বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০১৫

খালেদা জিয়াকে ‘ভদ্রভাবে’ আদালতে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আইন-আদালত মানবেন। আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। আশা করি, ভদ্রভাবে কোর্টে গিয়ে স্যারেন্ডার করবেন।” জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি হয়। ওই দুই মামলার পরের শুনানির দিন ৪ মার্চও খালেদা আদালতে না যাওয়ায় পরোয়ানা বহাল রাখা হয়। ওই পরোয়ানা গুলশান থানায় পৌঁছালেই খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে আগের দিন সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এদিন অবরোধে পেট্রোল বোমা হামলায় নিহতদের স্বজন এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র দেন শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত ২৭০টি যানবাহনের ১৯৯ জন মালিকের হাতে তুলে দেন অনুদানের চেক। এদিন মোট পাঁচ কোটি ৪২ লাখ আট হাজার টাকার সহায়তা দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের ১৯৯ জন মালিককে দেওয়া হয় এক কোটি ৫৭ লাখ আট হাজার টাকার চেক। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুই মাসের বেশি সময়ের অবরোধে নাশকতায় ১১৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই আগুন-পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পেট্রোল বোমাসহ নানা ধরনের নাশকতায় কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। এই সময়ে ছয়টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ এবং ৩৪ দফা ট্রেনে নাশকতা চালানো হয়েছে। আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পেট্রোল বোমায় নিহতদের স্বজন ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। “কীভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে পুড়িয়ে মারে? কোন ধরনের আন্দোলন এটা? মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ওপর এই জুলুম কেন?” ‘মানুষের অভিশাপেই’ খালেদা জিয়া শেষ হয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আইনগতভাবে রাষ্ট্র যা করার করবে। “খালেদা জিয়াকে বলব- ‘এই সব বন্ধ করেন’।এভাবে চললে তো উনি (খালেদা জিয়া) আর মানুষের সামনে যেতে পারবেন না।” উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের ক্ষতিপূরণের সামর্থ্য আমার নেই। তাও যেটুকু করার করছি।” রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্ব যখন বাংলাদেশের উন্নতিতে স্বীকৃতি দিচ্ছে- ঠিক তখনই জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে।” বাসা রেখে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার দুই মাসের বেশি সময় অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অফিসে কী মধু আছে জানি না। ওখান থেকে উনি আর লন্ডন থেকে তার ছেলে (তারেক রহমান) নির্দেশ পাঠাচ্ছে। আর তাদের ক্যাডার বাহিনী নেমে পড়ছে।” এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে অবরোধের পাশাপাশি বিএনপির হরতাল ডাকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেদিন থেকে পরীক্ষা শুরু সেদিন থেকেই অবরোধের সাথে হরতালেরও ডাক দিল। “বাচ্চাদের তো ধ্বংসাত্মক অবস্থার মধ্যে ফেলতে পারি না। তাই শুক্রবার আর শনিবার করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। না হলে পরীক্ষা অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত।” জনগণ ধ্বংত্মাক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সুখের বিষয়; জনগণ সচেতন হচ্ছে। এদের ধরিয়ে দিচ্ছে। মানুষকে জেগে উঠতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। “জনগণের শক্তি বড় শক্তি।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন