মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লার মামলা : সাক্ষী নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ

অন্য এক মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করে ট্রাইব্যুনালে * আসল মোমেনার ছবি পাওয়া গেছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় সাক্ষী নিয়ে চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। হযরত আলী পরিবার হত্যাকাণ্ডে আব্দুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগ সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ একমাত্র সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হযরত আলী লস্করের একমাত্র বেঁচে যাওয়া মেয়ে মোমেনা বেগমকে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করেছে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়েছে সে হযরত আলী লস্করের মেয়ে আসল মোমেনা বেগম নয়। অপর এক মহিলাকে হযরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা বেগম সাজিয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী বানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ চাঞ্চল্যকর এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। হযরত আলী লস্করের মেয়ে আসল মোমেনা বেগমের ছবি সংরিক্ষত রয়েছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে। এ ছবির সন্ধান পাওয়ার পরই জালিয়াতির এ ঘটনা উঘাটিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করা হয়েছিল তার সাথে কোনই মিল নেই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত হযরত আলী লস্করের মেয়ে আসল মোমেনা বেগমের। আসামী পক্ষের আইনজীবীদেরকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবি দেখানো হলে তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তারা কোর্টে সাক্ষী হিসেবে যে মোমেনা বেগমকে দেখেছেন তার সাথে কোনো মিল নেই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবির। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজিরকৃত মোমেনা বেগম এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ছবির মোমেনা বেগম সম্পূর্ণ আলাদা দুজন মহিলা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা দুটি অভিযোগের মধ্যে একটি অভিযোগ হলো মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হযরত আলী পরিবারের হত্যা ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর। হযরত আলী পরিবার হত্যা ঘটনায় বেঁচে যায় হযরতী আলী লস্করের বড় মেয়ে মোমেনা বেগম। রাষ্ট্রপক্ষ এ ঘটনায় একমাত্র সাক্ষী হিসেবে মোমেনা বেগমকে হাজির করে ১৭ জুলাই ২০১২। ওইদিনই তার জবানবন্দী এবং জেরা সম্পন্ন হয়। ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে অর্থাৎ রুদ্ধদ্বার বিচার কক্ষে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মোমেনা বেগমকে লম্বা নেকাবসহ কালো বোরখা পড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। আসামী পক্ষের আইনজীবী জেরার সময় চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এই মোমেনা আসল মোমেনা বেগম নয়। কিন্তু তখন তারা এর পক্ষে কোন ডকুমেন্ট হাজির করতে পারেনি। রুদ্ধদ্বার বিচার কক্ষে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ট্রাইব্যুনালে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপক্ষের এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। বিচারক, কোর্ট রুমে উপস্থিত অন্যান্য স্টাফ এবং আইনজীবীরা সাক্ষী মোমেনা বেগমের চেহারা দেখেছেন। অন্য কারোর সামনে রাষ্ট্রপক্ষ তার চেহারা উন্মুক্ত করেনি তখন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবি সংগ্রহ করে কয়েকদিন আগে আসামী পক্ষের যেসব আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের দেখানো হলে তারা নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম সাজিয়ে যাকে হাজির করা হয়েছে সে প্রকৃতপক্ষে আসল মোমেনা বেগম নয়। রুদ্ধদ্বার বিচার কক্ষে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আসামী পক্ষের তিনজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, একরামুল হক এবং সাজ্জাদ আলী চৌধুরী। তারা সবাই বলেছেন ট্রাইব্যুনালে তারা যে মোমেনা বেগমকে দেখেছেন সে মোমেনা বেগমের সাথে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের কোন মিল নেই। সাক্ষী মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য : ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী তথ্য রয়েছে। যেমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী মোমেনা বেগম তার জবানবন্দীতে বলেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। খাটের নিচে লুকিয়ে থেকে পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং তার বোনকে ধর্ষণের ঘটনা দেখেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও ধর্ষণের শিকার হন এবং পরে অচেতন হয়ে পড়েন। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে মোমেনা বেগম নামে যার জবানবন্দী রক্ষিত রয়েছে তাতে দেখা যায় মোমেনা বেগম ঘটনার দুই দিন আগে তার শশুর বাড়িতে চলে যান। ফলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান এ ঘটনা থেকে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের হত্যার জন্য বিহারীদের দায়ী করেছেন। সেখানে কাদের মোল্লার কোন নাম গন্ধই নেই। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করা হয়েছে সে তার জবানবন্দীতে বলছে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে এবং নেতৃত্বে এ হত্যাকান্ড হয়েছে। সম্পূর্ণ উল্টো এ তথ্য থেকেও এটি প্রমাণিত যে, ট্রাইব্যুনালে হাজির করা মোমেনা বেগম এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে যে মোমেনা বেগমের ছবি রয়েছে তারা দুজন আলাদা মহিলা। রাষ্ট্রপক্ষ অপর এক মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করিয়েছে এবং তাকে দিয়ে সম্পূর্ণ সাজানো মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে আসামীকে ফাঁসানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের কথা : মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত পাম্প হাউজে এনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে জল্লাদখানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের অংশ। জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারের অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন সময়ে তাদের সাক্ষাতকার, বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ। শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাতকার, লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে। যে হযরত আলী লস্করের পরিবার হত্যা ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদ- এবং আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বিবরণ রক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে। হযরত আলীর বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে মোমেনা বেগমের বরাত দিয়েই সে ঘটনার বর্ননা লিপিবদ্ধ করে প্রতিবেদন আকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে হযরত আলী পরিবার হত্যার ঘটনার বিবরণ রয়েছে। মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহণের মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরণ তারা সংগ্রহ করে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত সে ডকুমেন্টে বা প্রতিবেদনে লেখা আছে ঘটনার দুই দিন আগে মোমেনা বেগম তার শশুর বাড়ি চলে যান। ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ফলে একমাত্র তিনিই বেঁচে যান গোটা পরিবারের এ হত্যাকান্ড থেকে। মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর সাথে তার একটি ছবিও সেখানে সংযুক্ত রয়েছে। হযরত আলী হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তার মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার যাদুঘর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ২৮/৯/২০০৭ তারিখ। তিনি তখন তাদের কাছে ঘটনার যে বিবরণ দেন তার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদঘুর কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন তৈরি করে এবং এখনো ডকুমেন্ট আকারে সংরক্ষিত রয়েছে তা নিম্নরূপ : “ঘটনার বিবরণ : ১৯৭১ সালে মিরপুরের কালাপানি এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পরিবারও বাস করতো। ৭ মার্চ এর পর থেকে দেশের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কিছু কিছু বাঙালি পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অনেকের অন্যত্র যাওয়ার অবস্থা ছিল না ফলে এলাকায় রয়ে গেলেন। যে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র যেতে পারলেন না তাদের মধ্যে একটি হযরত আলী লস্কর-এর পরিবার। হযরত আলী লস্কর ছিলেন একজন দর্জি/খলিফা। মিরপুরেই তার দোকান ছিল। সকালে যখন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আলী লস্করকেও তারা চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে ২৬ মার্চ সকাল সাতটার দিকে বিহারিরা হযরত আলী লস্কর-এর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তারা তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও শিশু পুত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং সকলকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বাড়ির কুয়োতে সব লাশ ফেলে যায়। বিহারিরা তার দ্বিতীয় কন্যা আমেনা বেগমকে ঘরের ভেতর সারাদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও হত্যা করে সেই কুয়োতে ফেলে। হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম মাত্র দুইদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়ায় একমাত্র সেই প্রাণে বেঁচে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আলীর স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিল। কয়েকদিন পরই এ খবর হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম জানতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি বাড়ি আসতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এসে তিনি আর কিছুই অবশিষ্ট পেলেন না। ভগ্নহৃদয়ে তিনি ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে।” ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা মোমেনা বেগম যা বলেছেন : ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে (রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার পরিচালনা) মোমেন বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনালে। ফলে সে সময় মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হয়নি। তবে মোমেনা বেগম কোর্টে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ে বর্ননা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে। ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মোমেনা বেগমরা তখন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় থাকতেন। মোমেনা বেগম কোর্টে সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনার বিষয়ে বলেন, সন্ধ্যার সময় তার পিতা হযরত আলী হন্তদন্ত হয়ে ঘরে আসলেন এবং বললেন, কাদের মোল্লা তাকে মেরে ফেলবে। কাদের মোল্লা এবং তার বিহারী সাগরেদ আক্তার গুণ্ডা তার পিতাকে হত্যার জন্য ধাওয়া করছে। তার পিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর তারা বাইরে বোমা ফাটাল। দরজা খোলার জন্য গালিগালাজ করল। তার মা দাও হাতে নিয়ে দরজা খুলল। তারা ঘরে ঢুকে গুলী করে হত্যা করল তার মাকে। কাদের মোল্লা তার পিতাকে কলার ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তার সঙ্গীরা তার বোন খাদিজা এবং তাসলিমাকে জবাই করল। দুই বছরের ভাইকে আছড়িয়ে হত্যা করে। মোমেনা জানায়, সে এবং তার ১১ বছর বয়স্ক অপর বোন আমেনা খাটের নিচে আশ্রয় নেয় ঘটনার সময়। আমেনা ভয়ে চিৎকার দেয়ায় তাকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করে জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়। এক পর্যায়ে তাকেও টেনে বের করে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারায় এবং জ্ঞান ফিরে পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। তার পরনের প্যাণ্ট ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পান তিনি। পরে এক ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তাদের সেবার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হন। পরে তার শশুর খবর পেয়ে তাকে এসে নিয়ে যান। রায়ে মোমেনা বেগমের বরাদ দিয়ে তাদের পরিবারের যে ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র এটি। রায়ে আরো বলা হয়েছে, এ ঘটনায় একজনমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মোমেনা বেগম। তার এভিডেন্সকে পাশ কাটানো যায়না বা সন্দেহ পোষণ করা যায়না। রায়ে আসামী পক্ষের দাবি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আসামী পক্ষ দাবি করেছে মোমেনা বেগম হযরত আলী লস্করের মেয়ে নন। তিনি যে হযরত আলী লস্করের মেয়ে সে মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ডকুমেন্ট হাজির করেনি। আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় এবং এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে কারাদণ্ড প্রদান করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে। হযরত আলী হত্যা ঘটনাটি ছিল ছয় নম্বর অভিযোগ এবং এ অভিযোগসহ আরো একটি অভিযোগে যাবজ্জীবন প্রদান করা হয়। হযরত আলী আওয়ামী লীগ করার কারণে এবং স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারী এবং আর্মিদের সাথে নিয়ে তাকেসহ পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদ- দেয়। একটি অভিযোগ থেকে খালাস দেয়। আপিল বিভাগের রায়ে একটি যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ অভিযোগটি হলো মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনা। এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের অপর চারটি অভিযোগে প্রদত্ত সাজা বহাল রাখা হয় আপিল বিভাগের রায়ে। অপরদিকে একটি অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিলেও আপিল বিভাগ ওই অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা দেন। অর্থাৎ ছয়টি অভিযোগেই আপিল বিভাগ সাজা দেয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে।

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

BDR হত্যাকান্ডের গোপন অধ্যায়গুলো

আমি এখন যেই লেখাটা আপনাদের দিতে যাচ্ছি তা আমি এর মধ্যেই পৃথিবীর অনেক দেশের বাংলা সংবাদ মাধ্যম ও ইংরেজী সংবাদ মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার লেখাটি অনেকেই বিশ্বাস করবেন আবার অনেকেই বিশ্বাস করবেন না। এই দুইটি সম্ভাবনার ফলাফল আমার ঘাড়েই বর্তায়। তারপরেও সে কথা বিবেচনায় রেখে আমি আমার গত দুই বছরের তদন্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। পিল খানায় বিডি আর হত্যাকান্ড যারা কেবল একটি বিদ্রোহ ও হত্যার মধ্যে দেখেন, আমি সেই চিন্তাধারী নই। দীর্ঘ অনেক বছর বাংলাদেশ আর্মিতে আমার চাকুরীর সুবাদে আমার অনেক বন্ধু এখানে আছে, আছে শুভাকাংখী। আমি এমন সব সূত্র থেকে এসব খবর আজ আপনাদের দিতে যাচ্ছি যেসব সূত্র আমি আপনাদেরকে বলতে পারব না। এই একটা বড় দূর্বলতা আমার লেখাতে থেকেই যাবে। আমি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। যাদের থেকে আমি গত দুই বছরে সংবাদ সংগ্রহ করেছি তাদের সবাই সেই সংবাদ দেয়ার ক্ষেত্রে ছিলেন যোগ্য ও যোগ্যতর। যাদের মধ্যে আছেন সরকারের উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার, গোয়েন্দা অফিসার, রাজনীতিবিদ, রাজনীতি বিশ্লেষক। আমি আমার পরিচয় দিতেও আপনাদের কাছে অপারগ। আমার পারিবারিক জীবন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করার ফলেই সেই অপারগতা। সে জন্যও আমি ক্ষমা প্রার্থী। বি ডি আর হত্যাকান্ডে যাদের যাদের সম্পৃক্ততা আছে তাদের যাদের নামই তদন্তে এসেছে আমি কারো নামই লুকাইনি। আওয়ামীলীগের মির্জা আজম, নানক, তাপস রা এই ঘটনার মূল টুলস হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর পৃষ্ঠ পোষকতা এর সবচাইতে বড় অংশ। নাগরিক ব্লগে এই লেখা প্রকাশের কারন একটি। তা হোলো রেফারেন্সের মাধ্যমে। আমার আরেক শুভাকাঙ্খীর মাধ্যমে আমি জানতে পারি বাংলা অন লাইন ব্লগের ভেতর রাজনৈতিক আলোচনার ব্লগ হিসেবে নাগরিক ব্লগ এখন পরিচিত। তাই এখানে এই লেখাট প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। আআমার এই তদন্ত রিপোর্টের কলেবর অনেক বৃহৎ। তাই কিছু খন্ডে এই রিপোর্টটি সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি। আমার এই লেখা যদি আপনাদের ব্লগের প্রতি কোনো হুমকি বা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তবে লেখাটি আপনারা মুছে দিতে পারেন। উল্লখ্য যে, পিলখানা হত্যাকান্ডের পর পরি আর্মির গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যা আলোর মুখ দেখতে পারে নাই। সরকারের উচ্চপদস্থ মন্ত্রী, এম্পিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমতি দেয় নি এবং চাকুরী হারিয়েছে শতাধিক সেনা অফিসার। রহস্য জনক বিমান দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছে অনেক অফিসার। আজ আমি সেই কথাই বলতে এসেছি। বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের ভারটুকু আপনাদের হাতে। আমি শুধু মনে করি, এই সত্য সবাই জানতে পারুক। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি। একজন প্রাক্তন সেনা অফিসার হিসেবে আমি আমার দায় থেকে মুক্ত হতে চাই। ___________________________________________ বি ডি আর হত্যাকান্ডের সেই গোপনীয় অধ্যায়গুলো-১ম খন্ড নভেম্বর ২০০৮, অর্থাৎ সাধারণ নির্বাচন তথা শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দু’ মাসের মাথায় পিলখানা বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের প্রচারণা শুরু হয়েছিল। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, তাঁর ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্মতি ও সহায়তায় তা সংঘটিত হয়েছিল। স্মরণ করা যেতে পারে, শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকার সাবেক আমলা ও বিশ্বব্যাঙ্ক কর্মকর্তা ফখরুদ্দীন আহমেদের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল, ভারত, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্থটনীতিকদের সহায়তায় কমিশনে তার শপথ ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন সেনাবহিনী প্রধান জেনারেল মইন ইউ. আহমদ। শেখ হাসিনার দুর্বার রাজনৈতিক আন্দোলন তথা তাঁর সম্মতিতেই তা হয়েছিল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার হাসো্যাজ্জ্বল উপস্থিতিতে তিনি যাকে প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক প্রাপ্তি বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে জেনারেল মইন ও তার কতিপয় বিদেশী প্ররোচণাকারী এই বলে তাদের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিতে থাকেন যে, একটি গৃহযুদ্ধ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য তারা বদ্ধপরিকর ছিল। এর সবই ছিল পাগলামি। নিজেদের জাতীয় স্বার্থেই এ সকল ক্থটনীতিক বাংলাদেশে একটি দুর্বল পরাশ্রয়ী সরকার চেয়েছিল এবং তার মোক্ষম হাতিয়ার হিসাবে শেখ হাসিনার দুর্বার আন্দোলনকে ব্যবহার করেছিল। চূড়ান্ত পুরস্কারের প্রতিজ্ঞা করে তারা মইনের সেবা লাভ করেছিল যে সে নিজেই গণতান্ত্রিকভাবে অভিনন্দিত হতে পারবেন যার মানে হচ্ছে: (১) শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া উভয়কে ধ্বংস করে ফেলা (২) তাদের ঘনিষ্ঠ সমর্থকদেরকে বাগে আনা অথবা তাড়িয়ে দেয়া; এবং (৩) নূতন কোন দল গঠনের দ্বারা তার উধর্্বারোহণের পথ তৈরি করা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে বহুল প্রচারিত দুর্নীতি দমন আন্দোলন দ্বারা এর পথ সুগম করা হয়েছিল। তবে এর কোনটি অর্জনেই তিনি সফল হতে পারেননি। ইতোমধ্যে যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আয়ুষ্কাল ২০০৮ এর অধিক প্রলম্বিত করা নিয়ে নানা মহলে ক্ষোভের বিসতৃতি ঝুকিঁবহূল হয়ে উঠেছিল, শেখ হাসিনা অথবা খালেদা জিয়াকে বেছে নেয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প বাদেই বিদেশী শক্তিকে তা ত্যাগ করতে হয়েছিল। ভারতের চাপে অবশ্য তারা নমনীয় শেখ হাসিনার প্রতি ঝুঁকেছিল। এটি অবশ্য মইনের জন্যও একটি পরিত্রাণ ছিল কারণ খালেদা জিয়ার প্রতি তার অনেক ভীতির কারণ ছিল, যিনি তাকে সেনাবহিনী প্রধান করেছিলেন এবং যার দু’ছেলে তার লোকজনের দ্বারা শারীরিকভাবে নিগৃহীত হয়েছিল। এভাবে প্রকৃত নির্বাচনের দ্বারা সাধারণ নির্বাচনকে আড়াল করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে পিলখানা বিদ্রোহের প্রস্তুতি ভারতীয় র’ এবং ইসরায়েলী মোস্যাদের আওতায় নিয়ে আসা হয়, যাতে মার্কিন সিআইএ’র সংশ্লিষ্টতা পর্যন্ত ছিল। নভেম্বর ২০০৮ এ সজীব ওয়াজেদ জয় ও জনৈক কার্ল সিভাকোর নামে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে জয় ও তার মাকে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ নিয়ে এগিয়ে যাবার প্রস্তুতির ইঙ্গিতের কথা বলা হয়। হাজার হাজার ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গী নিয়োগের জন্য ঐ নিবন্ধে জয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সামরিক ও আধা- সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেন। সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণার মধ্যভাগে প্রতিশ্রুতিশীল একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের এ জাতীয় রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা বহির্বিশ্বে দলটির নির্বাচনী ভাবমূর্তি ও তার নেতাদের ক্ষমতালাভের আশাকে ক্ষুণ্ন করেছিল। তবে বাংলাদেশে তা হয়নি, শেখ হাসিনা ও তাঁর আওয়ামী লীগ বরাবরই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ তাদের নেতৃত্বে হয়েছে বলে দাবী করে আসছেন এবং সে কারণে দেশ শাসনে তাঁর ও তাঁর দলের অধিকারকে তারা যৌক্তিক মনে করছেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের দাবীর জোরালো সমর্থনে তাঁরা তাঁদের বিরোধীদের দেশদ্রোহী ও স্বাধীনতাবিরোধী বলে অভিযুক্ত করেছেন। তাছাড়া, যখনই যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ইসলামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং ভারত ও ইসরায়েল সেই ক্রুসেডে যোগ দিয়েছে তারা তা অনুধাবন করতে পেরে তার একনিষ্ঠ সমর্থক বনে যান। জেএমবির কুশীলবদের তৎপরতা বাংলাদেশে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের নামে ভিত্তিহীন আশঙ্কা ও ভীতির সঞ্চার করে। বস্তুতপক্ষে জয় তার নিবন্ধে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সামরিক ও আধা- সামরিক বাহিনীকে ইসলামী সন্ত্রাসবাদমুক্ত করে পুনর্বিন্যাস করার প্রতি জোর দিয়েছিলেন যাতে করে তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের নিকট থেকে জাতিকে উদ্ধারে আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টায় কখনও বাধা সৃষ্টি করতে না পারে এবং একটি অসামপ্রদায়িক পরিবেশ তৈরি করা যায়। সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে মইনের প্রতিশ্রুতির কারণে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ক্লীব বা জড় করতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পুত্রের ইঙ্গিত প্রদানের পথ সুগম হয়েছিল। তার নিবন্ধে ইহুদী স্ত্রীর স্বামী জয় ভারত- ইসরায়েলী প্রকৃতিকে ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা প্রদান করেছিলেন যে, অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশে আগামী ২০ বছরে তিনি একজন হিন্দু প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান। ক্ষমতার জন্য মরিয়া শেখ হাসিনার উদগ্র বাসনা এবং সেনাবাহিনীর প্রতি সর্বজনবিদিত ভীতি ও অবিশ্বাসের বদৌলতে তার সমর্থন পাওয়া গিয়েছিল। তবে তার বাস্তবায়নে র\’ ও মোস্যাদ পরিকল্পনাকারীরা বাংলাদেশকে হেয় করতে সেনাবাহিনীকে ক্লীব বা জড় করতে চেয়েছিল । ১৯৯০ এর দশক থেকেই র\’ এ লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। এ সময়কালে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, সে সব সতর্কতায় কান না দিয়ে বর্তমান সেনা প্রধান ও তার কতিপয় লেফটেন্যান্ট আমাদের শত্রুদের সাথে এ ধ্বংসলীলায় মেতেছিলেন। বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার পর থেকে জেনারেল মইন ও তার লেফটেন্যান্টদের অসঙ্গত কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের কাছে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে সেনাবাহিনী প্রধান ও তার লেফটেন্যান্টদের তৎপরতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তার অনুসারীরা নূতনভাবে সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলার প্রচারণা জোরদার করার সুযোগ পায়। ফেব্রুয়ারিতে অকস্মাৎ জেএমবি’র নেতারা কয়েক স্থানে ধরা পড়লে কিছু মিডিয়া ইসলামী জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করে যদিও তাদের লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনী। ভারতের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট লন্ডনভিত্তিক আওয়ামী লীগপন্থী কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী পর্যন্ত বলেছেন, সেনাবাহিনীতে যদি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হিন্দু নিয়োগ করা যায়, তাহলে কোন সমস্যা থাকবে না। এ বক্তব্যের অনুসরণ করে সাবেক সিভিল সার্ভিস সদস্য তথা ক্থটনীতিক ওয়ালিউল ইসলাম, যার স্ত্রী আওয়ামী লীগের একজন প্রাক্তন এমপি, তার গবেষণায় পেয়েছেন বলে দাবী করেছেন যে, গত ৭ বছরে সেনাবাহিনীর সব ধরনের নিয়োগে এক তৃতীয়াংশ মাদ্রাসা শিক্ষিতদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যা প্রতিষ্ঠা করা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তা ছিল: (১) ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সন্ত্রাসবাদের সূতিকাগার; (২) সেনাবাহিনী হচ্ছে তার গডফাদার; এবং (৩) বাংলাদেশকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে হলে উভয়কে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ২৪ ফেব্রুয়ারি এ প্রচারণা তুঙ্গে উঠে যে, বিদ্রোহের একদিনমাত্র আগে মহিউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যগণ সেনাবাহিনীর তীব্র নিন্দা করেন যে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । বিদ্রোহের সময় আমাদের একদল পন্ডিত একই ধরনের প্রচারণা চালাতে থাকে এবং তার অব্যবহিত পরেই বাণিজ্য মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে বিডিআরে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য একজন নূতন ডিজি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইনুল ইসলাম অপেক্ষা করতে থাকেন। বিদ্রোহের পরপরই তার যোগদানের পরে তাকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি এবং বিদ্রোহের তদন্তে গঠিত সরকারি তদন্ত কমিশনের সদস্য নিয়োগ করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি প্রচার করতে থাকেন যে, তার নিরাপত্তা বহিনীকে নূতনভাবে নামকরণ করা হবে এবং নূতন পোশাক ও ব্যাজ বা প্রতীক দেয়া হবে। সেনাবাহিনী থেকে একে বিচ্ছিন্ন করা উচিৎ এবং সিএসসি নিযুক্ত একটি নূতন ক্যাডার কর্মকর্তাদের কমান্ডে তা পরিচালিত হবে। কমান্ডের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী থেকে পুনর্গঠিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে দূরে রাখার তার এ প্রস্তাব বিদ্রোহীদের অন্যতম দাবী ছিল; যাতে এক্ষেত্রে একটি নূতন যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে; তদন্ত কমিশনের কাজ শুরুর পূর্বেই সরকার নিয়োজিত তদন্ত কমিশনের একজন সদস্য যা বলেছিল। অধিকন্তু, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বার্ষিক বিডিআর সপ্তাহ উদযাপন স্থগিত করেছিল। নূতন সরকার আরেকবার তাতে উৎসাহ যুগিয়েছে যখন হবু ডিজির নিয়োগ চূড়ান্তপ্রায় হয়েছিল এবং সেনাকর্মকর্তাদের হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বিডিআর সপ্তাহ শেষ হয়েছিল। পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে বিডিআর বিদ্রোহ কোন সাধারণ বিদ্রোহ ছিল না; নূতন ডিজির আগাম নিয়োগ বা তার দ্রুত প্রেসক্রিপশন প্রদান তার সাথে বেমানান ছিল। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা ছিল দ্বিমুখী; এক নং পরিকল্পনা ছিল প্রকাশ্য; যাতে বিডিআর সপ্তাহ′ ২০০৯ উদযাপনকালে বিডিআর দরবার হলে জিম্মি পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যায় । সে পরিকল্পনানুসারে বিক্ষুুব্ধ বিডিআর জওয়ানদের উপস্থিত সকল অফিসারকে ২৫ তারিখের জিম্মিদশায় রাখা এবং রেশন, বেতনভাতা, জাতিসংঘ কমিশন ইত্যাদিসহ কমান্ডিং অবস্থান থেকে সেনা কর্মকর্তাদের দূরে রাখার বিষয়ে তাদের ২২ দফা দাবী পেশ করার কথা ছিল । প্রধানমন্ত্রী তখন সেনাবাহিনী প্রধান মইন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানককে বিদ্রোহের নেতাদের সাথে আলাপ- আলোচনার জন্য পাঠাতেন যাতে জওয়ানদের দাবী- দাওয়ার সুরাহা হয়, তাদের মধ্যস্থতাকারীরা নেতা বনে যান। এ পরিকল্পনার কিছুটা বর্তমান ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল জানতেন তবে ঝুঁকি নেয়া ছাড়া তার কোন গত্যন্তর ছিল না। অন্যথায় ২০০৮ সালের শেষ দিকে ৬ কোটি টাকাসহ তাকে তার স্ত্রীর দেশত্যাগের ব্যর্থ প্রচেষ্টার ঘটনায় বিচারের মুখোমুখী হতে হত। জেনারেল মইনের স্ত্রী নাজনীন মইন তাকে এবং তার স্বামীর স্টাফ অফিসার মেজর মাহবুবকে উদ্ধার করেছিলেন। মাহবুবকে পরে কমিশন থেকে অবসর তথা দেশত্যাগে অনুমতি প্রদান করা হয় । সে অর্থে মইনের অবশ্যই ভাগ ছিল এবং স্বামীর ক্ষমতার অপব্যবহারে তার স্ত্রীর ভূমিকা, দুষকৃতিকারীর উদ্ধারে তার তৎপরতা তথা এ অন্যায়কে ধামাচাপা দেয়া তাকে ও তার স্ত্রীকে ফৌজদারি বিধানে দন্ডিত করার যেত। বিডিআর ডিজির অজ্ঞাত এ পরিকল্পনার কুশলী দিকটি ছিল যে, অবিলম্বে জওয়ানদের দাবী মানা না হলে ডিডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী ও তার পায়ে গুলি করা হবে। জেনারেল মইন, মেজর জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর ( ডিজি, ডিজিএফআই), মেজর জেনারেল মনির ( ডিজি এনএসআই), লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিনা ইবনে জামালী (সিজিএস), লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুজ্জামান (কমিউনিকেশন ইন চার্জ বিডিআর), লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামস্ (সিও ৪৪ রাইফেলস্), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুকিম এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাম (প্যারা মিলিটারি শা্খা ডিজিএফআই) ১ নং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন। পিলখানায় দায়িত্বরত অধিকাংশ বিডিআর জওয়ান এ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন। সেনা কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার এবং অন্য ২১ দফা দাবীর বাস্তবায়নে একটি জিম্মি পরিস্থিতির সৃষ্টিতে তারা প্রস্তুত ছিলেন। সেনাকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ একটি কাগজে লিখে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুকিম ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে তা সেনাপ্রধানের সচিবালয়, ডিজি, ডিজিএফআই অফিস, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে ফ্যাঙ্ করবেন তবে এ পরিকল্পনাটি প্রাথমিকভাবে ছিল একটি কৌশল। মেজর জেনারেল শাকিল আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে ষড়যন্ত্র চলছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমীন ( সিও রাইফেলস্ সিকিউরিটি ইউনিট), যিনি পরে শহীদ হয়েছিলেন, ২১ তারিখ সকালে জওয়ানদের লিফলেট পেয়েছিলেন। তিনি দ্রুত তার কাছে ছুটে যান এবং লিফলেটটি দেখান। তিনি তাকে দ্রুত একটি কাউন্টার লিফলেট তৈরি করে তা বিলি করার পরামর্শ দেন। ২৩ তারিখে জানা যায় যে, অস্ত্রাগার থেকে তিনটি এসএমজি খোয়া গেছে। এ কথা্ জানাজানির পরে কর্মকর্তাদেরকে অস্ত্রাগারের দায়িত্ব দেয়া হয় যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক না হলে কখনও সতর্কতা অবলম্বন করা হত না। তখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ২৪ তারিখের পিলখানা পরিদর্শন করেননি । মানসম্মত ব্যবস্থা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী যখন কোন সামারিক বা আধা- সামরিক বাহিনী পরিদর্শন করেন যেথায় ব্যবহৃত সকল অস্ত্রের ফায়ারিং পিন সরিয়ে ফেলা এসএসএফ নিশ্চিত করবে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর গার্ড কমান্ডার হিসাবে দায়িত্বরত কর্মকর্তা এমন কোন অস্ত্র হাতে নিতে পারবেন না যা দিয়ে গুলি করা যায়। কেবলমাত্র পিজিআর এবং এসএসএফ কর্মকর্তাগণ সশস্ত্র অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শনে এরূপ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশ্ন জাগা স্বা্ভাবিক যে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী পিলখানা পরিদর্শন করেছিলেন? সেই লিফলেটগুলো কোত্থেকে এসেছিল এবং তিনটি এসএমজি কিভাবে খোয়া গিয়েছিল? ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে মেজর জেনারেল শাকিলের উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন ছিল না; তিনি জানতেন যে, প্রধানমন্ত্রী তার নিজের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন এবং ২৬ তারিখে তার নির্ধারিত ডিনার বাতিল করবেন। তা তিনি করতে পারবেন কারণ অপেক্ষমাণ নাটকের আদ্যোপান্ত তার জানা। নেপথ্যের কুশীলবদের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল; যে গুপ্ত পরিকল্পনাকে অনুধাবনের সুবিধার্থে আমি ২ নং পরিকল্পনা বলে অভিহিত করছি, তা ছিল র\’ য়ের। জানা গেছে, পুরো কার্যক্রমের জন্য র\’ ৬০ কোটি রুপী দিয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার জন্য প্রায় ১৫ জন বিদেশী বন্দুকধারী ভাড়া করা হয়েছিল। র\’ পরিচালনাকারী ও তাদের বাংলাদেশী প্রতিপক্ষ যারা অর্থের যোগান দিয়েছিলেন, তারা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকার গুলশানের একটি আন্তর্জাতিক ক্লাবে সাক্ষাৎ করেছিল । সেই সভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের ছো্টভাইও উপস্থিত ছিলেন্ । ভাড়াকরা খুনীদের দাতা ও সংগঠকরা যাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয় ও লাজার শিবাজান নামে রাশিয়ার অপরাধ জগতের এক নেতা ছিল যারা ১৯ তারিখ বা ঠিক তার আগে দুবাইয়ের হোটেল বাব- আল- শামসে বৈঠক করেছিল। সেখানে তারা ভাড়াকরা খুনীদের অপারেশন ও পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছিল। ঢাকার কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে অনুযায়ী ভাড়াকরা বন্দুকধারীরা ১১ তারিখে নয়, ১৯ তারিখের পরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। উভয় দেশের মানুয়ের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য যখন প্রায় ৫ ঘন্টা সীমা্ন্ত খোলা ছিল তখন তাদের কয়েকজন ২১ তারিখে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছিল; একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ১,০০,০০০ মিষ্টির মধ্যে তারা ১৬,০০০ মিষ্টি ঢাকায় নিয়ে এসেছিল। তবে অন্যরা কিভাবে বা কোন সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছিল তা এখনো অজ্ঞাত । পরিকল্পনাটি ভয়াবহ হলেও সহজ ছিল বৈকি। ভাড়াকরা বন্দুকধারীরা অপারেশনের পূর্বে বিডিআরের ইউনিফর্ম ও অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করবে; বিডিআর জওয়ানরা যখন ১ নং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, সেই ভীতি ও ত্রাসের সুযোগে খুনীরা তাড়াতাড়ি প্রেবশ করবে এবং লাল ফিতেধারীদের ( কর্নেল ও উপরস্থ) অর্ধেককে খতম করবে। তারপরে তারা অন্য বিদ্রোহীদেরকে তাদের সাথে হত্যালীলায় যোগ দেবার জন্য শক্তি প্রয়োগ করবে। তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যবহার করবে এবং ৪ নং গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। একটি পিক-আপ দিয়ে তাদের ব্যবহার্য অস্ত্রশস্ত্র বহন করা হবে। বিডিআরের কুশীলব, আওয়ামী লীগ এম.পি মির্জা আজম, হাজী সেলিম, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ফজলে নূর তাপস এবং মহীউদ্দীন খান আলমগীর বেশ কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হন এবং তোরাব আরী বিডিআর জওয়ান ও তাপস, নানক, আজম ও সোহেল তাজের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন। বি ডি আর হত্যাকান্ডের সেই গোপনীয় অধ্যায়গুলো-২য় খন্ড স্থানীয় এম.পি. হবার সুবাদে তাপসের সংশ্লিষ্টতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল; নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি জড়িত হয়েছিলেন। তাপসের ঢাকা- ১২ আসনে প্রায় ৫,০০০ বিডিআর ভোটারকে নিবন্ধিত করা হয়েছিল। বিডিআরের কুশীলবরা সাবেক বিডিআর হাবিলদার ও ঢাকার ঢাকা- ১২ আসনের অন্তর্ভুক্ত ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি তোরাব আলীর মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখত। তারা তাপসকে নিশ্চয়তা দিয়েছিল ঢাকা- ১২ আসনে নৌকা জিতবে এবং সকল বিডিআর ভোটার তাকে ভোট দিবে। নির্বাচনী প্রচারণার সেই সময়ে যখন খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার চেয়ে জনসভায় অনেক বেশী দর্শক শ্রোতার সমাগম হত, ৫,০০০ ভোট মানে অনভিজ্ঞ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে অনেক যিনি প্রখ্যাত আইনজীবী ও বর্তমান এম.পি. খোন্দকার মাহবুব উদ্দীনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করেছিলেন। তার বিনিময়ে বিডিআর প্রতিনিধিরা তাদের দাবী পূরণ করতে চেয়েছিল যাতে তা্পস সম্মত হন। বিদ্রোহের পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত করা হয়, তাপস সম্মতি দেন যে, তিনি বিডিআর জওয়ানদেরকে সহায়তা যোগাবেন যাতে তারা বিদ্রোহে নিরাপদ থাকে তথা তাদের দাবী আদায় করা যায়। শেখ পরিবারের সদস্য এবং শেখ ফজলুল হক মণি, যিনি পচাত্তরের পনেরই আগস্ট তারিখে তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের অভূ্যত্থানে নিহত হয়েছিলেন এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যার বিরূপ ধারণা ছিল, তার পিতৃহীন পুত্র হবার কারণে সে এমনটি করতে পেরেছিলেন। বিদো্রহ ও হত্যাযজ্ঞের পূর্বে সবশেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২৪ তারিখে সন্ধ্যায় তোরাব আলীর বাড়িতে; একই্ রাত্রে তাপসের ধানমন্ডির বাড়িতে প্রায় ২৪ জন বিডিআর খুনী তাদের চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করে। এ গুপ্ত পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী, তার চাচাতো ভাই তথা তাপসের চাচা শেখ সেলিম এম.পি, আব্দুল জলিল এম.পি. নানক, তাপস, সোহেল তাজ, মির্জা আজম, হাজী সেলিম, মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট অন্য কয়েকজন সদস্যের জ্ঞাত ছিল। ১৩ তারিখ শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় অন্ততঃ একটি বৈঠক হয়েছিল; বনানীর বাসিন্দা সোহেল তাজ সেখানে যোগ দিয়েছিলেন; এতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ সোহেল তাজের দায়িত্ব স্থির করা হয়েছিল। অকারণে শেখ সেলিম ২৫ ও ২৬ তারিখে বাসার বাইরে রাতযাপন করেননি। আলমগীর, নানক ও আজম বরাবরই সেনা কর্মকর্তাদেও ধ্বংস করার পক্ষে ছিলেন। তারা যখন প্রধানমন্ত্রীর নিকট পরিকল্পনা উত্থাপন করেন তখন তিনি প্রথমত সম্পূর্ণভাবে গণহত্যার ব্যাপাওে দ্বিধাম্বিত্#৮২০৬; ছিলেন। তবে তিনি ভয়াবহ বিদ্রোহের সপ্তাহখানেক পূর্বে ডিজি, তার স্ত্রী ও কর্নেল মুজিবকে ( সেক্টর কমান্ডার , ঢাকা) অপসারণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। ১২ এপ্রিল গ্রেফতারকৃত বিডিআর কুশীলবদের জিজ্ঞাসাবাদে টিএফআই সেলে র্যাবের কর্মকর্তারা এ সকল তথ্য উদ্বৃত করেন এবং পরে তার সত্যতা প্রমাণ করেন। তারা আরও জানতে পারেন যে, ডিজি, তার স্ত্রী আকস্মিক গুলিতে মারা গেলে জেনারেল মইনকে আবেগায়িত না হতে বলা হয়েছিল; তার মৌনতা এ প্রস্তাব মানা ও অনুমোদনে সায় দিয়েছিল। ডিজি ও তার স্ত্রীকে হত্যায় ফাঁদে আটকে পড়া জেনারেলের অনুমোদন দানের যথেষ্ট কারণ ছিল; কারণ তাতে অবৈধ অর্থ উপার্জনে চোরাচালানের ব্যর্থ প্রচেষ্টায় তার অংশীদারের মৃতু্য। তখন কেউ ঐ অপরাধের সাথে তাকে ও তার স্ত্রীকে জড়াতে পারবেনা। ডিএডি তৌহিদ, জলিল ও হাবিবসহ বিডিআরের প্রধান হোতারা ২ নং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানত। পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস নিশ্চিত করতে জাহাঙ্গীর কবীর নানকের দায়িত্ব ছিল অন্যদিকে ফজলে নূর তাপসের দায়িত্ব ছিল হাজারীবাগ ও ঝিগাতলা এলাকা দিয়ে বিডিআর খুনীদের পলায়ন নিশ্চিত করা। তাপসের সাথে নানকের বাড়তি দায়িত্ব ছিল ২৫ তারিখ রাতে ভাড়াকরা খুনীদের এমবুলেন্সে করে নিরাপদে যেতে দেয়া এবং ২৬ তারিখের মধ্যে সকল খুনীর পলায়ন নিশ্চিত করা। তাদের এয়াপোর্টে যাবার পথে খুনীদেরকে মাইক্রোবাসে স্থানান্তর করা হবে। তাদের মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ পলায়নে নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল সোহেল তাজের। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দেরী হলে প্রয়োজনে এ উদ্দেশ্যে বিজি ০৪৯ ফ্লাইট ব্যবহার করা হবে। ২নং পরিকল্পনার সাফল্য নিহিত ছিল- ১.সেনাবাহিনীকে কোন সামরিক সমাধানে নিবৃত্ত করতে সরকারের সক্ষমতা এবং ; ২. পীলখানা হত্যাযজ্ঞের প্রমাণাদি যত বেশী সম্ভব নিশ্চিহ্ন করে ফেলা এ জন্যই নানককে দায়িত্ব দেয়া হয়। ঠান্ডা মাথায় হত্যাকান্ড সংঘটনের জন্য নানক সুবিদিত যে জরম্নরী অবস্থাকালীন সময়ে ভারতে তাদের গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপদ হাউস এর অন্যতম মেহমান ছিল। তাকে ২৫ তারিখ দুপুর থেকে পীলখানার অভ্যনত্দরের সামগ্রিক কমান্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়; যা স্থানীয় সরকারের মন্ত্রনালয়ের ডেপুটি মন্ত্রী হিসেবে তার দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। নানক এটা নিশ্চিত করেছিল যে বিদ্রোহে নিহত সেনা অফিসারদের লাশ ২৫ ও ২৬ তারিখের রাতে গণকবরে পুতে ফেলা ও দরবার হলকে ধুয়ে মুছে সাফ করা, যাতে হত্যাযজ্ঞের কোন চিহ্ন না থাকে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে সেনাপ্রধানের নিকট থেকে সামরিক বাহিনীকে বিদ্রোহ দমনে তৎপর করা ছিল সবার প্রত্যাশা। তার সেই ব্যার্থতার প্রেৰিতে বিদ্রোহের পরবর্তী পরিকল্পনা আাঁটা হয় বিদ্রোহ প্রশমনে সম্ভাব্য সামরিক কর্মকর্তাদের চাকুরীচ্যুত করে বিডিআর এর সমসত্দ ফাঁড়ি গুলোতে সেখানকার সেনা অফিসারদের হত্যা করা। এটা বাসত্দবায়িত হলে সরকার দেশে যুদ্ধাবস্থা ঘোষনা করতো আর সেই সুবাদে আকাশ পথে বাংলাদেশে ভারতীয় সেনা অবতরণ শুরম্ন করতো। এই লক্ষ্য সাধনেই সরকারের প্রতি আনর্ত্দজাতিক সহমর্মীতা অর্জনে হাসিনার পুত্র জয় ২৬ তারিখ সকালে আনর্ত্দজাতিক মিডিয়াকে এই মর্মে অবগত করায় যে বিদ্রোহের পিছনে সেনা অফিসারদের দূনর্ীতিই দায়ী। বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা যাতে যথাযথ লক্ষ্য হাসিলে সর্বাত্মকভাবে তৎপর হয় তার জন্য ফেব্রুআরীর শুরু থেকে শেষ পর্যনত্দ প্রায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। প্রতিটি সেনা অফিসারকে হত্যার জন্য ৪ লক্ষ্য টাকার এ্রনাম নির্ধারন করা হয়। রিং লীডারদের অর্থের পরিমাণ ছিল আরও অনেক বেশী। হত্যাকারীদের সাথে অতি উৎসাহী হয়ে যারা পরবর্তীতে হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত হয় তাদেরকে বিদ্রোহের বা ধ্বংস যজ্ঞের আগে পরে অতিরিক্ত কোন অর্থ প্রদাণ করা হয়নি। পরিকল্পনা -১ এর সাথে সম্পৃক্তরা এমপি তাপস এর মাধ্যমে আর ডি এ ডি’র অনুগতরা নানকের চ্যানেলের মাধ্যমে সংগঠিত হয়। সোহেল তাজ ও জয় ভাড়া করা খুনীদের অর্থ প্রদান করে। হত্যাযজ্ঞ সংঘটনে প্রথম দিকে কিছু আগাম অর্থ দুবাইয়ের হোটেল বাব-আল-শামস এ প্রদান করা হয়। পরিকল্পনার মধ্যে সম্ভাব্য আপদকালীন পরিস্থিতি তথা যদি সেনাবাহিনীকে পীলখানা বিদ্রোহ দমনের কাজে নিবৃত্ত করা না যায় কিংবা যদি ঘটনার সাথে আওয়ামীলীগের সম্পৃক্তি জনাজানি হয়ে যায় তাহলে কি করতে হবে তাও আগাম পরিকল্পনা করে রাখা হয়। পরিকল্পনা ছিল যদি শেখ হাসিনা সেনা অভিযান বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী ভারতে এস ও এস বার্তা প্রেরণ করবে এবং তার প্রেক্ষিতে আকাশ পথে ভারতীয় সেনা অভিযান চালানো হবে। আর তেমন পরিস্থিতিতে সারাদেশের বিডিআর ইউনিট সমুহ ভয়াবহ অভিযান চালিয়ে পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। তখন বহিবিশ্ব দেখবে যে বাংলাদেশ এ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে অতএব সে অবস্থায় তারা হাসিনা সরকারকে বাঁচানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ প্রহণ করবে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রনব মুখার্জী ঘোষণা দেন যে শেখ হাসিনা ও তার সরকার বিপর্যসত্দ অবস্থায় পতিত হলে সেই সরকারের সহযোগিতায় ভারতীয় সেনাবাহিনী এগিয়ে আসবে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্র মতে সেই সময় আসামের জোরাট বিমান ঘাটিতে বড় ও মাঝারি ধরনের এয়ারফোর্স বিমান সহ প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সেনাকে প্রস্তুত রাখা হয়। অবশ্য কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিদ্রোহের শুরুতে এমন ভবিষ্যত বাণী করেছিল তার বর্ণনা প্রনব বাবু প্রদন করেনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমও এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। বিদ্রোহীরা কিন্তু সরকার উৎখাতের কোন কথাই বলতে গেলে প্রদান করেনি। বিদ্রোহ অকার্যকর করার আশংকা বিদ্রোহীরা করেছিল কেবলমাত্র সেনাঅভিযান দিয়ে। বস্তুত: বিদ্রোহ অকার্যকর হবার আশংকা যে ভারত করেছিল তার প্রমানই হচ্ছে তাদের উপরিউলি্লখিত সামরিক প্রস্তুতি। যদি সামরিক অভিযান বন্ধ না করা যেতো তাহলে আপদকালীন পরিকল্পনা ছিল তেমন অবস্থায় সেনাপ্রধান সহ সামরিক অভিযানের কমান্ডে নিয়োজিত জেনারেলদের অবিলম্বে অপসারন করা এবং সেনাপ্রধানকে অপসারনপূর্বক তাকে সরকারী নির্দেশ অমান্য করা সহ জরুরী অবস্থাকালীন সময়ের বিভিন্ন অপরাধের জন্যে বিচারের কাঠগড়ায় নিক্ষেপ করা হতো। তেমন ধরনের বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারের ধামাধরা সাংবাদিকদের দিয়ে এই মর্মে এক ভয়াবহ ক্যাম্পেইন চালানো হতো যে, সেনা কর্মকর্তারা আইনগত ও একটি বৈধ সরকারের নিষেধাজ্ঞা যৌক্তিক দাবী দাওয়া উত্থাপনও অমান্য করে অসংখ্য বিডিআর জওয়ানকে হত্যা করে যা সরকারের ভারমুর্তিই ক্ষুন্ন করা নয়; সরকারের পতন ঘটানোর অপচেষ্টাতেও সিক্ত হয়। এই ধরনের ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য ৫ কোটি টাকা আলাদা করে রাখা হয়। এর পাশাপাশি সেনা অভিযানের ও হত্যাযজ্ঞের সাথে জেএমবি, জামাত ও বিএনপির যোগসাজসের কল্পিত কাহিনী উক্ত ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হতো। এই ক্যাম্পেইনকে মজবুত করার জন্য সরকারের পক্ষে সহায়ক কর্মকর্তাদের র্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ সহ সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠান সমুহকে নিয়োগ করা হতো। সম্ভাব্য তেমন আপদকালীন অবস্থায় যাতে হাসিনা সরকার পার পেয়ে যায় তার জন্য অনভিজ্ঞ সাহেরা খাতুনকে গুরম্নত্বপূর্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বিদ্রোহ ঘটানোর হোতাদের হোটেল ইম্পেরিয়াল ব্যবহার করতে দেয়া হয় যে হোটেলের মালিক হচ্ছে সাহারা খাতুনের এক ভাই। ঐ হোটেলে ষড়যন্ত্র বাসত্দবায়নের বহু গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল সাহারা খাতুনের জন্য এক ফাঁদ। যদি ভুলক্রমে কোনভাবে বিদ্রোহের সাথে সরকারের সম্পৃক্ততার কথা জানাজানি হয়ে যায় তাহলে বলির পাঁঠা বানানো হতো এই সাহেরা খাতুনকে। তাকে অপসারন করে সোহেল তাজকে বসানো হতো পূর্ন মন্ত্রীতে। আপদকালীন পরিকল্পনা সহ ১ ও ২ পরিকল্পনা মোতাবেকই পীলখানা হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। কেউ পছন্দ না করলেও এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে পরিকল্পনাকারীরা তাদের পরিকল্পনা বাসত্দবায়নে একেবারে নির্ভুল ছিল .
বি ডি আর হত্যাকান্ডের সেই গোপনীয় অধ্যায়গুলো- ৩য় খন্ড সমগ্র পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় অতি বিস্ময়কর চালাকী ও নিষ্ঠুরতার সাথে। বাংলাদেশকে দীর্ঘসময় ধরে এহেন ভ্রাতৃঘাতী ঘটনার বেদনাদায়ক মর্মবেদনায় ভুগতে হবে। আমাদের ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বসাকুল্যে সেনাবাহিনীর ৫৫ জন অফিসার শহীদ হয়। তাদের মধ্যে সবাই যুদ্ধে নিহত হয়নি; কেউ কেউ সড়ক দূর্ঘটনা সহ অন্যবিধ কারনেও মৃতু্যবরণ করে। সেনা বাহিনীর কোন সেক্টর কমান্ডার এই মৃতু্য তালিকায় ছিল না। অথচ বিডিআর বিদ্রোহে মাত্র দুই দিনের মধ্যে হত্যা করা হলো ২ জন মেজর জেনারেল, ২ জন ব্রিগেডিআর জেনারেল, ১৬ জন কর্ণেল, ১০ জন লেন্ট্যানান্ট কর্ণেল, ২৩ জন মেজর, ২ জন ক্যাপ্টেন, মেডিক্যাল কোরের ৩ জন অফিসার। বিদ্রোহে উপস্থিত সেনা অফিসারদের দুই তৃতীয়াংশই নিহত হলো। এই পৈশাচিক উপখ্যানের সূদুরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে ভাববার আগে দেখা যাক বাংলাদেশী ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের সাঙ্গাতরা কে কিভাবে এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছে। ২৪শে ফেব্রম্নয়ারী রাত ১০টা থেকে ১১ টার মধ্যে ঢাকার ঝিকাতলাস্ত একটি ফিলিং ষ্টেশনের মালিক আতাউর তার মোবাইল থেকে বিডিআর এর ডিজিকে একটি ফোন করে বিডিআর এর ডিজি শাকিলকে এই মর্মে জানায় যে, স্যার আপনাকে কালকে পীলখানায় মেরে ফেলবে। আপনি কালকের অনুষ্ঠানে যাবেননা্ তার এই ফোন কল, র্যাব হেড কোয়াটার আড়িপেতে শুনে এবং কিছু সময়ের মধ্যে আতাউরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পর তাকে অবশ্য ছেড়ে দেয়া হয়। র্যাব এবং এডিজি কর্ণেল রেজা নুর অনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য টিএফআই সেলকে প্রদান করে। এতদসত্বেও আমার জানা মতে এমন একটি তথ্য কোন তদনত্দ রিপোটেই উল্লেখ করা হয়নি। এটা মেনে রীতিমত অবিশ্বাস্য যে টি এফ আই সেল এমন একটি গুরম্নত্বপূর্ন তথ্য ধর্তব্যের মধ্যে তথা তাদের বিবেচনায় আনেনি। কিভাবে এমন একটি তাৎপর্যময় তথ্য গোপন করা হলো তা নির্ণয় করা সম্ভব না হলেও এটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, কোন একটি ফন্দি-ফিকির করে সেই তথ্যটিকে চাপিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা দেখব যে সরকারের ভিতর থেকে কিভাবে এমনি ধরনের ছল-চাতুরী পূর্ন ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে অপরাধীদের রক্ষা ও দেশকে প্রতারিত করা হয়েছে। ২৫ তারিখ সকাল পৌনে নয়টার সময় গোয়েন্দা সংস্থা এন এস আই এই মর্মে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে যে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পীলখানায় বিদ্রোহ শুরু হবে। একই তথ্য সেনাবাহিনী প্রধানকেও দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কোনরম্নপ পাল্টা ব্যবস্থা প্রহন করেনি। সেনাপ্রধানও বিষয়টাতে নীরবতা অবলম্বন করে। তাদের পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের নিবৃত্ত থাকা ও নীরবতা অবলম্বন থেকে এটা ষ্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে বিদ্রোহ পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়িত হবার ব্যাপারে তারা আগ্রহী ছিলেন। পীলখানায় বিদ্রোহের শুরুতেই বিডিআর এর ডিজি প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান ও ডিজিএফআই এর ডিজিকে ফোন করলে তারা অবিলম্বে তাকে সাহায্য করার অঙ্গীকার করে। কর্ণেল গুলজার (?) সেনাবাহিনীর সিজিএস এবং ডিএমও’র সাথে কথা বলে এবং র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার লে: ক: জামান এর সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে অবিলম্বে সেনাবাহিনী প্রেরনের অনুরোধ জানায়। তারা বিডিআর এর ডিজির সাথে ধোঁকাবাজি করে এবং ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার মজিব ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে: কর্ণেল এনায়েত ও লে: কর্ণেল বদরুল ও অন্যান্য সিনিয়র অফিসারদের তাদেও ইউনিট এ গিয়ে জওয়ানদের শানত্দ করার নির্দেশ জ্ঞাপন করে। বিডিআর এর মহাপরিচালক যদিও জানতো যে একটা গন্ডগোল হবে; কিন্তু এটা যদি জানতো যে তাদেরকে উপর মহলের প্রদত্ত আশ্বাস হবে স্রেফ ধোঁকাবাজি এবং তাদেরকে বলির পাঁঠা বানানো হবে তাহলে অবশ্যই তারা ভিন্ন ভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সচেষ্ট হতো। তাদের মধ্যে অনেক নাম করা কমান্ডো অফিসার ছিল। তারা সহজেই কিছু এসএমজি ছিনিয়ে নিয়ে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পাল্টা আক্রমন চালিয়ে বিদ্রোহ সর্বাত্বকভাবে দমন করতে না পারলেও অনত্দত বিদ্রোহীদের বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারতো। ভাগ্যাহত অফিসারদের অনেকের স্ত্রী বিদ্রোহ শুরু হলে সেনা প্রধান মঈনের স্ত্রীকে সাহায্যের জন্যে ফোন করলে মঈনের স্ত্রী এ মর্মে ফোনে বকবকনো করতে থাকেন যে, ইনকামিং কল তিনি কিছুই শুনতে পারছেননা। তার এই চাতুর্যপূর্ণ ভূমিকা থেকে এটা আরো একটু বুঝা যায় যে বিদ্রোহে তার স্বামীর ভূমিকা ছিল সন্দেহজনক। সকাল সাড়ে দশটায় র্যাব ১০ এর অফিসাররা পীলখানার ৫নং গেট সংলগ্ন নিচু উচ্চতার দেয়ালের নিকটে পেঁৗছে যে দেয়াল দ্বারা সনি্নহিত বেসামরিক এলাকা থেকে বিডিআর সদর দফতরকে আলাদা করা হয়েছে। ঐ জায়গাটা ছিল বিদ্রোহ দমনে ঝটিকা অভিযান শুরু করে সদর দফতরকে মুক্ত করার সবচাইতে উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু সাড়ে এগারটার দিকে র্যাব এর এডিজি কর্ণেল রেজা নূর র্যাব-১০ অফিসারদের অধিনায়ককে পীলখানা থেকে ৩ মাইল দূরে বেড়ী বাঁধ এলাকায় গিয়ে অবস্থান গ্রহনের নির্দেশ জ্ঞাপন করে। এটা স্বভাবতই জিজ্ঞাস্য যে কার নির্দেশে কিংবা পরামর্শে এবং কেন কর্ণেল রেজা সে নির্দেশ প্রদান করেছিল? বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে তদনত্দ কর্যক্রমে এই সব দিক মোটেই আমলে নেয়া হয়নি। কর্ণেল রেজা নূর এর চাচাতো ভাই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট সহকারী বাহউদ্দীন নাসিম। সে কারনে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনে। যথাসম্ভব হয় প্রধানমন্ত্রী নিজে অথবা তাঁর ঘনিষ্ট মহলের কেউ রেজা নূরকে দিয়ে ঐ কাজটি করিয়ে থাকবে। র্যাব -১০ কে ওখান থেকে সরিয়ে নেয়ায় বিদ্রোহ পরিকল্পনা বাসত্দবায়নে অনেক অনুকুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঐ পথ দিয়েই বিদ্রোহীরা সদর দফতরের অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে তার আওয়ামীলীগের কমিশনার তোরাব আলীর বাসভবনে স্থানানত্দর করে যা ছাত্রলীগের ক্যাডারদের মধ্যে বিতরন করা হয় এবং তার চাইতেও বড় সুবিধা যে সে পথ দিয়ে বিডিআর এর হত্যাকারীরা নিরাপদে হাজারীবাগ ও ঝিকাতলা এলাকা দিয়ে বিনা বাধায় পালিয়ে যায়। র্যাব-১০ এর মোতায়েনকে পুন বিন্যস্থ করা ছিল স্পষ্টতই বিদ্রোহীদের অনুকুলে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। আরো উল্লেখ্য যে, র্যাব ১০ এর পাশাপাশি র্যাব ২ এবং ৩ কে ধানমন্ডি এলাকায় মোতায়েন করা হলেও তাদেরকে দিয়ে বিদ্রোহ দমনে কোন উদ্যেগই নেয়া হয়নি। তাদেরকে নড়চড়হীন করে রাখা হয়। বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল ‘চবি্বশ ঘন্টা’ বিষ্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর একটি চ্যানেল এনডি টিভি সংবাদ শিরোনামে দেখায় ১২টার সময় এবং আরও সংবাদ প্রচার করে ১২.১৫ মি: এর সময়ে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে এই বিদ্রোহের সংবাদ চাপা রাখা হয় ২৬ তারিখ অপরাহ্ন পর্যনত্দ। অথচ কর্ণেল মজিব ও লে: ক: এনায়েত এর লাশ উদ্ধার করা হয় ২৫ তারিখ বিকেল আড়াইটার সময়। এদিকে বিকেল ৩.৩০মি: এর সময় বাংলাদেশের মিডিয়া ঘটা করে নানক কতর্ৃক নিয়ে আসা ১৪ জন বিডিআর বিদ্রোহীর সাথে চা বিস্কুট খেতে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবনে বৈঠক করার খবর প্রচার করা হয়। উক্ত সভা চলে ১৫০ মিনিট। মাঝপথে প্রধানমন্ত্রী একটি টেলিফোন কল রিসিভ করার পর তিনি বিডিআর বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিদলকে বলেন, তোমরাতো বিডিআর এর ডিজিকে মেরে ফেলেছো, এই সময় বিডিআর এর ডিএডি তৌহিদ বলে উঠে যে, তাহলে সম্ভবত ডিজি মারা গেছেন এটা রীতিমত অবিশ্বাস্য যে তখন পর্যনত্দ প্রধানমন্ত্রী ও তার মেহমান হিসাবে আসা বিদ্রোহীরা জানতোনা বিডিআর এর ডিজির হত্যাকান্ডের খবর অথচ সকাল ১১ টা থেকে ভারতীয় টেলিভিশনের পর্দায় বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ডের খবর অবিরত প্রচার করা হচ্ছিল আর ইতিমধ্যে সমগ্র রাজধানীতে এটা নিয়ে ব্যপক আলাপ আলোচনা হচ্ছিল অথবা এটা কি সত্যিই বিশ্বাস করা যায় যে বিদ্রোহীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তেমন জিজ্ঞাসা নিতানত্দই উদাসীনতা বশত করা হয়েছিল? সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর তেমন অজ্ঞতাসূলভ (?) জিজ্ঞাসার মধ্যে বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দলের জন্য একটি বার্তা নিহিত ছিল। উক্ত ফোন কলের বার্তা লাভের পরও বিদ্রোহীদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক থেকে এটা স্পষ্টতই মনে হয় যে আসলে তেমন কোন ঘটনাই তথা হত্যাকান্ড বা রক্তপাত তখন পর্যনত্দ ঘটেনি। সভার বাকী সময় অতি শানত্দভাবে কেটে গেলেও একবারের জন্যও প্রধানমন্ত্রী ডিজির স্ত্রী ও তাদের ছেলে মেয়ে ও অন্যান্য অফিসার ও তাদের ছেলে মেয়েদের ভাগ্য সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর নেয়নি। অথবা সে তাদের নিরাপত্তা বিধানের কোন আহবানও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাখেননি। অথচ দরবার হলে হত্যাকান্ড শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে নিয়োজিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেল থেকে অফিসারদের পরিবার পরিজনদের নির্যাতনের কথা প্রধানমন্ত্রীকে বহু বার জানানো হয়। সেনা প্রধানকে বিডিআর বিদ্রোহীদের সাথে বাইরের লোকজনের কথাবার্তার বিষয়ে জানানো হয়। কিভাবে বিদ্রোহীরা অফিসারদের হত্যা করছে এবং তাদের পরিবার পরিবার পরিজনদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে সেই সব কথাবার্তায় তার বিবরণ শুনা যায়। সেনাপ্রধান এহেন বর্বরতা মোকাবেলা করার মত কোন পদক্ষেপ গ্রহনের বদলে ন্যাশনাল মনিটরিং সেল এর অফিসারদের শানত্দ থাকার এবং কোনরুপ আবেগ তাড়িত হতে নিবৃত্ত থাকার নির্দেশ জ্ঞাপন করেন। বিদ্রোহের সাতে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মৌন সম্মতির সাথে সঙ্গতি রেখে বিডিআর হত্যাকারীদের জন্য সাধারন ক্ষমা ঘোষনা ও তাদের দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয়। রাত নেমে আসার সাথে সাথে আত্মতৃপ্তিতে বলিয়ান বিডিআর বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দল নানককে সাথে নিয়ে বিডিআর সদর দফতরে প্রত্যাবর্তন করেন। নানক একজন সাহসী নেতা ও বিদ্রোহীদের কাজকে সমর্থন জ্ঞাপনে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে বিদ্রোহীদের দ্বারা সমাদৃত হন। কিছু সময় পরই সাংসদ তাপস সংবাদ মাধ্যমকে জানায় যে ডি এডি তৌহিদ এখন থেকে বিডিআর এর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নাতির এমন ঘোষনা টিভির পর্দায় ভাসতে থাকে হত্যাকারী ও তাদের দুষ্কর্মের সহায়তাকারীরা বুঝতে পারলো যে সেনা অভিযানের আশংকা দূরীভূত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে তাপস বিডিআর সদর দপ্তরের অভ্যনত্দরে গিয়ে বিদ্রোহেিদর সবকিছু ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলার নির্দেশ জ্ঞাপন করে। কার্যক্ষেত্রে এটা ছিল হত্যাকান্ডের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা। সেই লাইসেন্স সে অর্থহীন ছিলনা পরবর্তীতে তা সবাই বুঝতে পারে। দরবার হলের একটি টয়লেট এ কর্ণেল এমদাদ জীবিত ছিলেন। সেখানে সে জোহর এর নামায আদায়ের পর তার স্ত্রীরর সাথে মোবাইলে কথা বলেন। রংপুরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আফতাব তার সহকর্মী একজন ব্রিগেডিয়ার ও দুইজন কর্ণেল এর নিকট বিকেল সাড়ে চারটার সময় এই মর্মে তিনটি এসএমএস প্রেরণ করেন যে আমি দরবার হলে বেঁচে আছি। আমাদের দয়া করে বাচাঁও। গুরম্নতর ভাবে আহত মেজর মোসাদ্দেকের অতি উদ্বেগজনক ও অব্যাহত ফোন কল এ তাঁকে বাঁচানোর আশ্বাস প্রদান করা হলেও কার্যক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে সে সাড়ে ৫টার দিকে ইনত্দেকাল করে। সেনা অফিসারদের বাচাঁনোর কোন উদ্যোগই গ্রহন করা হয়নি। তাদেরকে বাঁচানোর দ্বায়িত্ব যাদের ছিল তারা অন্যদের পৃষ্টপোষকতায় ব্যাসত্দ ছিল। সন্ধ্যা রাত্রির দিকে পীলখানা থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে আহতদের স্থানানত্দরের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এটা ছিল একটা বাহানা। ঐ এ্যাম্বুলেন্স এ করে ভাড়াটে খুনীদের বধ্যভূমি থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পীলখানা থেকে এ্যাম্বুলেন্স এ বের করে তাদেরকে পূর্ব নির্ধারিত পয়েন্ট এ অপেক্ষমান মাইক্রোবাসে উঠিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ বিমানের বিজি০৫৯ নং বিমানে তাদেরকে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গনত্দব্যে পেঁৗছিয়ে দেয়া হয়। ঐ দিন বিকেলে পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ পীলখানা থেকে তার সদ্য বিবাহিত কন্যাকে উদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। সে পীলখানা প্রবেশের জন্য কয়েকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের অনুমতি প্রার্থনা করে। কিন্তু তার প্রার্থনা না মঞ্জুর করা হয়। বিক্ষুদ্ধ আইজি মরীয়া হয়ে একাই যাওয়ার সিদ্ধানত্দ গ্রহন করে। এমতাবস্থায় সাহারা অস্ত্র সমর্পন ও অফিসারদের পরিবার পরিজনদের উদ্ধারের নাটক শুরু করে। সাহারা কেবলমাত্র ওটোশী ভবন থেকে আইজির কন্যা ও বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রে জড়িত কর্ণেল কামরুজ্জামানের স্ত্রী ও মিসেস আকবরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এমনকি উক্ত ভবনের দোতালার উপরে তিনি যাননি। উক্ত ভবনের উপরের দিকে অবস্থানকারীরা সহ অন্যান্য আবাসিক ভবনের সবাইকে তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়। সাহারা খাতুন পীলখানা ত্যাগ করার পর পরই কর্ণেল আফতাবকে হত্যা করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আগমনে তার মনে হয়তো এই বিশ্বাস হয়েছিল যে বিদ্রোহের নিষ্পত্তি হয়েছে এবং তাই তিনি তার গোপন স্থান থেকে বের হয়ে এসে তার স্ত্রী ও কন্যার সাথে সাক্ষাত করতে যায়। সে জানতো যে তারা অফিসারস মেসে আছে। কোয়াটার গার্ড অভিমুখে যাওয়ার পথেই তাকে গুলি করা হয়। কর্ণেল রেজাকে হত্যা করা হয় রাত ৩টার পরে। সাহারা খাতুনের প্রত্যাবর্তনের পর কর্ণেল এলাহীকেও হত্যা করা হয়। সে একটি ম্যানহোলে পালিয়ে ছিল। সেখান থেকে বের হলেই তাকে হত্যা করা হয়। এই ভাবে বেশ কয়েকজন অফিসারকে রাতে হত্যা করা হয়। সরকার প্রধান ও নিজেদের সেনাপ্রধানের বিশ্বাসঘাতকতায় জাতীর নিরাপত্তা বিধানে নিবেদিতপ্রাণ এইসব অফিসারদের জীবন প্রদীপ অতি অল্প সময়ে নিভে যায়। সেনাবাহিনীতে কর্মরত তাদের অসহায় ও অবমানিত সহকর্মীদের পক্ষে তাদের বাঁচানোর কোন ফুরসতই ছিলনা। বি ডি আর হত্যাকান্ডের সেই গোপনীয় অধ্যায়গুলো-৪র্থ খন্ড এই লেখার ১ম-২য়-৩য় খন্ডের পর- এই জঘন্য হত্যাকান্ড যখন চলছিল তখন মীর্জা আজমকে অনবরত বিদ্রোহীদের সাথে সেল ফোনে কথা বলতে শুনা যাচ্ছিল। সে হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্ট ভাবে কর্ণেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলতে এবং গুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ জ্ঞাপন করে। কর্ণেল গুলজারকে ঐরুপ বীভৎসভাবে হত্যা করার জন্যে মির্জা আজমের নির্দেশের পিছনে কারন ছিল তার বোনের স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণ করা। কর্ণেল গুলজার তখন, র্যাব গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ছিলেন। তার নেতৃত্বে মির্জা আজমের বোনের স্বামী জেএমবির প্রধান আবদুর রহমানকে তার গোপন আসত্দানায় র্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। কর্ণেল গুলজার ইতিহাসে সিলেট আওয়ামী লীগের এক নেতার ভাড়াকরা বাড়ী থেকে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করে।এছাড়াও কর্ণেল গুলজার যুবলীগ প্রেসিডেন্ট নানক ও জেনারেল সেক্রেটারী আযমের ব্যক্তিগত আক্রোশের মুখে ছিল উল্লেখ্য যে আওয়ামীলীগ আহুত হরতালের সময় প্রথমবারের মত বাংলাদেশে হরতালে গান পাউডার ব্যবহার করে হোটেল শেরাটনের সনি্নকটে ১১ জন যাত্রীসমেত একটি বিআরটিসি বাস জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনার সাথে নানক ও আযমের সম্পৃক্তির প্রমানাদি কর্ণেল গুলজার প্রতিষ্টা করে। শেখ হাসিনা তখন যুবলীগের এই দুই নেতাকে এই মর্মে নির্দেশ জ্ঞাপন করে যে ‘হয় সরকারী ক্ষমতার নিকট বশ্যতা স্বীকার করো; না হলে রাজপথ জনগনের রক্ত রঞ্জিত করে দাও।’ ২০০৮ সালে র্যাবের কাছে আটক থাকার সময় শেখ সেলিম বাস জ্বালানোর সে লোমহর্ষক কাহিনী কর্ণেল গুলজারের নিকট ব্যাক্ত করেন এবং ঘটনা্র সাথে নানক ও আযমের সরাসরি সম্পৃক্তির কথা গুলজারকে জানান। শেখ সেলিমের সে স্বীকারোক্তির অডিও টেপ ইউটিউব এ প্রচার করা হয়। গুলজারকে অমন বীভৎস মৃত্যু ঘটানোর মধ্য দিয়ে নানক আযমরা কেবল যে প্রতিশোধই গ্রহন করেছিল তাই নয় তাদের সেই ঔদ্ধত বাংলাদেশে সৎ ও দেশপ্রেমিক লোকদের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবেও প্রতিষ্টা লাভ করেছে।প্রধানমন্ত্রীর বাড়ীতে বিকেলের দোদুল্যমান বৈঠক যখন চলছিল তখন নানক লাউড স্পীকার এ পীলখানা বিডিআর সদর দফতরের তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থানকারী সকল শহরবাসীকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নেবার নির্দেশ প্রদান করে। পরে রাতের দিকে বিডিআর সদর দফতরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ দরকার ছিল ভাড়াটে ও স্থানীয় হত্যাকারীরা যাতে নিরাপদে সরে যেতে পারে। তোরাব আলী ও তার ছেলে অবৈধ অস্ত্রের ডিলার, সন্ত্রাসী লেদার লিটন এর মাধ্যমে বেসামরিক পোষাক পরিচ্ছেদ সরবরাহ সহ হত্যাকারীদের পালিয়ে যাবার খরচাদি প্রদান করা হয়। উক্ত লিটনকে র্যাব এর আটকাবস্থা থেকে তাপস ও নানকের হসত্দক্ষেপে জানুয়ারী মাসে মুক্ত করা হয়। ঐ দিন রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে স্পীড বোট যোগে হত্যাকারীদের বুড়িগঙ্গা নদী পার করিয়ে দেয়া হয়। এই পারাপারে হাজী সেলিমের সহায়তায় তার সিমেন্ট ঘাটকে ব্যবহার করা হয়। হাজী সেলিম এই কাজে পুরোপুরি সমন্বয় সাধনের দ্বায়িত্ব পালন করে। হাজী সেলিমের লোকজন সেই সময় স্থানীয় লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ঢাকার একটি টিভি চ্যানেল ২৫ তারিখ রাত ১টার সংবাদে উক্ত ঘটনার খবর প্রচার করে। সেই রিপোটে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য তুলে ধরে বলা হয় যে বেশ কিছু স্পীডবোর্টকে তারা আসা যাওয়া করতে দেখেছে; কিন্তু তারা কাছাকাছি যেতে পারেনি যেহেতু কিছু রাজনৈতিক কর্মী তাদেরকে সেদিকে যেতে বাধা দেয়।হাজী সেলিম ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে বেশ কিছু গোলাবারুদ ক্রয় করে যা বিদেশী ভাড়াটে খুনীরা প্রথমে ব্যবহার করে। ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক এটা জানার পর সে এন এস আইকে এই মর্মে অবহিত করে যে পীলখানায় কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি চলছে যার সাথে বিডিআর ও আওয়ামীলীগ রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ জড়িত। ষড়যন্ত্রের নীল নকশামত উক্ত সাংবাদিককে এনএসআই থেকে বলা হয় যে তিনি যেন আর কারো সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ আলোচনা না করেন। বিষয়টির সত্যাসত্য যাচাই বা তদনত্দ না করে এনএসআই গোটা বিষয়টি চাপিয়ে যায়।পরের দিন সকালে সদর দফতরের কিছু বাসাবাড়ী থেকে উদ্ধার করতে ভাগ্যাহত অফিসারদের পরিবার পরিজনকে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মীর্জা আযম এই মর্মে সতর্ক করে দেয় যে তারা যেনো কেেেনা অবস্থাতেই সংবাদ মাধ্যমকে কিছু না বলে কেননা তখনও তাদের স্বামীরা বিদ্রোহীদের হাতে আটক আছে। নতুন করে এই ধরনের ভয়-ভীতি আতংক ভাগ্যাহতদের পরিবার পরিজনের মনে ঢুকিয়ে দেয়া এবং তার সাথে কিছু আশার সংমিশ্রন ঘটানোর পিছনে সেই দু’ব্যক্তির লক্ষ্য ছিল।(১) পীলখানার অভ্যনত্দরে বর্বর হত্যাকান্ডের পাশাপাশি পরিবার পরিজনদের নির্যাতন, ধর্ষন সহ অন্যান্য অপরাধের খবর যেন দেশবাসী খুব সত্বর জানতে না পারে। (২) এটা নিশ্চিত করা যে সেনা অভিযান যেন না করা হয় এবং মৃতদেহগুলো সরিয়ে ফেলা সহ রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞের সকল চিহ্ন মুছে ফেলার জন্যে যেন প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়। ২৬ তারিখ রাতেও নানকের নির্দেশে পীলখানায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। সেই সময় সকল ধরনের প্রমাণাদি নিশ্চিহ্ন করার জন্যে হত্যা করা সেনা অফিসারদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা সহ হত্যার প্রমানাদি মুছে ফেলার কাজে বিডিআর এর হিন্দু জওয়ানদের নিয়োজিত করা হয়। বর্তমানে আটকাবস্থাধীন মনোরঞ্জন নামে এক হিন্দু জওয়ান ঐ কাজে জড়িত ছিল।হিন্দু জওয়ানদের এই জন্যই এই কাজে নিয়োগ করা হয় তেমন আশংকায় যে মুসলমান জওয়ানরা লাশ পুরে ফেলার ব্যাপারটা নাও মানতে পারে। এই রাতে সব কিছু ধুয়ে মুছে সাফ করা সহ বাকী বিদ্রোহীরা নিরাপদে সড়ে পড়ে। সব পরিকল্পনা অতি সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করা হয়। অপরাধ ঢেকে ফেলা দুইদিন পরে তথা ২৭ তারিখে সরকারী সন্ধানকারী দলকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এ্যাম্বুলেন্সযোগে নিহত ও আহতদের পারাপার করতে দেখা যায়। কিন্তু বিডিআর এর প্রধান প্রবেশ পথ দিয়ে ৩ দিন ধরে অপেৰমান বিডিআর এর নিকট আত্নীয় স্বজনদের কাউকেও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি কিংবা ভেতর থেকেও কাউকেও বের হতে দেয়া হয়নি। এমন অবস্থা বজায় রাখার মধ্যেও যে অন্য কোন লক্ষ্য লুকায়িত থাকতে পারে এটা শোকাতুর ও হতভাগ্য লোকদের বুঝার কোন উপায় ছিলনা। এটা তাদের নিকট যৌক্তিক বলেই মনে হয়েছে যে ভাগ্যাহত মৃত ব আহতদের যথাযথভাবে সরিয়ে না ফেলা পর্যনত্দ এবং হত্যাকারীদের ধরতে তলস্নাশী অভিযান ও হত্যাকান্ডের প্রমাণাদি সংগ্রহ না হওয়া পর্যনত্দ বধ্যভূমি এলাকায় সাধারনের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকাই শ্রেয়। এতবড় ধ্বংসযজ্ঞের পিছনে যে সরকার ও সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পযর্ায়ের কর্মকর্তা জড়িত এটা কারোর পক্ষে আঁচ করা সম্ভব হয়নি। বরং দেশের বিভিন্ন স্থানে বিডিআর ইউনিট সমুহ বিদ্যমান উত্তেজনার জন্য সাধারন্যে উদ্বিগ্নভাব স্পষ্টতই পরিলক্ষিত হতে পারে। আসলে সেই সময়ও নিঃসন্দেহ জনগণ এটা বুঝতে পারেনি যে সরকার ও সেনাবাহিনীর উচ্চ মহল যারা এমনিতেই একটা বিশেষ সুবিধাভোগী এবং যারা তাদের সেই অবস্থার সুযোগে জাতির সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সেই বিশ্বাসঘাতকতাকে বেমালুম চাপিয়ে রাখার জন্যই ২৭ তারিখও তারা তৎপর থাকে। এই বিশ্বাসঘাতকতার চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য প্রয়োজনছিল গোটা ষড়যন্ত্র বাসত্দবায়নের চাইতে আরও নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর পদক্ষেপ। একই দিন অর্থাৎ ২৭ শে ফেব্রুয়ারী যখন দ্বিতীয় গণকবর আবিস্কারের মধ্যদিয়ে বিদ্রোহীদের নৃশংস মহা অপরাধের মানচিত্র প্রমানিত হতে শুরু করে তখন নানক ডিজিএফআই এর ডাইরেকটর (সিআইবি) ব্রিগেডিআর জেনারেল মামুন খালেদকে এই মর্মে পরামর্শ দেয় যে প্রচার মাধ্যমকে না জানিয়ে কোন রুপ রাষ্ট্রীয় দাফন অনুষ্ঠান ব্যতিরেকই যেন নিহতদের বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতবিক্ষত লাশ অবিলম্বে আত্নীয়স্বজনদের নিকট হসত্দানত্দর করা হয়। নানকের সেই প্রতারনাপূর্ন পরামর্শের কথা সেই সময় উপস্থিত অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের নজর এড়ায়নি। এমন পরামর্শে ইনি্জিনিয়ারিং কোরের এক অফিসারতো রাগের মাথায় রীতিমত নানককে আক্রমন করতেও সচেষ্ট হয়। অন্য সেনা কর্মকর্তারা তাকে অবশ্য নিবৃত্ত করে। পরিস্থিতি আরও অগি্নশর্মা হয়ে উঠতে পারার আশংকায় নানক দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অপেক্ষমান বিডিআর এর নতুন ডিজি বিগ্রেডিআর জেনারেল মঈনুল ইসলামও জেনারেল হেড কোয়াটার এ বসে বসে এই ষড়যন্ত্রের বাকী নীল নকশা বাসত্দবায়নে তৎপর হয়ে উঠে। তিনি পীলখানার ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য সেনাবাহিনীর একদল অফিসারকে একটি বৈঠকে জড় করেন। তিনি তাদেরকে বলেন যে ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন যে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও সেনাপ্রধান সম্পূনভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। না হলে সেনাবাহিনীর এত জন অফিসার এমনভাবে নিহত হতোনা। তিনি তার বক্তব্যের সমর্থনে কিছু কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। বৈঠকে উপস্থিত সেনা অফিসাররা যখন তাদের মতামত উপস্থাপন করতে শুরু করে তখন তিনি তাদেরকে তাদের বক্তব্য লিখিতভাবে তার নিকট প্রদানের কথা বলে এই মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন যে তিনি তাদের বক্তব্য সেনাবাহিনীর উচ্চ মহলে পেশ করবেন। তিনি সেইসব মতামত অবিকলভাবে তখন সিজিএম পদে কর্মরত লে: জে: আমিনুল করিম এর নিকট দাখিল করে এবং তাদের সাথে সেনাপ্রধানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানায়। মঈনুল পরের দিন সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠিত সেনা প্রধানের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অফিসারদেরকে ………..তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের পরামর্শ জ্ঞাপন করে। সেই বৈঠকে অফিসাররা সেনাপ্রধানের মুখের উপর তার কঠোর সমালোচনা করলে বৈঠকে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং এক পর্যায়ে সেনা নিরাপত্তা ইউনিট এর সহায়তায় আতংকগ্রসত্দ সেনাপ্রধান সভা স্থল ত্যাগ করে। সে বৈঠকের পর পরই পূর্ব নির্ধারিত জানাযায় অংশপ্রহনের জন্যে সেনাপ্রধানকে তার পরিচ্ছেদ বদল করতে আসতে হয়। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ সেনা অফিসারদের উত্তেজিত করার দায়ে মঈনুল এর বদলে দায়ী করা হয় আমিনুল করিমকে। তাকে অবিলম্বে চাকুরী থেকে বরখাসত্দ করা হয়। একজন সম্মানীয় দেশপ্রেমিককে সেনাবাহিনী থেকে হটিয়ে মঈনুল বিডিআর পুনর্গঠনে তার নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে মশগুল হয়ে পড়েন। সরকারের বিরুদ্ধে সেনা অফিসারদের উস্কিয়ে দেয়ার কল্পিত ষড়যন্ত্রের তদনত্দের সাথে মইনুল করিমকে জড়ানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অভ্যনত্দরে সক্রিয় বিদ্রোহের হোতাদের যোগসাজসে সরকার আরও একটি ঘটনাকে সঙ্গোপন করে রাখে। ঘটনাটি ছিল ঐ দিন উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহেল তাজ পীলখানায় হত্যাযজ্ঞে নিয়োজিত বিদেশী কিলারদের অতি নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। উল্লেখ্য যে ১৮ই ফেব্রুয়ারী থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারী পর্যনত্দ সোহেলকে তার অফিস কিংবা জনসমুক্ষে দেখা যায়নি। কোন কোন সংবাদ মাধ্যমে এই মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে ২৫ ও ২৬ শে ফেব্রুয়ারী সে তার পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিল। এটা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। সে ১৮ই ফেব্রুআরী গোপনে ভারত সফরে যায় এবং দুই বা তিন দিন পর সে ফিরে এসে পরিকল্পনা মোতাবেক ২৫ তারিখ রাতে বিদেশী ভাড়াটে খুনীদের বিমানযোগে নিরাপদে বিদেশে পার করে দেয়ার কাজে সহায়তা করে। ২৮ তারিখ সন্ধায় সেনাবাহিনীর একটি পরিবহন হেলিকপ্টারে করে সোহেল তাজ সিলেট যায় এবং সে রাতেই ওসমানী বিমান বন্দর থেকে একটি বেসামরিক বিমানে সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। সেনাবাহিনীর লে: ক: শহীদ সে হেলিকপ্টার চালায় যে কিছুদিন পর নিহত হয়। সে ও ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম সহ একটি রহস্যময় হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় টাঙ্গাইলের সনি্নকটে তারা নিহত হয়। হেলিকপ্টার বিধসত্দ হওয়ার ঘটনাটি ছিল নাশকতামূলক। সোহেল তাজ এর দুষ্কর্ম গোপন রাখতে নিরাপরাধ শহীদকেই কেবল হত্যা করা হলোনা; সেই সাথে হত্যা করা হলো আরো একজন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে। পরবর্তীতে ডিজিএফআই এর ব্রিগেডিআর জেনারেল মামুন খালেদকে দায়িত্ব দেয়া হয় সেই সব অফিসারের তালিকা প্রনয়নের জন্য যারা সেনাকুঞ্জের বৈঠকে সেনাপ্রধানের সামনে দাড়ীয়ে অভিযোগ জানানোর সাহস দেখিয়েছিল। এমন ৫০ জন অদ্ভূত অফিসারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়; যাদের অনেককে ইতিমধ্যে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে আর বাকীদের ঢাকার বাইরে গুরুত্বহীন পদ সমূহে বদলী করা হয়। পীলখানা হত্যাযজ্ঞ থেকে যে কয়েকজন নিরাপদে বেরিয়ে আসে তাদের মধ্যে ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: ক: শামস একজন এবং তাকেই কেবলমাত্র টেলিভিশনে উপস্থাপন করা হয় এবং সাধারন্যে তিনি আকস্মাৎ একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মিডিয়া সমুহে তিনি তার ভাই ভাগ্যাহত অফিসারদের হত্যাকান্ড ও তাদের অত্যাচার যন্ত্রনা সম্পর্কে কেবল গীত গেয়েই ক্ষানত্দ হলেন না; তিনি বলে দিলেন যে সকল অফিসারকে ২৫ তারিখ সকাল ১১টার মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার চাক্ষুস বর্ণনা প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান কতৃক সেনা হসত্দক্ষেপ ছাড়া বিদ্রোহ দমনের গৃহীত নীতির যৌক্তিকতা নিরুপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ সেনা অফিসাররাতো ১১টার মধ্যেই নিহত হয়ে যায়। অতএব তার পর বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনী এগিয়ে গেলে আরো কিছু জীবন হানী ও রক্তপাত ছাড়া আর কি হতো? এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাাঙ্গাতরা বিদ্রোহ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর গৃহিত বুদ্ধিদ্বীপ্ত সিদ্ধানত্দের প্রশংশাস সারা দেশকে মাতোয়ারা করার জজবায় মেতে উঠে। প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান কর্ণেল শামস এর প্রদত্ত ভাষ্যের ঋন খুব দ্রুতই পরিাশোধ করে। তাকে এলিট এস এফ এফ এ বদলী করা হয়। বিদ্রোহ সম্পর্কে গঠিত সেনা তদনত্দ টীম শুরু থেকেই বিদ্রোহের ভিন্ন চিত্র পেতে শুরম্ন করে। তারা এটা বের করে ফেলে যে পীলখানা বিদ্রোহীদের মূল উৎস কর্ণেল শামস এর ৪৪ ব্যাটালিয়ান এবং উক্ত ব্যাটালিয়ানের কোন কমান্ডিং অফিসারকে তথা কর্ণেল শামস মেজর মাহাবুব এবং মেজর ইসতিয়াক কে হত্যা করা হয়নি। কিংবা তদের অফিসও অন্যান্য নিহত অফিসারের অফিস এর ন্যায় লন্ড ভন্ড করা হয়নি। তদনত্দে আরও গুরুতর যে তথ্য ফাস হলো তা হচ্ছে মিনিট কয়েক পূর্বে বিডিআর এর ৫ নং গেট এর সনি্নকটে কর্ণেল শামস কে একদল বিডিআর সেনাকে কি যেনো ব্রিফিং করতে দেখা যায়। যখন কেউ একজন চিৎকার দিয়ে উঠে যে অফিসাররা সৈনিক থেকে আলাদা হয়ে যাও তখন সে খুব তাড়াতাড়ি তার ব্রীফিং সমাপ্ত করে দ্রুত সরে পড়ে। ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ানের গ্রেফতার কৃত বিদ্রোহীদের কেউ কেউ জিজ্ঞাসাবাদে এই মর্মে উল্লেখ করেছে যে বিদ্রোহ পরিকল্পনার ব্যাপারে কর্ণেল শামসকে জিজ্ঞাসা করা হোক। তারা পরিকল্পনার কথা কিছুই জানেনা বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। সেনা তদনত্দ বোর্ড এই ব্যাপারে কর্ণেল শামসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চাইলে প্রধানমন্ত্রির অফিস সে অনুমতি প্রদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। আবার বিডিআর এর যোগাযোগ ইউনিট এর কোন অফিসারও নিহত হয়নি। এর অধিনায়ক কর্ণেল কমরুজ্জামানকেউ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেনা তদনত্দ বোর্ডের অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর অফিস প্রত্যাখান করে। সেনা তদনত্দের প্রাথমিক পর্যায়ে র্যাবের নিম্ন পদস্থ অফিসাররা যখন বিদ্রোহের আগে পরের সন্দেহভাজনদের ফোন কল রেকর্ড পরীক্ষা শুরু করে তখন এমন অনেক তথ্য তারা লাভ করে যার মধ্যে বিডিআর হত্যাযজ্ঞের সাথে আওয়ামীলীগ নেতাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। আওয়ামীলীগ নেতা তোরাব আলী বিদ্রোহের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিদেশে কারো সাথে তাদের পরিচয় গোপন করে ব্রিগেডিআর জেনারেল হাসান নাসির এর বেনামে বহু চিঠি অনেক সেনা কর্মকর্তার নিকট প্রেরন করে। এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে হাসান নাসিরকে খুব দ্রুতই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। নিয়মিত যোগাযোগ করতো কিংবা সরকার সাহায্য না করায় বিদেশের সে ফোন ও তার সাথে জড়িত ব্যক্তির পরিচয় ও হদিস বের করা সেনা তদনত্দ বোর্ডের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এমনিতর ঘটনা সমুহের অন্যতম একটি উল্লেখ্য ঘটনা হচ্ছে ২৪ শে ফেব্রম্নয়ারী ফোনে ডিএ ডি তৌহিদের সাথে নানকের ২০৪ মিনিটের কথোপকোথন। এই কথোপকোথন ও নানকের আরো কিছু দোষনীয় কার্জকর্মের প্রমাণ পওয়া যায় এবং ২৫শে মার্চ রাতে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন পীলখানায় অস্ত্র সংবরণ নাটক মঞ্চস্থ করছিল তখন নানক কি করছিল তা জানার জন্য নানককে সেনা তদনত্দ বোর্ড জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করলে নানক তা থেকে বাঁচার জন্যে হটাৎ বুকের ব্যথার ভান করে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তী হয়। এবং দ্রুত সেখান থেকে সিঙ্গাপুর চলে যায়। হত্যাযজ্ঞের দিন কয়েকপর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব মেনন এক অনির্ধারিত সফরে ঢাকায় আগমন করে এবং জরুরী ভাবে প্রধানমন্ত্রী ও সেনা প্রধানের সাথে গোপন শলা পরামর্শে মিলিত হয়। এদিকে সেনা তদনত্দ বোর্ড ঘটনা তদনত্দে নানকের সাথে কথা বলা দরকার এটা প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি তা সরাসরি প্রত্যাখান করেন। শুধু তাই নয় ব্রিগেডিআর জেনারেল হাসান নাসির যিনি সেনাতদনত্দ বোর্ডের সদস্য ছিল এবং তিনি নানককে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিল বিধায় তাকে সেনা তদনত্দ টীম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। নানক যখন জানতে পরলো যে তাকে জিজ্ঞাসা বাদ না করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে এবং তাকে আইনের উর্দ্ধে রাখা হবে তখনই সে দেশে ফিরে আসে। আর অত্যনত্দ পরিশ্রমী ও দ্বায়িত্ববান অফিসার নাসিরকে প্রতিহিংসার শিকার হতে হলো। র্যাবের আরেকটি কল রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল মুকিম সরকার (সিও ২৫ রাইফেল ব্যাটেলিয়ন, পঞ্চগড়) যিনি পিলখানায় দরবারে যোগ দিয়েছিলেন এবং অক্ষতভাব বেচে গিয়েছিলেন, তাকে ২৫ তারিখ রাত সাড়ে ন’টায় সুবেদার মেজরকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ” আমাদের নির্দেশ হলো সৈনিকদের যাতে কোন ক্ষতি না হয়। যারা পালিয়ে গেছে তো গেছে– আপনারা ডিএডি সাহেবকে নিয়ে ভাল থাকেন; আর কোন বাহিনী যাতে ভিতরে ঢুকতে না পারে । ডিএডি সাহেবকে এনাদের সাথে কথা বলতে বলবেন–। ” যা ডিএডি তৌহিদকে ভারপ্রাপ্ত ডিজি হিসাবে তাপসের ঘোষণার কিছু পরে হয়েছিল। স্পষ্টভাবেই সরকার এ ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল; তবে সে কোন আদেশ দিয়েছিল? ঘটনা হচ্ছে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামস্ ও কামরুজ্জামানের মত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরকার অক্ষত ছিল বলে বোঝা যায়। তাদের প্রাথমিক তদন্তকালে ভাড়াটে বিদেশী খুনীরা যে জাল ইউনিফর্ম পরিধান শেষে ফেলে গিয়েছিল তার প্রস্তুকতকারী দর্জি ও দর্জির দোকান র্যাবের কর্মকর্তারা খুজে পেয়েছিল। সে সকল খুনীদের পিলখানা থেকে পলায়নে ও এয়ারপোর্টে যাবার কাজে ব্যবহৃত এমবুলেন্স ও মাইক্রোবাস সম্পর্কে তারা তথ্য নিতে পারত। মাইক্রেবাসগুলোতে ভূয়া নম্বর প্লেট ছিল এবং সেগুলোর চালক ও মালিকদের খুজে বের করা কঠিন ছিল। তবে নিদেনপক্ষে তারা এ ঘটনা বুঝতে দিয়েছিল যে, আওয়ামী লীগের একজন সহানুভূতিশীল ব্যক্তি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সামাল দিয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মেডিকেল ক্লিনিক থেকে এমবুলেন্স সরবরাহ প্রশ্নসাপেক্ষ ছিল। পিলখানা হত্যাকান্ডের প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসতে শুরু করলে ডিজি ডিজিএফআইয়ের ফজলে আকবর ব্যক্তিগত ব্রিফিংয়ে ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা বাদ দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালানোর জন্য তার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দানের কথা জানান। কিছু জুনিয়র কর্মকর্তা গুঞ্জন করতে থাকেন, যারা বিরোধী বলে চিহ্নিত তাদেরকে দু্রত ডিজিএফআই থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়; বাকীদের কাছে সংবাদটি অক্ষুণ্ন থাকে। মার্চের শুরু থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন খালেদের নেতৃত্বে ডিজিএফআই টিম সকল টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন যাতে অপ্রিয় সত্য বেরিয়ে আসতে না পারে। র্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মজিদ এবং মেজর হামিদ বিদ্রোহ ও হত্যাকান্ডে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার দৃঢ় প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন। মজিদকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল এম.পির ঘনিষ্ট আত্মীয় মেজর আজিমকে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক করা হয়েছিল, একইসাথে হামিদকে র্যাব থেকে বদলী করা হয়েছিল। দায়িত্ব নিয়ে আজিম, যিনি পরবর্তী পদে পদোন্নতি লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত ছিলেন, মেজর আতিককে পিলখানা হত্যাকান্ডের সাথে জেএমবি, বিএনপি অথবা অন্য কোন সামরিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেন। তাছাড়া মজিদ ও হামিদের সংগৃহীত সকল অবৈধ রূপে প্রতীয়মাণ আলামত তিনি ধ্বংস করে ফেলেন। সে সময়ে নানকের উপরস্থ এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রকাশ্যে বিদ্রোহের সাথে জেএমবি বা কোন স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের যোগসাজশের প্রমাণ না পাওয়ার জন্য আর্মি তদন্ত বোর্ডকে তিরস্কার করেন। আজিমের নেতৃত্বে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা মোকদ্দমাটি অনুসরণ করতে থাকে। হঠাৎ মাওলানা আব্দুস সোবহানকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে র্যাবের হেফাজতে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যাকে তদন্ত সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান দু্রত দাবী করেন যে, বিদ্রোহে কিছু ইসলামী সন্ত্রাসী জড়িত রয়েছে। আজিমের পরিকল্পনা ছিল মাওলানা সোবহানকে চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা জবানবন্দি নেয়া যে, হত্যাকান্ডে ইসলামী জঙ্গীরা জড়িত রয়েছে। সে সময় ঢাকার একটি দৈনিকে তদন্ত প্রতিবেদনে মন্ত্রীর দাবীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি ছিল যথার্থ; যাতে হত্যাকান্ডে সাথে ইসলামী জঙ্গীর জড়িত থাকার বিষয়টি সরকারকে পরিত্যাগ করতে বলা হয়। তখন আব্দুস সোবহানকে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিছুদিন পরে কয়েকজন দলীয় সদস্য নিয়ে সে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে সরকারের সাথে সংহতি প্রকাশের ঘোষণা দেন। বি ডি আর হত্যাকান্ডের সেই গোপনীয় অধ্যায়গুলো-৫ম খন্ড তাদের এ অভিযানের ধারাবাহিকতায় এলপিআর থেকে আব্দুল কাহহার আকন্দকে ফিরিয়ে এনে সিআইডির তদন্ত টিমের প্রধান করা হয়; যিনি প্রধানমন্ত্রীর একজন চেনা সমর্থক বলে পরিচিত। দু’দশক আগে একদল তরুণ সামারিক কর্মকর্তা কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর পিতার হত্যাকান্ডের এফআইআর তদন্তে তার সাফল্য তেমনটি ছিল না। বিগত সাধারণ নির্বাচনে একটি আসনে প্রার্থিতার জন্য তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তবে এলপিআর এ থাকার কারণে তিনি দাড়াতে পারেননি । তাই স্পষ্টতঃই তার দলীয় আনুগত্য ও তদন্তকারী হিসাবে অলৌকিক দক্ষতা প্রদর্শনকে অস্বীকার করার জো নেই; পিলখানা হত্যাযজ্ঞে তার দায়িত্ব ছিল সহজ; যাতে সামরিক তদন্তের পা্রমাণ্য আলামত থেকে বেরিয়ে আসা সকল গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করা যায়। সরকারের এ সকল পূর্বনির্ধারিত নীতি ও খেলার কারণে সামরিক তদন্ত সংস্থা তেমন কোন সঠিক কাজ করতে পারেনি। তারা কেবল সম্মানজনক একটি কাজ করতে পেরেছে যে, প্রতিবাদ করে অবসরে যাওয়া। তবে তা করলে দেশ আরও গভীর সঙ্কটে নিপতিত হত এবং তদন্ত সংস্থার সদস্যরা হেরে যেত যেখানে তাদের অনেক ক্ষমতাধর সহকর্মী সমর্থনের দোষে দুষ্ট ছিল তদন্ত বোর্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ( কিউএমজি জিএইচকিউ) তার সততা ও নিষ্ঠার জন্য পরিচিত আবার তিনি বেশ সাবধানী ব্যক্তি। তাই আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে, জাহাঙ্গীর ও তার বোর্ড সদস্যরা যেমনটি উচিৎ ছিল তেমনটি ঘাটতে যাননি। এমনকি যখন প্রতিবেদনটি আমাদের কাছে দেয়াও অনিশ্চিত ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার মতে সত্য ও প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে জাহাঙ্গীর ও তার বোর্ড সদস্যদের ব্যর্থতার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে; কারণ আমরা সেনা কর্মকর্তারা দেশ ও জাতির পক্ষে শপথ নিয়ে কাজ করি। তাই প্রয়োজনে আমরা চরম ত্যাগ স্বীকার করে থাকি। আমার ভয় হয়, আমরা আমাদের শত্রুর মোকাবেলায় আগ্রহী না হলে আমাদের জাতির কি দশা হয় কে জানে। ৪. পুরস্কার আব্দুল কাহহার আকন্দ ও তার সিআইডির তদন্ত টিমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সামরিক ট্রাইবুনাল ছাড়া হয়ত এক দু’জন বিডিআরের বিচার হবে; তাদের কয়েকজনের ফাসীও হতে পারে । তবে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা ও সংঘটনে জড়িত রাঘব বোয়ালরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে হয়ত ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যাবে। এ ্ অপরাধে প্রধানমন্ত্রী, তার পুত্র জড়িত সহযোগীদেও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আত্ম- রক্ষণাত্মক হওয়া উচিৎ ছিল। পিলখানা হত্যাকান্ডের বিদেশী প্ররোচকদের বাংলাদেশী হোতাদেও বিচার থেকে রক্ষা একটি ব্যবহারিক কাজ ছিল। /তারা তাদের খেলা শেষ করতে নয় বরং হত্যাকান্ডকে ু্সকে দিয়েছিল। অবশ্য এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রধানমন্ত্রী, তার পুত্র ও এ অপরাধে জড়িতদেও উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কিনা তা জানতে কোন আপত্তি ছিল না। অন্যথায় তার সম্মত না হলে প্রথম অবস্থানে তার বিদেশী প্ররোচকদের উদ্দেশ্য কি ছিল? যেহেতু ভারতীয় র’ ছিল প্রধান প্ররোচক, বিদেশী প্ররোচকদের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণে আমি প্রথমেই পিলখানা হত্যাকান্ডে তাদের উদ্দেশ্য দিয়ে শুরু করব। র’ এর উদ্দেশ্য বিবেচনায় পাঠককে বিডিআরকে ধ্বংস করার কথা ভুললে চলবে না, যাতে তা এমনভাবে পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে যাতে ভারতীয় বিএসএফের সুবিধা হয়। বিদ্রোহের সময় প্রধানমন্ত্রীর তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় ওয়ার্ল্ড প্রেসকে বলেছেন সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে তার দরকার ছিল। তবে বিদ্রোহীদের চাহিদার বিবেচনায় সুস্পষ্ট ছিল যে, দুর্নীতির কারণে নয় তবে তাদের বৈষয়িক লাভের জন্য যাতে অবৈধ উপার্জনের সাথে পেশাগত উধর্্ব পদ লাভ হতে পারে। আরও স্পষ্ট যে, শেষোক্ত চাহিদার পরিবর্তনে যা ছিল বিদ্রোহীদের সবচেযে জোরালে দাবী যে বিডিআরের কমান্ড থেকে সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার যা প্ররোচকদেও দ্বারা বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য ছিল যে, মই্নুল ইসলামের মাধ্যমে দেশ পনর্বর্িক্রি করা। তাহলে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, বিদ্রোহের নেপথ্যেও কুশীলবদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, সেনা কর্মকতর্া ছাড়া আমাদের দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পুনর্গঠন। এ দাবী জোরালো তথা সোচ্চার করতে তাদের সহকর্মীরা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ নেবার চেয়ে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয় , তাদের স্ত্রী ও কন্যাদেও অত্যাচার করা হয। প্রশ্ন হচ্ছে, কার জন্য বা কার স্বার্থে? যেহেতু ভারতীয় র’ ছিল প্রধান প্ররোচক, বিদেশী প্ররোচকদের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণে আমি প্রথমেই পিলখানা হত্যাকান্ডে তাদের উদ্দেশ্য দিয়ে শুরু করব। র’ এর উদ্দেশ্য বিবেচনায় পাঠককে বিডিআরকে ধ্বংস করার কথা ভুললে চলবে না, যাতে তা এমনভাবে পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে যাতে ভারতীয় বিএসএফের সুবিধা হয়। বিদ্রোহের সময় প্রধানমন্ত্রীর তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় ওয়ার্ল্ড প্রেসকে বলেছেন সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে তার দরকার ছিল। তবে বিদ্রোহীদের চাহিদার বিবেচনায় সুস্পষ্ট ছিল যে, দুর্নীতির কারণে নয় তবে তাদের বৈষয়িক লাভের জন্য যাতে অবৈধ উপার্জনের সাথে পেশাগত উধর্্ব পদ লাভ হতে পারে। আরও স্পষ্ট যে, শেষোক্ত চাহিদার পরিবর্তনে যা ছিল বিদ্রোহীদের সবচেযে জোরালে দাবী যে বিডিআরের কমান্ড থেকে সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার যা প্ররোচকদেও দ্বারা বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য ছিল যে, মই্নুল ইসলামের মাধ্যমে দেশ পনর্বির্ ক্রি করা। তাহলে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, বিদ্রোহের নেপথ্যেও কুশীলবদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, সেনা কর্মকতর্া ছাড়া আমাদের দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পুনর্গঠন। এ দাবী জোরালো তথা সোচ্চার করতে তাদের সহকর্মীরা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ নেবার চেয়ে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয় , তাদের স্ত্রী ও কন্যাদেও অত্যাচার করা হয। প্রশ্ন হচ্ছে, কার জন্য বা কার স্বার্থে? বিডিআর কর্মকান্ড সম্পর্কে ওয়াকিফহাল যে কেউ জানে যে, আমাদের এ আধা- সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে: (১) সীমান্তে চোরাচালান নিরোধ এবং (২) আন্তর্জাতিক সীমান্তে যে- কোন প্রতিবেশী দেশের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ। এ দুটো প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয়টিতে যথাক্রমে আনসার ও সেনাবাহিনী সহায়তা করে থাকে এবং উভয় কাজে তাদেরকেই সম্মুখ সারি রক্ষর দায়িত্ব পালন করতে হয়। পরবর্তী দায়িত্বেও জন্য প্রোথমিকভাবে শুরু থেকেই সেনাবাহিনী কমান্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিডিআর কোন ব্যতিক্রম নয়। সেনা কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠ শত্রু বিএসএফকেও কমান্ড করে থাকে। এ ধরনের বিন্যাসের সুবিধা চিহ্নিত করা কঠিন কিছু নয়, কোন বাংলাদেশী কি কখনও শুনেছে যে বিএসএফের ভেতওে বা বাইরে তার কমান্ড অবস্থানে কোন পরিবর্তনের কথা উচ্চারণ করেছে? কেউ যদি এর প্রত্যুত্তরে বলে যে, আমাদের চাহিদা ও অভিজ্ঞতা নির্বিশেষে আমরা ভারতীয় উদাহরণকে অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়, পাঠককে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, যখনই বিডিআর বিএসএফ দ্বারা আক্রান্ত বা বা পার্বত্য এলাকায় শান্তিবাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয় , কমান্ডিং অফিসারের অনুপস্থিতিতে প্রায়শই তারা তাদের অস্ত্র ফেলে পালিয়ে আসে। অন্যদিকে সেনা কর্মকর্তাদের কমান্ডে তারা ঠিকই শক্ত হাতে যুদ্ধ করে থাকে। এ কথার সত্যতা যাচাইয়ে স্থানীয় লোকদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে তারা একই কথা বলবে। কেউ এ সত্যকে এখনও মানতে না চাইলে পদুয়া ও রৌমারীর ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যাতে ২০০১ সালে বিডিআর জওয়ানরা সেনা কর্মকর্তাদের কমান্ডে যুদ্ধ করেছিল এবং বিএসএফকে বিতাড়িত করতে সঙ্ম হয়েছিল যারা কিনা বাংলাদেশের অভ্যন্তওে বিডিআর ক্যাম্প দখল করতে এসেছিল। উভয় ঘটনায় আগ্রাসীরা কেবল বিতাড়িত হয়নি অনেক আক্রমণকারী প্রাণও হারিযেছিল। পরবর্তী ঘটনায় চারজন সেনা কর্মতকর্তা- একজন মেজর ও তিনজন ক্যাপ্টেনসহ বিডিআরের জওয়ানরা বি্েসএফকে তাড়ি য়ে দিতে পেরেছিল। পদুয়া ও রৌমারীর ঘটনায় যথাক্রমে ১৫ ও ১৫০ জন বিএসএফ জওয়ান নিহত হয়েছিল। রৌমারীতে ১২৮ টি মৃতদেহ স্থানীয় বিএসএফের কাছে হস্তান্তও করা হয়’ অবশিষ্ট ২২ টি মৃতদেহ ঢাকা থেকে ফেরৎ প্রদান করা হয় যা টিভি ক্যামেরায় পরিষ্কাররূপে দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। এখনো ইটিভির সুপন রায়ের উপস্থাপনা মনে আছে। এ সকল মোকাবেলায় বিডিআর জওয়ানদের তৎপরতার পার্থক্য হচ্ছে যে সেনা কর্মকর্তাদেও কমান্ড ছাড়া আমাদের আধা-সামরিক বাহিনী আমাদের সীমান্ত রক্ষায় পারঙ্গম নয়, বিদেশী অনুপ্রবেশকারীদের নিকট থেকে যেমন। এমন নয় যে বিডিআর জওয়ানদের সাহসের কোন ঘাটতি রয়েছে। তবে কমান্ডিং অফিসারদের নির্দেশে আক্রমণ সংগঠিত করার কৌশল ও দক্ষতা রয়েছে তাছাড়া যুদ্ধকে।সত্রের নেতৃত্বেও একটি বিষয় রয়েছে । বেসামরিক কর্মকর্তাদেও নিকট থেকে তার প্রত্যাশা বাতুলতা ছাড়া কিছু নয়। এ প্রস্তাবের অসারতা বুঝতে স্বীকার করতে অন্য একটি ঘটনা বিবেচনা করতে হবে। আমাদেও সীমান্তে যদি কোন সংগঠিত আক্রমণের আশঙ্কা ব্যতিরেকে কোন সামর্থ ছাড়াই তারা দাড়াতে পারত, তারা আনসার বাহিনীর হত যা আমাদের ইতোমধ্যেই রয়েছে। তাহলে কেন আনসারদেরকে সীমান্ত রক্ষায় নিয়োগ করা হচ্ছে না? সেনাকর্মকর্তাদের কমান্ড ছাড়া আনসার বাহিনী্ তার যথাযোগ্য কিন্তু দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকরা প্রকাশ্যে তেমন প্রস্তাব দেবে না; কারন তাতে তাদের চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যাবে। এমনকি আমাদেও দেশের যারা দূরহ ইসু্যতে আগ্রহী নয়; তারাও এমন প্রস্তাবকে চরম ধোঁকাবাজি বলেই গণ্য করবে বস্তুত: আমাদেও ঘুমন্ত জাতিকে সুখ নিদ্রায় বিভোর রাখার জন্যে দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকরা তদেও বিদেশী প্রভূদেও সহায়তায় আনসার এর মত একটি দন্ত বিহীন অনুজীব বাহিনী আমাদেও সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত করার অপচেষ্টা চালায়। আমাদের নূতন বিডিআরের ডিজির যুক্তি অনুসরণ করলে তা বিদ্রোহীদেও সকল কুকীর্তি মুছে যায়। এখানে জিজ্ঞাস্য হচ্ছে: কেন র’ বাংলাদেশকে একটি দন্তহীন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসাবে পেতে চায়? তাদের হীন উদ্দেশ্য একটি নয়, একাধিক। ২০০১ সালের পদুয়া ও রৌমারীর মত অনেক ঘটনায় সেরকম উদ্দেশ্য বা মতলব দেখা যায়। সিলেট সীমান্তের ৫০০ একর আয়তনবিশিষ্ট পদুয়া ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক মুক্তিবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। যুদ্ধ শেষ হলে মুক্তিবাহিনী চলে গেলে ক্যাম্প খালি হলে পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিকট থেকে বিএসএফ তার দখল নেয় এবং তাদের দখলে রাখে। অনেকবার পতাকা বৈঠকে বিএসএফ তা ফেরৎ দেবার কথা বলেছে তবে বরাবরের মতই তারা তাদের কথা রাখেনি। ২০০১ সালে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান আমাদের স্থানীয় বিডিআরের কমান্ডারকে পদুয়া থেকে বিএসএফকে বিতাড়নের নির্দেশ দেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সাথে আলোচনাক্রমেই তিনি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিডিআরের ডিজির পরিকল্পনা অনুমোদনের পূর্বে নাসিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করেন। তিনি এ বিষয়ে কিছু না বলে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেন। তার অবিরোধিতাকে নাসিম তার অনুমোদেনের সম্মতি হিসাবে বিবেচনা করে ফজলুর রহমানকে অগ্রসর হতে বলেন। সে অনুসারে চাপ প্রয়োগে পদুয়া থেকে বিএসএফকে বিতাড়নে করা হয়েছিল এবং তাদের জীবিত ও মৃত সৈন্যদেরকে ফেরৎ প্রদান করা হয়েছিল। তাদের অবৈধ দখল পুনরুদ্ধারের পরিবর্তে কিছুদিন পরে বিএসএফ বিপুল সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রৌমারী আক্রমণ করে। ভারতীয় সামরিক শক্তির বিস্ময়ে হতবাক করে আক্রমণকারীরা পুরোপুরি পরাস্ত হয়। প্রতি আক্রমণে সিও সংগঠিত করেন এবং বিএসএফ কর্মকর্তাদেও হতবাক করেন। স্থানীয় জনগণ বর্ষা ও অস্ত্র নিয়ে অনেক পলায়নপর অনুপ্রবেশকারীকে খুুন করেছিল। আগেই যেমন বলেছি রৌমারীতে তারা ১৫০ জনকে হারায় যেখানে পদুয়ায় ১৫ জন মারা পড়ে। ভারতের এই শিক।ষাটি বেশ পরিষ্কার ছিল। সেনা কর্মকর্তাদেও কমান্ডে বিডিআর জওয়ানদেও পুশওভার করা যাবে না কাজেই দুর্বল করতে হবে। আশ্চর্যেরও বিষয় ছিল যে, চরম আত্মত্যাগের জন্য যাদেরকে সম্মানের পরিবর্তে তাদের ডিজি আমাদের দেশের সীমান্তেও কথা ভাবছেন। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভারতীয় প্রতিপক্ষকে টেলিফোন করে দুঃখ প্রকাশ ও পদুয়া ফেরৎ দেবার কথা বলেন, আইনানুগভাবে কোন নির্বাহীই যা পারেন না। তাছাড়া, তিনি বিডিআর কমান্ড থেকে ফজলুর রহমানকে প্রত্যাহার করে বিডিআরের অপারেশনের জিএসও ১ লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজানুর বর্তমানে র্যাবের কর্নেল ও ডিজি কে রৌমারি অপারেশনের কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এটাই কি দেশের সীমান্ত রক।ষায় যথাযোগ্য দায়িত্ব পালনকারী সেনা কর্মর্তার পুরস্কার, যার জন্য তারা কমিশনের সামনে শপথ গ্রহণ করেছিলেন? Search Recent Posts উইকিলিকসের তথ্য: সেনা তদন্ত দলের প্রস্তাব নাকচ করেন শেখ হাসিনা ছবি কথা বলে শিরোনামে অনেকগুলো ছবি। প্রতি ছবিতে মন্তব্যসহ …. ঘটনা বি ডি আর হত্যাকাণ্ড এবং কিছু তুলনা … বিডিয়ার হত্যাকান্ডের পর কিছু স্ক্যান করা পেপার বিডিআর বিদ্রোহ প্রসঙ্গে প্রধান রহস্যগুলো Archives November 2013 October 2013 Categories BDR MUTINY BDR MUTINY Highlights Get involved Twitter Feeds @bdrmutiny November 5, 2013 bdrmutiny উইকিলিকসের তথ্য: সেনা তদন্ত দলের প্রস্তাব নাকচ করেন শেখ হাসিনা - http://t.co/tKyWInEgUC http://t.co/zRUaNE8ZFu @bdrmutiny November 5, 2013 bdrmutiny Waiting for the Verdict : Saquib Rahman - http://t.co/gxXRbvTkq4 http://t.co/6jlGrBZrno @bdrmutiny November 5, 2013 bdrmutiny MY RESPONSE IN RESPONSE TO COMMENTS ON MY ARTICLE ON BDR CARNAGE - http://t.co/0bRm74coka @bdrmutiny November 5, 2013 bdrmutiny ছবি কথা বলে শিরোনামে অনেকগুলো ছবি। প্রতি ছবিতে মন্তব্যসহ …. - http://t.co/U4j4o0kFYU http://t.co/nXhiQZ5Z8y @bdrmutiny November 5, 2013 bdrmutiny ঘটনা বি ডি আর হত্যাকাণ্ড এবং কিছু তুলনা … - http://t.co/jdnCq7mvrk http://t.co/uKvRMDTwff 77

এরশাদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন জাপার ৫ মন্ত্রী

নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা থেকে সরে যেতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। এরশাদের কাছে যারা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তারা হলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রওশন এরশাদ, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, আমরা মনে করেছিলম- বিএনপিসহ সকল দল নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে এরশাদ দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হয়। তিনি জানান, সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিলেই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেটের সঙ্গে দেখা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগপত্রগুলো জমা দেবেন। রুহুল আমীন হাওলাদার আরো জানান, বাকি দু'জন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে টেলিফোন করে পদত্যাগপত্র দিতে বলা হয়েছে। শিগগিরই তারাও পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এর আগে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পতাকাবিহীন গাড়িতে করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান জাতীয় পার্টির নেতা ও নির্বাচনকালীন সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রওশন এরশাদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সেখানে তারা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও নির্বাচনকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার জানিয়েছেন, "আমরা এখনো পদত্যাগপত্র জমা দেইনি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে দলের অবস্থান জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করব। এরপর চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দেন আমরা তাই কার্যকর করব।" এরপর মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে ফিরে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের আলোচনা সম্পর্কে জাপা প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন। মঙ্গলবার পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আকস্মিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এর পরদিন বুধবার তিনি তার দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগেরও নির্দেশ দেন। এরপর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের একান্ত সচিব জাতীয় পার্টির কোষাধ্যক্ষ মেজর (অব.) খালেদ জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভা থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তিনি বলেন, যদি কেউ পদত্যাগ না করেন তাহলে তাকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে এমনটা জানিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা হলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী রওশন এরশাদ। প্রতিমন্ত্রীরা হলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম। এ ছাড়া, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জিয়াউদ্দিন বাবলুকে আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর নারী ও শিক্ষা উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়।

শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে জাবি ছেড়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাসের বাড়ি থেকে ঢাকার পথে রওনা হন তিনি। নিজের গাড়িতে ঢাকায় রওনা হওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আয়েশা হোসেন, সহকারী প্রক্টর কাজী সাইফুল ইসলাম। তার এই চলে যাওয়াকে ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে প্রত্যাহার’ বলেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক আবু বকর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপাচার্য পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছেন।” অধ্যাপক আনোয়ারের পদত্যাগ দাবিতে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল শিক্ষক সমিতি। ধর্মঘট, অবরোধের মতো কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অজিত মজুমদারের বাড়িতে হাতবোমা ছোড়া হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা অধ্যাপক আনোয়ারের বাসভবন ঘেরাও করে। উত্তেজনার মধ্যে মধ্যরাতে ঢাকার জেলা প্রশাসক জিল্লার রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে রা ২টায় বেরিয়ে শিক্ষকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে আমরা উপাচার্যকে নিতে এসেছি, তিনি সকালে যেতে রাজি হয়েছেন।” দুপুরে উপাচার্যকে বহনকারী গাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা হাততালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান সমর্থক কর্মীরা জড়ো হয়ে স্লোগানের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। ছবি তুলতে গেলে উপাচার্যও সাংবাদিকদের ‘ভি’ (বিজয়) চিহ্ন দেখান। উপাচার্যের এই প্রস্থানকে আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সদস্য সচিব কামরুল আহসান। তিনি বলেন, “অধ্যাপক আনোয়ারের প্রস্থানের মাধ্যমে আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় স্থিতিশীল হবে।” এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অস্থিতিশীলতা নিরসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল করতে এক বিজ্ঞপ্তিতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন ‘ভারপ্রাপ্ত’ উপাচার্য অধ্যাপক আফসার আহমদ। চলতি বছরের শুরু থেকে উপাচার্য পদ থেকে অধ্যাপক আনোয়ারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষক ফোরাম। পরে তাদের সঙ্গে কর্মচারীরা যোগ দিয়ে গঠন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। গত বছরের শুরুতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ নিহত হওয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পদ থেকে শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করলে ১৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেয় সরকার। পরে তিনি উপাচার্য পদে নির্বাচিত হন।