শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫
‘বিএনপি এলে আ’লীগ নির্বাচন পিছিয়ে দেবে’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগতো নির্বাচন করবেই না। নির্বাচন আরও পিছিয়ে দেওয়া হবে।’
মতিঝিলে শনিবার কাদের সিদ্দিকী তার চলমান ৫৩ দিনের নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান কর্মসূচিস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে সংলাপের দাবিতে ২৮ জানুয়ারি থেকে মতিঝিলের ফুটপাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কাদের সিদ্দিকী।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণাকে বাচ্চাদের ললিপপ খাওয়ানোর মতো উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘একদিকে অবরোধ, অন্যদিকে পুলিশের গুলি। দেশের মানুষ যখন মরছে, তখন বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য ললিপপ দেওয়ার মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন দেশের জনগণের সঙ্গে তামাশা। এই নতজানু নির্বাচন কমিশনের অধীনে এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। বিরোধী দল চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই নির্বাচন করলে সরকারি দলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারাজীবন চেষ্টা করেছেন সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের আর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে গণভবনে ডেকে নিয়ে সিটি নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেন। গণভবনতো সরকারি ভবন। সেখানে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রার্থীদের ডেকে নিয়ে সমর্থন দেন। এটা সংবিধানবিরোধী।’
কাদের সিদ্দিকী সরকারের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘সত্যিকারের নির্বাচন হলে সরকারি দলের প্রার্থী জামানত না হারালে আমি সারাজীবন শেখ হাসিনার সেবক হয়ে থাকব। সরকারি দলের প্রার্থীর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
মুক্তিযুদ্ধের এই কিংবদন্তি বলেন, ‘দেশের মূল সমস্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর দেশের মানুষ যেমন খুশি হয়েছিল, এই দুইনেত্রী আলোচনায় বসলে দেশের মানুষ আরও বেশী খুশি হবে।’
কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘শ্বাস নেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়েছেন। এবার আরও শ্বাস নেওয়ার জন্য আলোচনায় বসেন।’
বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশে করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আপনি গো ধরে বসে থাকবেন না। এই ব্যর্থ আন্দোলন প্রত্যাহার করুন। আপনার আন্দোলন আর এখন আপনার হাতে নেই। এই আন্দোলন এখন গোয়েন্দাদের হাতে। আন্দোলনে বিরতি দেন। আন্দোলন শেখেন। তার পর আবার আন্দোলন শুরু করেন।’
ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচে বাংলাদেশকে জোর করে হারানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কাদের সিদ্দিকী।
কাদের সিদ্দিকী আগামী ২৮ মার্চ তার অবস্থান কর্মসূচির ৬০তম দিনে যে সব বিশিষ্ট ব্যক্তি তার অবস্থানস্থলে সংহতি জানিয়েছেন কিংবা দূরবর্তী স্থানে থেকে সমর্থন দিয়েছেন সবাইকে নিয়ে সংহতি সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফরিদ আহমেদ, যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিবুন্নবী সোহেল, ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রিফাতুল ইসলাম দ্বীপ প্রমুখ।
২১/৩/১৫
বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০১৫
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ র্যাবের গোয়েন্দা সরঞ্জাম আটকে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড
সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করতে হাইকোর্টের রুল
ঢাকা: বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে খুঁজে বের করতে এবং আদালতে হাজির করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ রুল দেন।
আগামী রোববারের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, এসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) প্রধান, সিআইডির প্রধান, ডিএমপির কমিশনার, উত্তরা থানার ওসিকে রুলে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে আজ আবেদন করেন।
ফৌজদারি কার্যবিধিতে করা এ আবেদনের ওপর শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল দেন।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদকে তুলে নেওয়া হয় বলে হাসিনা আহমদ গতকাল বুধবার রাত পৌনে নয়টার দিকে মিডিয়াকে জানান। ওই দিন রাত ১০ টার পর সালাহ উদ্দিন আহমদ মুঠোফোনে স্ত্রী হাসিনা আহমদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে। কিন্তু কোনো কথা হয়নি।
এদিকে বিএনপিও অভিযোগ করেছে, পুলিশ, ডিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিন আহমদকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ সালাহ উদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার বা আটকের কথা স্বীকার করেননি। বুধবার রাতে হাসিনা আহমদ স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি বলে অভিযোগ করে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানায়, ঘটনা যেহেতু উত্তরায়, তাই উত্তরা থানায় জিডি করার পরামর্শ দেয় গুলশান থানার পুলিশ। পরে উত্তরা থানায় গেলে বলা হয় প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে নিয়ে আসার। এই অজুহাতে তারাও জিডি নেয়নি।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, সালাহ উদ্দিন আহমদ উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে থাকতেন। বাড়ির মালিক তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে জানান হাসিনা আহমদ। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বাড়ির সামনে ২০-২৫ জন ব্যক্তি সশস্ত্র অবস্থান নেন। এ খবর তৎক্ষণাৎ বাড়ির কর্মচারীরা মালিককে জানান। কিছু সময় পর অস্ত্রধারীরা বাড়ির ফটক ভাঙার চেষ্টা করলে কর্মচারীরা ফটক খুলে দেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ভয়ে বাড়ির মালিক রাতে আর বাসায় ফেরেননি। সকালে তিনি বাসায় ফিরে জরুরি কিছু কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান।
খালেদা জিয়াকে ‘ভদ্রভাবে’ আদালতে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আইন-আদালত মানবেন। আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। আশা করি, ভদ্রভাবে কোর্টে গিয়ে স্যারেন্ডার করবেন।”
জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি হয়।
ওই দুই মামলার পরের শুনানির দিন ৪ মার্চও খালেদা আদালতে না যাওয়ায় পরোয়ানা বহাল রাখা হয়।
ওই পরোয়ানা গুলশান থানায় পৌঁছালেই খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে আগের দিন সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এদিন অবরোধে পেট্রোল বোমা হামলায় নিহতদের স্বজন এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র দেন শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত ২৭০টি যানবাহনের ১৯৯ জন মালিকের হাতে তুলে দেন অনুদানের চেক।
এদিন মোট পাঁচ কোটি ৪২ লাখ আট হাজার টাকার সহায়তা দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের ১৯৯ জন মালিককে দেওয়া হয় এক কোটি ৫৭ লাখ আট হাজার টাকার চেক।
বিএনপি-জামায়াত জোটের দুই মাসের বেশি সময়ের অবরোধে নাশকতায় ১১৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই আগুন-পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পেট্রোল বোমাসহ নানা ধরনের নাশকতায় কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন।
এই সময়ে ছয়টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ এবং ৩৪ দফা ট্রেনে নাশকতা চালানো হয়েছে।
আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পেট্রোল বোমায় নিহতদের স্বজন ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
“কীভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে পুড়িয়ে মারে? কোন ধরনের আন্দোলন এটা? মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ওপর এই জুলুম কেন?”
‘মানুষের অভিশাপেই’ খালেদা জিয়া শেষ হয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আইনগতভাবে রাষ্ট্র যা করার করবে।
“খালেদা জিয়াকে বলব- ‘এই সব বন্ধ করেন’।এভাবে চললে তো উনি (খালেদা জিয়া) আর মানুষের সামনে যেতে পারবেন না।”
উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের ক্ষতিপূরণের সামর্থ্য আমার নেই। তাও যেটুকু করার করছি।”
রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্ব যখন বাংলাদেশের উন্নতিতে স্বীকৃতি দিচ্ছে- ঠিক তখনই জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে।”
বাসা রেখে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার দুই মাসের বেশি সময় অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অফিসে কী মধু আছে জানি না। ওখান থেকে উনি আর লন্ডন থেকে তার ছেলে (তারেক রহমান) নির্দেশ পাঠাচ্ছে। আর তাদের ক্যাডার বাহিনী নেমে পড়ছে।”
এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে অবরোধের পাশাপাশি বিএনপির হরতাল ডাকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেদিন থেকে পরীক্ষা শুরু সেদিন থেকেই অবরোধের সাথে হরতালেরও ডাক দিল।
“বাচ্চাদের তো ধ্বংসাত্মক অবস্থার মধ্যে ফেলতে পারি না। তাই শুক্রবার আর শনিবার করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। না হলে পরীক্ষা অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত।”
জনগণ ধ্বংত্মাক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সুখের বিষয়; জনগণ সচেতন হচ্ছে। এদের ধরিয়ে দিচ্ছে। মানুষকে জেগে উঠতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
“জনগণের শক্তি বড় শক্তি।”
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)