বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১২

ঢাকায় ‘ক্ষমতা বদলের শঙ্কায়’ নয়া দিল্লি

ঢাকা, অগাস্ট ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসতে পারে- এমন পূর্বাভাস পেয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শঙ্কিত বলে জানিয়েছে সর্বাধিক প্রচারিত ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া। বুধবার টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতবিরোধী শক্তিগুলো বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে সেদেশে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পাবে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, বাংলাদেশ ভিত্তিক বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্ঠী ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর মতো নাশকতাকারী গোষ্ঠীগুলো ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা ও আশ্রয় দেওয়ার নীতি গ্রহণ করতে পারে। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় পাকিস্তানের বিভিন্ন পক্ষের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভারতের আসাম রাজ্যে বোড়ো ও মুসলিম অভিবাসীদের মধ্যকার সাম্প্রতিক দাঙ্গাকে বাংলাদেশি মৌলবাদীরা কাজে লাগিয়ে মুসলমান তরুণদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং তাতে ভারতের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর শক্তি বৃদ্ধিও হতে পারে। পত্রিকাটি বলছে, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও সেদেশের সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িতদের বাংলাদেশের মাটি থেকে নির্মূলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সহযোগিতা পেয়েছে নয়া দিল্লি। তবে শেখ হাসিনা সরকারের জনসমর্থন কমতে থাকায় বিএনপির পুনরায় ক্ষমতা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। আর খালেদা জিয়া ফের ক্ষমতায় গেলে সন্ত্রাসবাদ দমনে গত কয়েক বছরের সাফল্য নস্যাৎ হতে পারে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ভারতবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে তা আর কোনো গোপন বিষয় নয়। বাংলাদেশের সন্ত্রাসী সংগঠন হুজি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন তানজিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলে। আইএসআইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে যেসব হামলা হয়েছে সেসবের অনেকগুলোর ক্ষেত্রে হয় বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে হামলাকারীরা ভারতে ঢুকেছে অথবা হামলার পর প্রতিবেশি এ দেশে পালিয়ে গেছে। এছাড়া বাংলাদেশে আরো অনেক ক্ষেত্রে আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে সহায়তা করেছিলো আইএসআই যা সংস্থাটির সাবেক প্রধান আসাদ দূরানি প্রকাশ করেছেন। গেরিলাযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ডের (এনএসসিএন) সদস্যরা ১৯৯৬ সালের মার্চে ঢাকা থেকে পাকিস্তানে যায়। নাগাল্যান্ডের একটি ঘাঁটিতে আধুনিক যোগাযোগের সরঞ্জাম স্থাপন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় উলফাকে প্রশিক্ষণ দেয় আইএসআই। ২০০০ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংককে এনএসসিএনের প্রধান টি মুইভাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তিনি করাচি থেকে ফিরছিলেন। সেখানে অস্ত্রের চালান পরিদর্শন করে ফেরেন বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তার অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্সের (এটিটিএফ) সদস্যরা স্বীকার করেছে যে, আইএসআই তাদের প্রতি সহায়তার অর্থ ২০ হাজার ডলার বাড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসআইয়ের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী আসামের মৌলবাদী গ্রুপ মুলটা, মুলফা, সিমি ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনকে অর্থ সরবরাহ করে। সম্প্রতি আসামে বোড়ো সম্প্রদায় ও মুসলিম অভিবাসীদের জাতিগত দাঙ্গার পিছনে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়াতে আগ্রহী জানিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলেছে, বাংলাদেশ সরকার যে সব সমস্যায় রয়েছে সেগুলোর সুষ্ঠু সমাধানে যদিও তাদের তেমন কিছু করার নেই। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি, পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়নে সহায়তা এবং দুই দেশের মধ্যকার ছিটমহল বিনিময় বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সমঝোতা হলেই কেবল তিস্তা ও ছিটমহল বিনিময়ের সুরাহা হতে পারে।

মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১২

Humayun Ahmed n Saon in moment

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

এরশাদের ভোটব্যাঙ্ক হাসিনার সঙ্গে থাকলে ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক: আনন্দবাজার

রাক্তন বাংলাদেশী প্রেসিডেন্ট হুসেন মহম্মদ এরশাদের সঙ্গে আলোচনায় বসল ভারতীয় নেতৃত্ব। সোমবার দু’দিনের সফরে নয়া দিল্লি এসেছেন এরশাদ। সোমবার তার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করলেন বিদেশ সচিব রঞ্জন মাথাই। আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।” ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা আজ এই খবর দিয়েছে। আনন্দবাজার লিখেছে, “বাংলাদেশের জনতা পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ, হাসিনা সরকারের মহাজোটের অন্তর্গত ঠিকই, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে হাসিনার সঙ্গে সংঘাত বাড়ছে এরশাদের। সম্প্রতি রংপুরে একটি অনুষ্ঠানে তিনি ‘মাইনাস টু’ সূত্র ঘোষণা করেছেন। সেই সূত্রটি হল, দুই প্রমীলা নেতা বাংলাদেশকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছেন। ফলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এদের দু’জনকে বাদ দিয়েই চলতে হবে।” আনন্দবাজার বলছে, “বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, বাংলাদেশ তথা যে কোনও প্রতিবেশী রাষ্ট্র সম্পর্কে ভারতের নীতি খুবই স্পষ্ট। সেটি হল, যখন যে দল ক্ষমতার শীর্ষে থাকবে তার সঙ্গেই ‘কাজ’ করতে প্রস্তুত ভারত। অন্য দেশের কে বা কারা ক্ষমতাসীন হবে সে ব্যাপারে নাক গলাতে চায় না নয়া দিল্লি। তবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন পরে যথেষ্ট ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করছে মনমোহন সরকার। হাসিনা সরকারকে বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পে সাহায্য করার জন্য খুব কম সুদে আর্থিক ঋণও দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিমুখ কোনও কারণে ব্যাহত হোক এমনটা চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। সে কারণেই এরশাদের সঙ্গে বৈঠককে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ভারত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভোট পর্যন্ত যাতে স্থিতিশীল থাকে সে ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এরশাদকে অনুরোধ করা হচ্ছে।” আনন্দবাজার লিখেছে, “সাউথ ব্লকের মতে, তার দল ছোট হলেও, এরশাদের কট্টরপন্থী ভোটব্যাঙ্ক হাসিনার সঙ্গেই থাকলে সেটা ভারতের পক্ষে অপেক্ষাকৃতভাবে সুবিধাজনক। এবং পাকিস্তান, জামাত এবং বিএনপি জোটকে কূটনৈতিক ভাবে কিছুটা প্রশমিত করে রাখার জন্য এরশাদের মতো নেতার সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটা জরুরি। তিস্তা চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যাপারে ভারত যে আন্তরিক সে কথাও জানানো হয়েছে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে। তবে এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য তৈরির জন্য কিছুটা সময় লাগবে বলে এরশাদকে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব।”

আদালত অবমাননা: সাজেদাকে জবাব দেয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

ঢাকা, ২৭ আগস্ট: সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগের জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। সোমবার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করে। আদেশে বলা হয়েছে, সশরীরে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দিতে পারবেন সাজেদা চৌধুরী। পরে উভয় পক্ষের শুনানির পর আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। গত ২৭ জুলাই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক অনুষ্ঠানে সাজেদা চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আসামিদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘দুই-একটাকে ঝুলিয়ে দিলে ওদের আইন কপচানো বন্ধ হবে।’ পরে ৫ আগস্ট তার বক্তব্যকে আদালত অবমাননা বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন জামায়াত নেতাদের আইনজীবীরা। আর ওই আবেদনের ওপরই সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

একটা কালো দিন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির জীবনে এটা একটা কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমাদের সরকার গরিব মহিলাদের মালিকানায় এবং তাদেরই তত্বাবধানে সুপরিচালিত বিশ্বসময় সুপরিচিত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তার মৌলিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাকে অন্য রকম প্রতিষ্ঠানে পরিণত করলো। এ দুঃখ ধারণ করার ক্ষমতা আমার নেই। কী করেছিল গ্রামীণ ব্যাংক যার জন্য তাকে তার মৌলিকত্ব হারাতে হলো? ৮০ লক্ষ গরিব মহিলা নিজেদের অর্থে শেয়ার কিনে এটার মালিকানায় অধিষ্টিত হয়েছে। ৯৭ শতাংশ মালিকানা তাদের। সরকারের মালিকানা ৩ শতাংশ। নিজেদের পয়সায় পরিচালিত এই ব্যাংক একটা বৃহৎ সমবায়ের মত। এটা নিজের অর্থে চলে। সরকার বা বিদেশ থেকে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এটা কোন ঋণ নেয় না, অনুদান নেয় না। তবু কেন বিশ্বব্যাপী বহুলভাবে অনুকরণকৃত এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এই প্রতিষ্ঠানকে সরকারের অন্য দশটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলো ? সরকার বলছেন যে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এই অচলাবস্থা কে সৃষ্টি করেছিল? ব্যাংকের মালিকরা আইনগত প্রক্রিয়ায় একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য সিলেকশন কমিটি গঠন করেছিলেন। যেহেতু এই সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁরা আমার নাম এবং অন্যান্য সদস্য হিসেবে ড. আকবর আলী খান এবং জনাব খালেদ শামসের নাম প্রস্তাব করেছিলেন, সরকারের প্রতিনিধি, বোর্ডের চেয়ারম্যান এই প্রস্তাব বোর্ডের সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে নারাজ থাকেন। অদ্ভুত পরিস্থিতি। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডে ‘‘ভেটো’’ দেয়ার ক্ষমতা আইন কাউকে দেয় নাই। চেয়ারম্যান সাহেব গায়ের জোরে ভেটো দিয়ে যেতে থাকলেন পর পর তিনটি বোর্ড মিটিং-এ। একেই বলা হচ্ছে অচলাবস্থা। তার জন্য এখন আইন সংশোধন করে পুরো ব্যাংকের ভবিষ্যৎটাই মূলতঃ চেয়ারম্যান সাহেবের হাতে তুলে দেয়া হলো। সরকার থেকে বারবার বলা হচ্ছে ‘আমরা গ্রামীণ ব্যাংক দখল করিও নাই, করতে যাচ্ছিও না। ইউনূস সাহেব মিথ্যাচার করছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকদের কর্তৃত্ব আগের মতই আছে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই চেয়ারম্যান সিলেকশান কমিটি গঠন করবেন’। পরামর্শ কখন করে, আর ভোট কখন নেয়? যখন ক্ষমতা একজনের হাতে থাকে তখন পরামর্শ করে। ভোট নেয় যখন ক্ষমতা ভোটদাতাদের কাছে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংকের অধ্যাদেশ সংশোধন করে এখন মালিকদের ভোটদানের ক্ষমতা রহিত করে তাদেরকে ‘‘পরামর্শ’’ দেয়ার ভূমিকায় রাখা হলো। তারপর একক চেয়ারম্যান কর্তৃক তৈরী সিলেকশান কমিটি তিনটি নাম বোর্ডের কাছে দেবে। বোর্ডের সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ থাকবে যে এই প্রার্থীরা চেয়ারম্যানের চোখের দিকে তাকিয়ে কাজ করবেন। মালিকদের চোখের দিকে তাকিয়ে কাজ করবেন না। যাঁকেই তাঁরা নিয়োগ দিন না কেন-এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। যে বোর্ডের কাছে সমস্ত ক্ষমতা আগের মতই রয়ে গেছে বলা হচ্ছে সে বোর্ড কিছু জানার আগেই সরকার থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে বোর্ড সদস্যরা যা চাচ্ছেন তা হতে দেয়া হবে না। কেন হতে দেয়া হবে না? কারণ ক্ষমতা সরকারের হাতে। সরকার বলছে ‘‘সিলেকশান কমিটি’’ এক সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে। এটা কি বোর্ডের কথা, নাকি সরকারের কথা? এবং তাতে ইউনূস থাকবে না। কারণ কি? কারণ সরকার এটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। এটা কি বোর্ডের সিদ্ধান্ত? ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন আকর্ষণীয় অংকের হবে, তা না-হলে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওয়া যাবে না। এটা কি বোর্ডের সিদ্ধান্ত? অথচ সরকার বলেই যাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার আইন সংশোধনের আগেই এত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো, আইন সংশোধনের পরে কি হয় এবার আমাদের দেখার পালা। আইনে সংশোধনী এনে সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী নিয়োগে ভূমিকা রেখে প্রকারান্তরে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার দায়-দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিল। দুনিয়ার কোথাও নজির নাই যে বহুজনের ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষমতা ৩ শতাংশ মালিকানার অংশিদারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অধ্যাদেশ সংশোধনের ব্যাপারে মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্তের পর আমি দেশের মানুষের প্রতি আবেদন জানিয়েছিলাম সরকারকে বোঝানোর জন্য, যাতে সরকার এই সংশোধনের পথে অগ্রসর না-হয়। দেশের বহু মানুষ বিবৃতির মাধ্যমে, সভা ও মানববন্ধনের মাধ্যমে, গণমাধ্যমে আলোচনা ও লেখালেখির মাধ্যমে, প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে দলমত নির্বিশেষে দেশের বহু সম্মানিত মহিলা নেত্রী এব্যাপারে সরকাররের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। গরিব মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি তাঁদের সকলকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুধু দুঃখ রইলো যে সরকার আমাদের কারো কথা শুনলো না। এই সংশোধনীর ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের গৌরবময় ইতিহাসের সমাপ্তি পর্বের সূচনা হলো। এখন থেকে গরিব মহিলাদের মালিকানার ব্যাংকটি সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে পরিচালিত হবে। ইতিহাসে নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না যে এরকম পদক্ষেপের ফলে প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল হয়েছে। আমি আমার দুঃখ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। গ্রামীণ ব্যাংকের অসংখ্য কর্মী সারা জীবন পরিশ্রম করে একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য এই ব্যাংকটিকে দুনিয়ার একটা অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছিল। আজ এর সমাপ্তি হতে দেখে তারাও তাদের দুঃখ রাখার জায়গা পাচ্ছে না। যে গরিব মালিকরা তাদের নগদ পয়সা দিয়ে এটার শেয়ার কিনে এটাকে ‘‘আমাদের ব্যাংক’’ হিসেবে জানতে শিখেছিল, গৌরব করতে শিখেছিল, তারা এখন জানবে যে এটা এখনো তাদের ব্যাংক বটে তবে এর ব্যাপারে মৌলিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এখন তাদের হাতে নেই। বাড়ী আমার, আমি বাড়ীতে থাকি, কিন্তু বাড়ীর কাজকর্মে আমার কথা চলে না। আমি আশাবাদী মানুষ। আমি হতাশ হতে চাই না। নিজের মনে আশার ক্ষীণ আলো জাগিয়ে রাখতে চাই। আমি আগের মত আবারও দেশবাসীর কাছে আহবান জানাচ্ছি যে, তারা যেন এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন। আমি দেশের তরুণদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, তারা যেন একদিন গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকদেরকে এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে। গরিব মালিকদের পরিবারের তরুণরাও যেন এই প্রতিজ্ঞা করে যে, তাদের মায়েদের সম্পদ তারা তাদের মায়েদেরকে ফেরৎ এনে দেবে। তাদের ব্যাংক তাদের কাছে যেন আবার পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরে আসে। আশাকরি ভবিষ্যতে একদিন আমাদের দেশে এমন সরকার আসবে যাদের প্রথম কাজ হবে, একটি জাতীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গরিব মহিলাদের এই ব্যাংকটিকে গরিব মহিলাদের হাতে তুলে দিয়ে এই ব্যাংকের গৌরবময় অগ্রযাত্রাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দেবে। সেদিন দেশের সকল মানুষ স্বস্তি পাবে, গরিব মহিলাদের মঙ্গলকামী পৃথিবীর সকল মানুষ স্বস্তি পাবে। আজ দুঃখের দিনে সেরকম একটি সুখের দিনের কথা চিন্তা করা ছাড়া মনকে সান্ত্বনা দেবার আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। ইমেইল: info@yunuscentre.org

শায়খুল হাদিস: ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান

জহির উদ্দিন বাবর দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত অভিভাবকতুল্য আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. গত ৮ আগস্ট বুধবার চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। তার এই চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। এদেশে আলেমের সংখ্যা কম নয়, তবে শায়খুল হাদিসের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও পূর্ণাঙ্গ আলেমের সংখ্যা নিতান্তই কম। দীর্ঘ ৯৪ বছরের জীবনে তিনি দেশ ও জাতিকে দিয়েছেন অগণন। কর্মের ব্যাপ্তি ও অবদানের বিশালতায় শায়খুল হাদিস ছিলেন এদেশের আলেমদের মধ্যে অনন্য-অসাধারণ। বহুমুখী পরিচয়ের যোগসূত্রতা সম্পৃক্ত হয়েছিল তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। এর ফলে তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। ‘শায়খুল হাদিস’ বললে একক কোনো ব্যক্তি নয়, মনে হতো এটি একটি সফল প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের উপকার ভোগ করেনি এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া মুশকিল। বাংলাদেশে নিকট অতীতে এমন প্রভাবশালী, সর্বপ্লাবী ব্যক্তিত্ব ও কর্মমুখর আলেম আর অতীত হয়নি। তার ব্যক্তিত্বের বিশালতা ছুঁয়ে দেখার মতো ছিল না, বিষয়টি ছিল অনুভবের। বাংলাদেশে হাজারো ‘শায়খুল হাদিস’ থাকা সত্ত্বেও উপাধিটি তার সঙ্গে যেভাবে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়েছিল তা আর কারো ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এই উপাধির ওজন বহন করার মতো যোগ্যতা পুরোপুরি তার ছিল। ‘শায়খুল হাদিস আল্লামা’ আজকাল যে কারো নামের সঙ্গে যোগ করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সম্মানসূচক এই উপাধিটি ‘আজিজুল হক’ নামটির সঙ্গে যেভাবে ফিট হতো কারো ক্ষেত্রে তেমনটা আর হয় না। শুধু যোগ্যতা ও অবদানেই নয়, ব্যক্তিত্বেও তিনি ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। সারল্য ছিল তার সহজাত প্রকৃতি। তার অমায়িক ব্যবহারে সবাই ছিল মুগ্ধ। তিনি মানুষকে মূল্যায়ন করতেন এবং সম্মান দিতেন। মতের ও আদর্শের ভিন্নতা সত্ত্বেও কারো সঙ্গে তার মনোমালিন্য প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেনি। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলই ছিল তার জীবনের প্রধান মিশন। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে তিনি বেশি মূল্যায়ন করতেন আদর্শকে। আদর্শের ব্যাপারে তার কোনো আপস ছিল না। প্রতিকূল পরিবেশেও ন্যায্য কথাটি বলে দিতে কুণ্ঠিত হতেন না। নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষতার একটি ছাপ ছিল তার প্রতিটি কথা ও কাজে। ঘনিষ্ঠভাবে যারা তাকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তারা জানেন, সবাইকে সহজে আপন করে নেয়ার কী মহৎ গুণটি ছিল তার মধ্যে। শায়খুল হাদিসের প্রধান অঙ্গন ছিল শিক্ষকতা। একজন আদর্শ শিক্ষকের যা গুণ হওয়া উচিত সবই ছিল তার মধ্যে। আজীবন তিনি হাদিসশাস্ত্রের অধ্যাপনা করেছেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি হাদিসের পাঠদান করেছেন বেশ কয়েক বছর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় হাদিসের সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব বুখারি শরিফের পাঠদান করতেন। তিনি যে মাদ্রাসায় পড়াতেন সেখানে সারা দেশের ছাত্ররা এসে ভিড় জমাতো। তার পাঠদান পদ্ধতিটি ছিল খুবই উপভোগ্য। হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রের জটিল জটিল বিষয় তিনি পানির মতো সহজ করে উপস্থাপন করতে পারতেন। নানা উপমা, আনুসঙ্গিক ঘটনা এবং নিজের বিচিত্র জীবনের অভিজ্ঞতার মিশেলে তিনি পাঠদান করতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার ক্লাসে বসেও ছাত্ররা বিরক্তিবোধ করতো না। জীবনের শেষ প্রান্তে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা সত্ত্বেও তিনি যখন পড়াতেন মনে হতো কোনো যুবক শিক্ষকের প্রাণবন্ত ক্লাস চলছে। তার জানার ভাণ্ডার এতটাই সমৃদ্ধ ছিল যে, কোনো বিষয়ে তাকে ভেবেচিন্তে জবাব দিতে হতো না। প্রতিটি শাস্ত্র ছিল তার নখদর্পণে। পাঠ্যের বাইরেও ছাত্রদের জীবনচলার নানা দীক্ষা পাওয়া যেতো এই মহান শিক্ষকের কাছ থেকে। তার মতো ছাত্রপ্রাণ শিক্ষক খুব কমই আছেন। বাংলাদেশের এমন কোনো থানা-ইউনিয়ন পাওয়া যাবে না যেখানে শায়খুল হাদিসের ছাত্র বা ছাত্রের ছাত্র নেই। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রিয় ছাত্রদেরই তিনি নিজের সম্পদ মনে করতেন। শায়খুল হাদিসের জীবনের দ্বিতীয় অঙ্গন ছিল রাজনীতি। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতিতে যখন নেতৃত্বের সংকট চলছিল তখন তিনি রাজনীতিতে আসেন। সে সময় তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তী সময়ে আশির দশকে হাফেজ্জি হুজুরের সঙ্গে তিনি রাজনীতির মাঠ চষে বেড়ান। তিনি ছিলেন হাফেজ্জি হুজুরের একান্ত শিষ্য ও সহযোগী। এরপর খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করে ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে গড়ে তোলেন ইসলামী ঐক্যজোট। নব্বইয়ের দশক পুরোটাই তিনি আন্দোলন-সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। নানা সময় তিনি ইসলাম ও দেশবিরোধী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেছেন। বাবরি মসজিদ অভিমুখে লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ব্যাপক আলোচিত ও পরিচিত হয়ে ওঠেন। মওলানা ভাসানীর পর এটাই ছিল সবচেয়ে স্মরণীয় লংমার্চ। ২০০১ সালে হাই কোর্টের রায়ে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য ফতোয়া অবৈধ ঘোষণার পর আবার গর্জে ওঠেন শায়খুল হাদিস। তার ডাকে সাড়া দিয়ে জেগে ওঠে পুরো দেশ। জেল-জুলুম, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সরকারের পরিবর্তন ঘটে। রাজনৈতিক সেই পরিবর্তনের পেছনে শায়খুল হাদিসের ভূমিকা ছিল বিশাল। এভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে শায়খুল হাদিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার স্মৃতিশক্তি যখন অনেকটাই লোপ পেয়ে যায় তখন বলয়বেষ্টিত শায়খের কোনো কোনো পদক্ষেপে কেউ কেউ সমালোচনা করেন। তবে বাস্তবতা হলো, শায়খুল হাদিস সব সময়ই রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। সজ্ঞানে তিনি জনচাহিদার বিপরীতে কোনো পদক্ষেপ নেননি। কেউ তাকে ভুল বুঝিয়ে ফায়দা লুটলে সে দায় শায়খুল হাদিসের ওপর চাপানো সমীচীন হবে না। লেখালেখি ছিল শায়খুল হাদিসের বিশেষ ব্রত। সহজ-সরল ভাষায় তিনি সবার বোধগম্য করে লেখতেন। এ ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় অবদান বুখারি শরিফের বঙ্গানুবাদ। কোরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ এই গ্রন্থটি তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। ১০ খণ্ডের বিশাল এই গ্রন্থটি বাংলা ভাষাকে অনেকটা সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়াও তার লেখা বেশ কিছু বই পাঠকদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। তিনি নিয়মিতই লেখতেন। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তার লেখালেখিতে চিড় ধরতো না। আমাদের জানা মতে তিনি একটি আত্মজীবনীও লেখেছেন। এটি প্রকাশ হলে সবাই উপকৃত হতে পারবে। তার বয়ান-বক্তৃতার সংকলনও বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বিশাল সম্পদ। আরবি কাব্যেও ছিল তার বিশেষ দখল। প্রিয়নবির শানে তার নিজের লেখা আরবি কবিতা তিনি নিজেই যখন আবৃত্তি করতেন তখন তা শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো টেনে নিতো। এদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অভিভাবক ছিলেন শায়খুল হাদিস। অমীমাংসিত ধর্মীয় ইস্যুগুলোতে সবাই তার শরণাপন্ন হতো। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আধার এই মনীষী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এসবের মীমাংসা করতেন। দেশের শত শত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতো তার পরামর্শে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তিনি সেখানে ছুটে যেতেন নিঃস্বার্থভাবে। বিশেষত আলেম-ওলামাদের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল জোরালো। বিভিন্ন সময় সারা দেশের আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। তার সমকালীন আলেম-ওলামারাও তাকে নেতৃত্বের আসনে বসাতেন। তার মতো অবিসংবাদিত নেতৃত্ব আলেমদের মধ্যে খুব কমই গড়ে ওঠে। শত বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও আলেমরা তাকে আশ্রয়স্থল মনে করতেন। তার এই চলে যাওয়ায় বিশেষভাবে দেশের আলেমসমাজ নেতৃত্ব ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়লো। অর্ধশতাব্দিরও বেশি সময় এদেশের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও জাতীয় অঙ্গনে সরব উপস্থিতি ছিল শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর। কর্মমুখর ও বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি দেশ ও জাতির জন্য যে বিশাল অবদান রেখে গেছেন এর সুস্পষ্ট ছাপ অনুভব করা যাবে আরো কয়েক শতাব্দি পর্যন্ত। কর্ম ও অবদানের এই ছাপই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে শায়খুল হাদিসের অগণিত শিষ্য-ভক্ত ও অনুরাগীদের। এর মধ্য দিয়েই তিনি অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল।