শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১১

তুমি বেঈমান, মীর জাফর: রনিকে প্রধানমন্ত্রী





সম্প্রতি এক টিভি টকশোতে সরকার দলীয় এমপি গোলাম মাওলা রনি যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে ভীষণ ক্ষেপেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তাকে তিরস্কার করে বলেন, ‘তুমি বেঈমান। বিজেপির আন্দালিব রহমানের সাথে তুমি ব্যবসা করো। যে কাজ বিরোধীদল করবে তা তুমি কেন করছো?’
তিনি আরও বলেন, ‘তার শ্বশুর গোষ্ঠী বিএনপি করে। ও নিজও চিন্তা করছে এরপরে তাদের সাথে যোগ দেবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে শ্বশুররা তাকে শেল্টার দেবে। এ তো মীরজাফর।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘ওকে রাস্তা থেকে ধরে এনে এমপি বানিয়েছি। ওর মনে রাখা উচিত যে কোনও দলের নমিনেশন পেয়ে সে এমপি হয়নি। অবশ্য কোনও কথা দলের বিরুদ্ধে গেলে ওর কী যায় আসে?বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে দলীয় সংসদ সদস্যদের সভায় তিনি রনিকে এসব কথা বলেন।
সভায় অংশগ্রহণ করা একাধিক সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
সভার এক পর্যায়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ তার বক্তব্যে যোগাযোগমন্ত্রীকে নিয়ে দলীয় এমপি গোলাম মাওলা রনির সাম্প্রতিক একটি টিভি টকশোতে রাখা বক্তব্য তুলে ধরেন।তোফায়েল বলেন, রনি টকশোতে যান, ভালো বলেন। কিন্তু রনি বললেন, প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গিয়ে লেকের পাড়ে বসে বাঁশি বাজিয়েছেন। যিনি তাকে বাঁশি নিয়ে দিয়েছিলেন তিনি তাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। কিন্তু একথা যদি সত্যও হয় তিনি তা টকশোতে বলবেন কেন?
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রনি কোথায়? এখানে আছে?
রনি এসে সামনে দাঁড়ালে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, তুমি কার কাছে একথা শুনেছ? উত্তরে রনি বলেন, আমি এক সাংবাদিকের কাছে শুনেছি।
এরপর শেখ হাসিনা তাকে বলেন, তুমি একজন সাংবাদিকের কাছে শুনেই বলে ফেললা? তুমি তো আমার কাছে জানতে পারতে।এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে তিরস্কার করে বলেন, ‘তুমি বেঈমান। বিজেপির আন্দালিব রহমানের সাথে তুমি ব্যবসা করো। যে কাজ বিরোধীদল করবে তা তুমি কেন করছো?’
এদিকে, সভায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য দলীয় সাংসদদের তীব্র সমালোচনার শিকার হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আফসারুল আমিন।
সংসদ সদস্যরা বলেন, কোনও ব্যক্তির ওপর নির্ভর করা যাবে না। যারা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, সরকার ও দলের স্বার্থে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
সভা সূত্র জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিক, গ্রামে ডাক্তার না থাকা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।
একই সঙ্গে সভায় অংশগ্রহণকারী সদস্যরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ না পাওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন।
সবার বক্তব্য দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলের মূল লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী এবং দশ ট্রাক অস্ত্র আমদানিকারকদের রক্ষায় তারা যুদ্ধ শুরু করেছে। রোডমার্চের মাধ্যমেই বিরোধী দল তাদের এই লক্ষ্য স্পষ্ট করেছে। এর মাধ্যমে বিএনপি আবারও প্রমাণ করল যে, তারা রাজাকারের দল।
বিরোধী দলের অপপ্রচার সম্পর্কে এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কর্মকাণ্ড তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সারাদেশে জনগণের সামনে উপস্থাপনের জন্য তিনি দলীয় এমপিদের পরামর্শ দেন।এছাড়া দল ও সরকারের বৃহত্তর স্বার্থে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিন সকাল ১১টার কয়েক মিনিট পর শুরু হওয়া এই বৈঠক চলে বেলা ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী প্রায় পৌণে এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী অঙ্গীকার ছিল, আমরা কী কী বাস্তবায়ন করেছি, কোন প্রকল্পের কী অগ্রগতি তা জনগণকে জানাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে না। তারা গঠনমূলক ভূমিকা রেখে সরকারকে সহযোগিতা করলে আমরা আরও বেশি কাজ করতে পারতাম। গণতন্ত্র আরও অগ্রসর হতে পারতো। তারপরেও এর মধ্য দিয়েই আমাদের এগুতে হবে। সব কাজ হয়তো আমরা শেষ করতে পারবো না। তারপরও যতটুকু করতে পারবো সেজন্য নিজেদের ঐক্য দরকার।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে ফ্লোর নেন দলীয় এমপি আতিউর রহমান আতিক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে আমাদের দলীয় লোকজনের চাকরি হচ্ছে না। অন্যান্য প্রকল্পেও দলীয় লোকদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে না।
তাকে সমর্থন করে আরও কয়েক এমপি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের চাকরিগুলো রাজনৈতিক। এখানে আওয়ামী লীগের লোকজনের চাকরি না হলে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা চাকরি পাবে।
এই অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক কথা বলতে চাইলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই তিরস্কার করেন দলীয় এমপি ইসরাফিল আলম।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, রোডমার্চে খালেদা জিয়া যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে দেশবাসী শুনেছে। সরকার দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে লুটপাট হয়েছে ইত্যাদি অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তার এসব বক্তব্যের জবাব এবারের সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরতে হবে। সেজন্য সংসদে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সরকারি দলের এই বক্তব্য যেন মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো যায়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে তালিকা চাওয়া হলো। আমরা তালিকা দিলাম। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও বলেছেন যে সাড়ে চার হাজার লোকের চাকরি হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী চাকরি না দিয়ে প্রমাণ করলেন উপদেষ্টার বক্তব্য অসত্য।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এরকম বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে আমরাও এলাকার লোকজন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে হেয় হচ্ছি।
বৈঠকে কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে নেতা-কর্মীরা পাচ্ছেন না। তিনি মন্ত্রণালয়েও যান না।
তারা বলেন, স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে সংসদ সদস্যরা সবচেয়ে জড়িত। অথচ এ কাজে মন্ত্রীকে পাওয়া যায় না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন