রীর মেয়ে সিনথিয়া মালেক। জমি কেনাবেচার নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিনথিয়া মালেক ১১ একর ১৪ শতক জমি কিনেছিলেন ২০২১ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে। এরপর বালু ভরাট করে সেই জমি ভিটি (বাড়ি) শ্রেণিতে রূপান্তর করেন। ইডিসিএলের প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার ২০ দিন আগে (১৬ মার্চ ২০২২) ওই জমি স্বামী আজমল আকমলকে হেবা দলিলের মাধ্যমে দান করেন তিনি। দলিলে প্রতি শতাংশ জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের সদস্যদের জমি ক্রয় এবং সেটি প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই অন্যদের কাছে হস্তান্তর কৌশলের অংশ। কারণ, অধিগ্রহণের সময় পুরো জমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকলে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ জন্য মৌজা দর বাড়ার পর এসব জমি ঘনিষ্ঠজনদের কাছে হস্তান্তর করে রাখেন। গ্রহীতা জানেন না, তিনি জমি কিনেছেন মন্ত্রী ও তাঁর ছেলে থেকে জমি ক্রয়ের দলিলে ক্রেতা বা গ্রহীতার স্থলে এনডিই স্টিল স্ট্রাকচার্স লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান রিজওয়ান মুস্তাফিজের সই রয়েছে। গতকাল ঢাকার গুলশানে রিজওয়ান মুস্তাফিজের কার্যালয়ে গেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানিকগঞ্জে কোনো জমি কেনার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। তাঁর সইযুক্ত দলিলের অনুলিপি দেখানোর পর রিজওয়ান মুস্তাফিজ বলেন, ‘এটা ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটারে (বড় হাতের অক্ষরে) লেখা আমার নাম। আমি কখনো ক্যাপিটাল লেটারে স্বাক্ষর করি না।’ তাহলে দলিলে গ্রহীতা হিসেবে কীভাবে আপনার নাম এল—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, আমার বড় ভাই ইমরান মুস্তাফিজ বলতে পারবেন।’ এরপর বনানীতে এনডিই স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান মুস্তাফিজের কার্যালয়ে গেলে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এসে এই প্রতিবেদকের পরিচয়পত্র দেখেন। তারপর ‘স্যার ব্যস্ত আছেন, একটু বসেন, দেখা করবেন’ বলে এই প্রতিবেদককে অপেক্ষা করতে বলেন। এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আর দেখা দেননি। ঘনিষ্ঠজনদের কাছে সাড়ে ৭ একর জমি প্রকল্পের প্রস্তাবিত স্থানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই শামীম মিয়া কিনেছেন ৫ একর ৫৪ শতক জমি। দলিল অনুযায়ী ক্রয়মূল্য ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এই জমি অধিগ্রহণ করা হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন ১৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। শামীম মিয়া জাগীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজ
েলা চেয়ারম্যানের ভাই। শামীম মিয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, জমি অধিগ্রহণ করা হবে, এমনটা ভেবে তিনি জমি কেনেননি। এখানে কোনো কারসাজি হয়নি। সরকারি প্রকল্পের সম্ভাব্য এলাকায় জমি কিনে, কারসাজি করে দলিলমূল্য বৃদ্ধি করে অধিগ্রহণের সময় বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেয় একটি চক্র। নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শামীম মিয়া ছাড়া মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আরও দুজন আওয়ামী লীগ নেতার দুই একরের বেশি জমি রয়েছে প্রস্তাবিত স্থানে। তাঁদের একজন গড়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফছার উদ্দিন সরকার ১ একর ৬১ শতকের মালিক। আর কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন কিনেছেন ৬০ শতক জমি। এ ছাড়া শাহজাদা রহমান নামে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি কিনেছেন প্রায় এক একর জমি। সরকারি প্রকল্পের সম্ভাব্য এলাকায় জমি কিনে, কারসাজি করে দলিলমূল্য বৃদ্ধি করে অধিগ্রহণের সময় বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেয় একটি চক্র। সরকারের ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি নেওয়ার ওই কারসাজিতে যেসব ব্যক্তির নাম এসেছিল, তাঁরাও একজন মন্ত্রীর নিকটাত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। এ নিয়ে গত বছরের ২৭ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রায় একই ধরনের কৌশল মানিকগঞ্জে দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান মনিটরিং করছে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক নতুন বার্তা ডটকম ঢাকা: বর্তমানে বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রচারিত অনুষ্ঠান, টক শো ও সংবাদ নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য কমিটি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। রোববার সংসদে প্রশ্নোত্তর-পর্বে তিনি বলেন, সরকারি ও জাতীয় ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতির কাছে পুরোপুরি দায়বদ্ধ। তাই বাংলাদেশ টেলিভিশন হতে বিকৃত ও অসত্য তথ্য প্রদান করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার মতো কোনো অনুষ্ঠান বা টক শো প্রচার করার সুযোগ নেই। তিনি আরও জানান, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪’-এর তৃতীয় অধ্যায়ে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত পরিহারের জন্য বলা হয়েছে। উক্ত নীতিমালা কার্যকর করার জন্য ‘সম্প্রচার আইন-২০১৫’ ও ‘সম্প্রচার কমিশন আইন-২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন দুইটি প্রণীত হলে ‘সম্প্রচার কমিশন’ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং টক শো’র জন্য সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে। ফলে টক শোগুলোতে বিকৃত ও অসত্য তথ্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে না। সরকারি দলের সদস্য বেগম পিনু খানের প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী জানান, বেসরকারি মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল বা পত্রিকায় ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার এবং ব্যক্তিগত শত্রুতার বা বিরোধীকে লক্ষ্য করে বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে নানা প্রকার কল্পকাহিনী বা মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রচার করা হলে সেক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। সরকারি দলের মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের বিষয়ে ভারতীয় দর্শকদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশের চ্যানেল সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই। তবে বিদেশী টিভি চ্যানেল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ডাউনলিংক ফি বেশি হওয়ায় ভারতীয় ক্যাবল অপারেটররা এই বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছে না। বিষয়টি ভারতীয় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, সার্কভুক্ত দেশসমূহের টিভি চ্যানেলসমূহ যাতে সহজে ভারতে সম্প্রচার করা যায় সেই লক্ষ্যে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সার্ক ফোরামে উত্থাপনের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। অপর এক প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, দেশের ৫২৮টি দৈনিক পত্রিকার মধ্যে প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। সরকার দলীয় সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রীর তালিকা অনুযায়ী, ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ প্রচার সংখ্যা নিয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রথম আলোর প্রচার সংখ্যা ৫ লাখ ১ হাজার ৮০০। আর ২ লাখ ৫০ হাজার ৮২০ প্রচার সংখ্যা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কালের কণ্ঠ। তিনি আরও জানান, বর্তমানে মিডিয়াভুক্ত পত্রিকার সংখ্যা ৫২৮টি। এরমধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ২৪৫টি এবং মফস্বল থেকে প্রকাশিত হয় ২৮৩টি। বর্তমানে প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার এবং মিডিয়া স্থগিত রয়েছে চারটি পত্রিকার। নতুন বার্তা/এসএ

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০১৫

মুক্তমনার ব্লগার খুন, বুধবার সিলেটে আধাবেলা হরতাল

সিলেট অফিস : মুক্তমনার ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যার প্রতিবাদে নগরীতে বুধবার আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় দ্য রিপোর্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. রহমতউল্লাহ দ্য রিপোর্টকে জানান, অফিসে যাবার জন্য মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার ১৩/১২, নুরানী বনকলা পাড়া এলাকার বাসা থেকে বের হলে অনন্ত বিজয়কে চারজন মুখোশধারী ব্যক্তি কোপায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মুক্তমনা ব্লগে নিজ নামে লেখালেখি করতেন অনন্ত বিজয়। ব্লগে তার সম্পর্কে দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, অনন্ত বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোটকাগজ 'যুক্তি'র সম্পাদক ছিলেন। মানবতা ও যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৬ সালে মুক্তমনা র‌্যাশনালিস্ট এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। তার প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থ (১) পার্থিব, (সহলেখক সৈকত চৌধুরী), শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১১। (২) ডারউইন : একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা, (সম্পাদিত), অবসর, ঢাকা, ২০১১। (৩) সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব : লিসেঙ্কো অধ্যায়, শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১২। (৪) জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ (মূল : ফ্রান্সিসকো জে. আয়াল, অনুবাদ : অনন্ত বিজয় দাশ ও সিদ্ধার্থ ধর), চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট, ২০১৪। চলতি বছর এ নিয়ে দু’জন ব্লগার ও একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট খুন হলেন। একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদকেও (৩০) কুপিয়ে জখম করা হয়। এর কয়েক দিন পরই হাতিরঝিলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অনলাইন এক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। রাজধানীর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ফেরার পথে ২০১৩ সালে মিরপুরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হন ব্লগার রাজিব, যিনি থাবা বাবা নামে লেখালেখি করতেন।

মেঘালয়ের পুলিশ আটক করেছে সালাহ উদ্দিনকে

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে সোমবার ভারতের মেঘালয়ের শিলং থেকে সে দেশের পুলিশ আটক করেছে। মঙ্গলবার স্থানীয় দ্য শিলং টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। ‘বাংলাদেশী ম্যান হেল্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে পত্রিকাটি বলছে, সোমবার সকালে একজন বাংলাদেশীকে আটক করেছে পুলিশ। সালাহ উদ্দিন আহমেদ (৫৪) নামে ওই বাংলাদেশীকে শিলংয়ের গল্ফ লিংক নামক এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ তার ব্যাপারে তদন্ত করছে। এদিকে বাংলদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ জানান, মেঘালয়ের শিলংয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত স্বামীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে।

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

‘বিএনপি এলে আ’লীগ নির্বাচন পিছিয়ে দেবে’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগতো নির্বাচন করবেই না। নির্বাচন আরও পিছিয়ে দেওয়া হবে।’ মতিঝিলে শনিবার কাদের সিদ্দিকী তার চলমান ৫৩ দিনের নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান কর্মসূচিস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে সংলাপের দাবিতে ২৮ জানুয়ারি থেকে মতিঝিলের ফুটপাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কাদের সিদ্দিকী। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণাকে বাচ্চাদের ললিপপ খাওয়ানোর মতো উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘একদিকে অবরোধ, অন্যদিকে পুলিশের গুলি। দেশের মানুষ যখন মরছে, তখন বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য ললিপপ দেওয়ার মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন দেশের জনগণের সঙ্গে তামাশা। এই নতজানু নির্বাচন কমিশনের অধীনে এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। বিরোধী দল চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই নির্বাচন করলে সরকারি দলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।’ কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারাজীবন চেষ্টা করেছেন সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের আর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে গণভবনে ডেকে নিয়ে সিটি নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেন। গণভবনতো সরকারি ভবন। সেখানে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রার্থীদের ডেকে নিয়ে সমর্থন দেন। এটা সংবিধানবিরোধী।’ কাদের সিদ্দিকী সরকারের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘সত্যিকারের নির্বাচন হলে সরকারি দলের প্রার্থী জামানত না হারালে আমি সারাজীবন শেখ হাসিনার সেবক হয়ে থাকব। সরকারি দলের প্রার্থীর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ মুক্তিযুদ্ধের এই কিংবদন্তি বলেন, ‘দেশের মূল সমস্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর দেশের মানুষ যেমন খুশি হয়েছিল, এই দুইনেত্রী আলোচনায় বসলে দেশের মানুষ আরও বেশী খুশি হবে।’ কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘শ্বাস নেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়েছেন। এবার আরও শ্বাস নেওয়ার জন্য আলোচনায় বসেন।’ বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশে করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আপনি গো ধরে বসে থাকবেন না। এই ব্যর্থ আন্দোলন প্রত্যাহার করুন। আপনার আন্দোলন আর এখন আপনার হাতে নেই। এই আন্দোলন এখন গোয়েন্দাদের হাতে। আন্দোলনে বিরতি দেন। আন্দোলন শেখেন। তার পর আবার আন্দোলন শুরু করেন।’ ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচে বাংলাদেশকে জোর করে হারানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কাদের সিদ্দিকী। কাদের সিদ্দিকী আগামী ২৮ মার্চ তার অবস্থান কর্মসূচির ৬০তম দিনে যে সব বিশিষ্ট ব্যক্তি তার অবস্থানস্থলে সংহতি জানিয়েছেন কিংবা দূরবর্তী স্থানে থেকে সমর্থন দিয়েছেন সবাইকে নিয়ে সংহতি সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফরিদ আহমেদ, যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিবুন্নবী সোহেল, ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রিফাতুল ইসলাম দ্বীপ প্রমুখ। ২১/৩/১৫

বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০১৫

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ র‌্যাবের গোয়েন্দা সরঞ্জাম আটকে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড


ঢাকা: মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং নজরদারি করার জন্য র‌্যাবের কেনা সরঞ্জাম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আটকে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। এ বিষয়ে র্যা ব ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া শেষে জাহাজীকরণের আগ মুহূর্তে চালানটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। দরপত্র অনুসারে, নজরদারির জন্য যে প্রযুক্তি বা সরঞ্জাম র‌্যাব কিনছে সেটা ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবস্ক্রাইবার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) ক্যাচার নামে পরিচিত। এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী গুপ্তচর সরঞ্জাম। এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা হয়। এই প্রযুক্তি সহজে বহনযোগ্য এবং গাড়িতে ব্যবহারের উপযোগী। এ বিষয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘শুনেছি, একটি মানবাধিকার সংস্থা র‌্যাবের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছে। এ কারণে ঝামেলা হচ্ছে। তবে কোন সংস্থা রিপোর্ট দিয়েছে সেটা জানি না।’ র‌্যাবের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, র‌্যাবের ব্যবহার করা গোয়েন্দা সরঞ্জাম ইউএইচএফ ট্রান্সমিটার অ্যান্ড সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্টটি ব্যবহারের অনুপযোগী। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর এটি অকেজো ঘোষণা করা হয়। সরকারি অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে নতুন আরেকটি যন্ত্র ক্রয়-প্রক্রিয়া শুরু হয়। একইভাবে এটি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রাকজাহাজীকরণের বিষয়টিও অনুমোদন করা হয়। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া মেনে কেনাকাটা সম্পন্ন করার একপর্যায়ে র‌্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই সংবাদের ওপর ভিত্তি করে উৎপাদনকারী দেশ সুইজারল্যান্ড জাহাজীকরণ প্রক্রিয়া আটকে দেয়। এসব সরঞ্জাম না থাকায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে র্যা ব। চিঠির ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি ক্রয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ওয়েবসাইটে গত বছরের ৬ জানুয়ারি নতুন করে ‘ইউএইচএফ ট্রান্সমিটার অ্যান্ড সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট’ আইএমএসআই ক্যাচার কেনার দরপত্র আহ্বান করে র‌্যাব। দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। যাচাই-বাছাই শেষে জার্মানির ইউরোপাল এগ্রি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ আদেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি এমএম ট্রেডার্স। তারা সুইজারল্যান্ডের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিওসফট থেকে নেওয়া গোয়েন্দা সরঞ্জাম র্যা বের কাছে সরবরাহ করবে। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে এমএম ট্রেডার্সের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আইএমএসআই ক্যাচার সম্পর্কে জানতে চাইলে বিটিআরসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল ফোনের ব্যবহৃত নেটওয়ার্কে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব সহজেই প্রবেশ করা যায়। এই প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠানো বেতার তরঙ্গ প্রথমে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর আইএমএসআই (সিম) দখল করে নেয়। প্রতিটি সিমের একটি মাত্র কোড থাকে। এরপর দখল করা সিমে একটি সংকেত পাঠানো হয়। ফোন ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন না যে এটা কোন নেটওয়ার্ক থেকে আসছে। পাঠানো সংকেত গ্রহণ করার পরই ফোন সেটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ওই প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এভাবে আইএমএসআই ক্যাচার ব্যবহার করে হাজার হাজার মোবাইল ফোনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধির কার্যালয় সূত্র জানায়, র‌্যাবের নজরদারি সরঞ্জাম কেনার খবর জেনে যায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল। নজরদারি সরঞ্জামের রফতানি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালাচ্ছে এই সংস্থাটি। ‘কোয়ালিশন এগেইনস্ট আনলফুল সার্ভেলেন্স এক্সপোর্ট অর্থাৎ ‘বেআইনি নজরদারি সরঞ্জাম রপ্তানিবিরোধী জোট’ বলে তাদের একটি আন্তর্জাতিক জোটও রয়েছে। চুক্তি হওয়ার পর র‌্যাবের একটি দল সুইজারল্যান্ডে ওই সরঞ্জামগুলো দেখতে যায়। এ সময় তাদের পেছনে আড়ি পাতে প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল। সুইজারল্যান্ডের জুরিখে র‌্যাব কর্মকতাদের সঙ্গে প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিওসফট কর্মকর্তাদের বৈঠক, হোটেলে অবস্থান ও বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের চিত্র ধারণ করে প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল। এমনকি দরপত্রের বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে থাকা ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া দেননি। প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘র‌্যাবের বিরুদ্ধে নৃশংসতা আর নির্যাতন চালানোর রেকর্ড আছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে র‌্যাব গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের হাতে সাত শতাধিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যদি এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সঠিক হয়, তা হলে সরঞ্জামগুলোর রফতানি থামানো বাঞ্ছনীয়।’ তারা সরঞ্জাম রপ্তানির মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অংশ না হওয়ার জন্য সুইজারল্যান্ড সরকারের প্রতি আবেদন জানান। এরপরই সরঞ্জাম সরবরাহে বিলম্ব শুরু হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে টেলিফোনে আড়ি পাতা বৈধ। টেলিযোগাযোগ আইনের ৯৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা ও কথোপকথন প্রতিহত, ধারণ বা এ-সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহে সরকার সময় সময় নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাকে কোনো ক্ষমতা দিতে পারবে।