অবশেষে বেরিয়ে এসেছে থলের বেড়াল। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও বিতর্কিত ব্লগার ডা. ইমরান এইচ সরকার এবার নিজেই তার নাস্তিকতার স্বীকারোক্তি দিলেন। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে বিতর্কের অবসান ঘটান। তিনি তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি আবার ভেবে দেখুন, আপনি আমাদের নাস্তিকদের কাতারে এসে দাঁড়াবেন, না খুনী-ধর্ষক জামায়াত-শিবিরের পাশে দাঁড়াবেন।’ আর এর মাধ্যমে কোন সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ডা. ইমরান নিজেকে নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা দিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারী শাহবাগ চত্তরে ব্লগারদের গণজাগরণ মঞ্চের শুরুর পর থেকেই ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে এ মঞ্চ সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে শুরু হওয়া শাহবাগের এ আন্দোলনে প্রথমদিকে সাধারণ মানুষ শরীক হলেও ক্রমেই এর ইসলামবিরোধী চরিত্র প্রকাশ পাবার পর থেকেই তারা নিজেদেরকে সেখান থেকে গুটিয়ে নেন। নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগাররা এ অবস্থায় গত কিছুদিন যাবত তাদের পরিচিতি সম্পর্কে ঘোলাটে তথ্য দিতে থাকে। কখনো কখনো তারা নিজেদের মুসলমান এমনকি ধর্মপ্রাণ বলে দাবী করে আবার কখনো সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের মাধ্যমে নিজেদের আস্তিক হিসেবে জাহির করার অপচেষ্টা করে। ফলে এ ব্যাপারে জনমনে চরম বিরক্তির সৃষ্টি হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারী জাতীয় প্রেসকাবের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমমনা ১৩ দলের এক মানববন্ধন থেকেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইসলাম ধর্মের অবমাননার কারণে অবিলম্বে স্বঘোষিত এসব নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার করে মৃত্যুদন্ড দেবার দাবী জানায়। সরকারের প থেকে এ ব্যাপারে কোন পদপে গৃহীত না হওয়ায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম মুফতী আল্লামা শাহ আহমেদ শফী ইসলাম এবং মহানবী(সা:) এর অবমাননাকারী শাহবাগের এসব নাস্তিক ব্লগারদের প্রতিরোধ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। তিনি শাহবাগী ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেন।
এ অবস্থায় ইমরানসহ কোন কোন ব্লগার নিজেকে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠে। এমনকি গত বৃহস্পতিবার বিকালে জামালখান প্রেস কাব চত্বরে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে ইমরানের মুসলমানিত্ব জাহির করতে সরকার সমর্থিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নিজেকেও ‘নাস্তিক’ নয় দাবি করার পাশাপাশি ডা. ইমরান এইচ সরকারকে একজন ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমান’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
গত ২দিন শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জের জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া শাহবাগ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ আখ্যায়িত করে বলেন, শাহবাগের এই নষ্ট ও নাস্তিক তরুণদের নিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অপকর্ম করছে। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ‘ধর্মদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে এদের বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দ গত ১১ মার্চ সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের নামে চলমান কথিত ‘গণ-অবস্থান’ কর্মসূচি এবং সেখানকার জাগরণ মঞ্চের মূল হোতাদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ইসলাম অবমাননার ধৃষ্টতা প্রদর্শিত হয়েছে। শাহবাগের কিছু নাস্তিক-আল্লাহদ্রোহীর নেতৃত্বে জাগরণ মঞ্চে ইসলামবিরোধী যেসব বক্তব্য ও কার্যকলাপ চলে আসছে এর অন্যতম হলোÑ মুসলমানদের সন্তান-সন্ততিদের দিয়ে অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা, নামাজের সময়সহ দিন-রাত অনবরত মাইকে গান-বাজনা চালানো, জাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীন, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, আরিফ জেবতিক, নিঝুম মজুমদার ও রাজীব হায়দার শোভন ওরফে থাবা বাবাসহ স্বঘোষিত নাস্তিকরা নিজেদের (সামহয়্যার ইন, মুক্তমনা, ধর্মকারী, নূরানী চাপাসমগ্র প্রভৃতি) ব্লগে আল্লাহ ও রাসূল সা: তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকর ব্লগ লেখা ও জঘন্য মন্তব্য করেছে, শাহবাগে অভিযুক্ত আসামির কুশপুত্তিকাকে সম্বোধন করে ‘তোকে বাঁচাতে এলে আল্লাহকেও ফাঁসি দেয়া হবে’ বলেÑ (নাউযুবিল্লাহ) প্রকাশ্য আল্লাহদ্রোহিতার মহড়া দেয়া হয়েছে, নারী-পুরুষের উলঙ্গ নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাঁজা সেবন ইত্যাদি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে আসছে শাহবাগ মোড়ের কথিত প্রজন্ম চত্বরে। মুসলমানের ফরজ বিধান পর্দাকে কটাক্ষ করে ‘হোটেলের পতিতার’ পোশাক আখ্যায়িত করা হয়েছে, পবিত্র মক্কা-মদিনার ইমাম ও খতিবদের বিশেষ পোশাক কো’বা পরিয়ে ফাঁসির অভিনয় করানো হয়েছেÑযা ইচ্ছেকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উসকানি ছাড়া আর কিছু নয়। শাহবাগের প্রজন্ম মঞ্চে দাড়ী-টুপি পরিহিত ব্যক্তির গলায় রশি বেঁধে রাসূলের সা: সুন্নাত ও ইসলামের প্রতীকগুলোর অবমাননা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কয়েক দিন পুর্বে সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপি শাহবাগ মঞ্চের নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম ব্লগার রাজীবের ইসলাম অবমাননামূলক পোস্টগুলো সম্পর্কে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। অথচ নাস্তিক ব্লগার আসিফ মুহিউদ্দীন ও রাজীব হায়দারের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও আদালত অবমাননার কারণে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৮৮৬/১২) করা হয়। এ রিটের শুনানির পর গত বছর ২১ মার্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করে ব্লগগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে সরকারের প্রতি রুল জারি করা হয়। এর পরিপ্রেেিত তারা গ্রেফতারও হয়। পরে তাদের পরিবারের সদস্যরা আদালতে মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্ত করে আনে। ২০১২ সালের ২১ মার্চ আদালত ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের ভেতরকার কোনো প্রভাবশালী মহলের বাধায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এসব ব্লগ ও ব্লগারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন