শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ব্লগারচক্রের ধর্ম ও আদালত অবমাননা : ভালো চাইলে এখনই ব্যবস্থা নিন
তরুণ প্রজন্মের নামে শাহবাগে মঞ্চায়িত নাটকের পেছনে যে সরকারই ছিল, সেকথা জানাজানি হয়েছে প্রথম থেকেই। নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার উদ্দেশ্যও প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। কোনো সরকার এ ধরনের রাজনৈতিক কৌশল নিতেই পারে। কিন্তু আপত্তি উঠেছে মঞ্চের কুশীলবদের কারণে। এমন একটি গোষ্ঠীকে দিয়ে সরকার মঞ্চে দাপাদাপি করিয়েছে, বহুদিন ধরে যারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র আল কোরআন ও ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত অসভ্য ভাষায় মন্তব্য করার ও কুত্সা রটানোর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম নামধারী এই ব্লগাররা প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুচিন্তিতভাবে বিষোদ্গার করছে। চালাচ্ছে বিরামহীন সাইবার ওয়ার। শুধু তা-ই নয়, দেশের আইন ও আদালতের প্রতিও তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে। উদাহরণ দেয়ার জন্য একটি রিট আবেদন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিদের দেয়া আদেশের কথা উল্লেখ করা যায়। এটা গত বছরের মার্চ মাসের ঘটনা। চিহ্নিত ব্লগগুলো বন্ধ করাসহ ব্লগার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি, র্যাব ও পুলিশসহ সরকারের উদ্দেশে নির্দেশনা ছিল ওই আদেশে। কিন্তু বিটিআরসি বা সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। গোয়েন্দারা একজন ব্লগারকে গ্রেফতার করলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাকে শুধু ছেড়েই দিতে হয়নি, ‘মহাদোষ’ করে ফেলায় গ্রেফতারকারী গোয়েন্দাদের উল্টো ক্ষমাও চাইতে হয়েছিল। এ অবস্থার সুযোগ নিয়েছে ব্লগার গোষ্ঠীর ইসলামবিদ্বেষীরা। থেমে যাওয়ার পরিবর্তে তারা বরং নিজেদের কর্মকাণ্ডকে আরও জোরদার করেছে। ব্লগাররা একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের প্রতিও প্রকাশ্যে অবজ্ঞা দেখাতে শুরু করেছিল। যেমন আসিফ নামের একজন ব্লগার লিখেছে, ‘সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সচেতনভাবে ওই যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো উত্কট দুর্গন্ধময় ধর্মীয় অনুভূতি এবং ওই যুক্তিহীন ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষক আদালত, দুই জিনিসেরই অবমাননা করলাম।’ গত বছরের ২১ মার্চ রায় ঘোষিত হওয়ার পরপর সামহোয়ারইন নামের অন্য একটি ব্লগ লিখেছিল, ‘আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরের ব্যর্থতায় এবারে ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষায় এগিয়ে এলো আদালত।’ আরও কুিসত ভাষা ও শব্দেও অনেক মন্তব্য করেছে ব্লগাররা। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে তো বটেই, মন্তব্য করেছে দেশের উচ্চ আদালত সম্পর্কেও। সঙ্গত কারণে সেসবের উল্লেখ থেকে বিরত থাকতে হলেও যে কথাটা না বললেই নয় তা হলো, কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার মাধ্যমে এই ব্লগার গোষ্ঠীকে সরকার শুধু প্রশ্রয়ই দেয়নি, সবশেষে তাদের দিয়ে শাহবাগে নাটকও সাজিয়েছে। ১৭ দিন ধরে এই নাটক চলাকালে শাহবাগে ঠিক কোন ধরনের কাণ্ডকারখানা হয়েছে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার পরিবর্তে বলা দরকার, প্রশ্রয় ও সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি সরকার উল্টো তাদের বিরুদ্ধে জোর তত্পরতা চালিয়েছে, যারা ওই ব্লগারদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। সরকারের সে তত্পরতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে আক্রান্ত ও অসম্মানিত হচ্ছেন ধর্মপরায়ণ মুসলমানরা। গতকাল জুমার পর পুলিশ মুসল্লিদের ওপর গুলি পর্যন্ত চালিয়েছে।
আমরা সরকারের এই নীতি ও ভূমিকার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং মনে করি, অমন একটি নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার গোষ্ঠীকে সমর্থন-সহযোগিতা দেয়ার ও শাহবাগ নাটকের জন্য বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরাও নিজেদের ইসলামবিরোধী উদ্দেশ্যের ন্যক্কারজনক প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এটা অবশ্য তাদের নীতি-ইচ্ছা ও পরিকল্পনার বিষয়, কিন্তু একথা ভুলে যাওয়ার পরিণতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে যে, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ শুধু মুসলমান নন, ধর্মপরায়ণ, অসাম্প্রদায়িক ও সংগ্রামী। নিজেদের অধিকার রক্ষা ও আদায় করার জন্য যুগে যুগে তারা সংগ্রাম করে এসেছেন—লাখ লাখ টাকার মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং পোলাও-বিরিয়ানি খেয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও আন্দোলনের নামে অসভ্য বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেননি। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্ম নামধারী নাস্তিক ব্লগাররা শুধু নয়, জনগণের ভোটে জিতে আসা সরকারও সেই মুসলমানদের বিরুদ্ধেই সর্বাত্মক অভিযানে নেমে পড়েছে। গতকাল শুক্রবারও সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জুমার নামাজ আদায়কারী হাজার হাজার মুসল্লির ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশকে দিয়ে লাঠিপেটা তো করিয়েছেই, নির্বিচারে গুলিও করিয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ছাত্র ও সাংবাদিকসহ বহু মুসল্লি। বলা দরকার, একই সরকারকে কিন্তু ইসলামবিদ্বেষীদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে দেখা গেছে। এমনকি ঘোষণা দিয়ে আদালত অবমাননা করার পরও সরকার ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা মনে করি, এমন নীতি ও কর্মকাণ্ডকে কোনোক্রমেই সমর্থন করা যায় না। সরকারের উচিত অবিলম্বে ইসলামবিদ্বেষী ব্লগগুলো নিষিদ্ধ ও বন্ধ করে দেয়া। একই সঙ্গে সেই সব ব্লগারকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে, যারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাইবার ওয়ার চালানোর পাশাপাশি দেশের উচ্চ আদালতকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন