শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

অভিমত : বাপ্পাদিত্যের কণ্ঠে ফ্যাসিবাদী হুমকি

আহমেদ তেপান্তর ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারে আপস নয়’ গত ১৮ জানুয়ারি দৈনিক যায়যায়দিন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি অনলাইন নতুনবার্তাডটকম-এ ‘বিএনপি ব্যাকফুটে’ নামক দুটি লেখাই চলমান মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সংহতি প্রকাশ বলেই মনে করছি। সে সঙ্গে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আত্মঘাতী পদক্ষেপের ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। আর যেহেতু সংহতির কথা উল্লেখ করছি তাই বলতে হচ্ছে—প্রজন্ম (শাহবাগ) স্কয়ারে তাদের সঙ্গেই সংহতি প্রকাশ করেছি যারা সহজ-সরল অথচ তেজোদীপ্ত চেতনাধারী; যাদের গায়ে খুনের তকমা সেঁটে আছে তাদের প্রতি নয় কিংবা কোনো বুর্জোয়াদের প্রতিও নয়। কারণ এটা বিশ্বাস করেছি এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের ঐকান্তিক ত্যাগের যারা একটা চরম প্রতিকারের অন্বেষায় এখনও রাস্তায়। অথচ চলমান আন্দোলনে প্রজন্মের সঙ্গে তেমন অভিযুক্ত খুনিও এসে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করছে বলেই মনে করছি। শুধু তাই নয় তারা আন্দোলনের লাগাম নিজেদের হাতে হাতে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলেও জেনেছি। অর্থাত্ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের আন্দোলনে যোগ হয়েছে সুবিধাভোগী অভিযুক্ত খুনি বাপ্পাদিত্য। এ ব্যাপারে অন্য কোনো গণমাধ্যম উদ্যোগী না হলেও আমার দেশ দায় থেকেই প্রমাণসহ সংবাদ পরিবেশন করেছে যা ১২ ফেব্রুয়ারির পত্রিকায় ছবিসহ ছাপা হয়েছে, শিরোনাম ‘লগি বৈঠার খুনি বাপ্পাদিত্য বসু শাহবাগের নেতৃত্বে’। সেখানে ৮ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে ব্লগার পরিচয়ের ছদ্মাবরণে গণমাধ্যম ব্লগের হুমকিদাতা সেই বাপ্পাদিত্য বসুর পরিচয় পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়া বাপ্পাদিত্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর খুনি। সেদিন লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মারার পর লাশের ওপর নৃত্য করেছিল বাপ্পাদিত্য। বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। এমন সংবাদ-শিরোনামের পরে ‘১৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগের সমাবেশে বাাপ্পাদিত্য আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে খতম করার কথা উচ্চারণ করে। শুধু তাই নয়—ড. পিয়াস করীম ও আসিফ নজরুলের চামড়া তুলে নেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এ সময় সেখানে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক, হালিমা খাতুন, সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, লেখক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতসহ দেশের বিশিষ্ট সম্পাদক, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত থাকলেও কেউ এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেননি।তাই আমার প্রশ্ন, একজন চিহ্নিত খুনির কাছ থেকে এমন হুমকি কি আসলে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি নয় এবং চলমান আন্দোলনকে পথভ্রষ্ট করার বেপরোয়া আস্ফাালন নয়? সেটা সংহতি প্রকাশ করা সবাইকে বুঝতে হবে। এক্ষেত্রে সংহতি প্রকাশ করা সরকারেরও কি কোনো ভূমিকা নেই? না তারাও চাচ্ছেন চিহ্নিত খুনি-ক্যাডার দিয়ে আন্দোলনকে সাধারণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে? চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের অর্থ এই নয় যে, এক অন্যায়কারীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে চিহ্নিত খুনির হাতে নেতৃত্ব তুলে দেব। ১৫ ফেব্রুয়ারি সমাবেশে বাপ্পাদিত্যের এমন হুমকি প্রদর্শনে মনে হয়েছে, ও একা নয় এবং পরিকল্পিতভাবেই এমন উচ্চারণ। সুতরাং একজন সংহতি প্রকাশকারী হিসেব এমন মন্তব্যের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে জানাতে চাই—আমরা চাই সব অপকর্মের বিচার হোক, সেই সঙ্গে চিহ্নিত খুনি বাপ্পাদিত্যের বিচারও হতে হবে। মনে রাখা জরুরি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যারা দলমত নির্বিশেষে প্রজন্ম (শাহবাগ) স্কয়ারে একত্র হয়েছেন, তাদের এই ত্যাগ এক বাপ্পাদিত্যের হুমকিতে ফ্যাসিবাদের জোয়ারে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও নির্ভুল হওয়াও দরকার। কারণ এই আন্দোলনকে বেগবান করার পেছনে গণমাধ্যমের অগ্রণী ভূমিকা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। তাই উপস্থিত সবার সামনে যে হুমকি একজন চিহ্নিত অপরাধী দিয়েছে, তাকে জরুরি ভিত্তিতে সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে। এমন দুষ্টদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হলে আন্দোলন ছিনতাইর ঘটনা ঘটবে। এত ত্যাগ তা সবই ভূলুণ্ঠিত হবে। ফ্যাসিবাদ চড়াও হবে সাধারণের ওপর। শুধু তা-ই নয়, বাপ্পাদিত্যের মতো খুনিদের এবং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা যদি শাহবাগ সমাবেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে বসে তবে দেশবাসীর কাছে হাত জোড় করে বলব, এই সমাবেশের প্রতি সংহতি জানিয়ে ভুল করেছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন