বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১১

শুক্রবার মমতার শপথ




পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

বেলা ১টা ১ মিনিটে রাজভবনে প্রথমে মমতা এবং পরে তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়াবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। এ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ভারতীয় কংগ্রেস থেকে সাতজন মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারেন বলেও জানা গেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর বেবী মওদুদ কলকাতা থেকে জানান, শপথ অনুষ্ঠান সামনে রেখে রাজভবন সংলগ্ন শহীদ মিনারে বসানো হয়েছে চারটি জায়ান্ট স্ক্রিন। এসব স্ক্রিনে তৃণমূল নেত্রীর শপথ নেওয়ার দৃশ্য সরাসরি দেখতে পাবে কলকাতাবাসী। অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখানো হবে বিভিন্ন টেলিভিশনেও।

বৃহস্পতিবার কালিঘাটের বাসায় গিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বেবী মওদুদ। তিনি জানান, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকসহ প্রায় পাঁচ হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তিকে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের নেতারা জানিয়েছেন, শপথ অনুষ্ঠান হবে বাংলায়। আর বিধান সভার নব নির্বাচিত সদস্যরা শপথ অনুষ্ঠানে যাবেন পুরোপুরি বাঙালি পোশাকে- ধুতি পাঞ্জাবি ও শাড়ি পড়ে।

তবে কংগ্রেস মুখপাত্র জনার্দন ত্রিবেদী জানিয়েছেন, দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী খুব সম্ভবত শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছেন না। তবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি এবং কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ।

পশ্চিমবঙ্গের বিধাসভা নির্বাচনে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২২৪টিই জিতে নেয় মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। আর এর মধ্য দিয়ে ভারতের এ রাজ্যে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

১৩ মে এই নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে পদত্যাগপত্র জমা দেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বামফ্রন্ট নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য। বুদ্ধদেব নিজেও নির্বাচনে পরাজিত হন।

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মমতা বন্দোপাধ্যায় আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে উঠছেন না। শুক্রবার শপথ অনুষ্ঠান শেষে রাজভবন থেকে সরাসরি রাইটার্সে নিজের কার্যালয়ে যাবেন তিনি। অফিস করবেন কালিঘাটে নিজের বাড়ি থেকেই।

বৃহস্পতিবার সারাদিন বৃষ্টির মধ্যেও বহু মানুষ ফুল আর উপহার নিয়ে কালিঘাটে যান 'দিদির' সঙ্গে দেখা করতে। সবার সঙ্গেই আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন সদ্য নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ; অভিনন্দনের জবাবে ধন্যবাদ দেন।

একটি সূত্রে জানা গেছে, মমতা বন্দোপাধ্যায় শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। তবে তার এই সফরের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।

এদিকে মামতার মন্ত্রীসভায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি 'ইতিবাচক'ভাবেই দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।

ভারতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার কলকাতায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকেই এ বিষয়টির ফয়সালা হওয়ার কথা।

অবশ্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কংগ্রেস থেকে ৭ জন মমতার মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে পারেন।

মমতা বিধানসভা নির্বাচনে জযী হয়েই বলেছিলেন, জোট হিসেবে নির্বাচন হয়েছে, জোট হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার চলুক।

১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কালিঘাটের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের মাধ্যমে। ১৯৭৬ সালে রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৮৪ সালে যাদবপুর আসন থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর অল ইন্ডিয়া যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মমতা। ১৯৯১, ৯৬, ৯৮, ৯৯, ২০০৪ ও ২০০৯ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৯৭ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পর থেকেই দলটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মমতা। গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের সমস্যা, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর ও রেজওয়ান হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব ছিলেন কলকাতার মানুষের 'দিদি' হিসেবে পরিচিত এই নেত্রী।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন সিপিআই (এম)-এর সূর্যকান্ত মিশ্র। ৩৪ বছর পর এ রাজ্যে বিরোধী দলের আসনে বসবে বামফ্রন্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন