মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৩

ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি ? ইসলাম ধর্ম ও ইতিহাস বিকৃতির নিষ্ঠুর তামাশায় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড

আবদুর রহমান মল্লিক মহান আল্লাহর সাথে দেবদেবীর তুলনা, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মনগড়া ব্যাখ্যা,রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি হিসেবে উপস্থাপন, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতির এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে টেক্সট বুক বোর্ড । এ অধ্যায়গুলো সংযোজিত হয়েছে নবম দশম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, বাংলা ও বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে। অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ব্লুফিল্ম, পর্নোগ্রাফি এবং অশী­ল প্রকাশণার মতো নিষিদ্ধ ও স্পর্শকাতর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পাঠদানকালে শিক্ষক শিক্ষিকাগন হরহামেশাই পড়ছেন বিবৃতকর অবস্থায় । অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধিন দাখিল নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে “আল্লার সন্তান” উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিরকের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত ৪ বছরে কয়েকবার বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন । এসব পাঠ্য পুস্তক প্রনয়ণ ও সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ইসলাম বিদ্বেষী ও সেক্যুলারপন্থী ব্যক্তিদের। এই বিকৃতি ও আপত্তিকর বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে বর্তমান সরকারের সেক্যুলারপন্থী শিক্ষামন্ত্রীর সঠিক ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশণা না থাকার কারণেই। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান যতই এগিয়ে চলছে ততই এ বিষয়গুলো শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকেই। ইসলাম ধর্ম বইটির নামকরণ করা হয়েছে “ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা” । যা পূর্বে ছিল ‘ইসলাম শিক্ষা ’। কোরআনে যেখানে ইসলামকে পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে আলাদাভাবে নৈতিক শব্দটি জুড়ে দেয়া উদ্দেশ্যমূলক। নৈতিক শব্দটি জুড়ে দিয়ে প্রকারান্তরে ইসলামকে অপূর্নাঙ্গ, অনৈতিক বলা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ৮২ পৃষ্ঠায় ‘কতিপয় হারাম বিষয় ও দ্রব্যের তালিকা’ এর ৫ম নম্বরে বলা হয়েছে- দেবদেবী বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত খাওয়া । এ নিয়ে পত্রিকান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হলে এবং আলেম সমাজের প্রবল প্রতিবাদ ও আপত্তি উত্থাপিত হলে এক সরকারী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা সংশোধন করা হয়। কিন্তু সংশোধিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানের কোনই সম্ভাবনা নেই । অর্থাৎ এটি এখন শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্র্তক প্রনীত ২০১৩ সালের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইটির দশম অধ্যয়ে বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা শিরোনামে কিশোর অপরাধ এবং তা প্রতিকারের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটির ৮৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- পর্নোগ্রাফি ও ব্লুফিল্ম ও বিভিন্ন অশ্লিল প্রকাশণা বন্ধ করে দিতে হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জিজ্ঞেস করছে আপা /স্যার ব্লুফিল্ম কী? শিক্ষকরা পড়ছেন বিব্রতকর অবস্থায়। বইটি রচনা করেছেন,উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন,অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ও ড. সেলিনা আক্তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনেওয়াজ প্রমুখ । সম্পাদনা করেছেন নাস্তিক খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল নবম -দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ১৯ নম্বর গদ্যাংশের ৯৪ পৃষ্ঠায় মোহাম্মদ আকরাম খাঁ রচিত বিদায় হজ্জ অধ্যায়ে অসাম্যের প্রতিবাদ প্যারার ৯৬ পৃষ্ঠার ২য় লাইনে ‘আল্লাহর সকল সন্তানকে (নাউযুবিল্লাহ) আরাফাতের ময়দানে সমবেত হইবার জন্য আহবান করিয়াছিলেন’। শিরক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ঠতম হারাম কাজ । অথচ এভাবে পাঠ্যপুস্তকে শিরক অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির জন্য পাঠ্য ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ে লেখা হয়েছে ‘ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত ইতিহাস বইটি ২০১৩ সালের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত। ইতিহাস বইয়ে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী আখ্যায়িত করায় এ নিয়ে সচেতন শিক্ষক-অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে কয়েকজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারাও এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ রূপ বিভ্রান্তিকর শিক্ষা দেয়ার অধিকার তাদেরকে কে দিয়েছে ? তাদের মতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামের কোনো বিরোধ ছিল না। ইসলামের বিরোধিতার জন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। এ ছাড়া বইটিতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল, তার শাসনামল, দল গঠন এবং তার সে সময়ে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ পর্যালোচনা করতে গিয়ে আপত্তিকর সব মন্তব্য করা হয়েছে। এমনকি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে জিয়াউর রহমানকে কখনো জিয়া, কখনো জেনারেল জিয়া সম্বোধন করা হয়েছে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়ে জোট গঠনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে খালেদা জিয়ার নাম রাশেদ খান মেননেরও নিচে লেখা হয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনার নামে চরম দলাদলি, হিংসা বিদ্বেষ এবং সঙ্ঘাতকে উসকে দেয়া হয়েছে পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা। তারা জানিয়েছেন বইটির ১৯৭৫-১৯৯০ ইতিহাস অধ্যায় পড়ে মনে হয় এটি কোনো পাঠ্যবই নয়, বরং দলীয় পুস্তিকা। কোনো পাঠ্যবইয়ের ভাষা, শব্দচয়ন এবং বাক্য গঠন যে এমন হতে পারে সেটি ভেবে তারা বিস্মিত। এসব পড়ে কোনো শিক্ষার্থী সুস্থ মনমানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না বলে জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ‘সামরিক শাসন ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ (১৯৭৫-১৯৯০) অধ্যায়ের ২০২ নম্বর পৃষ্ঠায় তিন লাইনের একটি বিষয় হলো ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’। এখানে লেখা হয়েছে ‘জেনারেল এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বলে ঘোষণা করেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি ইসলামপন্থী দলগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টা করেন। মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এরশাদ এই সংশোধনী আনেন। বলার অপেক্ষা রাখে না ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।’ বইটির রচনাকারী হিসেবে যাদের নাম লেখা রয়েছে তারা হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম, ড. সুলতানা নিগার চৌধুরী ও অধ্যাপক প্রদ্যুত কুমার ভৌমিক। বইটি সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া : ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী বিষয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিরাট একটা সুযোগ। ইসলামের বিরোধিতা করে মুক্তিযুদ্ধ হয় না। ইসলাম মানুষের জন্য। আর মুক্তিযুদ্ধও ছিল মানুষের জন্য। দেশের আপামর মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তারা ইসলামবিরোধী ছিলেন না। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, যারা এটি লিখছেন এটি একান্তই তাদের ব্যক্তিগত মত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কখনোই ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না। বরং যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস মতেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারণ ইসলামের শিক্ষা হলো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। কাজেই যারা বলেন, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী তাদের সাথে আমি একমত নই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামের কোনো বিরোধ ছিল না। আমরা ইসলামের বিরোধিতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত মেজর জেনারেল (অব:) ইব্রাহীম বলেন, যারা পাঠ্যবইয়ে এ কথা লিখেছেন তারা এ জাতীয় মন্তব্য করার আগে কোন জায়গা থেকে রায় নিয়েছেন যে ইসলামকে রাষ্ট্র্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী? সংবিধান সংশোধন এবং অনুমোদন করতে পারে সংসদ। আর সংবিধানের রক্ষক হলো সুপ্রিম কোর্ট। তারা তো বলেননি যে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী? তাহলে তাদের কে অনুমতি দিলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার জন্য? এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইটি সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি সবার দ্বিমতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলতে চাই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করতে হবে কুরআন এবং হাদিস থেকে কেউ যদি আমাকে দেখাতে পারেন তবে আমি মেনে নেবো। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম হতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম পালন করে না। ধর্ম আচরণের বিষয়। ধর্ম পালন করে মানুষ। সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের মতো জ্ঞানপাপীরা ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনকে স্বিকার করেন না । সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম নিয়ে আপত্তি করেন। ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন। এমন ব্যক্তিকেই সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ কথার মাধ্যমে কেউ যদি অর্থ করে যে, ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাহলে কি তাকে দোষ দেয়া যাবে? এ প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা ভাবা ঠিক হবে না। বরং মুক্তিযুদ্ধ যে ইসলামের বিরুদ্ধে ছিল না সে বিষয়ে আমি অনেক প্রমাণ দিতে পারব। মুক্তিযুদ্ধ যে কতটা ইসলামসম্মত ছিল সে বিষয়ে আমি একটি গবেষণামূলক লেখা তৈরি করার কাজ করছি। ইসলামের শিক্ষা হলো জুলুম অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা। জিয়াউর রহমানকে জিয়া বলে সম্বোধন করা বিষয়ে প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা ঠিক হয়নি। জাতীয় নেতাদের সম্মান করেই সম্বোধন করা উচিত। ইতিহাস বইটির ‘সামরিক শাসন ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ (১৯৭৫-১৯৯০)’ শীর্ষক অধ্যায় সম্পর্কে সচেতন শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন। এখানে বিভিন্ন দল বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর শব্দ চয়ন করা হয়েছে যা হিংসা-বিদ্বেষ উসকে দেয়ার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন তারা। বইটির ১৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘জিয়া ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, (বিএনপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি নিজেই এই দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী, বামপন্থী, ডানপন্থী বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি বিএনপিতে যোগ দেয়। মূলত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আশায় জিয়ার আশপাশে অনেক রাজনীতিবিদ ভিড় করেছিলেন। জিয়া তাদেরকে পদ-পদবি দিয়ে নানাভাবে পুরস্কৃত করেছেন। জিয়ার আমলে উপদেষ্টা বা মন্ত্রীর একটা বড় অংশ আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। আবার অনেকে স্বাধীনতার বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন। জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।’ ১৯৮ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ‘নানা রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে জিয়া শহরে ও গ্রামে এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে তোলেন। এই নব্য ধনিক গোষ্ঠী ছিল জিয়ার সামরিক শাসনের সুবিধাভোগী। ব্যবসায় ও শিল্পের নামে ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকার ঋণের অর্থে অনেকে কোটিপতি বনে যায় রাতারাতি। একসময় এই কোটিপতিরাই ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়। তার আমলে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য জাতীয় সম্পদের বিরাট অংশ নষ্ট হয়েছে। সীমাহীন সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি জাতীয় উনয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।’ ১৯৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘জিয়াউর রহমান একজন উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেনাবাহিনীতে তার জনপ্রিয়তা ছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করেন। তাকে ১৯৭২ সালের জুন মাসে সেনাবহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু তাকে ‘বীর উত্তম’ উপাধি প্রদান করেন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে জিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’ ‘১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান বলপূর্বক আনুষ্ঠানিকভাকে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে নেন। অবশ্য এর অনেক পূর্বেই সায়েমের সরকার অকার্যকর হয়ে পড়ে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি বিচারপতি সাত্তারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। কিন্তু সাত্তার নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী ছিলেন না, বরং তিনি জেনারেল জিয়াকে ইন্ধন যুগিয়েছেন ক্ষমতা দখলে। প্রতিদান দিতেও জিয়া কার্পণ্য করেননি। সাত্তারকে তিনি উপরাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।’ এ ছাড়া বইটির ১৯৬ পৃষ্ঠায় জিয়াউর রহমানের গণভোটকে বানোয়াট আখ্যা দেয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, ‘নানারকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ১৯৭৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। জিয়ার সঙ্গে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওসমানী যে পেরে উঠবেন না এ নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। জিয়া ও তার সমর্থকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে কিভাবে গ্রহণযোগ্য করা যায়। জিয়া কারচুপির মাধ্যমে প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৭৬.৬৩ ভাগ ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ওসমানীকে দেখানো হয়েছিল মাত্র ২১.৭০ ভাগ ভোট। এ নির্বাচনের পরও সামরিক শাসন থাকায় জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়নি। ১৯৬-১৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘ক্ষমতা দখলের পর অন্যান্য সামরিক শাসকদের ন্যায় জেনারেল জিয়াও রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা করেছেন। আওয়ামী লীগবিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে জিয়ার যাত্রা শুরু। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামী, নেজামে, ইসলামী, মুসলিম লীগসহ ধর্মীয় দলগুলো বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকার কারণে স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। জিয়া দালাল আইন বাতিল এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের সাংবিধানিক অন্তরায় দূর করে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন।’ ১৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে লেখা হয়েছে, ‘অভ্যন্তরীণ নীতির সঙ্গে মিল রেখেই প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ণ করেন। তিনি মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেওয়ার বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের যৌক্তিকতা হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুসলিম পরিচয়কে বড় করে তোলা হয়। যে কারণে জেনারেল জিয়া শুরু থেকেই রুশ-ভারতবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন।’ আরো লেখা হয়েছে, ‘জিয়ার অতিমাত্রায় পাকিস্তানপ্রীতির কারণে স্বল্প সময়ে দুই দেশের মধ্যে টেলিযোগাযোগ, বিমান ও নৌযোগাযোগ, বাণিজ্য চুক্তি ও উচ্চপর্যায়ের শুভেচ্ছা সফর সম্পন্ন হয়। পাকিস্তান সরকার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বারবার পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের দাবি তোলে। তারা জাতীয় পতাকা পরিবর্তনসহ ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষে প্রচারণা চালায়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালির দৃঢ় মনোভাবের কারণে জেনারেল জিয়া এ সকল বিষয়ে অগ্রসর হননি।’ ‘জিয়া সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য জিয়া ১৯৮০ সালে সহযোগিতা সংস্থার প্রস্তাব করেন। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু প্রথম আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে স্বীকৃতি পায়।’ ১৯১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাকের স্বল্পকালীন শাসনকালে দেশের মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় এবং পাকিস্তানের ভাবধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠা শুরু হয়। ’ এরপর ১৯২ ও ১৯৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘১৫ আগস্টে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সহায়তায় জিয়া সেনাপ্রধানের পদ লাভ করেন। তৎকালীন পরিস্থিতিতে জিয়ার নিস্ক্রিয়তা সেনাবহিনীর মধ্যে অসন্তোষ আরো বাড়িয়ে দেয়। ’ ১৯৩ নম্বর পৃষ্ঠায় জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লেখা আছে, ‘এ হত্যাকাণ্ড ছিল ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত, স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সম্মিলিত ষড়যন্ত্র ও নীলনকশার বাস্তবায়ন। উভয় হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ ধ্বংস, দেশকে নেতৃত্বশূন্য এবং পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড একই গোষ্ঠী সংঘটিত করে।’ এরপর ১৯৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বাহাত্তরের সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে লেখা আছে, ‘জিয়ার সংবিধান সংশোধনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধ বা আওয়ামী লীগ বিরোধী দল ও ব্যক্তির সমর্থন লাভ করা। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগণের পরিচয়ের ওপর ধর্মীয় ছাপ প্রকট করে তোলা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে পাকিস্তানি চেতনাকে ফিরিয়ে এনে জিয়া তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে চেয়েছেন।’ এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের খালকাটা কর্মসূচি, গ্রাম সরকার এবং গণশিক্ষা কর্মসূচি পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অসফল বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ২০৩ নম্বর পৃষ্ঠায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের বর্ণনায় লেখা আছে, ‘এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন জোট গড়ে তোলে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাম সংগঠনের ৫ দলীয় জোট গড়ে উঠে (যা পরবর্তীতে ১৫ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়)। অন্য দিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট গড়ে উঠে।’ পাঠ্যপুস্তকে যৌনশিক্ষা প্রসঙ্গে পাবনার চাকরিজীবী রেজোয়ান হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার যে ইসলাম-বিদ্বেষী তা একেবারেই পরিষ্কার। ইসলাম ধর্মকে আঘাত করার নীলনকশা করেছে এ সরকার। এ সরকার পাঠ্যবই থেকে ধর্মীয় শিক্ষা মুছে ফেলে যৌন শিক্ষার নামে অপশিক্ষা চালু করেছে। এতে করে কোমলমতি শিশুরা বিপথে চলে যাবে। এ থেকে সরকারকে পরিত্রাণ পেতে হলে যৌন শিক্ষার পাঠ্যবইগুলো বাজার থেকে তুলে নিতে হবে এবং এসব বই সম্পাদনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সাতকানিয়া থেকে এনএইচ মাসুম বলেন , হাতে-কলমে যৌন শিক্ষা দিয়ে কোমলমতি শিশুদের বাস্তবতা অনুধাবন করার আগেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের মনে রাখা উচিত, পশ্চিমারা ইসলামের সব উপজীব্য গ্রহণ করেও নিজেদের কি কখনও ইসলামিকরণ করেছে? আর আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতি কিংবা দর্শন লালনকে আধুনিকতা বলে দাবি করি। যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ধর্ষণ হচ্ছে। মোটকথা অত্যন্ত চতুরতার সাথে নতুম প্রজন্মকে ইসলাম বিমুখ করা ও বিকৃত ইতিহাস শিখিয়ে বিশেষ রাজনৈতিক দলের আদর্শকে গ্রহণ করতে বাধ্য করছে একটি মহল। কৌশলে তারা ধর্মের প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশয় সন্দেহ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে বার বার পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনার ফলে লেখাপড়া মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নবম-দশম শ্রেণিতে গনিতে সৃজনশীল পদ্ধতি তুলে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে নেমেছে। সতিকার অর্থে শিক্ষা ব্যবস্থা হটকারি সিদ্ধান্তের গ্যারাকলে আটকে গেছে। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না । দলীয় চিন্তা ধারার বাইরে একটি স্টান্ডার্ড মানের শিক্ষাকার্যক্রম বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আবদুর রহমান মল্লিক ২৬/০৩/২০১৩

‘ইন্নালিল্লাহ’ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি

শওকত মাহমুদ ভরদুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছি। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যু সংবাদটি প্রথমে দেখলাম ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’ টিভির টিকারে। অর্থাৎ পর্দার নিচে চলমান শিরোনামে, ব্রেকিং নিউজ হিসেবে। চমকে উঠলাম খবরের গুরুত্বে এবং অসম্পূর্ণতায়। সাংবাদিকতার একজন ছাত্র এবং পাঠক হিসেবে আমি খুঁজতে থাকি কবে কখন রাষ্ট্রপতি ইন্তেকাল করেছেন। সিঙ্গাপুরে তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। সে খবর সবাই জানে। তবে দু’দিন যাবৎ কোনো খবর মিডিয়ায় আসছিল না। কিন্তু মৃত্যু সংবাদে মৃত্যুক্ষণটির উল্লেখ ছিল না। আর ‘ইন্তেকাল’ শব্দটির বদলে ‘মারা গেছেন’ বলা হয়েছে—এতে আমি আশ্চর্য হই না। কেননা ‘মারা গেছেন’ শব্দটি বেশি সহজসাধ্য এবং মান্য বাংলা। কিন্তু কোনো মুসলমান মারা গেলে খবরটির শেষে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’-এ বাক্যটি আমরা সবসময় উল্লেখ করি। কিন্তু সেদিন দেখলাম না। এক টেবিলেই বসা ছিলেন ‘সমকাল’ সম্পাদক সফল সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার। তার মনোযোগ আকর্ষণ করতেই ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’সহ কয়েকটি টিভি শোক-সংবাদে ‘ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন’ উল্লেখ করে না। সাংবাদিকতার যা অবস্থা হয়েছে! বাকি টিভিগুলোর নাম তিনি বললেন না, কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানলাম বর্তমান সরকারের আমলে লাইসেন্স পাওয়া টিভিগুলো আমাদের এই সর্বমান্য রীতিকে বিসর্জন দিয়ে চলেছে। বলাই বাহুল্য, শাহবাগি জাগরণ নিয়ে এসব টিভি ছিল সোচ্চার। ‘ইন্নালিল্লাহ’ বলতে ইন্ডিপেনডেন্টের নাস্তিকতা শিউরে উঠবে-আমি একথা বিশ্বাস করি না। এর মালিক শ্মশ্রুমণ্ডিত এবং নিশ্চয়ই ধর্মপ্রাণ সালমান রহমান এমন নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু দায় তো তারই। বার্তাপ্রধান খালেদ মুহীউদ্দিন বা টিকার-লেখক এ কাজটি আচম্বিতে করেছেন তাও মনে করি না। কিন্তু স্টেশনটির সম্পাদকীয় নীতিতে এটি সাব্যস্ত হয়ে আছে কীভাবে? ‘ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, এ মানুষটি নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য ছিলেন এবং নিশ্চয়ই তাকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। জিল্লুর রহমান ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন এবং আল্লাহর কাছেই তিনি ফেরত যাবেন-খোদ জিল্লুর রহমানের আত্মা একথা বলছে। অতএব তিনি আল্লাহর বান্দা ছিলেন, একথাটুকু দিয়ে তার মৃত্যুকে সম্মানিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান রহমানদের কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। রাষ্ট্রপতির ছেলে বেক্সিমকো গ্রুপের একজন অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রপতি নিশ্চয়ই বেক্সিমকো গ্রুপকে নানাভাবে সহায়তা করে থাকতে পারেন। আমার মতে, অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি বলে পরিচিত এবং শেখ পরিবারের প্রতি রাজনৈতিকভাবে চিরঅনুগত জিল্লুর রহমানের ভালো-মন্দ নিয়ে বলার অনেক কিছু আছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা করে দেয়া এবং বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাত নিয়ে ফের আলোচনা হতে পারে, কিন্তু তাকে অসম্মানিত করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তার মৃত্যু কবে হয়েছে, ঘোষণায় কোনো বিলম্ব আছে কিনা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কী, সরাসরি স¤প্রচারে বিটিভির ব্যর্থতা, সরকারি ছুটির আকস্মিক ঘোষণা এবং শোকের কর্মসূচিতে পরিবর্তনের পেছনে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হলে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন জন্ম নিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। আর বঙ্গভবনে বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের দৃশ্যমান উপেক্ষা শেখ হাসিনার জন্য গণনিন্দাই বয়ে এনেছে। গণমাধ্যমের এই ‘বিসমিল্লাহ’ এবং ‘ইন্নালিল্লাহ’ বর্জনের পেছনে রাজনীতি কাজ করেছে বলে সাধারণ মানুষ সংশয় প্রকাশ করতে পারেন। শাহবাগে কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের হম্বিতম্বি এবং সাংস্কৃতিক আচরণ বাংলাদেশের মিডিয়াতেও প্রভাব ফেলেছে। আগে বলতাম ‘নিপাত যাক’। ভদ্র ভাষায় যার অর্থ কারও পতন বা বিদায় চাই। এখন বলছে ‘জবাই’। শব্দটি আরবি থেকে যা ইসলামী রীতি-নীতি অনুযায়ী হবে। কিন্তু ডাকাত মানুষের গলা কাটলেও মিডিয়া বলে ফেলে জবাই। মুক্তিযুদ্ধ এবং ইসলামকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ বানানোর অপপ্রয়াস থেকে ওই শব্দের ব্যঙ্গাত্মক ব্যবহার। পাঠ্যবইতে ‘জবাই’ ও ‘বলি’কে কমিউনিস্ট শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একাকার করে ফেলেছেন। অত্যন্ত ভদ্র এই শিক্ষামন্ত্রীর আমলে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি প্রাণ, রক্ত ঝরেছে। সন্ত্রাস সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ক্লাস সবচেয়ে বেশিদিন বন্ধ থেকেছে এবং অনির্বাচিত ভিসিরা রাজত্ব করে গেছেন। মিডিয়ায় শব্দ বা অভিধা প্রয়োগে সতর্কতা পালন করতে হয়। কেননা, এর ভাষা জনবয়ান গড়ে তোলে, নতুন নতুন শব্দ অভিধানে ঢোকায় এবং অভিধার মধ্যেও রাজনীতি আছে। যেমন জামায়াত-শিবিরের নামের সঙ্গে ‘তাণ্ডব’ তৈরি করেছে এক শ্রেণীর মিডিয়া। গণহত্যায় মেতে ওঠা ‘পুলিশ’ শব্দটির সঙ্গে ‘ঘাতক’ যোগ হয়নি। শাহবাগিরা ছাগল-দাড়ির মতো মানুষজনকে ‘ছাগু’ নামে বলা চালু করেছে। ‘রাজাকার’ মানে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোক। ‘মাদক বা তামুককে না বলুন’ এসব স্লোগানের জন্ম দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট কট্টরপন্থী রোনাল্ড রিগ্যানের স্ত্রী ন্যান্সি রিগ্যান। তিনি ‘মাদকের বিরুদ্ধে না বলুন’ স্লোগান চালু করেন। পরিবেশবাদী আন্দোলন তথা ‘গাছ লাগান’ আন্দোলনের মূল প্রবতর্ক হিটলার। মানবেতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য এই যুদ্ধাপরাধীর উত্তরণ সুশীল সমাজ থেকে এবং তিনি বুকের দুধ খাওয়ানোর বড় প্রবক্তা ছিলেন। তখন হিটলার করেছেন বলে আমরা কি বাদ দেব? যেমন জামায়াত-শিবিরের সবকিছু পরিত্যাজ্য-এই আন্দোলনের বিষয়ে এক টিভি স্টেশন মালিকের প্রশ্ন-ওরা তো নামাজ পড়ে, তাহলে আমরা কি নামাজ পড়া বাদ দেব? ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ শব্দটা এসেছে মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদ সমর্থনকারী বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে, যারা নিজেদের ‘অ্যাক্টিভিস্ট ফিলোসফার’ হিসেবে দাবি করতেন। যা হোক, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা ও ভাষা নিয়ে আজ অনেকেই উদ্বিগ্ন। ২০০৭ সালের শুরুতে কলকাতার বইমেলায় একটা বই বেরিয়েছিল। নাম-স¤প্রচারের ভাষা ও ভঙ্গি। সম্পাদক ভবেশ দাস-আকাশবাণীতে সাংবাদিকতা করেছেন। ‘ভাষার গতি আছে, সে-গতি প্রগতির পথেই চলবে’-এটাই তো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এই ধ্বনিঝঙ্কার ও বাক-বিস্ফোরণে ভাষার দুর্গতি-চিন্তায় (সম্ভবত অধোগতি নয়) অনেকেই উদ্বিগ্ন। বানান, শব্দের প্রয়োগ, বাক্যবিন্যাস ও ভাষার প্রকাশভঙ্গি নিয়ে মন খারাপ করেন কেউ কেউ-এটি সম্পাদকের বক্তব্য। মন খারাপ করব না কেন, গত শনিবার এক মাওলানা, সরকারের ধর্ম-দিশারী, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এক মহাসমাবেশ ডেকেছিলেন। তাতে কয়েকশ’ লোককে জড়ো থাকতে দেখা যায়। কিন্তু সরকার-অনুগত ওইসব মিডিয়া লোকসংখ্যা বলল না, মহাসমাবেশ বলেই গেল। আর এ প্রশ্নটি তুলল না যে, রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্যে ওই মাওলানা সাহেব এ কাজটি কেমন করে করলেন? অথচ তখন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে চলছিল মরহুম রাষ্ট্রপতির জন্য মিলাদ। সরকারের বিরুদ্ধে অন্য গ্রুপের মুসল্লিরা এমনটি করলে তাদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারসহ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতারও করা হতো। সরকার বা আপন বিশ্বাসের লেজুড়বৃত্তি সাংবাদিকতায় নতুন ঘটনা নয়। এক দল বলে, এক ধরনের গণমাধ্যম তাদের বৃত্তিতে যেকোনো ধরনের ইসলামিকতাকে বর্জনে মৌলবাদীদের মতো, আরেক গ্রুপ অতিমাত্রায় ধর্মীয় সত্তার বিস্ফোরণ ঘটাতে চায় অকারণেই। এই দ্বন্দ্ব আজকের নয়। কিন্তু এমন লড়াইয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম’ পর্যন্ত বর্জন করার প্রবৃত্তি আমাদের আঘাত দেয়। বিবি আয়েশার যুদ্ধের চাইতে জোয়ান অব আর্কের যুদ্ধ রেফারেন্সে বেশি চলে আসে। বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিশালী ঔপন্যাসিক দেবেশ রায় ওই বইতে ‘খবর বলছি...’ শীর্ষক নিবন্ধে সাংবাদিকতায় সা¤প্রদায়িকতার স্বরূপ তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, “১৯৩৬-এর ‘ভারত শাসন আইন’ অনুযায়ী সা¤প্রদায়িক বাটোয়ারার ভিত্তিতে ১৯৩৭-এর জানুয়ারিতে প্রাদেশিক আইনসভার প্রথম ভোট থেকে বাংলা কাগজগুলির ভেতরের এসব রাজনীতির সূ² ভাগাভাগি মুছে গেল। সব কাগজই তারস্বরে সা¤প্রদায়িক হয়ে গেল। সা¤প্রদায়িকতার জিভও ছিল সা¤প্রদায়িকতার মতো কাটা। তার এক ডগা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষ ছড়াত, আর এক ডগা তফসিলি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিষ ছড়াত। এই দুই শত্রুর কাছে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদ এত তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল যে আগস্ট আন্দোলনের খবরও এসব কাগজে যথেষ্ট কম বেরুত। হিন্দু কাগজগুলির এই সা¤প্রদায়িকতার প্রতিক্রিয়ায় ও মুসলমান সমাজের রাজনৈতিক স্বাধিকারের আন্দোলনের প্রয়োজনে ‘আজাদ’ ও ‘ইত্তেহাদ’ কাগজ দুটি মুসলিম সা¤প্রদায়িকতার পোষকতা শুরু করে। বাংলা খবরের কাগজে বাঙালি যে বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়েছিল, তার জায়গায় নতুন এই বাঙালি বৈশিষ্ট্য এলো-চিৎকৃত সা¤প্রদায়িকতা। ১৯৪০ থেকে প্রায় ১৯৭০ পর্যন্তই এই বিদ্বিষ্ট, চিৎকৃত, বিকারগ্রস্ত ও অপ্রমাণিত সংবাদনির্ভর সাংবাদিকতা বাংলার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল।” আজ বাংলাদেশে কি এমন সাংবাদিকতা হচ্ছে না? যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জাতিতে বিভক্তি, পুলিশের বর্বরতাকে আদুরে সমর্থন, গণতন্ত্রকে শ্বাসরোধ করে মারার মচ্ছব কি একশ্রেণীর মিডিয়া করছে না? ‘টেলিভিশনে বুদ্ধিজীবী’ নামে প্রবন্ধটি আলোচ্য গ্রন্থে সঙ্কলিত। লেখক প্রদীপ বসু। বলছেন, “প্রকৃত চিন্তা মানুষের মনকে নাড়া দেয়, তাকে ভাবতে বাধ্য করে। টেলিভিশন যে প্রতিযোগিতা ও কর্মপ্রক্রিয়ার মডেল অনুসরণ করে তাতে এরকম হওয়ার কোনো আশা নেই...আমরা সর্বক্ষণ দেখতে পাই টক শো’র হোস্ট, খবর পরিবেশনের অ্যাঙ্কর, ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ ভাষ্যকার জ্যাঠামশায়ের মতো নীতি উপদেশ দিয়ে চলেছেন। এরা সকলেই হয়ে পড়েছেন দর্শকের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা, মধ্যবিত্ত নৈতিকতার প্রতিনিধি। এরা সকলেই আমাদের বলছেন ‘সামাজিক সমস্যা’ সম্পর্কে আমাদের কী ‘ভাবা উচিত’। আগেই বলেছি এই মানবিক কৌতূহল-জাগানো গল্প, নৈতিক উপদেশ এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি করে। এই গল্পগুলি শুধুমাত্র অরাজনীতিকরণেরই সাহায্য করে না, ঘটনাবলীকে কিসসা বা চুটকির স্তরে নামিয়ে আনে। এইসব গল্পের কোনো রাজনৈতিক পরিণাম থাকে না। কিন্তু এইসব গল্পকে এক নাটকীয় চেহারা দেওয়া হয়। যার থেকে আমরা ‘শিক্ষা নিতে পারি’ অথবা ঘটনাগুলিকে ‘সামাজিক সমস্যা’ হিসেবে স¤প্রচার করা হয়। এইসব ক্ষেত্রেই আমাদের চটজলদি বুদ্ধিজীবী বা টিভি দার্শনিকদের ডাক পড়ে, যাতে তারা অর্থহীনকে অর্থ প্রদান করতে পারেন, চুটকি কিস্সা যেগুলিকে কৃত্রিমভাবে মঞ্চে আনা হয়েছে তাদের একটা সুসংগত রূপ দিতে পারেন।” এক ‘ইন্নালিল্লাহ’-এর জন্য হয়তো বেশি বলে ফেললাম। আমাদের চিন্তা-চেতনার জগৎই কেমন সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছে। সাংবাদিক ক্রিস হেজ তার সুলিখিত বই ‘ডেথ অব দ্য লিবারেল ক্লাস’-এ বলছেন, আমাদের চিন্তন প্রক্রিয়ার, সৃষ্টিশীলতার প্রবাহে বাধা তৈরি হয়েছে মুদ্রন মাধ্যমের বদলে ভিসুয়াল মিডিয়ার (টিভি, কম্পিউটার) আধিক্য বেড়ে যাওয়ায়। ফেসবুকে লিখতে ব্যাকরণ দরকার নেই। পছন্দের সঙ্গীরা হড়হড় করে হাজির হবে। আধুনিকতা মানেই যেন ঐতিহ্য, আবহমান সংস্কৃতিকে উপড়ে ফেলা। টক শো’র পিতৃপ্রতিম আলোচককে আজকের তরুণ হোস্ট ‘জনাব’ ব্যতিরেকে শুধু নাম ধরে সম্বোধন না করলে আধুনিকতা বা আন্তর্জাতিকতাই থাকে না। মাঝে-মধ্যে ভাবি, আমাদের সমাজে মুক্তচিন্তা, আলোকিত উপলব্ধি, ব্যাকরণ, নৈতিকতা আর সুস্থ পঠন-পাঠনের কী দুরন্ত গতিধারাই না ছিল। তর্ক-বিতর্ক ছিল, ধর্ম ও আধুনিকতার কী যুক্তিগ্রাহ্য মিশেলই না লক্ষ করেছি। এই ধরুন, একসময় সংবাদপত্রের শোক সংবাদে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ কথাটি পুরো লেখা হবে কী হবে না, তা নিয়ে আলেম সমাজ এবং একসময়ের বহুল প্রচারিত ‘দৈনিক বাংলা’ ও ‘ইত্তেফাক’-এর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল। আলেম সমাজ একসময় মেনে নিয়েছিল, পুরো কথা না লিখে সংক্ষেপে লিখলেও চলবে। কিন্তু সাংবাদিকদের কখনও বলেনি, এটা একদমই লিখব না। কেননা, মূল্যবোধের গভীরতম স্থানগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকরা বরাবরই সচেতন এবং মান্য করে এসেছে। কিন্তু আজ? মালিক ও সাংবাদিকদের চরিত্রে এ কোন্ অপছায়া? শওকত মাহমুদ: প্রখ্যাত সাংবাদিক; মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৩

সংখ্যালঘুদের চিন্তা-চেতনা সংখ্যাগরিষ্ঠদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা

অলিউল্লাহ নোমান, যুক্তরাজ্য থেকে শাহবাগ চত্বরের তথাকথিত প্রজন্ম চত্বরের ডা. ইমরান বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। শাহবাগ চত্বরের নষ্টামি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ইমরান এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। হঠাত্ করে সরকারি তত্ত্বাবধানে গজিয়ে ওঠা ডা. ইমরান এটা বলতেই পারেন। তিন স্তরের পুলিশি নিরাপত্তার বেষ্টনীতে গজিয়ে ওঠা এই নেতা নিজেকে এখন বিশাল কিছু মনে করছেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী কোর্ট রায় দেয় (আল্লামা সাঈদীর রায়ের আগের দিন বিকালে ইমরান শাহবাগে ঘোষণা করেছিলেন, আগামীকাল ফাঁসির আদেশ নিয়ে আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফিরব), পার্লামেন্টে আইন পাস হয়। কথায় কথায় তিনি নিজেকে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করেন। সুতরাং তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকেও তার সঙ্গে এবং তার কথায় চলার জন্য বলতে দ্বিধা না করারই কথা। এই হুশিয়ারির ধৃষ্টতা তিনি দেখাতেই পারেন। আর একটি প্রশ্ন অনেকেই করেন, সেটা হলো কথায় কথায় যারা নিজেকে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি মনে করে তাদের আবার তিন স্তরের নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় কেন! শাহবাগ চত্বরে তথাকথিত তরুণ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা রাতের অন্ধকারে কী করেছেন সেটা এখানে আমি উল্লেখ করতে চাই না। অনেক কিছুই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো ভদ্র ঘরের তরুণ-তরুণী এভাবে খোলা আকাশের নিচে একসঙ্গে রাতযাপন করবেন না বা করার কথাও নয়। ইমরানের দাবি অনুযায়ী বিরোধীদলীয় নেতা এই তথাকথিত প্রজন্মের সঙ্গে একমত পোষণ করবেন কিনা সেটা তিনিই ভালো বোঝেন। তবে আমি এখানে যেটা বলতে চাচ্ছি, বিরোধীদলীয় নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া শাহবাগ নিয়ে সর্বশেষ যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাই যথার্থ। তিনি মানিকগঞ্জের সর্বশেষ বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। বিচার বিএনপিও করবে। তবে সেটা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে—এ বিষয়টি তিনি বলেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও বিচার হবে সেটা তিনি স্পষ্ট করেছন। যারা বর্তমানে গণহত্যা চালাচ্ছে তাদের বিচারও ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধী নেত্রী। তার এই বক্তব্যের ভেতর দিয়ে বিরোধী দলের অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে জাতির সামনে। শুধু তাই নয়, ২৮ ফেব্রুয়ারির গণহত্যার পর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছে দলীয় নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা নেননি। বরং এসব বিষয়ে শক্ত অবস্থানের ঘোষণা দেন। গণহত্যার প্রতিবাদে হরতালের ডাক দেন। তার চিরাচরিত আপসহীন মনোভাব প্রকাশ করেন জাতির সামনে। এতেই শাহবাগিদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। যারা বিরিয়ানি বিতরণ করে, টাকা সরবরাহ করে শাহবাগ চত্বরকে সরগরম রাখতে চেয়েছিল তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ে বিরোধীদলীয় নেতার ঘোষণায়। অনেকেই আবোল-তাবোল বলছেন বিরোধীদলীয় নেতার ঘোষণা নিয়ে। তবে এটা পরিষ্কার, ২৮ ফেব্রুয়ারির গণহত্যার পর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বিরোধীদলীয় নেতার ঘোষণায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী মানুষের মনে আশার আলো জেগেছে। মানুষ তাকিয়ে ছিল বিরোধীদলীয় নেতার মুখের দিকে। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে কী ঘোষণা দেবেন সেটা জানার জন্য। গত কয়েকদিন যার সঙ্গেই কথা হয়েছে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থানের প্রশংসা করছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হরতাল চলাকালে দেখা করতে যাননি বিরোধীদলীয় নেতা। নিরাপত্তার কারণে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ বাতিল করেন। তবে এটা ঠিক, ভারতীয় বাহিনী বিএসএফ প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আমাদের নাগরিকদের খুন করছে। নিরস্ত্র নিরীহ মানুষ খুন হচ্ছেন ভারতীয় বাহিনীর বুলেটের আঘাতে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের নাগরিকদের। নির্যাতন করছে উলঙ্গ করে। ভারত তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে আমাদের পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বার বার ভারতের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন সীমান্তে আর গুলি চালানো হবে না। চার বছর পার হয়ে গেলেও তিস্তা সমস্যা সমাধান করতে পারছে না বর্তমান সরকার। যদিও ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বার বার ওয়াদা করা সত্ত্বেও ভারত এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এসব প্রেক্ষিতেও ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতার সাক্ষাত্ না করাটা যথার্থ হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া বাংলাদেশের ভেতর যে মুহূর্তে সরকার গণহত্যা চালাচ্ছে, সেই মুহূর্তে ভারতের রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে খোদ ভারতীয় পত্র-পত্রিকায়ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অথচ সেই ভারতকে বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। তিতাস নদী হত্যা করে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারতীয় যান চলাচলের সুবিধা করে দিয়েছে সরকার। ২০১১ সালে ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী চুক্তি করে এসেছিলেন সেটা আজও প্রকাশ করা হয়নি। জাতিকে জানানো হয়নি ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলোর বিষয়ে। উল্টো ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। শাহবাগে হঠাত্ গজিয়ে ওঠা তথাকথিত প্রজন্মের তরুণদের আন্দোলনে ভারতের ইন্ধন রয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ সংযোজন হয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশী তরুণদের ভিসা দিতেও শাহবাগে যাওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। এতেই স্পষ্ট, শাহবাগে জমায়েত হওয়া তথাকথিত তরুণদের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের ভেতরে কী ঘটাতে চেয়েছিল। এজন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই শাহবাগের এই উন্মাদনাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায় তারা। আর তাদের এই উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য কতগুলো ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। এই ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর চোখে শাহবাগি তরুণরা ছাড়া আর কেউ মানুষ বা জনতা নয়। শাহবাগি তরুণরা ছাড়া বাকি হাজারো মানুষ একত্রিত হলেও জনতার কাতারে পড়ে না। কারণ যারা আল্লাহ ও নবী-রাসুলে বিশ্বাস করেন তারা জনতার কাতারে পড়তে পারে না। তারা হয় রাজাকার না হলে জঙ্গি। এটাই হলো এসব মিডিয়ার বর্ণনা। এই ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর প্রথম সারিতে রয়েছে ‘প্রথম আলো’। শুধু গত শনিবারের অনলাইনে লন্ডন সময় বিকাল ৫টার একটি চিত্র। শাহবাগি তরুণদের নিয়েই প্রথম পৃষ্ঠায় তিনটি নিউজ। একটি নিউজের শিরোনাম ছিল : ‘শাহবাগ নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি’ এটা ডা. ইমরানের বক্তব্য। একই পৃষ্ঠায় ডা. ইমরানের আরও একটি বক্তব্য হলো, খালেদা জিয়ার উদ্দেশে, ‘নষ্ট তরুণ নাকি খুনি ধর্ষকের পাশে দাঁড়াবেন?’ আরেকটি সংবাদের শিরোনাম হলো : ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহাসম্মেলনে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ’। এই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হলেন ড. আনিসুজ্জামান, সুলতানা কামাল চক্রবর্তী গং। সেদিনই খালেদা জিয়ার মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর সফরের বিষয়ে আরেকটি সংবাদের বর্ণনায় বলা হয়, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ডাকা হরতালে সিঙ্গাইরের গোবিন্দল এলাকায় হরতালের সমর্থক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ গ্রামবাসী নিহত হয়।’ অথচ সেদিন হরতালের সমর্থনে গ্রামের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তাদের ওপর আওয়ামী গুণ্ডা বাহিনী ও পুলিশ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নিরস্ত্র এসব প্রতিবাদী মানুষকে তারা খুন করেছে বন্দুকের গুলি দিয়ে। প্রথম আলোর বর্ণনা অনুযায়ী হরতালের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা আওয়ামী গুণ্ডারা হলো এলাকাবাসী বা গ্রামবাসী। আর হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসা হাজারো মানুষকে তারা গ্রাম বা এলাকার হিসেবে গণ্য করেন না। হরতালে সাধারণ নাগরিকদের ওপর পুলিশ বন্দুক নিয়ে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এসব তাদের চোখে তেমন একটা ধরা পড়ে না। বরং উল্টো তারা হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসা সাধারণ মানুষকে সহিংস বলে কেতাবি ভাষায় আক্রমণ করে। এ পর্যন্ত কোনো হরতাল বা প্রতিবাদে কেউ অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামেনি। কোনো পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ ধরনের কোনো ছবি বা ফুটেজ দেখাতে পারবে না। কিন্তু তারপরও এসব প্রতিবাদী মানুষ হলো সহিংস! নিরস্ত্র মানুষদের যখন গুলি করে মারা হয়, মিডিয়াগুলোতে বলা হয় সহিংসতায় নিহত হয়েছে। হরতালকারী বা প্রতিবাদীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে নিহত হয়েছে বলতে তাদের লজ্জা লাগে। বর্তমান এ অবস্থায় একটা জিনিস জাতির সামনে একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মিডিয়া সংখ্যালঘু, নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীদের চিন্তা-চেতনা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, কৃষ্টির পরিবর্তে একটি বিজাতীয় কৃষ্টি চাপিয়ে দিতে চায় তারা। এজন্যই একটি ধর্মের সংস্কৃতি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান করাকে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা হিসেবে কৌশলী প্রচার চালাচ্ছে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম। তারা এক আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ও অন্য নবীদের ওপর আস্থায়ও বিশ্বাসী। এখনও মুসলমান পরিবারে সন্তান জন্ম নিলে প্রথমেই কানে আল্লাহু আকবার বলা হয়। প্রতিটি গ্রামের মক্তবে এখনও শেখা হয় পরস্পরের মধ্যে সালাম বিনিময় কীভাবে করতে হবে। মুরুব্বিদের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করার রেওয়াজ মক্তব থেকে শেখানো হয়। কিন্তু আমাদের মিডিয়াগুলো সালামের পরিবর্তে শুভ সন্ধ্যা, শুভ দুপুর, শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি বলে শেখানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। নাটকে যত রকমের খারাপ চরিত্র রয়েছে সেগুলোতে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোক দেখানোর চেষ্টা করা হয়। আর এদেরই বংশধর হলো শাহবাগের প্রজন্ম। শাহবাগের হোতা ডা. ইমরান সরকার কথায় কথায় ১৬ কোটি লোকের দোহাই দেন। আমি বলতে চাই, আপনাদের চিন্তা-চেতনা ও ৬ দফা দাবি নিয়ে গণভোট করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। আমি সেই অনুরোধ রাখছি আপনার কাছে। কারণ আপনাদের দাবি অনুযায়ী আদালতে রায় হয়, সংসদে আইন পাস হয়। সুতরাং আপনারাই সেই দাবিটি উচ্চারণ করলে সরকার গণভোটের আয়োজন করতে পারে। তখন হয়তো দেখা যাবে ১৬ কোটি মানুষের কতজন আপনাদের সমর্থন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কার পক্ষে রায় দেয় তখন দেখা যাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রায় ছাড়া কতিপয় খুনি, ধর্ষণে সেঞ্চুরিকারী অস্ত্রবাজ ছাত্রলীগ, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার পর লাশের ওপর নৃত্যকারী স্বঘোষিত খুনিদের সঙ্গে নিয়ে ৩ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবদ্ধ অবস্থায় থেকে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব হয় না।

Good Girls Gone Bad

Vanessa Hudgens and Selena Gomez have come a long way from their Disney days, now starring in a buzzy R-rated indie flick with a lot of sex, drugs, and violence. Click through to see how Hollywood actresses have gone from good to bad. Vanessa Hudgens She first sang and danced her heart out more than five years ago as a chipper student in "High School Musical." But Vanessa Hudgens is now making her major role reversal, playing a stripper in “Frozen Ground” (due out this year) and starring as a hard-partying college girl in "Spring Breakers." Selena Gomez Selena Gomez’s Disney Channel run ended just last year on “Wizards of Waverly Place.” She’s not as racy as is her Disney sis Vanessa Hudgens in “Spring Breakers”; still, girl goes wild with the rest of the young, beer-swilling vacationers in the film. Neve Campbell Neve Campbell was a pretty practical San Franciscan teen in "Party of Five." But things got crazy when she appeared alongside a topless Denise Richards in 1998's "Wild Things." Reese Witherspoon "Cruel Intentions" notwithstanding, Witherspoon actually debuted her bad side in "Freeway" (1996) as a juvenile delinquent who finds herself fending off a serial killer played by Kiefer Sutherland. But before that she was a pretty innocent farm kid in 1991's "The Man in the Moon." Natalie Portman From "Beautiful Girls" (1996) to her stint as Queen Amidala in the "Star Wars" series, Natalie Portman played it pretty straight … until she portrayed a stripper in Mike Nichol's ensemble drama "Closer" (2004). Elizabeth Berkeley Starting out as a studious sweetheart in "Saved by the Bell," Elizabeth Berkeley threw everyone for a loop when she pole danced in 1995's "Showgirls." Jessica Biel In 2009, Jessica Biel played a stripper in the Los Angeles-set drama "Powder Blue." But she started out as an all-American teen on the popular late- '90s WB series "7th Heaven." Lindsay Lohan Remember when Lindsay Lohan was that spunky redheaded teen in 2003's "Freaky Friday" remake? Fast-forward four years to when we were already onto her off-camera bad-girl antics. "I Know Who Killed Me" marks Lohan's debut in a role perhaps more fitting to her real personality. Needless to say, trashiness ensued. Jodie Foster But before Lohan did it, Jodie Foster went from good to bad, appearing in the original "Freaky Friday" in 1976, then as a child prostitute in "Taxi Driver" (for which she received an Oscar nomination), with Robert De Niro, that same year. Kristen Stewart Speaking of Jodie Foster, Kristen Stewart played her smart -- and scared -- young daughter in 2002's "Panic Room." Stewart first departed from her squeaky-clean image -- including her popular "Twilight" series character -- in 2010's "Welcome to the Riley's," in which she played a wayward youth. She, however, upped the ante, going topless and writhing around frequently in last year's "On the Road."... more Emma Watson Yes, even the "Harry Potter" series has given birth to a Hollywood bad girl. Hermione herself, Emma Watson, plays a Daisy Dukes-wearing teen thief in Sofia Coppola's upcoming film "The Bling Ring." Katie Holmes From the ever-earnest Joey Potter in "Dawson's Creek" to a promiscuous victim in 2000's "The Gift," even Katie Holmes felt the need to break out of her good-girl image.

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৩

‘চোর দাদা’ বক্তৃতা করছেন..

স্টাফ রিপোর্টার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল গতকাল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পরপরই মঞ্চে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তার নাম ঘোষণার পরপরই মঞ্চের অন্যান্য বক্তার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। জনসমাবেশেও ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়। একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি শুরু করেন। সমাবেশের পশ্চিমদিকে বসা এক কর্মী অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে ওঠেন— ‘এই চোর দাদা বক্তব্য দিচ্ছে রে’। তার এ মন্তব্য শেষ হতে না হতেই অপর একজন বলে ওঠেন, ‘আরে না না। তিনি রেলের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে নিজেই বিড়াল হয়ে গেছেন।’ তৃতীয় আরেকজন বলে ওঠেন, ‘দাদা ডিজিটাল যুগের এনালগ চোর। তা না হলে কেউ কি এই আধুনিক যুগেও মধ্যরাতে বস্তায় করে বাসায় টাকা নেয়? আর যাই বলেন ভাই, দাদার জন্য আমাদের দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। মহল্লায় আমাদের মুখ দেখাতেই কষ্ট হয়। কিন্তু দাদা কিভাবে যে মুখ দেখান সেটা আমার বুঝে আসছে না। দাদা চুপ থাকলেই ভালো হতো। দাদাকে দিয়ে বক্তব্য দেয়াটাও ঠিক হয়নি। দাদার ইমেজ তো এখন ভালো না। দলের ক্ষতি হয়ে গেলো।’

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৩

ইমরান এইচ সরকার এবার নিজেই তার নাস্তিকতার স্বীকারোক্তি দিলেন

অবশেষে বেরিয়ে এসেছে থলের বেড়াল। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও বিতর্কিত ব্লগার ডা. ইমরান এইচ সরকার এবার নিজেই তার নাস্তিকতার স্বীকারোক্তি দিলেন। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে বিতর্কের অবসান ঘটান। তিনি তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি আবার ভেবে দেখুন, আপনি আমাদের নাস্তিকদের কাতারে এসে দাঁড়াবেন, না খুনী-ধর্ষক জামায়াত-শিবিরের পাশে দাঁড়াবেন।’ আর এর মাধ্যমে কোন সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ডা. ইমরান নিজেকে নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা দিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারী শাহবাগ চত্তরে ব্লগারদের গণজাগরণ মঞ্চের শুরুর পর থেকেই ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে এ মঞ্চ সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে শুরু হওয়া শাহবাগের এ আন্দোলনে প্রথমদিকে সাধারণ মানুষ শরীক হলেও ক্রমেই এর ইসলামবিরোধী চরিত্র প্রকাশ পাবার পর থেকেই তারা নিজেদেরকে সেখান থেকে গুটিয়ে নেন। নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগাররা এ অবস্থায় গত কিছুদিন যাবত তাদের পরিচিতি সম্পর্কে ঘোলাটে তথ্য দিতে থাকে। কখনো কখনো তারা নিজেদের মুসলমান এমনকি ধর্মপ্রাণ বলে দাবী করে আবার কখনো সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের মাধ্যমে নিজেদের আস্তিক হিসেবে জাহির করার অপচেষ্টা করে। ফলে এ ব্যাপারে জনমনে চরম বিরক্তির সৃষ্টি হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারী জাতীয় প্রেসকাবের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমমনা ১৩ দলের এক মানববন্ধন থেকেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইসলাম ধর্মের অবমাননার কারণে অবিলম্বে স্বঘোষিত এসব নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার করে মৃত্যুদন্ড দেবার দাবী জানায়। সরকারের প থেকে এ ব্যাপারে কোন পদপে গৃহীত না হওয়ায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম মুফতী আল্লামা শাহ আহমেদ শফী ইসলাম এবং মহানবী(সা:) এর অবমাননাকারী শাহবাগের এসব নাস্তিক ব্লগারদের প্রতিরোধ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। তিনি শাহবাগী ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেন। 
এ অবস্থায় ইমরানসহ কোন কোন ব্লগার নিজেকে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠে। এমনকি গত বৃহস্পতিবার বিকালে জামালখান প্রেস কাব চত্বরে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে ইমরানের মুসলমানিত্ব জাহির করতে সরকার সমর্থিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নিজেকেও ‘নাস্তিক’ নয় দাবি করার পাশাপাশি ডা. ইমরান এইচ সরকারকে একজন ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমান’ হিসেবে উল্লেখ করেন। 
গত ২দিন শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জের জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া শাহবাগ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ আখ্যায়িত করে বলেন, শাহবাগের এই নষ্ট ও নাস্তিক তরুণদের নিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অপকর্ম করছে। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ‘ধর্মদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে এদের বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দ গত ১১ মার্চ সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের নামে চলমান কথিত ‘গণ-অবস্থান’ কর্মসূচি এবং সেখানকার জাগরণ মঞ্চের মূল হোতাদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ইসলাম অবমাননার ধৃষ্টতা প্রদর্শিত হয়েছে। শাহবাগের কিছু নাস্তিক-আল্লাহদ্রোহীর নেতৃত্বে জাগরণ মঞ্চে ইসলামবিরোধী যেসব বক্তব্য ও কার্যকলাপ চলে আসছে এর অন্যতম হলোÑ মুসলমানদের সন্তান-সন্ততিদের দিয়ে অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা, নামাজের সময়সহ দিন-রাত অনবরত মাইকে গান-বাজনা চালানো, জাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীন, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, আরিফ জেবতিক, নিঝুম মজুমদার ও রাজীব হায়দার শোভন ওরফে থাবা বাবাসহ স্বঘোষিত নাস্তিকরা নিজেদের (সামহয়্যার ইন, মুক্তমনা, ধর্মকারী, নূরানী চাপাসমগ্র প্রভৃতি) ব্লগে আল্লাহ ও রাসূল সা: তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকর ব্লগ লেখা ও জঘন্য মন্তব্য করেছে,  শাহবাগে অভিযুক্ত আসামির কুশপুত্তিকাকে সম্বোধন করে ‘তোকে বাঁচাতে এলে আল্লাহকেও ফাঁসি দেয়া হবে’ বলেÑ (নাউযুবিল্লাহ) প্রকাশ্য আল্লাহদ্রোহিতার মহড়া দেয়া হয়েছে,  নারী-পুরুষের উলঙ্গ নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাঁজা সেবন ইত্যাদি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে আসছে শাহবাগ মোড়ের কথিত প্রজন্ম চত্বরে। মুসলমানের ফরজ বিধান পর্দাকে কটাক্ষ করে ‘হোটেলের পতিতার’ পোশাক আখ্যায়িত করা হয়েছে, পবিত্র মক্কা-মদিনার ইমাম ও খতিবদের বিশেষ পোশাক কো’বা পরিয়ে ফাঁসির অভিনয় করানো হয়েছেÑযা ইচ্ছেকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উসকানি ছাড়া আর কিছু নয়। শাহবাগের প্রজন্ম মঞ্চে দাড়ী-টুপি পরিহিত ব্যক্তির গলায় রশি বেঁধে রাসূলের সা: সুন্নাত ও ইসলামের প্রতীকগুলোর অবমাননা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কয়েক দিন পুর্বে সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপি শাহবাগ মঞ্চের নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম ব্লগার রাজীবের ইসলাম অবমাননামূলক পোস্টগুলো সম্পর্কে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। অথচ নাস্তিক ব্লগার আসিফ মুহিউদ্দীন ও রাজীব হায়দারের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও আদালত অবমাননার কারণে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৮৮৬/১২) করা হয়। এ রিটের শুনানির পর গত বছর ২১ মার্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করে ব্লগগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে সরকারের প্রতি রুল জারি করা হয়। এর পরিপ্রেেিত তারা গ্রেফতারও হয়। পরে তাদের পরিবারের সদস্যরা আদালতে মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্ত করে আনে। ২০১২ সালের ২১ মার্চ আদালত ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের ভেতরকার কোনো প্রভাবশালী মহলের বাধায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এসব ব্লগ ও ব্লগারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

Singaire






রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৩

History Of Burma

Early Burma The Nation we know as Burma was first formed during the goldenage of Pagan in the 11th century. King Anawratha ascended the throne in 1044, uniting Burma under his monarchy. His belief in Buddhism lead him to begin building the temples and pagodas for which the city of Pagan (above) is renowned. Pagan became the first capital of a Burmese kingdom that included virtually all of modern Burma. The golden age of pagan reached its peak in during the reign of Anawratha's successor,Kyanzitta (1084-1113), another devout Buddhist, under whom it aquired the name " City of four million pagodas ".Under Colonial Rule Although Burma was at times divided into independent states, a series of monarchs attempted to establish their absolute rule, with varying degrees of success. Eventually, an expansionist British Government took advantage of Burma's political instability. After three Anglo-Burmese wars over a period of 60 years, the British completed their colonization of the country in 1886, Burma was immediately annexed as a province of British India, and the British began to permeate the ancient Burmese culture with foreign elements. Burmese customs were often weakened by the imposition of British traditions. The British also further divided the numerous ethnic minorities by favouring some groups, such as the Karen, for positions in the military and in local rural administrations. During the 1920s, the first protests by Burma's intelligentsia and Buddhist monks were launched against British rule. By 1935, the Students Union at Rangoon University was at the forefront of what would evolve into an active and powerful movement for national independence. A young law student Aung San, executive-committee member and magazine editor for the Students Union, emerged as the potential new leader of the national movement. In the years that followed, he successfully organized a series of student strikes at the university, gaining the support of the nation. Independence and Democracy At the outbreak of the Second World War, Aung San seized the opportunity to bring about Burmese independence. He and 29 others, known as the Thirty Comrades, left Burma to undergo military training in Japan. In 1941, they fought alongside the Japanese who invaded Burma. The Japanese promised Aung San that if the British were defeated, they would grant Burma her freedom. When it became clear that the Japanese would not follow through with their promise, Aung San quickly negotiated an agreement with the British to help them defeat the Japanese. Hailed as the architect of Burma's new-found independence by the majority of Burmese, Aung San was able to negotiate an agreement in January 1947 with the British, under which Burma would be granted total independence from Britain. Although a controversial figure to some ethnic minorities, he also had regular meetings with ethnic leaders throughout Burma in an effort to create reconciliation and unity for all Burmese. As the new leader drafted a constitution with his party's ministers in July 1947, the course of Burmese history was dramatically and tragically altered. Aung San and members of his newly-formed cabinet were assasinated when an opposition group with machine guns burst into the room. A member of Aung San's cabinet, U Nu, was delegated to fill the position suddenly left vacant by Aung San's death. A Burma was finally granted independence on January 4, 1948, at 4:20am - a moment selected most auspicious by an astrologer. For the next ten years, Burma's fledging democratic government was continuously challenged by communist and ethnic groups who felt under-represented in the 1948 constitution. Periods of intense civil war destabilized the nation. Although the constitution declared that minority states could be granted some level of independence in ten years, their long-awaited day of autonomy never arrived. As the economy floundered, U Nu was removed from office in 1958 by a caretaker government led by General Ne Win, one of Aung San's fellow thakins. In order to "restore law and order" to Burma, Ne Win took control of the whole country including the minority states, forcing them to remain under the jurisdiction of the central government. Although he allowed U Nu to be re-elected Prime Minister in 1960, two years later he staged a coup and solidified his position as Burma's military dictator. Burma Under a Dictatorship Ne Win's new Revolutionary Coucil suspended the constitution and instituted authoritarian military rule. Full attention turned to the military defeat of communist and ethnic-minority rebel groups. The country was closed off from the outside world as the new despot promoted an isolation ideology based on what he called the Burmese Way to Socialism. Superstitious, xenophobic and ruthless, for the next three decades Ne Win set a thriving nation on a disatrious path of cultural, environmental and economic ruin. Outside visitors were few and restricted to Rangoon, Mandalay and a handful of other tightly controlled towns close to the central plains. Insurgency remained endemic and in many areas of Burma armed struggle became a way of life. The People's Demands Are Met With Bullets In July 1988 Ne Win suddenly announced that he was preparing to leave the stage. Seeing at last a possible escape from military rule, economic decline and routine human rights abuses, thousands of people took to the streets of Rangoon. Demonstrations broke out across the country during the so-called "Democracy Summer" that followed. But on August 8, 1988 troops began a four day massacre, firing into crowds of men, women and children gathered in Rangoon. At least 10,000 demonstrators were killed across the country. Thousands of students and democracy advocates fled to the border regions under ethnic control and forged alliances with ethnic resistance movements. Some of these groups include the National Coalition Government of the Union of Burma (NCGUB), the All Burma Student Democratic Front, the Democratic Alliance of Burma, and the longstanding National Democratic Front situated in Manerplaw (the former headquarters of the Karen National Union which fell to SLORC in January 1995). Together these groups formed the National Council of the Union of Burma, an umbrella organization representing all the groups. A Leader Emerges It just so happened that during this time of unrest in 1988, Aung San Suu Kyi, daughter of independence hero Aung San, who had been living abroad, returned to Burma to care for her ailing mother. Her devotion kept her there and brought her into the political foray. Attempting to quell international condemnation for its violence, the military announced it would hold multi-party elections. Under the persuasion of students and others opposed to the regime, Aung San Suu Kyi and like-minded colleagues founded the National League for Democracy (NLD). Her party quickly gathered country-wide support. Just when democratic changes seemed imminent Ne Win commandeered the army from behind the scenes to take over the country in a staged "coup". On September 18, 1988, control of the country was handed to a 19-member State Law and Order Restoration Council (SLORC) and a vicious crackdown followed. Although committed to non-violence, Aung San Suu Kyi was placed under house arrest in July 1989 for "endangering the state" and kept there for the next six years. Desperate to improve their image and generate foreign investment, the SLORC went ahead on May 27, 1990 and held the multi-party elections they had promised. Despite the SLORC's severe repression against members of opposition parties (Aung San Suu Kyi was kept under house arrest) and the complete lack of freedom of expression throughout the country, Suu Kyi's NLD party swept to victory with 82% of the vote. Surprised and outraged, the SLORC refused to acknowledge the election results and has retained its repressive grip on power ever since. Current Situation Eventhough Daw Aung San Suu Kyi was released from house arrest in May of 2002 the military has refused to relinquish power. The generals have not engaged in any sort of dialogue. The humanitarian situation in Burma is disasterous and civil war still ravages the border areas. The effect of military rule has been a severly impoverished and underdevelopmed nation, Burma has rated as the second least developed nation on the United Nations Development Index. Peace, democracy and the most basic human rights do not exist. Millions have been forced to flee due to military rule and are scattered all over the world longing for the day when they can return to their homeland and be re-united with the families and live in peace.

Nastik, Nastik N Nastik